সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির ডাকে দেশ জুড়ে ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ-ডেপুটেশন ও রাষ্ট্রপতিকে দাবি সনদ
demand-charter-to-the-president

গত ৪-৫ আগস্ট ২০২৪ ভুবনেশ্বরে আয়ারলার জাতীয় কাউন্সিল বৈঠকে দেশে সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় পরিস্থিতি ও কেন্দ্রীয় বাজেটের উপর দীর্ঘ আলোচনা হয়। বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫টা গ্যারান্টি ও ১০টা দাবি নিয়ে দেশব্যাপী প্রচার অভিযান সংগঠিত করে রাষ্ট্রপতির কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবিসনদ পাঠানো হয়েছে। ২৩ আগস্ট ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ-ডেপুটেশনের মাধ্যমে দাবিসনদ রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীদের পাঠানো হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা শাসক অফিসে বিক্ষোভ-অবস্থান ও ডেপুটেশনের মাধ্যমে দাবিসনদ পাঠাতে হবে। তাছাড়া বিডিও-জেলাশাসক’কে এলাকার অবস্থা অনুযায়ী আশু দাবিতে ডেপুটেশন দিতে হবে। নভেন্বরে দিল্লী অভিযান সংগঠিত করতে হবে। এবং দেশজুড়ে প্রচারের জন্য ৫টা মূল শ্লোগান ঠিক করা হয়। 

১) দাম বাঁধ কাজ দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও। 

২) দাম বাঁধো কাজ দাও, কাজের সঠিক মজুরি দাও ।

৩) বুলডোজার রাজ খতম কর, বাস-আবাস অধিকারকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাও।

৪) এমজিএনআরইজিএ’তে বছরে ২০০ দিন কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দাও।

৫) সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত মেহনতি, বয়স্ক ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৫০০০ টাকা পেনশন দাও। 

৮ আগস্ট আরজিকর হাসপাতালে নারকীয় ধর্ষণ-হত্যার পর পশ্চিমবাংলার জনচেতনায় একমুখী জাগরণ সঞ্চারিত হয়। মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত প্রতিবাদ প্রতিরোধের বৈচিত্রমূলক রুপ ও বৈশিষ্ট্য অতীতের যেকোনো অবস্থাকে ছাড়িয়ে যায়। তাই আয়ারলা’র জাতীয় কর্মসূচির সাথে সাথে রাজ্যের চলমান আন্দোলনে বিভিন্নভাবে আয়ারলার কর্মীরা সক্রিয় থাকে। বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন রুপে কর্মসূচি পালন করা হয়। সমস্ত ক্ষেত্রেই আরজিকর ও শক্তিগড় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলা হয়।

পুর্ব বর্ধমান জেলার ৬টা ব্লকে ডেপুটেশন দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রপতি’কে দাবি-সনদের মেমোরেন্ডাম পাঠানো হয়। কালনা ২নং, সদর ২নং, গলসী ২নং, মন্তেশ্বর, পুর্বস্থলী ১নং ও কাটোয়া ২নং ব্লকে এলাকার দাবীতে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন কোন ব্লকেই ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হচ্ছেনা। নির্বাচনের সময় মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাজ্য সরকার ৫০ দিন কাজ দেবে। কিন্তু এখনও একদিনও দেয়নি। আবাস যোজনার নতুন তালিকা প্রকাশ করা হল না। ঘরের অনুদান দিচ্ছেনা। ২০২২ সালের মধ্যে সমস্ত গৃহহীনদের পাকা ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল কিন্তু এখনও বহু গরিব মানুষকে ত্রিপলের তলায় বসবাস করতে হচ্ছে। শৌচাগার নিয়ে বহু প্রচার করলেও একটা গ্রামেই শতাধিক পরিবার থেকে শৌচাগার তৈরি করে দেবে বলে তৃণুমূল নেতারা ৯০০ টাকা করে জমা নিয়ে কয়েক বছর হল শৌচাগার তৈরি করেনি। বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের ক্ষতিপূরণের দাবী তোলা হয়। কালনা ও কাটোয়া মহকুমায় ব্যাপক পাট চাষ। এখন মরশুমে পাটের দাম ৩০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা কুইন্টালের মধ্যে। সরকারী সহায়ক মুল্য ৫৩৩৫ টাকা। তাই সরকারী দামে পাট ক্রয়ের দাবি তোলা হয়। চরের জমির পাট্টার দাবি করা হয়।

