রাজস্থানের উদয়পুরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় সম্পন্ন হল সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির অষ্টম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনের শুরুতে ফ্ল্যাগ-ব্যানার সজ্জিত আজাদী শ্লোগানে মুখরিত মিছিল উদয়পুরের এলাকা পরিক্রমা করে। এতে স্থানীয় ৩০০ মত মহিলা অংশ নেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কান্নার প্রখ্যাত লেখক ও সংস্কৃতি কর্মী ডি সরস্বতী, প্রখ্যাত সাংবাদিক রানা আয়ুব। উপস্থিত ছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের লড়াকু ছাত্রী সুমাইয়া এবং জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সারিতে থাকা লড়াকু ছাত্রী আখতারিস্তা আনসারি ও চন্দা যাদব।
বাংলা, বিহার, উডিষ্যা, অন্ধ্র, তামিলনাডু, কর্নাটক, পাঞ্জাব, দিল্লি, গুজরাত, আসাম, কার্বি, মহারাষ্ট্র থেকে প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। গতিময় এই সম্মেলন থেকে ১৪১ জনকে নিয়ে কাউন্সিল এবং ৩৯ জনের কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হয়। সভানেত্রী হিসেবে রতি রাও, সম্পাদক মীনা তেওয়ারী পুননির্বাচিত হন। সরোজ চৌবে, প্রতিমা ইনজিপি ও কৃষ্ণা অধিকারী সহসভানেত্রী এবং কবিতা কৃষ্ণান, ইন্দ্রাণী দত্ত, নাগমনি, কুসুম ভার্মা, শশী যাদব, গীতা মন্ডল সম্পাদকমণ্ডলী হিসেবে নির্বাচিত হন। বাংলা থেকে ইন্দ্রাণী দত্ত, চৈতালি সেন, কল্যাণী গোস্বামী, অর্চনা ঘটক, কাজল দত্ত, জয়শ্রী দাস, প্রজাপতি, মিতালি, চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি, এবং দেবযানী কাউন্সিল সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। কার্যনির্বাহীতে বাংলা থেকে ইন্দ্রাণী, চৈতালি এবং চন্দ্রাস্মিতা নির্বাচিতা হন।
দুই দিনব্যাপি এই সম্মেলন শপথ নেয় যে আইপোয়ার কমিটিগুলি সারাদেশে চলমান শাহীনবাগ আন্দোলনকে শক্তিশালী করবে এবং সারা দেশব্যাপী এনপিআর এনআরসি সিএএ-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মহিলাদের উপর যে দমন-পীড়ন নেমে আসছে তাকে মোকাবিলা করার জন্য সংগ্রামকে আরও তীব্রতর করবে। কর্ণাটকের বিদার শহরে স্কুল শিশু এবং তাদের মায়েদের (যারা গৃহকর্মী) বিরুদ্ধে সিএএ-বিরোধী এনপিআর এনআরসি নাটকের জন্য দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং একইভাবে মুম্বাইয়ের একজন রূপান্তরকামী ব্যক্তি এবং কর্ণাটকের মহীশুরের এক ছাত্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও স্লোগান দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করা হয়েছে। আইপোয়া দাবি করে যে এই জাতীয় সমস্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এই সম্মেলনটি দাবি করে যে রাজ্য সরকারগুলি এনপিআর প্রক্রিয়া সম্পর্কে নোটিশ এনে অবিলম্বে যেন তা কার্যকারি করা বন্ধ করে দেয়। এই সম্মেলন কাশ্মীরের বোনদের সংগ্রামের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং দাবি করে যে কাশ্মীরের বন্দীদশা প্রত্যাহার করা উচিত এবং কাশ্মীরি জনগণ তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পান। এই সম্মেলন আদালত কর্তৃক নারী-বিরোধী এবং সংবিধান-বিরোধী মনোভাব নেওয়া সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ধর্ষণ অভিযুক্ত চিন্মায়ানন্দ, বিহারের শেল্টার হোম কেলেঙ্কারী, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সিএএ এনপিআর এনআরসি, জামিয়া এবং জেএনইউ-তে হামলা ইত্যাদির মামলায়ও সুপ্রিম কোর্টের উদাসীন ভুমিকা সম্পর্কে আলোকপাত করেছে।
এই সম্মেলন থেকে ঠিক হয় আইপোয়ার সমস্ত ইউনিটগুলো আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত সিএএ এনআরপি এনআরসি’র বিরুদ্ধে জন জাগরণের কর্মসুচি নেবে। এবং হিন্দু মুসলিম শিখ খ্রিস্টান সকল মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে সচেতনতা প্রচার করবে।