উত্তপ্ত চিলি, জাগ্রত বলিভিয়া

প্রায় পাঁচ দশক আগেকার বৈপ্লবিক স্পন্দনে মুখর লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে শিল্পোন্নত দেশ চিলি। রাজধানী সান্তিয়াগোয় রাজপথে ১০ লক্ষ মানুষ বিক্ষোভে উত্তাল, যা দেশের জনসংখ্যার ৫ শতাংশ। অন্যান্য শহরেও তার প্রতিফলন দেখা দিয়েছে। মেট্রো রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কিছুদিন আগে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। সাবওয়েতে ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু মেট্রো রেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে থেমে থাকেনি আন্দোলন, অর্থনৈতিক সংস্কার, নাগরিক সুবিধা ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিরোধের দাবিও উঠেছে। আন্দোলনে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েক শত নিখোঁজ হয়েছেন। সাত হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট মিগুয়েলজুয়ান সেবাস্তিয়ান পাইরেরা ইচেনিক সরকার প্রায় ২০ হাজার নিরাপত্তারক্ষী রাজপথে মোতায়েন করেছে রয়েছেন। সান্তিয়াগোতে জারি রয়েছে সামরিক বাহিনীর রাত্রিকালীন কারফিউ।

মানুষজন প্রেসিডেন্ট পাইরেরার পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে, যদিও পিছু হটে প্রেসিডেন্ট আন্দোলনকারীদের শান্ত থাকার অনুরোধ করেছেন, বলেছেন ‘আমরা সবাই বদলে গেছি। আজকের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে চিলিয়ানরা তাদের কিছু চাহিদা জানিয়েছে এবং চিলিকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।’ সান্তিয়াগোর সংস্কারপন্থী গভর্নর কার্লা রুবিলার বারাহোনা এই বিক্ষোভকে একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। টুইটারে লিখেছেন “১০ লক্ষ মানুষ রাজধানীতে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিয়েছে। আন্দোলনকারীরা একটি নতুন চিলি গড়ার স্বপ্নের প্রতিনিধিত্ব করছে।’’ নারীমুক্তির প্রবক্তা ও পেশায় চিকিৎসক ৪২ বছর বয়স্কা রুবিলার বামপন্থী নন, কিন্তু প্রেসিডেন্ট পাইরেরার মতো উচ্চবিত্ত এলিট-লালনকারী দক্ষিণপন্থী নন (চিলির সবচেয়ে বড় বিত্তবানদের অন্যতমও)। পাইরেরা রুবিলারকে মন্ত্রীত্বের টোপ দিয়েছিলেন, কিন্ত রুবিলার তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পাররেরার দক্ষিণ-মধ্যপন্থী জাতীয় পুনর্নবীকরণ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। পাইরেরার এলিটপন্থী অর্থনৈতিক নীতির সাথে পার্থক্যের জন্য রুবিলার দল ছেড়ে নির্দল প্রার্থী হয়ে সান্তিয়াগোর গভর্নর পদে নির্বাচিত হন।

চিলির আজকের বিক্ষোভের মধ্যে ১৯৭৩-এর ১১ নভেম্বরের শত শত বিপ্লবী শহীদের আত্মবলিদানের ভাষা ফুটে উঠছে, এমনটি ভাবা সমীচীন হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে সিআইএ-র (ও মার্কিন বহুজাতিক কর্পোরেট গোষ্ঠী আই টি অ্যান্ড টি) মদদে অগাস্টো পিনোচেতের প্রতি তীব্র ঘৃণা বিদ্যমান, বিশেষত চল্লিশোর্ধদের মধ্যে। সমাজতন্ত্রবাদী প্রেসিডেন্ট আইয়েন্দে, সমাজতন্ত্রী দলনেতা আলতামিরানো, চিলির কমিউনিস্ট পার্টি সদস্য, সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত কবি পাভলো নেরুদা (আসলনাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো) ও গণসঙ্গীত শিল্পী দূর অন্তরালে হলেও আজকের আন্দোলনে প্রেরণা স্বরূপ।

বিপ্লবোন্মুখ বলিভিয়া

লাতিন আমেরিকার গণ জাগরণে ভাস্বর বলিভিয়া। সেখানে জেগে উঠেছে মূলবাসীদের অরুণ উন্মেষ। দেশের জনসংখ্যার প্রধান অংশ মূলবাসীরা। বলিভিয়ার পুনর্নিবাচিত প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস। এ নিয়ে পরপর চারবার জিতলেন প্রায় এক পক্ষকাল পূর্বে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল তাঁকেই জয়ী ঘোষণা করেছে। এবারকার নির্বাচনে ৯৯.৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল (যা ভারতে ৫৭ বছরের সংসদীয় গণতন্ত্রেও অচিন্তনীয়) মোরালেস পেয়েছেন ৪৭.১ শতাংশ। তিনি যদি ৪০ শতাংশের কম ভোট পেতেন, বলিভিয়ার নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী দ্বিতীয়দফার ভোট হতে পারত। তাছাড়া দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট হবে যদি নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে প্রথম প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান ১০ শতাংশের কম হয়। দ্বিতীয় অবস্থানের কার্লোস মেসা। ৩৬.৫১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাই তাঁর ও দক্ষিণপন্থী বিরোধীদের দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের দাবি নাকচ হয়েছে।

খণ্ড-26
সংখ্যা-35