ঘড়িতে তখন বেলা ঠিক দেড়টা। হাওড়া থেকে এক ঘণ্টা আগে শুরু হওয়া দীর্ঘ, দীর্ঘ মিছিল ধর্মতলা ছাড়িয়ে তখন প্রবেশ করছে এলিট সিনেমা পার্শ্বর্তী কলকাতা করপোরেশন সংলগ্ন ফিয়ার্স লেন। যান চলাচল স্তব্ধ কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে। পথচলতি মানুষের অনেক বেশি আগ্রহ তাঁদের দেখতে, শুনতে ও বুঝতে — গ্রামীণ মানুষের কর্মসংস্থান, লোকপ্রসারের দাবির পাশাপাশি এনআরসি থেকে মন্দির-মসজিদ ইস্যু; রাজনীতির চলমান অতি সাম্প্রতিক প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলিতে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল; হাঁটতে থাকা মিছিলকারী মানুষের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড, সুতীব্র কন্ঠের শ্লোগান, মুষ্টিবদ্ধ হাত!
দুটো নাগাদ শুরু হল সভা। সমাবেশ স্থল তখন পরিপূর্ণ মানুষে মানুষে। মঞ্চের উপরে গ্রাম বাংলার মাঠ-ময়দান থেকে উঠে আসা আদিবাসী, কৃষিমজুর, কৃষক নেতারা মূলত যাদের পরিশ্রম আর নেতৃত্বে কানায় কানায় পরিপূর্ণ এই জনসভা। মঞ্চের নীচেও তাঁরা অনেকেই। সভা শুরুতেই উঠে দাঁড়িয়ে বুলবুল ঝড়, এনআরসি ও কাশ্মীরে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনে নিহত শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করলো এই মহতী সভা। হুগলির বড়াইল থেকে আসা আদিবাসী সাংস্কৃতিক কর্মীরা পরিবেশন করলেন আদিবাসী নৃত্য। এরপর এক এক করে বিভিন্ন দাবিগুলি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী মঞ্চের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক পাগান মুর্মু, হুগলী জেলা কমিটির সদস্য শিবলাল বাস্কে, শ্রীমতী মার্ডি, বিশ্বনাথ সরেন, শম্বারি কিস্কু। এঁরা প্রত্যেকেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে জনজাতির মানুষের জীবন যন্ত্রনা ও ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ঘোষণা করেন। কিষাণ মহাসভার রাজ্য সভাপতি অন্নদাপ্রসাদ ভট্টাচার্য তুলে ধরেন কৃষকদের জীবনযাপনের কঠিন পরিস্থিতি। আয়ারলা রাজ্য নেতা বাবলু ব্যানার্জী পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে আদিবাসী-বনবাসী উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ কৃষক ও গ্রামীণ মজুর, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আরো বড়ো লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে আহ্বান রাখেন। তিনি এনআরসি থেকে মন্দির-মসজিদ, বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।
সভা সঞ্চালনা করেন আয়ারলার রাজ্য সম্পাদক তথা আদিবাসী বিকাশ মঞ্চের রাজ্য সভাপতি সজল অধিকারী। সমাবেশের মাঝে সমবেত আদিবাসী নৃত্য সমাবেশকে উৎসবের চেহারা দেয়। সভার সমাপ্তি ঘোষিত হয় ৫টা নাগাদ। নেতৃত্বের পক্ষে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আয়ারলা রাজ্য সভাপতি সজল পাল, সুধীর মুর্মু, কৃষ্ণ প্রামাণিক, আনসারুল আমান মন্ডল, শরৎ সিংহ প্রমুখ। বিধানসভা ভবনে মন্ত্রী তাপস রায় মারফত মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রেরিত স্মারকপত্র তুলে দেওয়া ও ডেপুটেশন দিতে পৌঁছে যান জয়তু দেশমুখ, পাগান মুর্মু, মুকুল কুমার, স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, শ্যামল ভৌমিক ও সজল অধিকারীকে নিয়ে গঠিত ৬ জনের এক প্রতিনিধিদল। তাপসবাবু এই দাবিপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।