আজকের দেশব্রতী : ০৩ আগস্ট ২০২৩ (অনলাইন সংখ্যা)
deshabrati-03-08-23asha-workers-strike-in-biharasha-workers-strike

বিহারে আশা কর্মীদের ধর্মঘট ২৪ দিন অতিক্রান্ত হল। কিন্তু সরকার তাদের অধিকার ও মর্যাদার দাবিগুলোকে আজও পূরণ করল না।

প্রায় মাসখানেক হতে চললো রাজ্য সরকারের এই অসংবেদী আচরণের জন্য গোটা গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থমকে দাঁড়িয়েছে — এটা বললেন শশী যাদব, যিনি নয় দফা দাবি সনদের ভিত্তিতে গ্রামীণ স্বাস্থ্য কর্মীদের এই ঐতিহাসিক আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিহারের স্বাস্থ্য দপ্তর এই সমস্ত অগণিত কর্মীদের সম্মানজনক ভাতা ও ন‍্যূন‍তম অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা দিতে অস্বীকার করছে। বর্তমানে বিহারের আশা কর্মীরা অন্যান্য অনেক রাজ্যের আশা কর্মীদের তুলনায় অনেক কম ভাতা পান। কোনো কোনো রাজ্যে পেনশন ছাড়াও আশা কর্মীরা অবসরের সময় এক লক্ষ টাকা পান, কিন্তু বিহারে এসবের বালাই নেই।

মহা গঠবন্ধনের সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে এই সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আজ এই সরকারই ক্ষমতায় রয়েছে। উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব যিনি স্বাস্থ্য দফতরেরও মন্ত্রী তিনি আশা কর্মীদের মাসিক ভাতাকে মাসিক মজুরিতে রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু বারবার এই নিয়ে তার কাছে দাবি জানানো সত্ত্বেও তিনি তার প্রতিশ্রুতি রাখেননি। এখন রাজ্য সরকার ধর্মঘটী স্বাস্থ্য কর্মীদের আন্দোলনকে ভাঙতে দমনের পাশাপাশি ভীতি প্রদর্শনের রাস্তা নিয়েছে। কিন্তু ধর্মঘটী আশা কর্মীরা তাদের দাবিতে অবিচল রয়েছেন।

বিহারে সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদক কুনাল বিহার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, অবিলম্বে ধর্মঘটী আশা কর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা শুরু করা এবং তাদের জীবন্ত সমস্যাগুলিকে সমাধান করার। সিপিআই(এমএল) ধর্মঘটী আশা কর্মীদের উপর নামিয়ে আনা হামলা ও ভীতি প্রদর্শনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, মাসিক দশ হাজার টাকা মজুরি ও পেনশনের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে তারা ধর্মঘটের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হন।

সরকারি হুমকি, দমন পীড়নকে অগ্রাহ্য করে আশা কর্মীদের ধর্মঘট এগিয়ে চলেছে।

nationwide-campaign-called-by-aiarlaagriculture-and-rural-labor-association

‘৫ নিশ্চয়তা’র দাবিতে দেশব্যাপী ১-১৫ আগস্ট ২০২৩ আয়ারলা প্রচারাভিযান পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে সুনিশ্চিত করতে আয়ারলা রাজ্য কমিটি গত ৩১ জুলাই ২০২৩ এক অনলাইন বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠক থেকে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

• ১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই প্রচারাভিযানে ‘৫ নিশ্চয়তা’র দাবিকে গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয় করে তুলতে সর্বত্র বৈঠক, সভা, পদযাত্রা, কনফারেন্স, লিফলেট বিতরণ, মাইক প্রচার ইত্যাদি করা হবে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দরিদ্রদের অপমানিত করেন এই বলে যে দরিদ্ররা সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের benefit seekers অর্থাৎ প্রকল্পের সুবিধা সন্ধানী বা সুযোগ সন্ধানী।

আমাদের প্রচার অভিযানে প্রধানমন্ত্রী/স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করতে হবে। বলতে হবে যে “সরকারি প্রকল্পগুলি ভিক্ষা বা দান নয়, এগুলি জনতার অধিকার”। স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে জনতার ট্যাক্সের টাকা থেকেই প্রকল্পের অর্থ আসে। দাবি তুলতে হবে যে অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে এই অপমানজনক শব্দ প্রত্যাহার করতে হবে এবং এই মন্তব্যের জন্য দরিদ্র দেশবাসীর সামনে ক্ষমাভিক্ষা চাইতে হবে।

• ৫ আগস্ট দেশব্যাপী ‘গ্রামীণ মেহনতিদের হরতাল’ সংগঠিত হবে। ঐ দিন ব্লক দপ্তর থেকে গ্রামস্তর — সাংগঠনিক ক্ষমতানুসারে ব্লক স্তরে যেকোনো এক বা একাধিক জায়গায় হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে হবে।

‘৫ নিশ্চয়তা’ চেয়ে হরতালের ডাক দেওয়া পোস্টারিং ও লিফলেটিং প্রয়োজন। গ্রামীণ বাজার এলাকায়, রেল স্টেশন, বাস স্টপেজগুলিতে হাতে লেখা পোস্টারিং করতে হবে।

 • ৯ আগস্ট একদিকে বিশ্ব আদিবাসী দিবস অন্যদিকে ঐ দিনই শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা সহ কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সংগঠনগুলি যৌথভাবে রাজ্যে রাজ্যে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে।

এরাজ্যে ঐদিন কলকাতা ও শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত মিছিল ও সমাবেশে আমরা শহর সংলগ্ন গ্রামাঞ্চল থেকে অংশগ্রহণ করছি। পাশাপাশি বাঁকুড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান সহ জেলাগুলিতে আদিবাসী জনতার অধিকার রক্ষায় বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালনের মধ্য দিয়ে সোচ্চার থাকছি।

• ১৫ আগস্ট দেশের স্বাধীনতা দিবস। ঐদিন দলিত-মেহনতি মহল্লাগুলিতে ‘পতাকা উত্তোলন’ সহ সংবিধান ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় আমাদের শপথ গ্রহণ করতে হবে।

যে ‘৫ নিশ্চয়তা’র দাবিতে আমরা সোচ্চার থাকছি সেগুলি হল।

১) কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই গড়ে ওঠা প্রতিটি জনবসতির সুসংহত সমীক্ষা সুনিশ্চিত করে নয়া আবাস আইন। আবাস অধিকারকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি। সকল ভূমিহীনের জন্য ৫ ডেসিমেল জমি সহ পাকা বাড়ি।

২) নারেগাতে ২০০ দিনের কাজ, ৬০০ টাকা মজুরি এবং সময় মেনে মজুরি প্রদান সুনিশ্চিত করা।

৩) প্রত্যেক বয়স্ক মানুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বিধবা মহিলাদের মাসিক ৩ হাজার টাকা পেনশন।

৪) শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অধিকার সহ দলিত, আদিবাসী, মেহনতি, দরিদ্র পরিবারে ২০০ ইউনিট বিনা পয়সার বিদ্যুৎ।

৫) দলিত-আদিবাসী-সংখ্যালঘুদের মর্যাদা সহ অধিকারগুলির নিশ্চয়তা

এ রাজ্যের বিশেষ দাবি

মোদী সরকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে টাকা পাঠানো বন্ধ করায় ১০০ দিনের কাজ এরাজ্যে বন্ধ আছে প্রায় পৌনে দু’বছর। এই কাজ চালু করতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকার নিজে চালু করবে বা বকেয়া মজুরি দেবে এই প্রতিশ্রুতি বারবার দিলেও বাস্তবে তা মিথ্যা আশ্বাসে পরিণত হয়েছে।

আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের ভূমিকাকেও তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন করব। একই প্রশ্ন তুলব আবাস যোজনা নিয়েও। ‘নিজ ভূমি, নিজ গৃহ’ জাতীয় রাজ্য প্রকল্পের ব্যর্থতা কেন, এই প্রশ্নও তুলে ধরতে হবে।

এনআরইজিএ নিয়ে আমরা রাজ্য কমিটি থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে রাজভবন অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। কয়েকটি জেলা/ব্লক কমিটির এই লক্ষ্যে আন্তরিক উদ্যোগে ছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষিত হতে এই কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়।

আগস্ট শেষে রাজ্য কমিটির বিশেষ বৈঠক থেকে ‘১০০ দিনের কাজ’ নিয়ে সুসংহত আন্দোলন কর্মসূচি (বড় পরিধিতে প্রচার, রাস্তা অবরোধ, জবকার্ডধারীদের রাজভবন অভিযান ইত্যাদি) গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

- আয়ারলা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি

judiciary-is-the-extended-armextended-arm-of-the-administration

কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত ভেরনন গঞ্জালভেস ও অরুণ ফেরেরাকে জামিন দিল। তাঁরা গত পাঁচ বছর ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন। শীর্ষ আদালত বলেছে, নিছক হিংসাত্মক কার্যকলাপের প্রচারসামগ্রি সঙ্গে রাখা বা কোনো সেমিনারে অংশ নেওয়া দমনমূলক ইউএপিএ আইনে ‘সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের’ আওতায় পড়ে না। তার ৫৪ পাতার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখাটাও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানো বা সেই সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণের সমার্থক ধরে তাকে অপরাধ বলে গণ্য করা যাবে না। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ‘এনআইএ’কে এটা প্রাথমিক ভাবে প্রমাণ করতে হবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। একমাত্র তখনই এটা প্রমাণিত হবে যে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তি সেই উদ্দেশ্য সাধনেই এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্যতা গ্রহণ করেছিলেন। বিচারপতি দীপঙ্কর বোস তাঁর রায়দানের সময় এই পর্যবেক্ষণ করেছেন।

কিছুদিন আগে সুধা ভরদ্বাজ জামিন পেলেন। এখনও কারারুদ্ধ হয়ে আছেন বেশ কয়েকজন প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক। মোদী জমানার কোনো ধরনের সমালোচনা, বিরুদ্ধ মত যে সহ্য করা হবে না তা নিশ্চিত করতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ঢালাও ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কুস্তিগিরদের করা গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার করল না দিল্লী পুলিশ। কিন্তু, উমর খলিদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক লক্ষ পাতার এফআইআর করতে তারা বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না।

মোদী তো খোলাখুলি বলেছিলেন, শহুরে নকশালদের কলম ও মস্তিষ্কই নাকি দেশের পক্ষে বিপজ্জনক। গুজরাট দাঙ্গায় মুখ্যমন্ত্রী মোদীর ঘৃণ্য ভূমিকা উদ্ঘাটিত করার জন্য বিবিসি’কে হেনস্থা করা, ভারতে মুষ্টিমেয় ধনকুবেরদের কব্জায় দেশের বিপুল সম্পদ কুক্ষিগত করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ক্রমেই গভীর দুর্দশায় নিক্ষিপ্ত হওয়ায় যে সামাজিক অসাম্য মোদীর আমলে ক্রমেই চওড়া হচ্ছে, অক্সফাম তার রিপোর্ট প্রকাশ করায় নানান হয়রানির মুখে পড়ে। বিচারব্যবস্থার ভূমিকাও খুবই সন্দেহজনক। যে শীর্ষ আদালতই রায় দিয়ে বলেছিল, জামিন দেওয়াটাই নিয়ম, বছরের পর বছর কারারুদ্ধ করে রাখাটা ব্যতিক্রম, সেই আদালতই আজ অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হয়ে বসে রয়েছে। অত্যন্ত আগ্রাসী প্রশাসনের সামনে বিচারব্যবস্থা আজ বারবার আত্মসমর্পণ করেছে। কাজ করেছে প্রশাসনেরই এক প্রসারিত বাহু হিসাবে। কিভাবে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের চোখ রাঙানির সামনে নতজানু আত্মসমর্পণ করে তার সাম্প্রতিক একটা উদাহরণ দেওয়া যাক।

ইডি’র কর্ণধার এস কে মিশ্রের অবসরগ্রহণের সময়সীমাকে মোদী সরকার বারবার বাড়িয়ে দেয়। এতে শীর্ষ আদালত ক্ষুব্ধ হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তির্যক মন্তব্য করে জানতে চায় কোন অপরিহার্যতা থেকে বারবার তার চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এমনও মন্তব্য করেন বিচারপতি, “আপনারা কি অন্য কোনো যোগ্য কর্ণধারকে খুঁজে পাচ্ছেন না, নাকি তার পেছনে রয়েছে অন্য কারণ, যা আদালতকে জানানো হচ্ছে না?” সুপ্রিম কোর্ট বলে যে ২০২১ ও ২০২২-এ এস কে মিশ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি বেআইনি। আর, কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে বলে যে শেষ বারের মতো আদালত তাঁর মেয়াদ ২০২৩’র ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়াচ্ছে। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার ফের তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানায়। মজার ব্যাপার হল, যে সুপ্রিম কোর্ট এত হুঙ্কার দিয়ে ওই সমস্ত মেয়াদ বৃদ্ধিকে বে-আইনি বলে, সেই সুপ্রিম কোর্টই এবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে “বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে” ইডি কর্ণধারের মেয়াদ বাড়িয়ে দিল ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত!

