তিন মাস আগে পূর্ব দিল্লীতে দিল্লী পুলিশ এবং ময়ূর বিহারের আর ডব্লিউ এ রাস্তার দোকানদারদের উচ্ছেদ করে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে উচ্ছেদ হওয়া দোকানদাররা এক গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করেন এবং তাঁরা পুনরায় দোকান খোলার অনুমতি আদায় করেছেন।
এঁরা ছিলেন শ্রমিক ও কৃষক যাঁরা ৪০-৫০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে দিল্লী এসে পরিবার চালানোর তাগিদে প্রথমে দিল্লীর এনসিআর কারখানাগুলোতে নিপীড়নের মুখে পড়েন; কারখানাগুলো থেকে ছাঁটাই হওয়ার পর তাঁরা স্বনিযুক্তির পথে চালিত হয়ে শহরের রাস্তায় সব্জি, ফল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে থাকেন। সরকার এবং ধনী ব্যক্তিরা রাস্তার এই ছোট দোকানগুলোকে তুলে দেয়। প্রধানমন্ত্রী একদিকে চা, পকোড়া এবং সাইকেল সারানোর জীবিকার কথা বলছেন এবং অন্য দিকে তাঁর দোসররা এই সামান্য জীবিকাগুলোকে কেড়ে নিতে চাইছে। পুলিশ এবং সমাজের প্রভাবশালীরা শত-শত পরিবারের জীবিকাকে ধ্বংস করছে।
এই জন-বিরোধী জীবিকা-বিরোধী সরকারের কাছে দরিদ্র দোকানদারদের দোকান পুনরায় খুলতে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সিপিআই(এম-এল) এবং এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত ময়ূর বিহারের রেহাদি খোখা পাত্রি মহাসংঘ আগস্ট মাসে জনগণের একটি সমাবেশ সংগঠিত করে। দিল্লী সরকার, দিল্লী মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এবং দিল্লী পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়ে এদের পুনরায় দোকান খুলতে দেওয়ার দাবি জানানো হয়। সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। কেজরিওয়াল সরকারের কাছে উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের দুর্দশা জানাতে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ সংগঠিত করা হয়, সরকার কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপই করে না। আরডব্লিউএ-র কর্তাদের সঙ্গে আলোচনাও নিষ্ফলা হয়। এর পর আন্দোলন পরিচালনার সংগঠন বাধ্য হয়ে দোকানগুলি আবার খুলে দেয়, কিন্তু প্রশাসন সেগুলোকে ভেঙ্গে দেয়। এই পদক্ষেপ জনগণের ক্রোধ বাড়িয়ে তোলে এবং কয়েক দিন পর দোকানগুলো আবার লাগানো হয়। পুলিশ দোকানগুলো আবার ভেঙ্গে দেয় এবং বেশ কিছু লোককে গ্ৰেপ্তার করে। এই গ্ৰেপ্তারিকে মুখ বুজে মেনে না নিয়ে বহু মানুষ থানায় গিয়ে প্রতিবাদ জানায় এবং গ্ৰেপ্তার হওয়া দোকানদারদের মুক্ত করতে সক্ষম হয়। এক বৃহত্তর সমাবেশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ২০১৯-এর ২০ অক্টোবর এক জীবিকা সমাবেশ এবং প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করা হয় এবং এতে বহু স্থানীয় মানুষ অংশ নেন। দোকানগুলো ২১ অক্টোবর আবার চালু করা হয় এবং জনগণ তাদের জীবিকার সুরক্ষায় যে কোনো নিপীড়নের মোকাবিলায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। ২২ অক্টোবর বহু পুলিশ এসে দোকানদারদের হুমকি দিয়ে আন্দোলনের বেশ কিছু নেতা ও কর্মীকে গ্ৰেপ্তার করে নিয়ে যায়। জনগণ সরাসরি থানায় গিয়ে থানা ঘেরাও করে এবং জনগণের মেজাজ দেখে পুলিশ গ্ৰেপ্তার করা নেতা ও কর্মীদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরপর পুলিশ ও প্রশাসন আলোচনায় বসতে সম্মত হয় এবং ২০১৯-এর ২৩ অক্টোবর থেকে দোকানগুলো পুনরায় চালু করার সম্মতি দেয়। এইভাবে ৮০-৮৫ দিন লাগাতার লড়াই চালানোর পর প্রশাসন জীবিকার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং জনগণের আন্দোলন বিজয় অর্জন করে।