পঞ্চ শহীদের স্মরণে ৮ এপ্রিল শহীদ দিবস পালন গান-এন্ড-শেল ফ্যাক্টরিতে
gun-and-shell-factory

১৯৬৯ সাল ৮ এপ্রিল সকাল ৭টা ৩২ মিনিট ৫ জন শ্রমিক মৃত্যুঞ্জয় কুন্ডু, হরপ্রসাদ আইচ, সৌমেন্দ্রনাথ রাউৎ, অমল ঘোষ ও ফৌজদার পাশোয়ানের তাজা রক্তে ভেসে গিয়েছিল কারখানার প্রবেশ পথ। কারখানা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সশস্ত্র রক্ষীবাহিনীর গুলিতে লুটিয়ে পড়েছিল ৪ জন শ্রমিক, ৫ম জনের মৃত্যু রহস্য জনক, জনশ্রুতি রক্ষীবাহিনী পিটিয়ে মেরেছে।

১৯৬৮ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর সারা দেশে রেল, ডাক, প্রতিরক্ষা সহ কেন্দ্রীয় সরকারি শ্রমিক কর্মচারীদের একদিনের সফল ও সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছিল। এই ধর্মঘটে তিনটি দাবি ছিল।

১) চাকুরীরত অবস্থায় মৃতের একজন পোষ্যের চাকরি, ২) প্রয়োজন ভিত্তিক ন্যুনতম মজুরি, ও ৩) তৃতীয় বেতন কমিশন গঠন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শ্রমিক কর্মচারীদের ওপর বরখাস্ত, চাকরিছেদ সহ অন্যান্য শাস্তি নামিয়ে এনেছিল। গান-এন্ড-শেল ফ্যাক্টরির শ্রমিক কর্মচারীরাও এর থেকে বাদ ছিলেন না। সেই অন্যায় ভাবে ছাঁটাই শ্রমিকদের পুনর্বহাল ও অন্যান্য শাস্তি প্রাপ্তদের শাস্তি মুকুবের দাবিতে কারখানায় কারখানায় আন্দোলন চলছিল।

সেদিন ৮ এপ্রিল ১৯৬৯ গান-এন্ড-শেল ফ্যাক্টরির অবিভক্ত মজদুর ইউনিয়নের নেতৃত্বে গেট মিটিং ছিল। মিটিং শেষে শ্রমিকরা যখন কারখানায় ঢুকছিলেন সেই সময় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সশস্ত্র রক্ষীবাহিনী নিরপরাধ শ্রমিকদের ওপর গুলি বর্ষণ করেছিল। তৎক্ষণাৎ ৪ জন শ্রমিকের রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে গিয়েছিল কারখানার গেটে, অসংখ্য শ্রমিক আহত হয়েছিলেন, বাকিরা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছিলেন। স্থানীয় মানুষ জনের সহায়তায় আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়। ইতিমধ্যে আরও একজন শ্রমিকের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, জনশ্রুতি আছে ওকে রক্ষীরা পিটিয়ে মেরেছিল।

বাংলা সহ সারা দেশের শ্রমিক কর্মচারীরা সেই বর্বর ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। ৯ এপ্রিল ১৯৬৯ স্থানীয়ভাবে বন্ধ পালিত হয়েছিল। ১০ এপ্রিল ১৯৬৯ সর্বাত্মক বাংলা বন্ধ হয় এই ঘটনার প্রতিবাদে।

তার পর থেকে এই দিনটি গান-এন্ড-শেল ফ্যাক্টরির শ্রমিক কর্মচারীদের কাছে এক স্মরণীয় দিন হয়ে আছে। এই দিনটি, শ্রমিক ঐক্য আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে শহীদ দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে ১৯৭০ সাল থেকে। শ্রমিক কর্মচারীদের লড়াইয়ের ফল স্বরূপ গান-এন্ড-শেল ফ্যাক্টরি কতৃপক্ষ এই দিনটি (৮ এপ্রিল) প্রতি বছর ছুটি ঘোষণা করে অন্য দিন কাজের পরিবর্তে।

গত ৮ এপ্রিল ২০২৪ গান-এন্ড-শেল ফ্যাক্টরির শ্রমিক কর্মচারীরা সকাল ৭টায় শহীদ বেদীর সামনে সমবেত হন। অবসর প্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারীরাও এসেছিলেন। ৭টা ৩২ মিনিটে শহীদদের প্রতি এক মিনিট নীরবতা পালন ও শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সমস্ত ফেডারেশন, সেন্ট্রাল ট্রেড ইউনিয়ন, কারখানার ইউনিয়ন ও এ্যাসোসিয়েশন নেতৃত্ব শহীদ বেদীতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এআইসিসিটিইউ’র পক্ষ থেকে বেনু ঘটক, এনপিডিইএফ’এর পক্ষ থেকে শেখর সরকার ও ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ইউনিয়নের সম্পাদক সুবীর কুমার বোস মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সুসজ্জিত মৌনমিছিল স্থানীয় এলাকা পরিক্রমা করে পুনরায় শহীদ বেদীতে ফিরে আসে। শহীদ স্মরণে, আপন মরণে, রক্ত ঋণ শোধ কর। শহীদের রক্ত, হবে নাকো ব্যর্থ। পঞ্চ শহীদ অমর রহে... ধ্বনিতে সভার সমাপ্তি হয়।

খণ্ড-31
সংখ্যা-13