দিন কয়েক আগে মণিপুর নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কড়া মন্তব্য করে জানায় যে ওই রাজ্যে সাংবিধানিক শাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে মণিপুরের ধারাবাহিক জাতিদাঙ্গাকে থামাতে ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ভরসা না রেখে আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস যখন সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপের দাবি জানান, তখন সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি তা খারিজ করে বলেন, “আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে আমাদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়”।

গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজের তাঁবে এনে মোদী ফ্যাসিবাদ আজ দেশে কায়েম করেছে নিরঙ্কুশ দানবীয় শাসন — যা ভারতবর্ষে আগে কখনও দেখা যায়নি। এর বিরুদ্ধে সমগ্র দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে। উৎখাত করতে হবে এই শ্বাসরোধকারী দেশবিরোধী জমানাকে।

the-horrific-assaults-on-kuki-womencrisis-of-humanity-in-modi’s-india

মণিপুরে আইনের শাসন যে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে, মেইতেই জনতার দ্বারা দুই কুকি মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানো ও যৌন নির্যাতন করার ভাইরাল ভিডিও তা গোটা বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রাজ্যটিতে হিংসার আগুন জ্বলে ওঠার ঠিক পরের দিন, ৪ মে ২০২৩ স্থানীয় পুলিশের চোখের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার এফআইআর দায়ের হয়েছে ১৮ মে। আর ১২ জুন দুই নারী আন্দোলনকর্মী ও নর্থ আমেরিকান মণিপুর ট্রাইবাল অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছে মেলে এক অভিযোগ পাঠান। কিন্তু সেই ভিডিও ভাইরাল হওয়া ও সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই অপরাধকে আদালতের আওতায় আনা পর্যন্ত সময় লাগল বিজেপি-চালিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের এই ঘটনাকে স্বীকার করতে এবং তারপর কয়েক জনকে গ্রেপ্তার করতে!

এই ভিডিও আর সুপ্রিম কোর্টের সতর্কীকরণ নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা ভাঙতে সক্ষম হল, হিংসার আগুনে টানা ৭৯ দিন মণিপুর দগ্ধ হওয়ার পর! যে হিংসায়, এ’পর্যন্ত বলি হয়েছে ১৫০’রও বেশি প্রাণ, ঘরছাড়া হয়েছেন ৫০,০০০’রও বেশি মানুষ, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, অপবিত্র করা হয়েছে ২০০’র বেশি চার্চ, থানাগুলো থেকে প্রচুর অস্ত্র লুঠ করা হয়েছে। মণিপুর ভিডিও নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর কষ্ট আর বেদনার কথা নারীর সুরক্ষা ও মর্যাদার সাধারণ বার্তার একটা অংশ মাত্র, কারণ তিনি চরম বিবেকশূন্য হয়ে মণিপুরের ঘটনাকে রাজস্থান ও ছত্তীশগড়ে মহিলাদের ওপর আক্রমণের ঘটনার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস-শাসিত যে দু’টি রাজ্য নির্বাচন-মুখী। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এটা ছিল ঘটনাটাকে গুরত্বহীন করে নিছক একটি মমুলি ঘটনা হিসেবে দেখানো এবং মূলত খৃস্টান কুকি পার্বত্য উপজাতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপোষিত জাতি-নিধন অভিযানের প্রেক্ষিত থেকে এটিকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা।

প্রকৃত তথ্য, যা মণিপুর মুখ্যমন্ত্রী পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন, তা মোদীর অত্যন্ত হিসেব কষে কুম্ভীরাশ্রু মোচনকে একেবারে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন্দ্র সিং স্বীকার করেছেন নারীদের ওপর আক্রমণের শতাধিক ঘটনা ঘটেছে এবং আরও বলেছেন স্পষ্টতই এইসব ঘটনার প্রকাশ্যে আসা বন্ধ করতেই ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছে! মণিপুরের রাজ্যপাল বলেছেন তিনি কখনও এই ধরনের এবং এই বহরের হিংসা দেখেননি, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে তা অবহিত করেছিলেন বলেও জানিয়েছেন। ৪ মে থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত, হিংসা জ্বলে ওঠার প্রথম আট সপ্তাহে, প্রায় ৬০০০ এফআইআর দায়ের হয়েছে। এও জানা গেছে, ঐ ভাইরাল ভিডিও’র ভয়ঙ্কর ঘটনার এক ঘন্টার মধ্যেই আরেকটি ঘটনা ঘটেছে ইম্ফলের মেইতেই-প্রধান কোনাগ মানাগ অঞ্চলে; সেখানে ২১ এবং ২৪ বছরের দুই কুকি-ভগ্নীকে গণধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়। ঐ নিহত নির্যাতিতাদের বাবা, এক যাজক, ১৬ তারিখ এফআইআর দায়ের করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই নির্যাতনকারী খুনীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া প্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়া এবং কোনো পদক্ষেপ নেওয়া এমনকি মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনার কোনো আবেদন রাখার পরিবর্তে, সরকার ভিডিও পোস্ট করার জন্যে হুমকি ট্যুইটার দিতে ব্যস্ত। বিজেপি নেতারা সংসদে বাদল অধিবেশনের ঠিক আগে ভাইরাল ভিডিও’র প্রকাশ্যে আসা নিয়ে প্রশ্ন করছেন। ডিজিটাল বেশ কিছু দুর্বুদ্ধিসম্পন্ন সংবাদ সংস্থা মিথ্যা সংবাদ উপস্থাপন করে পুরো ব্যাপারটাতে একটা মুসলিম-বিরোধী মোচড় দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা মণিপুরে অন্য একটি মামলায় অভিযুক্ত এক মুসলিমকে, নগ্ন করে হাঁটানো ও যৌন নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিও’র ‘মূল অভিযুক্ত’ বলে মিথ্যা প্রচার করেছিল। জানা যাচ্ছে, দিল্লীর এক ধর্ষণ কাণ্ডকে, মণিপুরের এক ‘মেইতেই মহিলার ধর্ষণ’ বলে ব্যাপক মিথ্যা রটনার জেরেই ৪ মে কুকি মহিলাদের ওপর ভয়ঙ্কর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। যে মিথ্যা খবরে কুকি মহিলাদের আক্রমণের জন্য এক মুসলিমকে নির্যাতনকারী হিসাবে দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল, তার পিছনে এক অশুভ ছককে যে কেউ সহজেই বুঝতে পারবেন।

টানা তিনমাস মণিপুর জ্বলছে, মোদী সরকার এখনও কেন নির্বিকার? কোনও কোনও বিশ্লেষক মনে করেন যে মোদী সরকার আসলে রাজ্যটিতে জনসংখ্যাতাত্ত্বিক একটা বদল চাইছে যাতে মণিপুরের পার্বত্য বনভূমি থেকে কুকি সম্প্রদায়ের জমির অধিকার কেড়ে নেওয়া যায়। কেন? যাতে সেখানকার ভূগর্ভস্থ মহামূল্যবান খনিজ সম্পদ মাইনিং কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেওয়া যায় এবং মণিপুরকে কর্পোরেট লুঠের এক গবেষণাগারে পরিণত করা যায়। মণিপুর সরকার লাগাতার যেভাবে কুকিদের ‘মায়ানমারের বহিরাগত’ হিসাবে চিত্রিত করে চলেছে, তার পিছনে জাতি-সংঘাত ও মেরুকরণের একটি স্থায়ী পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র আছে বলেই মনে হয়, যাতে মণিপুরকে, অসমের মতোই আগ্রাসী সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের এক গবেষণাগারে পরিণত করা যায়। সংঘ-বিজেপি’র রাজনীতির অন্তর্বস্তু হল ‘ভাগ করে শাসন কর’, সংখ্যালঘু-বিরোধী বিদ্বেষ অভিযান এবং ভীড় হিংসার সংস্কৃতির ঢালাও বিস্তার, যে রাজনীতি ভারতকে একটি ঘৃণা ও ভয়ের প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করেছে। এই রাজনীতিই মণিপুরকে বাস্তবিকই একটি বারুদস্তুপের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, যে রাজ্যটিতে ঐতিহাসিকভাবেই চ্যুতিরেখা ও নানা জটিলতা রয়েছে। ২০১৭তে মণিপুরে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে নরেন্দ্র মোদীর সেই অভিযোগ সুবিদিত “মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ কংগ্রেসের রাজ্য শাসনের অধিকার বাজেয়াপ্ত হয়েছে”। আজ সময় এসেছে মোদীর সেই একই নীতি নিজেদের ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের উদ্দেশে প্রয়োগ করার এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পদত্যাগ করানোর।

২০০২-তে গুজরাট থেকে ২০০৬এ খয়েরলাঞ্জি, ২০০৮-এ কান্ধামাল এবং এখন ২০২৩’র মণিপুর — সব ক্ষেত্রেই নারীদেহ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিংসার নিশানাবদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাভারকারের ‘এক বৈধ রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে ধর্ষণের ‘সাফাই’ যেন প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এ কথা তিনি লিখেছিলেন তার ‘সিক্স গ্লোরিয়াস ইপকস্ অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি’ নামক বইয়ে। বিলকিস বানোর মামলাটিও আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে এইসব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পাওয়ার লড়াইটা কত দীর্ঘ এবং কত কঠিন। বিলকিস বানো যদিও বা এক দীর্ঘ সাহসী লড়াইয়ের মাধ্যমে ধর্ষণ-খুনে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করাতে পেরেছিলেন, মোদী সরকার স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সেই অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার পর সংঘ বাহিনী কর্তৃক ‘বীরের সম্বর্ধনা’ দিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটাই উল্টে দিল। এটা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যাবেন না যে, যেদিন এই ভিডিও প্রকাশ্যে এল, সেদিনই কুস্তিগীরদের যৌনহেনস্থা মামলায় ব্রিজ ভূষণকে জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে এবং দুটি ধর্ষণ ও খুনের আসামী রাম রহিমকে সপ্তমবারের জন্য প্যারোলে ছাড়া হয়েছে।

এই মণিপুরের মহিলারাই থাংজিয়াম মনোরমার নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে সাহসী প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন মণিপুরে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বাস্তবতার দিকে। কুকি মহিলাদের বিরুদ্ধে হিংসার ভয়ঙ্কর বাস্তবতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর এই মুহূর্তে জন্ম নিক এক তীব্র তীক্ষ্ণ গণরোষ, শেষ করে দিক এই শাসনের যা মণিপুরের জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতাকে প্রাতিষ্ঠানিক করে তুলেছে! সত্য এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া, ন্যায় ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার পথে এগিয়ে নিয়ে চলুক এই রাজ্যকে। মোদী সরকার মণিপুরে রাষ্ট্র-পোষিত হিংসাকে যতই তুচ্ছ করার, মামুলি ঘটনা বলে এড়ানোর চেষ্টা করুক, এই রাজ্য কিন্তু সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া শাসন এবং মোদীর ভারতে মানবতার ক্রম বর্ধমান সংকটকেই আয়নায় তুলে ধরেছে। গুজরাট ২০০২ বাজপেয়ী জমানাকে বিদায় দিয়েছিল; ২০২৩’র মণিপুর ভারতবাসীকে, ২০২৪-এ সর্বনাশা মোদী শাসনকে ছুঁড়ে ফেলতে সংকল্পবদ্ধ করুক!

