গত ২১ আগস্ট ২০১৯ কুচবিহার এমজেএন হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের সদ্য নতুন তৈরি বিল্ডিং-এ ভয়াবহ আগুন লেগে যায়। সেখানে মাদার এবং চাইল্ড হাব ওয়ার্ডে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঐ হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় সিপিআই(এমএল) কুচবিহার জেলা কমিটির সদস্য এবং মহিলা নেত্রী প্রজাপতি দাসের বাড়ি। তিনি বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। আগুনের খবর পেয়ে দৌড়ে ঘটনাস্থলে চলে যান এবং ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হাসপাতালের রোগীদের উদ্ধার কার্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মোট ১২ জন নবজাতক সহ তাদের মায়েদের উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেন। আশপাশের প্রচুর মানুষ এবং ফায়ার ব্রিগেডের হস্তক্ষেপে ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এহেন সাহসী পদক্ষেপ দেখানোর জন্য জেলা প্রশাসন থেকে পরবর্তীতে প্রজাপতি দাসকে প্রশংসাপত্র এবং মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয়।
প্রজাপতি দাস ১৯৯৫ সালে পার্টিতে যোগদান করেন। দারিদ্রের সাথে লড়াই করেই বড় হন। প্রথমে পরিচারিকার কাজ করতেন। তাঁর স্বামী দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডে নিম্নশ্রেণীর কর্মচারি ছিলেন। খুবই সামন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তিনপুত্র নিয়ে জীবনযাপন করতে পরিচারিকার কাজ করতে হত। পার্টির সাথে যোগাযোগের পর মান সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে নতুনভাবে লড়াই করে পথ চলতে শুরু করেন। শুরু হয় রাজনৈতিক দৃঢ়তা নিয়ে পথ চলা, বহু ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এই ধরনের সাহসী পদক্ষেপের পরিচিতি লাভ করেন। জেলায় এবং রাজ্যে বিভিন্ন লড়াই আন্দোলনে সংগঠন সামনের সারিতে প্রজাপতিকে পেয়েছে। যে কোনো সময় প্রয়োজনে প্রজাপতিকে পেতে কোনো অসুবিধা হয় না। রাজনৈতিক বিষয় তত্ত্বগত ব্যাপার ভালো করে বুঝতে না পারার জন্য নিজেকে দুর্বল মনে করতেন। কিন্তু পার্টির ডাকে সাড়া না দিয়ে কখনও বসে থাকতে পারতেন না। আইন অমান্য কর্মসূচীতে সামনে দাঁড়িয়ে লড়াই করা, অসাধু ডাক্তারকে কলার ধরে প্রতিবাদ, এই ধরনের বহু সাহসী পদক্ষেপ প্রজাপতির মধ্যে দেখা গেছে। বেশ কিছুদিন নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করেছেন, সেখানেও কাজ করেছেন প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়ে।
বর্তমানে ছোট ছেলেকে নিয়ে সংসার। স্বামী মারা যাওয়ার পর ছোট ছেলেকে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডে কাজে নিয়োগ করা হয়। মাঝে মাঝে কোথাও রান্নার কাজ করেন। বাকি সময়টা পার্টির কাজে নিয়োজিত। এরকম একজন সাধারণ মহিলা আমাদের সিপিআই(এমএল) ধারার সংস্পর্শে এসে কীভাবে নিজেকে জনগণের স্বার্থে উৎসর্গ করতে পারেন প্রজাপতি দাস তার উদাহরণ। এই ধরনের কর্মীর জনগণের সম্পদ, সংগ্রামী কমিউনিস্ট দলের সম্পদ।
-- বাবুন দে