হুগলী জেলার ৩টি ব্লকে কর্মসূচি হয়। ধনেখালী ব্লকে ডেপুটেশন হয়। পান্ডুয়া ও বলাগড় ব্লকের ১টি করে অঞ্চল অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত হয়।

হাওড়া জেলার বাগনান ব্লকে ডেপুটেশন হয়, নেতৃত্বে ছিলেন নবীন সামন্ত ও সোনাতন মনি। নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর ২নং ব্লকে বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত হয়। নেতৃত্বে ছিলেন আনসারুল হক ও কাজল দত্তগুপ্ত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় বজবজ ব্লকে ডেপুটেশন সংগঠিত হয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় হাবড়া ১নং ব্লকের শ্রীকৃষ্ণপুর অঞ্চলে বিক্ষোভ সভা হয়। জলপাইগুড়ি জেলায় সদর ব্লকে অন্যান্য কৃষক সংগঠনের সাথে যুক্তভাবে বিক্ষোভ অবরোধ সংগঠতিত করা হয়।

আয়ারলার ১০টি দাবি হল,

১) পুনর্বাসনের বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া কোনো গরিব পরিবারের ঘরে বুলডোজার চালানো চলবে না। অবিলম্বে প্রত্যেক দরিদ্র পরিবারকে ৫ ডেসিমেল জমি সহ আবাস নিশ্চয়তা দিতে হবে। আবাস যোজনায় অর্থ বরাদ্দ ৫ লক্ষ টাকা করতে হবে।

২) অবিলম্বে এরাজ্যে এমএনআরইজিএ চালু করা ও এই প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজ, ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। রাজ্য সরকারকে প্রতিশ্রুত ৫০ দিনের কাজ অবিলম্বে চালু করতে হবে।

৩) প্রত্যেক অবসরপ্রাপ্ত গ্রামীণ মেহনতি সহ বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের মাসিক ৪ হাজার টাকা পেনশন সুনিশ্চিত করতে হবে।

৪) দলিত-আদিবাসী সহ গ্রামীণ দরিদ্রদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জল এবং বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ সুনিশ্চিত করতে হবে। ন্যূনতম মজুরি যথাযথ বৃদ্ধি ও কার্যকর করতে হবে।

৫) ভূমি সংস্কার পুনরায় শুরু করতে হবে। এরাজ্যে ভাগচাষি এবং লিজচাষীদের সরকারি সহায়তা ও অধিকার সুরক্ষিত করতে সরকারি নথিভুক্ত করতে হবে।

৬) খাদ্য সুরক্ষা আইনকে যথাযথ করতে চাল, গমের সাথে ডাল, তেল, মশলা সহ মাসিক ৩৫ কেজি খাদ্যশস্য দিতে হবে।

৭) এসসি/এসটি’দের উন্নয়নে এসসি/এসটি সাব-প্ল্যান কার্যকর করা ও এই খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।

৮) পিইএসও আইন ও অরণ্য আইন কার্যকর করে আদিবাসী, বনবাসীদের অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে।

৯) অবিলম্বে নতুন করে মাইক্রোফিন্যান্স নিয়ন্ত্রণ আইন এনে ঋণগ্রস্ত দরিদ্রদের সুরক্ষা সহ সব ধরনের ঋণ মকুব করতে হবে।

১০) আরজিকরের চিকিৎসক ছাত্রী ও শক্তিগড়ের আদিবাসী ছাত্রীর নারকীয় খুন-ধর্ষণের অপরাধীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

খণ্ড-26