- এমএল আপডেট সম্পাদকীয়, ৩১ জুলাই ২০২৩

july-28-celebrationjuly-28-celebration
দার্জিলিং

কমরেড চারু মজুমদারের ৫২তম শহীদ দিবস ও ৪৯তম পার্টি পুনর্গঠন দিবসে প্রত্যেকবারের মতো এবারেও দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির শহর থেকে গ্রাম, ফাঁসিদেওয়া থেকে খড়িবাড়ি, পার্টির জেলা নেতৃত্ব থেকে কর্মীরা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালন করতে তৎপর ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক কমরেড অভিজিৎ মজুমদার।

শিলিগুড়ি : পার্টি সার্কুলার অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বদলে জেলা জুড়ে বিকেন্দ্রীগতভাবে সংগঠনকে সুদৃঢ়, সুসংহত ভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্রাঞ্চ ও লোকাল কমিটির স্তরে সংকল্প দিবসের বার্তা নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ২৮ জুলাই সকালে শিলিগুড়ি সুভাষপল্লিস্থিত কমরেড চারু মজুমদারের আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করেন রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ সহ উপস্থিত জেলা ও লোকাল কমিটির নেতৃত্ব ও কর্মীরা। রাজ্য সম্পাদক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে চারু মজুমদারের প্রাসঙ্গিকতা, ফ্যাসিস্ট বিজেপি যে ক্রমবর্ধমান বিপদ এবং রাজ্যে চলমান তৃণমূলী সন্ত্রাস নিয়ে বলেন। এবং এসবের মুখোমুখি হতে হলে সংগঠন এবং একমাত্র সংগঠনকে শক্তিশালী করেই যে এগিয়ে যেতে হবে সেই বিষয়টি সকলের সামনে রাখেন। বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ।

শিলিগুড়ি জেলা কার্যালয়ে শিলিগুড়ি লোকাল কমিটি ও ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি লোকাল কমিটি একত্রিতভাবে একটি সভা করে। সেখানে সদস্যদের উপস্থিতি আশানুরূপ না হলেও উপস্থিত সকলেই সংগ্রামী উদ্দীপনা নিয়েই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন। সংকল্প দিবসের আহ্বান পাঠ করেন শাশ্বতী সেনগুপ্ত। সংকল্প দিবসের আহ্বানের ওপর বক্তব্য রাখেন শিলিগুড়ির লোকাল কমিটি সম্পাদিকা মুক্তি সরকার ও শাশ্বতী সেনগুপ্ত। বিষয়গুলি সামগ্রিকতার সঙ্গে তুলে ধরেন এবং ব্যাখ্যা করেন রাজ্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার। উপস্থিত কমরেডরা সকলেই সাংগঠনিক খামতি মিটিয়ে সংগঠনকে নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

শক্তিগড় ব্রাঞ্চ কমিটি : শিলিগুড়ির শক্তিগড়ে দুটি ব্রাঞ্চ কমিটির উদ্যোগে শহীদ দিবস পালন করা হয়। কমরেড চারু মজুমদারের প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হয়। উপস্থিত কর্মীদের সামনে ২৮ জুলাইয়ের সংকল্প পড়ে শোনান শাশ্বতী সেনগুপ্ত, এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সংকল্প বা পার্টির ২৮ জুলাইয়ের আহ্বানের তাৎপর্য সংক্ষেপে উপস্থিত সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন। ভবিষ্যতে স্থানীয়স্তরের এবং জেলাগত ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে আন্দোলনমূখি প্রতিরোধ তৈরি করার মধ্য দিয়ে সংগঠনের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার সংকল্পে কর্মসূচি শেষ হয়।

ফাঁসিদেওয়া : ফাঁসিদেওয়ার রাঙাপাণিতে ছয়টি ব্রাঞ্চ কমিটি পক্ষ থেকে শহীদ দিবস পালন করা হয়। উপস্থিত জেলা সম্পাদক পবিত্র সিংহ জাতীয় ও রাজ্য পরিস্থিতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন উপস্থিত কর্মীদের সামনে। পার্টি কাঠামোর বুনিয়াদী কাঠামো ব্রাঞ্চগুলিকে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে অনেক বেশি মানুষকে সমাবেশিত করে সংগঠনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আহ্বান রাখেন।

খড়িবাড়ি : পার্টির বহুদিনের কাজের জায়গা খড়িবাড়ির বুড়াগঞ্জে নকশালবাড়ি আন্দোলনের অগ্রণী সেনানী জেলা সদস্য খেমু সিংহ ও বন্ধু বেকের উপস্থিতিতে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের ৫২তম শহীদ দিবস ও পার্টি পুনর্গঠনের ৪৯তম বার্ষিকী পালিত হয়। পাঠ করা হয় ২৮ জুলাইয়ের সংকল্প।

উদ্যোগ ছোট হোক বা বড়ো, উদ্দীপনার ঘাটতি কোথাও ছিলো না একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। সংগঠনকে সুসংহত, শক্তিশালী করার চেষ্টার মধ্য দিয়েই ফ্যাসিস্ট বিজেপি ও এই রাজ্যের সরকারের জনবিরোধী সমস্ত উদ্যোগকে পদানত করে আমরা এগিয়ে যাবো আগামীর দিকে।

বাহান্নতম শহীদ দিবসেও তাইতো নিশ্চিত বলা যায়, স্বপ্নের মৃত্যু হয় না…।

স্বপ্নদ্রষ্টারও না!

কমরেড চারু মজুমদার লালসেলাম।

28 July in all district

ফটো : শিলিগুড়ি-হাওড়া-কলকাতা একত্রে

পুর্ব বর্ধমান

বর্তমানে দেশজুড়ে ফ্যাসীবাদকে মোকাবিলার জন্য আগামী ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে জোট গড়ে উঠেছে। এই জোটের শরিক সিপিআই(এমএল) লিবরেশন। তাই এই জোটে পার্টির ভুমিকা জোরালো করার জন্য দেশজুড়ে পার্টির অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য এবং পার্টির বিস্তারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি পার্টি ব্রাঞ্চ ও লোকাল কমিটিগুলিকে পুনর্গঠন ও পুনরুজীবন এবং পার্টি সদস্য সংগ্রহ অভিযানের ডাক দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ভারতীয় বিপ্লবের স্বপ্নদষ্টা কমরেড চারু মজুমদারের ৫২তম শহীদ দিবসে ও পার্টি পুনর্গঠনের ৪৯তম বার্ষিকীতে এই অভিযানের সুচনা করার ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।

পুর্ব বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন ব্লকে এই দিনটি পালিত হয়। শহীদ বেদীতে মাল্যদান, নিরবতা পালন ও কেন্দ্রীয় কমিটির দেওয়া সপথ বার্তা পাঠ করে আলোচনা করা হয়। কালনা-২, মেমারী-১, সদর-১, সদর-২, মন্তেশ্বর, নাদনঘাট, কাটোয়া-২, ভাতার এবং পুর্বস্থলী-২ ব্লকে এই কর্মসুচি পালন করা হয়। পুর্বস্থলী-২ ব্লকের ফলেয়া স্টেশন বাজারে এই কর্মসুচির পরে মিছিল করে মনিপুরে পৈষাচিক নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও দাঙ্গাসৃষ্টি করে শতশত মানুষের হত্যার জন্য দায়ী বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করে প্রতিবাদ সংগঠিত করা হয়।

হাওড়া

বালি-বেলুড় লোকাল কমিটি : গত ২৮ জুলাই সকাল সাড়ে নটায় জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্তের উপস্থিতিতে বালি-বেলুড় লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে বালি জোড়া অশত্থতলার শহীদবেদীতে পালিত হয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের শহীদ দিবস। রক্ত পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে পার্টির হাওড়া জেলা সম্পাদক দেবব্রত ২৮ জুলাইয়ের তাৎপর্য এবং বর্তমান সময়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ভারত গঠনে কমরেড চারু মজুমদারের উত্তরসূরিদের ঐতিহাসিক কর্তব্যের কথা তার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছে তুলে ধরেন।

বালি গ্রামাঞ্চল : গত ২৮ জুলাই কমরেড চারু মজুমদারের শহীদ দিবস পালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় হাওড়া জেলার বালি গ্রামাঞ্চলে নতুন বাজার এলাকায়। সিপিআই(এমএল)-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান এবং পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দীপক চক্রবর্তী, পার্থ মিত্র এবং বাবলু গুহ পথসভায় বক্তব্য রাখেন। পার্টি সদস্যদের ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী স্লোগানের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সমগ্র সভাটি সঞ্চালনা করেন বালি গ্রামাঞ্চলের লিডিং টিমের আহ্বায়ক মাধব মুখার্জী।

বাঙালপুর-হাটুরিয়া : বাঙালপুর-হাটুরিয়া লোকাল কমিটির উদ্যোগে শহীদ দিবস পালিত হয় ২৮ জুলাই, রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন নবকুমার মণ্ডল, মহিলা সমিতির আলপনা রুইদাস, দিলীপ দে, তপন সেখ, মনেস আদক ও অন্যান্য কমরেডরা শহীদ বেদীতে মাল্যদন করেন। সংক্ষিপ্ত সভা ও স্লোগানের মাধ্যমে শেষ হয় কর্মসূচি।

এই দিনেই সন্ধ্যায় জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্তের উপস্থিতিতে তপন শেখের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ সভার। সেখানে গত পঞ্চায়েতের মূল্যায়ন ও আগামী সময়ে বিজেপি-আরএসএস বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

মধ্য হাওড়া লোকাল : পার্টির মধ্য হাওড়া লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে পালিত হয় ২৮ জুলাই’এর কর্মসূচি হালদার পাড়া শহীদবেদীতে। উপস্থিত ছিলেন এই এলাকার অন্যতম পার্টি সংগঠন রতন দত্ত, লোকাল সম্পাদক পরিতোষ ব্যানার্জী সহ অন্যান্য সাথীরা।

শহীদস্মরণ কর্মসূচী ও সংক্ষিপ্ত সভার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয় এই অনুষ্ঠান।

আড়ুপাড়া লোকাল : আড়ুপাড়া-জগাছা লোকাল কমিটি শহীদ দিবস পালন করে। পতাকা উত্তোলন করেন বুলা মাইতি। শহীদ বেদীতে মাল্যদানের পর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সন্ধ্যায় কর্মী বৈঠক ও সংকল্প পত্র পাঠ হয়।

sarvodaya-sangh-press-meetpress-meet-in-kolkata

উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার রাজ!        
উচ্ছেদ করা হলো গান্ধীবাদী সর্বসেবা সংঘ!        
কলকাতায় প্রতিবাদ।

উত্তর প্রদেশে ‘বুলডোজার রাজ’ চালু করে বিজেপি সরকার সমস্ত ভিন্ন মতাবলম্বীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে তুলেছে। যোগী-মোদী রাজত্বে সংখ্যালঘু, দলিত, কমিউনিস্টদের পাশাপাশি হামলা নামানো হয়েছে গান্ধীবাদীদের উপর। উত্তরপ্রদেশের বেনারসে গান্ধীবাদী আদর্শে কর্মরত সর্বসেবা সংঘ প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে, যার বেনারস ক্যাম্পাস, ১৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত, বিগত ৬৩ বছর ধরে কাজ চালাচ্ছে সেটি এখন পুলিশী দখলদারীর মধ্যে। সর্বসেবা সংঘ এই ক্যাম্পাস নির্মাণে ১৯৬০ সালে শহরের উপকন্ঠে রেলের কাছ থেকে ১৪ একর জমি কেনে। এইখানেই গড়ে ওঠে সর্বসেবা আশ্রম। ১৯৬৩ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণ এখানে গড়ে তোলেন ‘গান্ধী বিদ্যা সংস্থা’ নামে বুনিয়াদি শিক্ষার বিদ্যালয়। এই সমগ্র প্রতিষ্ঠানটিকে উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে। অজুহাত হিসাবে রেলের জমি বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, আসলে এ হল ভিন্ন মতাদর্শকে মুছে দেওয়ার চক্রান্ত! ভয় ও আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি করা। একে দেশের বুকে ফ্যাসিষ্ট একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা রূপে চিহ্নিত করে সংগঠনের পক্ষ থেকে সারা দেশজুড়ে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়।

গত কয়েক মাস যাবৎ উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ও উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার এই আশ্রম তুলে দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। জমির কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো কথা শুনতে নারাজ। ওই কেন্দ্রের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোনও আলোচনায় বসতে চায়নি। সংশ্লিষ্ট গ্রামটিকে তিনি নাকি ‘দত্তক’ নিয়েছেন। অথচ গ্রামবাসীদের সমর্থন রয়েছে সর্বসেবা সংঘের প্রতি। গত একমাস যাবৎ গান্ধীবাদী কর্মীরা আশ্রম প্রাঙ্গণে অবস্থান করছিলেন। তাঁরা জেলা আদালত থেকে হস্তক্ষেপ ও উচ্ছেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন। আদালত নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে ২৮ জুলাই শুনানির তারিখ দেয়। এই সুযোগে প্রায় ১০০০ রাজ্য পুলিশ ও আরপিএফ গত ২৩ জুলাই আশ্রমটি দখল করে। আশ্রমিকদের তাদের ঘর থেকে বহিস্কার করে ফাইল, দরকারি চিঠিপত্র, লাইব্রেরী তছনছ করে দেয়। তারপর শিশুদের বুনিয়াদি বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়। ২৩ জুলাই সর্বোদয় কর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন সর্বসেবা সংঘের সর্ব ভারতীয় সভাপতি চন্দন পাল ও বেনারস মণ্ডলের সভাপতি রাম ধীরাজ। তারা সম্প্রীতি জামিনের মুক্তি পেয়েছেন।

এর প্রতিবাদে কলকাতা প্রেস ক্লাবে গত ৩১ আগস্ট ২০২৩ অনুষ্ঠিত হল প্রতিবাদী সাংবাদিক সম্মেলন। বিজেপি বাদ দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সর্বভারতীয় সভাপতি চন্দন পাল এই সংগঠনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের কালপর্বে মহাত্মা গান্ধী গড়ে তুলেছিলেন ‘সর্বসেবা সংঘ’। যা গত ১০০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রত্যন্ত গ্রামে ও শহরতলিতে দরিদ্র মানুষের মধ্যে গঠনমূলক কাজ করে চলেছে। আমাদের রাজ্যেও পশ্চিমবঙ্গ সর্বোদয় মন্ডল দীর্ঘ আট দশক যাবৎ মহাত্মা গান্ধীর আদর্শকে পাথেয় করে কিছু গ্রামে বিভিন্ন গঠনমূলক কাজ করে চলেছে। চরকা ও তাঁতের প্রচলন, হস্ত শিল্পের সংরক্ষণ, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ, বুনিয়াদি শিক্ষার প্রচলন প্রভৃতি গঠনমূলক কাজই হচ্ছে আমাদের কাজের বৈশিষ্ট্য। মহাত্মা গান্ধী নিহত হবার পর আচার্য বিনোবা ভাবে ‘সর্বসেবা সংঘের’ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গে পরবর্তী কালে এই গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। বিনোবাজি ও জয়প্রকাশজির উদ্যোগে এবং রাষ্ট্রপতি বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদের একান্ত সমর্থনে ১৯৬০ সালে বেনারসের উপকন্ঠে রেলের কাছ থেকে ১৪ একর জমি কেনা হয়। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে গুজরাট সরকার মহাত্মার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ‘সবরমতি আশ্রম’ দখল করেছে। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন এখন আক্রমণের সম্মুখীন। দেশ আজ হিংসায় ছেয়ে গিয়েছে। মণিপুরে কি হচ্ছে আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংস্কারের নামে জালিয়ানওয়ালাবাগের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এই বছর মোদী সরকার ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার’ দিয়েছে মহাত্মার হত্যাকাণ্ডের সমর্থক গোরক্ষপুরের গীতা প্রেসকে।

সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রদেশ কংগ্রেসের সহ সভাপতি ডাঃ মায়া ঘোষ, পিডিএসের সমীর পুততুন্ড, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জয়তু দেশমুখ, সপ্তাহের সম্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী, সিপিআই’এর সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য প্রবীর দেব, কালান্তরের সম্পাদক কল্যান ব্যানার্জী, প্রবীন গান্ধীবাদী ও মানভুম ভাষা আন্দোলনের নেতা কাজল সেন, প্রসাদ দাসগুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ সর্বোদয় মন্ডলের সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোড়ুই, কংগ্রেস নেতা অমিতাভ সিংহ প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সপ্তাহ পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য শান্তনু দত্ত চৌধুরী।

convention-organized-by-isf

১ আগস্ট ২০২৩, আইএসএফ’এর কনভেনশন হয়। এই কনভেনশনে ভাঙরের মানুষের জমায়েতের সাথে অন্যান্য কিছু জেলার মানুষ ছিলেন। যুবকেন্দ্র হল ছাপিয়ে জমায়েত হয়েছে। মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রথমে ভাষণ দেন সামসুর মল্লিক। তিনি বলেন, বিজেপির বিপদ এবং কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে উৎখাতের বিষয়টাকে প্রাধান্যে রেখে রাজ্যে তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সকল বামপন্থী গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে আইএসএফ আন্দোলন গড়ে তুলতে চায়। আগামী দিনে প্রশাসনের কাছে ডেপুটেশন কর্মসূচী নেওয়া হবে বলে জানান।

এরপর, শহীদ পরিবারের সদস্যদের এবং গুলিতে আহত কর্মীদের মঞ্চে তোলা হয়। তাঁদের মধ্য থেকে কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।

এরপর ‘আমরা আক্রান্ত’ ফোরামের অম্বিকেশ মহাপাত্র, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের দিবাকর ভট্টাচার্য্য, সিপিআই’এর গৌতম রায়, সিপিআইএম’এর শমীক লাহিড়ী, গাইঘাটার নিহত শিক্ষক বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রতিমা বিশ্বাসকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়।

এরা সবাই বক্তব্য রাখেন এবং শেষ বক্তা ছিলেন নওশাদ সিদ্দিকি।

নীতীশ রায়ের বুলডোজার রাজ বিরোধী গানের মধ্য দিয়ে কনভেনশন শেষ হয়।

প্রত্যেক বক্তাই বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং ২০২৪-এ বিজেপিকে উৎখাত করার বিষয়টি রাখেন। সাথে সাথে রাজ্যে তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন।

communal-conflict-in-haryanahindutva-ideology

গত ৩১ জুলাই সোমবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদ হরিয়ানার নুহ জেলায় ‘ব্রিজ মন্ডল জলাভিষেক যাত্রা’ সংগঠিত করে। নুহ জেলা মুসলিম অধ্যুষিত। মিছিল সশস্ত্র ছিল, মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে লাঠি, তরোয়াল ছিল, কারো কারো হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা যায়। মিছিল থেকে মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বিদ্বেষ ও প্ররোচনামূলক উক্তি ভেসে আসছিল, এবং মিছিল গুরুগ্রাম-অলওয়ার জাতীয় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় মুসলিম জনগণ মিছিলকে আটকান, মিছিল লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়, মিছিল থেকেও পাল্টা ইটবৃষ্টি হতে থাকে। ঘটনার বিকাশ দেখে মনে হয়, সংঘর্ষের এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েই ছিল এবং দুই গোষ্ঠীই পরস্পরের মোকাবিলায় নিজেদের সজ্জিত করেছিল।

তবে, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ নুহতেই আটকে রইল না, ছড়িয়ে পড়ল। নুহ থেকে মাত্র ৪০ কিমি দূরে গুরুগ্রামের বাদশাহপুরে ২০০ জনের মতো হিন্দুত্ববাদী জনতার একটা দল মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলোতে আক্রমণ হানল, দোকানগুলোতে লুটপাট হল, বিরিয়ানি ও মাংসের দোকানগুলোতে ভাঙচুরের সঙ্গে আগুন লাগানোও হল, একের পর এক গাড়ি অগ্নিদগ্ধ হল। সোমবার গভীর রাতে হিংস্র হিন্দুত্ববাদী জনতা গাড়ি-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের সাথে গুরুগ্রামের সেক্টর ৫৭’র আঞ্জুমান জামা মসজিদে আক্রমণ হানে, আগুন লাগায় এবং ছোরা চালিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে মসজিদের ১৯ বছরের ইমাম মৌলানা সাদকে। অথচ এই ইমামের মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছিল না এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর এই আকাঙ্খা — হে আল্লা, এমন ভারত দাও যেখানে হিন্দু-মুসলমান যেন এক থালা থেকে রুটি ভাগ করে খেতে পারে! নুহ, গুরুগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকার এই সাম্প্রদায়িক হিংসায় এখনও পর্যন্ত ছ’জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৭০’র জনেরও বেশি, পুলিশের ৮টা গাড়ি আগুনে পুড়েছে, আরও অন্তত ১২০টা গাড়ি অগ্নিদগ্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ১১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হরিয়ানা সরকার বলেছে, এলাকায় ‘তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা’ বিরাজ করছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুগ্রাম ও নুহতে ৩০ কোম্পানি আধা সেনা পাঠানো হয়েছে, নুহতে আপাতত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, অশান্ত এলাকাগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কয়েকদিন বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

যদি মনে করা হয় যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিল নুহতে ঢোকা ও মিছিল থেকে প্ররোচনামূলক উক্তির জন্যই মুসলিমরা মিছিলে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করল এবং তার থেকেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সূচনা ঘটল, তবে তারমধ্যে পরিস্থিতির যথার্থ বিশ্লেষণ মিলবে না। এই সাম্প্রদায়িক বিরোধকে উস্কিয়ে তোলার জন্য কিছু সময় ধরেই পরিস্থিতিতে উত্তেজনা জোগানো হচ্ছিল। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো ও বিজেপির তরফে যেমন মুসলিম-বিরোধী প্রচার ছড়ানো হচ্ছিল, তারই পাশাপাশি কয়েকটা প্ররোচনামূলক ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। এই উস্কানিমূলক ভিডিওগুলোর দুটো ছিল মনু মানেসরের ও একটা বিট্টু বজরঙ্গির। বজরং দলের নেতা স্বঘোষিত গোরক্ষক মনু মানেসর মূল অভিযুক্ত নাসির ও জুনেদ নামে দুই মুসলিমের হত্যায় যাদের আগুনে পোড়া দগ্ধ দেহ ফেব্রুয়ারি মাসে পাওয়া যায় রাজস্থানের ভিওয়ানি জেলায়। এই ভিডিওগুলো যে যথেষ্ট প্ররোচনা ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে উত্তেজনাপ্রবণ করে তুলেছিল সে কথা এখন হরিয়ানার বিজেপি সরকারই স্বীকার করছে। হরিয়ানার বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ বলেছেন, “হিংসায় সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা রয়েছে। ভিডিও কীভাবে ছড়িয়ে পড়ল তা দেখতে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।” মনু মানেসর জানিয়েছিলেন তিনি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলে অংশ নেবেন, আর সেই সংবাদই পরিস্থিতিকে তপ্ত করে তোলার সাথে মুসলিম জনগণকে ক্ষিপ্তও করে তোলে। হত্যায় অভিযুক্ত হলেও সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সবাই তাকে দেখতে পেলেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না, আর হরিয়ানার বিজেপি সরকার বলছে মনু মানেসরের কোনও সন্ধান তাদের কাছে নেই! মেওয়াট বিকাশ সভা নামে সামাজিক সংগঠনের জনৈক সদস্য বলেছেন, “এটা ছিল গুরুগ্রাম সংলগ্ন মুসলিম অধ্যুষিত নুহ অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উস্কিয়ে তোলার পরিকল্পিত প্রয়াস। প্ররোচনা সৃষ্টিকারী ভিডিওগুলো প্রচারিত হতে থাকলেও পুলিশ যাত্রাকে মেওয়াটে (নুহ যে অঞ্চলে পড়ে) ঢুকতে দেয়।” গুরুগ্রামের বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাও ইন্দারজিৎ সিংও প্রশ্ন তুলেছেন — বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের লাঠি, তরোয়াল নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কেন। নুহর বিধায়ক চৌধরী আফতাব বলেছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিল অশান্তি সৃষ্টি করবে বলে তিনি মনোহরলাল খট্টর প্রশাসনকে মিছিলে অনুমতি না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। এ’সত্ত্বেও অনুমতি শুধু দেওয়াই হয়নি, সাড়ম্বরে তার সূচনা ঘটান বিজেপির জেলা সভাপতি গারগি কাক্কার। গুরুগ্রামের বাদশাহপুরে ১৪৪ ধারা বলবৎ হলেও ২০০ জনের একটা দল মোটরবাইক ও এসইউভিতে এসে মূল বাজারে, বিরিয়ানি ও মাংসের দোকানগুলোতে আগুন লাগায়। আর এই হামলার সময় ঘটনাস্থলের ত্রিসীমানায় পুলিশকে দেখা যায়নি। অতএব, সাম্প্রদায়িক বিরোধের পরিকল্পিত প্রয়াস ও তাতে প্রশাসনিক মদতকে বুঝতে পারাটা কঠিন নয়।

driven-by-hindutva-ideology

হরিয়ানার সাম্প্রদায়িক বিরোধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয় কিন্তু একেবারেই সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা দুটি ঘটনার উল্লেখ আলোচ্য প্রসঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক হবেনা বলেই মনে হয়। প্রথমটি জয়পুর-মুম্বাই সেন্ট্রাল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে পুলিশ অফিসার টিকা রাম মীনা-সহ চারজনকে আরপিএফ কনস্টেবল চেতন সিং’এর হত্যার ঘটনা। এই পুলিশ অফিসার বাদে আর যে তিন যাত্রীকে চেতন সিং হত্যা করে তারা সবাই মুসলিম। উত্তরপ্রদেশের হাথরসের বাসিন্দা চেতন সিং সেদিন তার রাইফেল থেকে ১২ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল এবং এক মুসলিম যাত্রীকে বন্দুকের ডগায় দুটো কামরা পার করে প্যান্ট্রিকারে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। তার গুলির শিকার এক নিহত ব্যক্তিকে সামনে রেখে চেতন সিং সেদিন সবার সামনে বলেছিল, “হিন্দুস্থানে থাকতে হলে, ভোট দিতে হলে মোদী আর যোগীকে ভোট দিতে হবে। আর আপনাদের ঠাকরেকে।” মোদী-যোগী জমানায় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং মেরুকরণের মাত্রা কি ভয়ংকর পর্যায়ে পৌঁছেছে, চেতন সিং সংঘটিত হত্যাকাণ্ড তার এক অকাট্য নিদর্শন।

দ্বিতীয় ঘটনাটির কেন্দ্রে রয়েছেন নীতির প্রতি অবিচল থাকা উত্তরপ্রদেশের আইপিএস অফিসার প্রভাকর চৌধুরী। তিনি উত্তরপ্রদেশের বারেলির এসএসপি’র দায়িত্বে ছিলেন। রবিবার ৩০ জুলাই বারেলিতে হিন্দুত্ববাদী কাঁওয়ারিয়ারা তাদের মিছিল মুসলিম এলাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ডিজে বাজানোর অনুমতি চেয়েছিল। সেই পথে একটা মসজিদও ছিল। কিন্তু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনায় প্রভাকর চৌধুরি মিছিল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে যাওয়ার ও ডিজে বাজানোর অনুমতি দেননি। কাঁওয়ারিয়ারা ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য জেরাজেরি করতে থাকলে লাঠি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়। প্রভাকর চৌধুরী এইভাবে নীতির প্রতি অবিচল থাকলেন, বিজেপি নেতাদের চাপের কাছে নত হলেন না। কিন্তু সেদিন রাতেই তাঁর বদলির নির্দেশ এল, যে বদলি তাঁর ১৩ বছরের কর্মজীবনে হলো ২৩তম। (তাঁর বদলির সাথে অন্য দুই পুলিশ কর্মীকেও অবশ্য সাসপেন্ড করা হয়।) যোগী আদিত্যনাথ তাঁকে ‘এনকাউন্টার’ অনুগত অফিসারে পরিণত করতে পারেননি। এই ঘটনা যদি এক অফিসারের মেরুদণ্ডর জোর ও নীতিনিষ্ঠতাকে প্রতীয়মান করে, তবে তা মোদী-যোগী জমানায় শাসকের সংখ্যাগুরুবাদী স্বৈরিতারও জানান দেয়। প্রভাকর চৌধুরী তাঁদের নির্দেশের অন্যথা ঘটানোয় বিজেপি নেতারা অবলীলায় তাঁকে প্রতিকূল জায়গায় ঠেলে দিয়ে শাস্তি দিলেন।

দুটি ঘটনাই সংখ্যাগুরুবাদী জাতীয়তাবাদের প্রকৃতিকে নির্দেশিত করছে। একটি যদি ঐ জাতীয়তাবাদের প্রভাবে ঘটা মর্মান্তিক পরিণতিকে দেখায়, অন্যটি তবে ঐ জাতীয়তাবাদে নিহিত নীতির নির্বাসন ও সংখ্যাগুরুবাদী স্বেচ্ছাচারিতারই নির্দেশক। ব্যক্তি বিজেপির বশ্য না হলেও প্রতিষ্ঠান তাদের কব্জাতেই থাকে এবং তাদের সাম্প্রদায়িক স্বার্থের অভিমুখেই সেই প্রতিষ্ঠান চালিত হয়। সংখ্যাগুরুবাদীদের সাম্প্রদায়িক অভিপ্রায়েই আজ রাষ্ট্র চালিত হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের বিশ্লেষক সুশান্ত সিং একটি ট্যুইটে যথার্থই বলেছেন, “মেওয়াটে যা ঘটছে তা মণিপুরে ঘটা ঘটনাবলীরই আর একটা প্রকাশ। রাষ্ট্র ভেঙে পড়েনি, তা দুষ্কর্মের মদদদাতা হয়ে উঠেছে। এটাই মণিপুর নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন নীরবতার ব্যাখ্যা দেয়।” হরিয়ানার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ স্পষ্টতই ছিল রাষ্ট্রের একা নীল নকশার অভিপ্রেত রূপায়ণ, এবং এর পুনরাবৃত্তিকে প্রতিহত করতে হলে রাষ্ট্রটাকেই পাল্টাতে হবে, তার বর্তমান শাসকদেরই সর্বাগ্রে অপসারিত করতে হবে।

we-want-justice-for-the-tribalsvictims-of-rape-in-manipur

মণিপুরের আদিবাসীদের সুরক্ষা দিতে ব‍্যর্থ কেন্দ্র ও রাজ‍্যের বিজেপি সরকারকে ধিক্কার

আদিবাসীদের ওপর ক্রমবর্ধমান অত‍্যাচার এবার রুখে দাও

জল জঙ্গল জমির কর্পোরেট লুট থামিয়ে দাও

আমরা সমস্ত আদিবাসীদের প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশজুড়ে আদিবাসী জনতার ওপর উত্তরোত্তর বেড়ে চলা অত‍্যাচার এবং ক্রমাগত তাঁদের আরো দুর্দশা আরো প্রান্তিক জীবনে ঠেলে দেওয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। ২০২৩’র ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আসুন আমরা শপথ নিই, আমাদের অধিকার আমাদের স্বার্থ আমরা রক্ষা করব।

মধ‍্যপ্রদেশের সিঢ়ি জেলা ও উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রায় গায়ে পেচ্ছাপ দেওয়ার জঘন‍্য ঘটনা থেকে, এবং মণিপুরের দুই কুকি-জো মহিলাকে নগ্ন করে, গায়ে হাত দিতে দিতে, মারতে মারতে ঘোরানো ও শেষে একটা মাঠে নিয়ে ফেলে ধর্ষণ করার চরম মর্মান্তিক ভিডিও থেকে একথা খুবই স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বর্তমান শাসক দলটি আদিবাসীদের ভালোমন্দের তোয়াক্কাই করে না। আরএসএস-বিজেপি সংঘ পরিবার যে মনুস্মৃতিকে সংবিধান হিসেবে তুলে ধরে সেই মনস্মৃতি আসলে দলিত ও আদিবাসীদের ওপর চরম বৈষম‍্য ও হিংস্রতা চালানোর সামাজিক অনুমোদন দেয়।

দেশজুড়ে আদিবাসীদের ওপর অত‍্যাচার বছর বছর বেড়েই চলেছে। ২০২০ সালে অত‍্যাচারের মামলা ছিল ৮২৭২টি, পরের বছর তা বেড়ে হয়েছে ৮৮০২টি। এরমধ‍্যে আছে আদিবাসী মেয়েদের ওপর, মণিপুরের মতো, হিংস্র যৌন অত্যাচারের অনেক ঘটনাও। বিজেপির উত্থান এবং তার আগ্রাসী হিন্দুত্ব রাজনীতি ‘এসসি ও এসটি নিপীড়ন নিবারণ আইন, ১৯৮৯’কে ক্রমাগত অকেজো করেছে এবং এই আইনকে আরো লঘু করে দেওয়ার, এমনকি একদম তুলে দেওয়ার জন‍্য চেঁচামেচিও শোনা যাচ্ছে।

এইসব হিংস্রতা ছাড়াও বিজেপি শাসনে আদিবাসীরা খতরনাক হামলার সম্মুখীন হতে চলেছেন জঙ্গল আইনের নয়া সংশোধনীর মাধ‍্যমে যা জঙ্গল এলাকা থেকে আদিবাসীদের সরিয়ে দিতে চায়। আর সেই সাথে মোদী সরকার আনতে চাইছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি যা আদিবাসীদের সংবিধান প্রদত্ত রক্ষাকবচ ও সুযোগ সুবিধা নাকচ করে দেবে এবং আদিবাসীদের অন্যান‍্য রীতিনীতি, প্রথা ও অনুশীলনকে চরম ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

অন‍্যদিকে, রাষ্ট্র অনুমোদিত কর্পোরেট লুট তথা প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস সাধন এবং নয়া উদার অর্থনীতির মাধ‍্যমে আদিবাসীদের জঙ্গল ও জমি থেকে উৎখাত করার ফলে আদিবাসীদের জীবন ও জীবিকা বর্তমানে সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে এবং নিজেদের সংস্কৃতি ও পরিচিতি বাঁচিয়ে রাখতে লড়াই করতে হচ্ছে। জমি, শিক্ষা, স্বাস্থ‍্যসেবা, জীবিকা, খাদ‍্য নিরাপত্তা, পানীয় জল, স্বাস্থ‍্যকর পরিবেশ ইত‍্যাদি মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন‍্য আদিবাসীদের লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

এই সবের মাঝেই আরএসএস তাদের ‘জনজাতি ধর্ম সংস্কৃতি সুরক্ষা মঞ্চ’র মধ‍্যে দিয়ে ‘আদিবাসীদের হিন্দুত্বকরণ’এর চেষ্টা চালাচ্ছে এবং আদিবাসীদের নিজেদের ধর্মপরিচিতি বেছে নেওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করছে। অভিন্ন দেওয়ানি বিধিও আসলে এইসব সম্প্রদায়কে জোর করে হিন্দুত্বের অধীনস্ত করার প্রচেষ্টা। স্পষ্টতই আরএসএস আদিবাসীদের মধ‍্যে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন ঘটাচ্ছে এবং সংবিধান প্রদত্ত অধিকারগুলি ছিনিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

আদিবাসীরা ভারতের জনসংখ‍্যার এক দশমাংশ। তাঁরাই ভারতের আদি বাসিন্দা। তাঁদের পূর্বজ বংশধরেরাই ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মানব বসতি স্থাপন করেছিল। এবং তাঁরা যৌথতা, সামাজিকতা, সহ-অবস্থান, সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় বিশ্বাস করেন। তাঁরাই এই ভূখণ্ডের প্রথম নাগরিক। এবারের আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আসুন আমরা অঙ্গীকার করি আমাদের অধিকার রক্ষায় লড়াই করার এবং মোদী সরকারকে বাতিল করার, যে সরকার আদিবাসী সংস্কৃতি পরিচিতি জীবিকা ও অস্তিত্ব মুছে ফেলতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

we-want-justice-for-the-tribals
আমরা দাবি তুলছি

১) মধ‍্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশে গায়ে পেচ্ছাপ করে দেওয়ার জঘন‍্য ঘটনা দুটি এবং মণিপুরে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত কর; এসসি এসটি নিপীড়ন নিবারণ আইন ১৯৮৯ কঠোরভাবে লাগু কর; এই আইনের অধীনে যে বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়েছে তাদের অবশ‍্যই নিয়মিত রিভিউ চালিয়ে আদিবাসীদের সুরক্ষা প্রশ্নে ইউনিয়ন ও রাজ‍্য সরকারের কাছে পরামর্শ পাঠাতে হবে।

২) মণিপুরে হিংসা হামলা বন্ধ কর। হিংসার শিকার হওয়া প্রতিটি পরিবারকে এবং যাদের যাদের সম্পদ নষ্ট হয়ছে তাঁদের প্রত‍্যেককে ক্ষতিপূরণ দাও। খুন লুট তাণ্ডবে যুক্ত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব‍্যবস্থা নেওয়া হোক। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর যথাযথ বন্দোবস্ত কর, নাহলে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ ও সার্বিক পুনর্বাসন দাও। তথ‍্যানুসন্ধানী দলের সদস‍্যদের ওপরে চাপানো ফৌজদারি মামলা প্রত‍্যাহার কর।

৩) ইউনিয়ন গভর্মেন্ট ও রাজ‍্য সরকারগুলি ৯ আগষ্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে জাতীয় ছুটি ঘোষণা করুক।

৪) ভারত আইএলও ১৬৯নং প্রথাকে মান‍্যতা দিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির জন‍্য বিবিধ সুরক্ষা ব‍্যবস্থার বাধ‍্যতামূলক ব‍্যবস্থাপনা গ্রহণ করুক এবং তাঁদের পরম্পরাগত ভূমি ও সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে এমন সমস্ত প্রজেক্টের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করুক।

৫) আদিবাসী সমাজকে সাম্প্রদায়িক করা ও বিভাজন করার অপচেষ্টা চালানোর দায়ে ‘জনজাতি ধর্ম সংস্কৃতি সুরক্ষা মঞ্চ’র বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা নেওয়া দরকার — আদিবাসীদের নিজস্ব বিশ্বাস, প্রথা ও উৎসব অনুশীলনের অধিকার আছে।

৬) সংবিধানে বিধৃত ২৪৪(ক) অনুচ্ছেদ মেনে আসামের পার্বত‍্য আদিবাসী জেলাগুলিকে স্বায়ত্ব শাসিত রাজ‍্য হিসেবে ঘোষণা কর।

৭) সমস্ত রাজ‍্যে ৩০ শতাংশ আদিবাসী জনসংখ‍্যা বিশিষ্ট সমস্ত শহর ও গ্রামকে তপশীলভূক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা কর।

৮) ‘পেশা’ আইন শক্তিশালী কর এবং তপশীলভূক্ত এলাকার শহরগুলিতেও এই আইন প্রসারিত কর।

৯) ২০০৬’র বনাধিকার আইন কঠোরভাবে কার্যকর কর; এই আইনের আওতায় প্রতিটি ভূমিহীন আদিবাসী পরিবারকে ২ একর আবাদী জমি ও ৫ একর অনাবাদী জমির পাট্টা দাও।

১০) অরণ‍্য (সংরক্ষণ) আইন ও বন‍্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনের সংশোধনী প্রত‍্যাহার কর।

১১) স্কুল, চিকিৎসা পরিষেবা, বিদ‍্যুৎ, রাস্তা, পানীয় জল ইত‍্যাদি বুনিয়াদি সুযোগসুবিধা ১০০ শতাংশ আদিবাসীদের পাওয়া নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন গভর্মেন্ট ও রাজ‍্য সরকারগুলি অতি অবশ‍্যই সময় বেঁধে পরিকল্পনা গ্রহণ করুক।

১২) আদিবাসীদের জমি থেকে বিচ্ছিন্ন করাকে নিষিদ্ধ করে যেসব আইন আছে সেগুলি কঠোরভাবে বলবৎ করা হোক, এবং তাঁদের এযাবৎ হারানো জমি অবিলম্বে ফিরিয়ে দেওয়ার ব‍্যবস্থা নেওয়া হোক।

১৩) যেসব আদিবাসী মানুষ পরিযায়ী কাজে বাধ‍্য হচ্ছেন তাঁদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত কর, তাঁদের অধিকার রক্ষায় দৃঢ়ভাবে শ্রম আইন কার্যকর কর।

১৪) বিচারাধীন সমস্ত আদিবাসী মানুষকে নিঃশর্তে মুক্তি দাও এবং আদিবাসীদের বিরুদ্ধে চলা ফৌজদারি মামলাগুলি নির্দিষ্ট সময়ের মধ‍্যে পুনর্বিবেচনা করতে প্রতিটি রাজ‍্যে বিচার বিভাগীয় কমিশন বসাও যাতে মিথ‍্যা মামলাগুলি খারিজ হয়, নির্দোষ ব‍্যক্তিরা মুক্তি ও ক্ষতিপূরণ পায়, এবং এই ধরণের অন‍্যায় শাস্তির পেছনে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা চিহ্নিত ও সাজাপ্রাপ্ত হয়।

১৫) আদিবাসীদের বনের জমি থেকে বেদখল ও উচ্ছেদ করার যে কোনো প্রক্রিয়ার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করতে হবে যদি না তা গ্রামসভার অনুমোদিত হয় এবং অনুমোদিত ক্ষেত্রে স্থানান্তরণের আগেই পূনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বন্দোবস্ত করতে হবে। এবং স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়ন/সংরক্ষণমূলক প্রকল্পসমূহে যত আদিবাসী উচ্ছেদ হয়েছেন তাঁদের সকলকে প্রতিদান, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিতে হবে।

১৬) ডি-নোটিফায়েড, যাযাবর ও আধা যাযাবর আদিবাসী সম্প্রদায়গুলির জন‍্য সুবিচার নিশ্চিত কর।

১৭) বিশেষ বিপন্ন আদিবাসী গোষ্ঠি ‘পিভিটিজি’রা যে অস্তিত্বের সংকটের সম্মুখীন তার মোকাবিলায় উচ্চ মৃত‍্যুহার, ধারাবাহিক দারিদ্র, অপুষ্টি, অনাহার ও যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবার সুযোগ থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং সেই সাথে জীবিকা সুরক্ষার অভাব — এই সমস‍্যাগুলি নিরসনে পদক্ষেপ নাও।

১৮) আদিবাসীদের হেফাজতে নিয়ে হত‍্যা, ধর্ষণ ও ফেক এনকাউন্টারের জন‍্য পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নাও বিশেষত শিশু ও মহিলাদের ওপর চলা নানান অত‍্যাচারগুলিতে।

১৯) কর্পোরেট লুট ও ধ্বংসকে অনুমোদন আর আদিবাসীদের ওপর চালানো রাষ্ট্রীয় হিংসা এবার থামাও। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রামরত আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনকে হাতিয়ার বানানো বন্ধ কর, এবং আদিবাসী আন্দোলনের কারণে যারা জেলে পচছেন তাঁদের মুক্ত কর আর ফৌজদারি মামলাগুলি তুলে নাও।

২০) আদিবাসী এলাকাগুলিকে সম্পূর্ণ ও সার্বিক বে-সামরিকীকরণ কর ও পুলিশ রাজ থেকে মুক্ত কর।

২১) যেখানে যেখানে আর্মড ফোর্সেস (স্পেশাল পাওয়ার্স) অ‍্যাক্ট লাগু আছে সর্বত্র তা প্রত‍্যাহার করে নাও। এই রাজ‍্যগুলিতে সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত যে সমস্ত হত‍্যা এবং ধর্ষণ ও হয়রানির ঘটনা নথিভূক্ত হয় সেগুলির প্রত্যেকটি অত‍্যন্ত কঠোর হাতে বিচার করে অপরাধিদের শাস্তি সুনিশ্চিত কর।

২২) সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত অনুসারে পঞ্চম তপশীলভূক্ত এলাকার সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা সেখানকার আদিবাসীদের হাতে ন‍্যস্ত হওয়ার কথা। জঙ্গলের সমস্ত ধরনের উৎপন্নের ও কাঠের ন‍্যূনতম মূল‍্য নির্ধারণ ও তা বিক্রয়ের ক্ষমতা গ্রামসভার হাতে থাকবে।

২৩) পঞ্চম তপশীল অনুসারে আদিবাসী উপদেষ্টা পরিষদ গঠন বাধ‍্যতামূলক। তার বাৎসরিক রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো আবশ‍্যিক। তা করতে ব‍্যর্থ হলে রাজ‍্যপালের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা। টিএসপি এলাকার জন‍্য বরাদ্দ ফাণ্ডে কোনরকম ঘাটতি চলতে পারে না।

২৪) জনগণনার নথিতে আদিবাসীদের জন‍্য একটি স্বতন্ত্র ‘আদিবাসী/ট্রাইবাল কোড’এর কলাম থাকতে হবে।

২৫) বেসরকারি ক্ষেত্র ও বিচার বিভাগেও সংরক্ষণ লাগু করতে হবে।

judge's-bulldozer-ministry-bulldozer-ministry

এ কেমন জাজ,

চাইছেন বুলডোজার রাজ!

ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড। এরা ঝাড়খন্ডে ৯টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ৭টি বিদ্যালয় পরিচালনা করে। পশ্চিমবাংলায় এই স্কুলগুলির শিক্ষকরা বহুদিন বেতন পান না। কেউ ১০ মাস ধরে, কেউ ৭ বছর ধরে। মাসের পর মাস তাঁরা ‘অনিয়মিত শিক্ষক’। এই শিক্ষকেরা মাসের শেষে দিন গুজরানের জন্য ৫০০০ টাকা হাতে পান। এরাই ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্টের শরণাপন্ন হলেন। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ‍্যায়।

৩১ জুলাই ২০২৩, সোমবার দ্বিপ্রহর। রাজ্যের অতি পরিচিত এই বিচারপতি আদালতে শুনানি চলাকালীন প্রারম্ভিক কিছু নির্দেশ (রেজিস্ট্রারের কাছে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জমা রাখা) এবং শিক্ষকদের দুঃখে চোখের জল ফেলার পর বলতে শুরু করলেন এমন সব কথা যা শুনলে মনে হয়, একজন ‘ভক্ত’র কথা শুনছি। বিচারপতি বলতে শুরু করলেন মনের কথা, “অমৃতকাল চলছে, স্কুল চালাতে না পারলে আদানির হাতে তুলে দিন”। সত্যিই তো! দেশের প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার অমৃতকালে যখন রেল, রাস্তা, বিমানবন্দর, স্টেশন, রাষ্ট্রায়ত্ত সমস্ত প্রতিষ্ঠান আদানি, আম্বানি ভাইদের হাতে তুলে দিচ্ছেন, তখন একটা বা দুটো স্কুল বা গোটা শিক্ষাক্ষেত্রকে আদানির হাতে তুলে দেওয়ার জজিয়তি অস্বাভাবিক কি? সাধু, সাধু!

রাজ্যবাসী অবশ্য আদালত কক্ষে বিচারপতির মুখে আরও আধুনিক, আরও রাজনৈতিক ভাষণের নমুনা দেখেছে দিন কয়েক আগেই। ২৮ জুলাই ২০২৩, কলকাতা পৌরসভা অঞ্চলে বে-আইনি নির্মাণ প্রসঙ্গে এক মামলার শুনানির সময়। কলকাতা পৌরসভা ও কলকাতা পুলিশের গুণ্ডা দমন শাখার আধিকারিকদের ভুয়সী প্রশংসার পাশাপাশি আদালত কক্ষেই বিচারপতি শোনালেন, “দরকার পড়লে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কাছ থেকে বুলডোজার ভাড়া করুন”! পরিস্কার কথা। আইন কানুন উকিল মোক্তার বিচার বিভাগের দরকার কি, বুলডোজ করে দেওয়া হোক সরাসরি। যোগী তো করেই দেখাচ্ছেন। তাঁর কাছ থেকেই আনা হোক সেই শাসকীয় কারিগরি।

আইনের শাসনের প্রতি এই চরম অবজ্ঞা মোদী-যোগী শাসনের মূল কার্যধারা। রাজ‍্যের এক অশুভ অঘোষিত আঁতাত এই বিচারককেই প্রায় ভগবান বানাতে চায়, যিনি প্রথম থেকেই ধাপে ধাপে ইঙ্গিত দিতে দিতে এখন প্রকাশ‍্যেই এরাজ‍্যে যোগী-মোদী রাজ আনার জজিয়তি করছেন। ৭৫’র জরুরি অবস্থার দিনগুলোতে জব্বলপুর এডিএম মামলার কথা মনে পড়ে গেল। তখন চলছিল ঘোষিত জরুরি অবস্থা। বিচারপতি জানিয়েছিলেন জরুরি অবস্থার কথা। এখন চলছে অঘোষিত দীর্ঘস্থায়ী জরুরি অবস্থা। আদালত কক্ষে বিচারপতিরা আজ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া, কাল এনকাউন্টার চালিয়ে হত‍্যা করার কথা বলছেন। এতে হয়তো আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আশ্চর্য হতে হয় যখন সততা, নৈতিকতা এবং আরও সব কঠিন কঠিন আদালতি শব্দে এই ধরনের বিচারপতির ভুয়সী প্রশংসা করতে দেখা যায় বামপন্থী দলের অতিপরিচিত আইনজীবীদের। অথবা, হয়তো, এটাও বাংলার মাটিতে আর অবাক করা অপ্রত‍্যাশিত নেই আর বিগত কয়েক বছরের অঘোষিত অশুভ আঁতাতের বাস্তবতায়।

নাটক এখানেই শেষ নয়। এই বিচারপতিই আদালত কক্ষে বিনা বাধায় গণহত্যার উসকানিতে ব‍্যবহৃত শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেন। স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধেড়ে ইঁদুর ধরে আনার হুমকি দিয়েছিলেন এই বিচারপতি। ইতিহাস বলে, হিটলারের গেস্টাপো বাহিনী গ্যাস চেম্বারে ইহুদীদের ধরে আনার সময় ইঁদুর ধরার কথা বলতো। বছর দুয়েক ধরে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত ক্ষমতাধর অমিত শাহ মহাশয় অনুপ্রবেশকারীদের উই পোকার মতো পিষে মারার কথা শুনিয়েছিলেন। ফ্যাসিস্ট গেস্টাপো নায়কদের কথার সঙ্গে উচ্চ আদালতের বিচারকের কথার সুন্দর মিল। বোঝার উপায় নেই, কে কথা বলছেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকি আদালতের কোন ধর্মাবতার!

আদালতের মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে দেওয়ার যে কঠিন কাজ ফ্যাসিস্টরা হাতে নিয়েছিল, তা যে এতো সহজে হয়ে যাবে তা সম্ভবত ওরাও ভাবতে পারেনি। ঘন্টা খানেক নিস্পাপ সাক্ষাৎকার দেওয়ার এটাই নিট লাভ।

জনগণের দায়িত্ব তাই বেড়ে গেল। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষার দায়িত্ব জনগণকেই কাঁধে নিতে হবে।

- পার্থ ঘোষ

basics-about-surveysabout-surveys

নতুন পথচলার প্রয়োজন যখন দেখা দেয়, অথচ কোন পথে এগোতে হবে তাই নিয়ে কিছু আভাস ইঙ্গিৎ থাকলেও স্পষ্ট কোনও দিশা থাকে না, উপযুক্ত তথ্য থাকে না, তখন সমীক্ষা খুব জরুরি হয়ে ওঠে। সমীক্ষা নানা ধরনের সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকেই চালাতে হয়। বহুজাতিক কর্পোরেটরা তাদের পণ্যের বাজার বোঝার জন্য যেমন সমীক্ষা করেন, তেমনি বিপ্লবী রাজনৈতিক শক্তি কীভাবে একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে লড়বেন তা বুঝতেও সমীক্ষা চালান। এই দুই সমীক্ষার আদর্শ উদ্দেশ্য একেবারে বিপরীত, কিন্তু নিজস্ব লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে নির্মোহ, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান উভয়েরই প্রয়োজন। বিপ্লবী রাজনীতি সমাজের বদল ঘটাতে চেয়ে যেমন সমীক্ষা করে তাদের কাজের রীতি পদ্ধতি ঠিক করেন, তেমনি আবার শাসক দল তাদের শাসন ক্ষমতা নিরঙ্কুশ রাখার প্রয়োজনে কোন ধরনের সংস্কার আনতে হবে তা বুঝতে সমীক্ষা চালান। দল নিরপেক্ষভাবেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নানা ধরনের সমীক্ষা নিয়মিত চালানো হয়। ভারতের ন্যাশানাল স্যাম্পেল সার্ভে স্বাধীনতার পর থেকে যে সমীক্ষা চালিয়ে আসছে ধারাবাহিকভাবে, সেগুলো ভারতের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি বুঝতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা ধরনের সমীক্ষা চালাতে হয় গবেষকদের, নীতি নির্মাতাদের, সমাজ কল্যাণে নিবেদিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।

বাংলার বুকে নানা ধরনের সমীক্ষা চালানোর ইতিহাস অনেক পুরনো। গত একশো বছরে করা কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে আমরা এগুলির গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করতে পারি।

১৯৩৭’র নির্বাচনের পর যখন ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজা পার্টির সরকার ক্ষমতায় এল, তখন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মেনে ভূমি সংস্কারের উদ্দেশ্যে স্যার ফ্রান্সিস ফ্লাউডের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের বিচার্য ছিল ভূমি রাজস্ব প্রশাসন সংক্রান্ত সমস্যাবলির সমাধান বিশেষত জমিদারি প্রথা বাতিল সংক্রান্ত বিষয় বিবেচনা করা। ব্যাপক সমীক্ষা, মতামতগ্রহণ ও অনুসন্ধানের পর ফ্লাউড কমিশন তাদের রিপোর্ট পেশ করে। ১৯৪০ সালের ২ মার্চ কমিশনের সুপারিশমালা পেশ করা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা বাতিল এবং ভূমি নিয়ন্ত্রণে সকল মধ্যবর্তী স্বত্ব বিলোপ সাধন উক্ত সুপারিশমালার অন্তর্ভুক্ত ছিল। লক্ষ করা যায় যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের সময় থেকে ভূমি নিয়ন্ত্রণে যে পরিবর্তন ঘটে নতুন পরিস্থিতিতে তা অনুপযোগী ও ক্ষতিকর ব্যবস্থায় পরিণত হয়। এ সুপারিশগুলি ১৯৪৪ সালের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির জোরালো সমর্থন লাভ করে। কিন্তু ফ্লাউড কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার খুব বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা এবং ভারত বিভাগের রাজনীতি প্রভৃতি ছিল এর প্রধান অন্তরায়। এসব সীমাবদ্ধতার কারণে ফজলুল হক, খাজা নাজিমউদ্দীন ও সোহরাওয়ার্দী সরকারের আমলে ফ্লাউড কমিশন রিপোর্টের বাস্তবায়ন স্থগিত থাকে, যদিও সবকটি সরকারই জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল।

প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মাঝের সময়টায় বাংলার কল কারখানা ও কারখানা শ্রমিকদের বিষয়েও কিছু উল্লেখযোগ্য অনুসন্ধান চালানো হয়। ১৯২৯ সালে রয়াল কমিশন অব লেবার তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের পক্ষ থেকে কলকাতার শ্রমিক মহল্লাগুলিতে একটি ব্যাপক সমীক্ষা চালিয়েছিল। এই সমীক্ষায় শ্রমিকদের অপুষ্টি, থাকার জায়গার সমস্যা ও জীবনযাত্রার সার্বিক খারাপ মানের কথা উঠে আসে। কমিশন কিছু বিজ্ঞানসম্মত সমীক্ষার প্রস্তাব দেয়, যেই সমীক্ষাগুলি সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানের সুপারিশ করতে পারবে। ফ্লাউড কমিশনের সমীক্ষার পর্বেই ১৯৪১ সালে প্রশান্তচন্দ্র মহালানবীশ কলকাতার শ্রমিকদের নিয়ে এক সমীক্ষা চালান। সেই সময় চটকলগুলিই ছিল প্রধান শিল্প কারখানা, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক এগুলিতেই নিযুক্ত ছিলেন। জগদ্দল, বজবজ ও আসানসোলের একটি করে জুটমিল বেছে নিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে প্রশান্তচন্দ্র মহালানবীশের সহযোগিতা ও পরামর্শে ১৯৪৮-৪৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান কে পি চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার জুট শ্রমিকদের নিয়ে একটি বিস্তারিত সমীক্ষা চালান।

এবার একুশ শতকের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষার কথায় আসা যাক। প্রথমেই বলা যাক বন্ধ কলকারখানার সমস্যা নিয়ে করা সমীক্ষাটির কথা। ২০০৫ সালে কলকাতার নাগরিক মঞ্চর উদ্যোগে করা এই সমীক্ষা পশ্চিমবঙ্গের বন্ধ কলকারখানা, তার শ্রমিকদের সমস্যা, তাদের স্বনিযুক্তি ও পুনর্বাসনের প্রশ্ন, কলকারখানার উদ্বৃত্ত জমির ব্যবহারের মতো নানা বিষয়কে রাজনীতির অঙ্গনে নিয়ে আসে।

বিশেষ জনগোষ্ঠীর জীবন যাপনের মান, সুবিধে অসুবিধে ইত্যাদি বোঝার জন্য যেসব সমীক্ষা হয়েছে তারমধ্যে সাম্প্রতিককালের একটি সমীক্ষার কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। ২০১৬ সালে স্ন্যাপ এবং গাইডেন্স গিল্ড সংস্থাদ্বয়ের পক্ষ থেকে প্রতীচী ট্রাস্টের সহায়তায় এই গুরুত্বপূর্ণ সমীক্ষা রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়। রিপোর্টটির নাম ‘লিভিং রিয়েলিটি অব মুসলিমস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’। সমীক্ষাটি করা হয় বহুদিন ধরে এবং এর পরিসরও ছিল বিস্তৃত। ৯৭,০১৭টি পরিবারের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। এর মধ্যে ৭৯,৯১৩টি গ্রামীণ পরিবার ও ১৭,১০৪টি শহুরে পরিবার। সমীক্ষার আওতায় এসেছেন ৪,৬৩,৯০৪ জন মানুষ। সরকারি বা বেসরকারি স্তরে সাম্প্রতিক অতীতে মুসলিম জনগোষ্ঠী নিয়ে এ’ধরনের বিস্তৃত কোনও সমীক্ষা হয়নি। ফলে এই সমীক্ষাটি রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর হাল হকিকত বুঝতে অত্যন্ত কার্যকরী। জনবিন্যাস, স্বাক্ষরতা ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, লিঙ্গগত সাম্য অসাম্য, নাগরিকত্বর প্রশ্নে বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধা, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ও সাংস্কৃতিক মানের মতো অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ কয়েকটি দিকের ওপর এই সমীক্ষা আলো ফেলেছে।

কোভিড লকডাউনে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে স্কুল শিক্ষার যে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে তা প্রায় সবাই জানেন। এই ক্ষতি কতটা গভীর ও ব্যাপক তা জানার জন্য দরকার ছিল একটি ব্যাপক সমীক্ষার। কিছুদিন আগে অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিশেষজ্ঞ জঁ দ্রেজের নেতৃত্বে এইরকম একটি সমীক্ষা হয়েছে। তার রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছে। আগস্ট ২০২১এ এই সমীক্ষাটি চালানো হয় ভারতের ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জুড়ে। তারমধ্যে আছে অসম, বিহার, চণ্ডীগড়, দিল্লী, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলি নিয়ে আলাদা একটি সমীক্ষাও হয়েছে এই সময়ে এবং সেখানেও একই ধরনের ফলাফল উঠে এসেছে।

রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ২৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী এই পর্বে নিয়মিত পড়াশুনো করেছে। ৩৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর পড়াশুনো চলেছে অনিয়মিতভাবে। আর ৩৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশুনোর সম্পূর্ণ বাইরে থেকেছে। সমীক্ষকরা দেখেছেন ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী কয়েকটি শব্দও একটানা পড়তে পারছে না। অভিভাবকরাও জানিয়েছেন যে তাদের সন্তানদের অনেকেই এই সময় পড়া ও লেখার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, কারণ অনলাইন শিক্ষার সুযোগ তাদের সন্তানদের পক্ষে সেভাবে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এই সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে যে শহুরে এলাকায় ২৪ শতাংশ ছাত্রছাত্রী নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের সুবিধে নিতে পেরেছে। গ্রামীণ এলাকায় পেরেছে মাত্র ৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। স্মার্টফোন না থাকাটা এর একটা কারণ কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। যে সমস্ত পরিবারের স্মার্টফোন আছে, শহুরে এলাকায় সেই সব ঘরের ছাত্রছাত্রীদের ৩১ শতাংশ নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করেছে। গ্রামীণ এলাকায় করেছে স্মার্টফোন থাকা পরিবারের মাত্র ১৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী। এর কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে স্মার্টফোন মূলত পরিবারের রোজগেরে সদস্য সঙ্গে নিয়ে কাজে চলে যান, ফলে অনলাইন ক্লাসের সময় ছাত্রছাত্রীরা তা ব্যবহার করে উঠতে পারে না। সমীক্ষা রিপোর্ট জানিয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ ছাত্রছাত্রীর নিজেদের স্মার্টফোন আছে। স্মার্টফোনের সমস্যা ছাড়াও অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে দুর্বল ইন্টারনেট ব্যবস্থা ও ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক কেনার ক্ষমতার অভাব। শহুরে এলাকার মাত্র ২৩ শতাংশ অভিভাবক মনে করেছেন তাদের সন্তানরা ঠিকমত অনলাইন ক্লাস করতে পেরেছে। গ্রামীণ এলাকায় এটা মাত্র ৮ শতাংশ।

সমীক্ষা কোথায় হচ্ছে, তার ভিত্তিতে সমীক্ষার পদ্ধতিতে কিছু বদল আনতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে অনুসন্ধান চালানো সমীক্ষকরা খেয়াল করেন যে সাধারণভাবে প্রবীণ মানুষেরা দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে আগ্রহী থাকেন এবং তাঁদের কথার মধ্যে দিয়ে মৌখিক ইতিহাস অনেকটাই ধরা পড়ে। বদলগুলোকেও তাঁরা দীর্ঘ সময়ের পটে চিহ্নিত করে দিতে পারেন। কী বদল হয়েছে সেই তথ্যটুকুই শুধু নয়, বদলকে তাঁরা কী চোখে দেখছেন সেই দৃষ্টিকোণটাও ধরা পড়ে। তবে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বা কাছাকাছি থাকা মানুষেরা অনেক হিসাব করে মেপে কথা বলেন। চায়ের দোকানের আড্ডা বা মন্দির মসজিদের জমায়েতে হাজির হলে অনেক আলাপ আলোচনা তথ্য জানা সম্ভব। গ্রামের মানুষের সাধারণ মেজাজ বোঝার জন্য এই ধরনের আড্ডা বা জমায়েত খুবই সাহায্য করে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে দোকানে বা বাজারে সন্ধ্যের পর জমা হয়ে আড্ডা মারার প্রবণতা রয়েছে। সমীক্ষকদের এখানে হাজির হয়ে কথা শোনা জরুরি।

আবার আজকের দিনে শহর বা শহরতলীর গিগ শ্রমিকদের মধ্যে যদি সমীক্ষা চালাতে হয়, এই ক্রম বিকাশমান জীবিকা ও সংলগ্ন অর্থনীতিকে বুঝতে, তাহলে একেবারে ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। গিগ শ্রমিকেরা মূলত অল্পবয়সী যুবক-যুবতী। কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের অনেককে একসঙ্গে বেশি সময়ের জন্য পাওয়া যাবেনা। ফলে তাদের মধ্যে সমীক্ষা চালাতে হবে অল্প সময়ে, সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নমালার ভিত্তিতে।

সমীক্ষা করার সময়ে কেন সমীক্ষা করতে চাইছি তা নিয়ে সমীক্ষকদলকে খুব স্পষ্ট থাকতে হবে। কিন্তু সমীক্ষা করতে হবে সম্পূর্ণ খোলা মনে কোনও পূর্বসিদ্ধান্তকে মনে স্থান না দিয়ে। সমীক্ষা করার সময়ে কোন ধরনের পদ্ধতি প্রকরণ আজকের দিকে অনুসন্ধান করা হয়, কোন কোন ধরনের সমস্যা সাধারণভাবে সমীক্ষকদের সামনে উপস্থিত হয়, সেগুলি কাটানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা কী পরামর্শ দেন, সমীক্ষাজাত তথ্যকে কীভাবে বিশ্লেষণ করতে হয় — এইসমস্ত রীতি পদ্ধতি বিষয়ে আমরা পরে আরো কিছু কথা বলব।

- সৌভিক ঘোষাল

application-to-chief-justice-for-judicial-inquiryloan-written-off-from-bank-books

ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করলে তার অনিবার্য পরিণতি হয় ব্যাঙ্কের এনপিএ বা অনুৎপাদক সম্পদের বৃদ্ধি। কিন্তু পরিশোধের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা ঋণ পরিশোধ করলো না সেই ইচ্ছাকৃত অপরিশোধকারীদের অভিপ্রায়ই কি থাকে বকেয়া না চুকোনোর? অন্যভাবে বললে, ব্যাঙ্কের টাকা লুট করার লক্ষ্যেই কি তারা ঋণ নেয়? পশ্চিমবাংলার নাগরিক সমাজের এক সংস্থা ‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ’র ধারণা কিন্তু সেরকমই। ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ এবং অপরিশোধিত থেকে যাওয়া ঋণের তথ্য বিশ্লেষণ করে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা ঋণ পরিশোধে অনীহা দেখালো তাদের আসল লক্ষ্য জাতীয় অর্থভান্ডার লুট করা। এই উপলব্ধি থেকেই তাঁরা ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে লেখা ২৭ জুলাইয়ের চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন, অপরিশোধিত ঋণকে ক্রমবর্ধমান ধারায় যেভাবে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দেওয়া হচ্ছে তা জাতীয় অর্থভান্ডারের কর্পোরেট লুট এবং বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেয়। মঞ্চের দুই আহ্বায়ক বিশ্বরঞ্জন রায় ও সৌম্য দত্তর স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমাদের সুচিন্তিত অভিমত এই যে, বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত ঋণ ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দেওয়াটা ইচ্ছাকৃত কর্পোরেট অপরিশোধকারীদের জাতীয় অর্থভান্ডার লুটেরই সমতুল্য।” চিঠিতে তাঁরা জানিয়েছেন, গত তিন বছরে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে ৫,৮৬,৮৯১ কোটি টাকার অপরিশোধিত ঋণ, আর মুছে দেওয়া ঋণের পুনরুদ্ধার হয়েছে মাত্র ১,০৯,১৮৬ কোটি টাকা। মুছে দেওয়া ঋণের পুনরুদ্ধার কোন পথে হতে পারে? সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে সরকার জানিয়েছিল, “এই মুছে দেওয়া ঋণ কখনই ঋণ গ্ৰহিতার পরিশোধের দায়বদ্ধতার মুকুবে পরিণতি লাভ করে না, কেননা, মুছে দেওয়া ঋণের গ্ৰহীতাদের পরিশোধের দায় অব্যাহত থাকে।” অর্থাৎ, খাতা থেকে ঋণ মুছে দেওয়া হলেও ঋণ গ্ৰহিতার পরিশোধের দায়ের বিলোপ ঘটে না, এবং অপরিশোধিত ঋণের পুনরুদ্ধারের উদ্যোগও নেওয়া হয়। কিন্তু ঐ উদ্যোগ কতটা ফলদায়ী হয়? চিঠিতে উল্লিখিত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, মুছে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ৫,৮৬,৮৯১ কোটি টাকা হলেও উদ্ধার হয়েছে মাত্র ১,০৯,১৮৬ কোটি টাকা, যা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে মুছে দেওয়া ঋণের মাত্র ১৮.৬০ শতাংশে। অর্থাৎ, ৮০ শতাংশেরও বেশি থেকে যাচ্ছে পুনরুদ্ধারের বাইরে।

তাঁদের চিঠিতে মঞ্চের প্রতিনিধিরা প্রধান বিচারপতিকে আর একটি বিষয় সম্পর্কেও অবহিত করেছেন। যারা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিল সেই অর্থে তারা কারখানা বা অন্যান্য সম্পদের নির্মাণ করেছিল, এবং তাদের কাছে কাঁচামাল ও নির্মিত সামগ্রীও মজুত থাকে। গৃহীত ঋণ অপরিশোধিত থাকায় সরকারের তৈরি আইন ও বিধি অনুসারে অন্য কর্পোরেট সংস্থা অপরিশোধকারী সংস্থার সম্পদ কিনে নিতে পারে, এবং সেটি পরিচালিত হয় জাতীয় কোম্পানি আইন অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলএটি) এবং দেউলিয়া দশা ও সর্বস্বান্ত হওয়ার বিধি (আইবিসি) অনুসারে। যে কর্পোরেট সংস্থা ঋণ অপরিশোধকারী সংস্থার সম্পদ কিনে নেয়, সেটা তারা কেনে সম্পদের প্রকৃত মূল্যের অনেক কম দামে। মঞ্চের চিঠিতে জানানো হয়েছে, ব্যাঙ্কগুলো “প্রায় ৬৫-৭০ শতাংশ হেয়ারকাট নেয়”। এই ‘হেয়ারকাট’এর অর্থ সম্পদের মূল্য হ্রাস করা। অর্থাৎ, যে কর্পোরেট সংস্থা ঋণ অপরিশোধকারী সংস্থার সম্পদ কিনে নিল, ব্যাঙ্ক তার মূল্যকে হ্রাস করল ৬৫-৭০ শতাংশ, যে অর্থ সরকার পেতে পারত পেল তার অনেক কম। ফলে, “একমাত্র যা ক্ষতির মুখে পড়ল তা হল জাতীয় অর্থভান্ডার, কেননা, সরকারি অর্থ লুট করছে কর্পোরেট সংস্থাগুলো।” এইভাবে ঋণ অপরিশোধকারী কর্পোরেট সংস্থা, তার সম্পদ কিনে নেওয়া কর্পোরেট সংস্থা এবং এমনকি ব্যাঙ্ক কর্তাদের মধ্যেও একটা দুষ্টচক্র কাজ করে চলে।

‘ব্যাঙ্ক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও মঞ্চ’র আবেদনে প্রধান বিচারপতি কি আদৌ গুরুত্ব দেবেন? ব্যাঙ্ক ঋণের ইচ্ছাকৃত অপরিশোধকারী কর্পোরেট সংস্থার ঋণ ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দেওয়ার ফলে জাতীয় অর্থভান্ডারের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কি শুরু হবে? এর উত্তর রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে। তবে, রিজার্ভ ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যকে বিশ্লেষণ করে জাতীয় অর্থভান্ডারের ক্ষতির পরিমাণের একটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে দেওয়া রিজার্ভ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৮’র মার্চে শেষ হওয়া অর্থবর্ষে অপরিশোধিত ঋণ বা অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০.৩৬ লক্ষ কোটি টাকা, প্রদত্ত মোট ঋণের ১১.২ শতাংশ। আর ২০২৩’র মার্চে শেষ হওয়া অর্থবর্ষে সেই অনুৎপাদক সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৫.৭২ লক্ষ কোটিতে, যা প্রদত্ত মোট ঋণের ৩.৯ শতাংশ। এটা কি ঋণ পরিশোধের উন্নতিকে নির্দেশিত করছে? ঋণ আগের তুলনায় বেশি পরিমাণে পরিশোধিত হওয়ায় অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ২০২৩’র মার্চে অনেক কম পরিমাণে দাঁড়িয়েছে? ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। ২০১৮’র মার্চে মুছে দেওয়া কোনও ঋণ বাদ দিয়ে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি, কিন্তু ২০২৩’র মার্চে মুছে দেওয়া ঋণ বাদ দিয়েই অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে ২০১৮’র মার্চের তুলনায় ২০২৩’র মার্চে অনুৎপাদক সম্পদ সাড়ে চার লক্ষ কোটিরও অধিক কম পরিলক্ষিত হওয়ার রহস্য। এই মুছে দেওয়া ঋণের কতটা পুনরুদ্ধার সম্ভব? আমরা ওপরে দেখেছি সেটা মুছে দেওয়া ঋণের এক পঞ্চমাংশেরও কম। ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দেওয়া ঋণের সিংহভাগ এইভাবে হাওয়া হয়ে যায় যা সরকারি অর্থভান্ডারের কর্পোরেট লুট ছাড়া অন্য কিছু নয়। সরকার যতই দাবি করুক যে ঋণ ব্যাঙ্কের খাতা থেকে মুছে দেওয়ার পরও অপরিশোধকারী কর্পোরেট সংস্থার পরিশোধের দায় থেকে যায় এবং সেই অর্থ উদ্ধারও হয়, সেই দাবি এক অসার আপ্তবাক্য ছাড়া অন্য কিছু বলে পরিগণিত হয় না। বিবেক কল ‘ডেকান হেরাল্ড’ পত্রিকায় এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন যার শিরোনাম ‘আনাদায়ী ঋণকে প্রথমে মোছা হয়, তারপর তা মুকুব হয়ে যায়’। ঐ নিবন্ধের একটি প্রাসঙ্গিক অংশ উদ্ধৃত করে আলোচ্য ভাষ্য শেষ করা হচ্ছে, “তত্ত্বগত দিক থেকে এটা নিঃসংশয়ে বলা যায় যে, মুছে দেওয়া ঋণের পুনরুদ্ধার সম্ভব, কিন্তু বাস্তব হল এই যে, ঋণের বড় অংশ যাকে প্রথমে মুছে দেওয়া হয় পরে সেটাকে মুকুব করাই হয়, কেননা, সেটার উদ্ধার আর সম্ভব হয় না…।”

sanat-roy-chowdhurysanat-roy-chowdhury

চুঁচুড়া কিশোর প্রগতি সংঘের সভাগৃহে গত ৩০ জুলাই ২০২৩ প্রয়াত সনৎ রায়চৌধুরীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, এপিডিআর, চুঁচুড়া শ্রমজীবী উদ্যোগ ও ব্যক্তিবর্গের মিলিত প্রয়াসে গড়ে ওঠা স্মরণসভা কমিটি ছিল এই সভার আয়োজক। দ্বিতলে অবস্থিত সভাগৃহের সিঁড়ির মুখে, কক্ষের প্রবেশপথের একপাশে কোথাও পরিচিত হাস্যমুখ, কোথাও বক্তৃতারত সনৎদার প্রতিকৃতি। প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের পর মেহুলির (চক্রবর্তী) ছোঁয়া গায়কীতে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে সভার কাজ শুরু হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি পাঠ করেন কল্যাণ সেন। সভাপতিমন্ডলীর পক্ষ থেকে ছয়ের দশক থেকে সনৎদার রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গী অমিতদ্যুতি কুমার বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন এপিডিআর, হুগলি-চুঁচুড়া বইমেলা, চুঁচুড়া শ্রমজীবী উদ্যোগ, স্বরান্তর কিশোর প্রগতি সংঘের অমল রায়, জয় গোপাল দে, দেবাশিস গুপ্ত, গোপাল চাকী, সুদীপ রায়, বিশ্বজৎ হালদার, দেবু গুপ্ত, অভিজিৎ নন্দী।

chowdhury's-memorial-meeting

সনৎদার এক ছাত্রী সায়ন্তি ঘোষ তাঁর জীবনে সনৎদার সহজ সরল জীবন, রাজনৈতিক মূল্যবোধের গভীর প্রভাবের কথা বলেন। মাঝে গান গেয়ে শোনান বাবুনি মজুমদার। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের হুগলি জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার আটের দশকে পার্টি ও বাম গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে এক সেতুবন্ধ হিসেবে সনৎদার ভূমিকা, জেলার শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনে আত্মীক ও শারীরিক উপস্থিতি, মার্কসবাদকে জীবনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রহণ করা, পার্টিতে তাঁর স্নেহ ভরা অভিভাবকত্বের বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল বলেন সমগ্র পার্টি পরিবার ও সাথীদের শোকের অংশীদার। পার্টির অগ্রগতি সম্পর্কে সনৎদার ঔৎসুক্য, আশা, পার্টির যেকোনো কাজে তাঁর অবাধ অংশগ্রহণ সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন সনৎদাকে স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায় আজকের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকার এক হওয়া। সভা থেকে মণিপুরের জাতিদাঙ্গা ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সবশেষে সরিৎ-মিঠু-মেহুলি-বাবুনি সমবেতভাবে আন্তর্জাতিক সঙ্গীত গেয়ে শোনান। সভার কাজ সঞ্চালনা করেন স্বপন মাতব্বর, শ্যামল ঘোষ ও ভিয়েত ব্যানার্জি।

aisa national conference
খণ্ড-30
সংখ্যা-26