দেশব্যাপী চাপের ফলে মোদী সরকার কৃষিচুক্তির প্রশ্নে পিছু হটল

সারা ভারত কিষাণ মহাসভা (এআইকেএম)-র কর্মসূচী নেয় গত ৪ নভেম্বর মোদী সরকার অবাধ কৃষি বাণিজ্যের যে কালা চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছিল, তার প্রতিবাদে সোচ্চার হতে। দেশজুড়ে জনমতের চাপের ফলে মোদী সরকার কৃষি ও কৃষক স্বার্থবিরোধী চুক্তি করা থেকে পিছু হটেছে।

কিষাণ মহাসভা দাবি তোলে —

  • কৃষক বিরোধী দেশ বিরোধী “আর সি ই পি” অবাধ বাণিজ্য চুক্তি মানছি না — মানবো না।
  • গোপনীয় কায়দায় কৃষিক্ষেত্রকে যুক্ত করে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে কেন মোদী সরকার জবাব দাও।
  • বিশ্ববাজারের অসম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিয়ে দেশের কৃষকদের সর্বনাশ করা চলবে না।
  • বিদেশ থেকে কৃষি পণ্যের অবাধ আমদানি করে দেশের কৃষকদের সংকটের মধ্যে ঠেলে দেওয়া চলবে না।
  • ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, ঋণগ্রস্ত চাষিদের দেশী-বিদেশী, কর্পোরেট পুঁজিপতিদের গোলামে পরিণত করার চক্রান্ত বন্ধ করো।
  • বিদেশী কোম্পানির হাতে কৃষি-বীজ ব্যবসার একচেটিয়া অধিকার তুলে দেওয়া চলবে না।
  • দেশীয় ও চিরাচরিত বীজ ব্যবহার নিষিদ্ধ করার চক্রান্তকারী মোদী সরকার দুর হঠো।

আরসিইপি কালা চুক্তির কারণে

  • মোদী সরকারের কর্পোরেটমুখী ও কৃষক বিরোধী নীতির ফলে বর্তমানে আমাদের দেশের কৃষকরা চরম সংকটে, তার উপর বিশ্ববাজারের অবাধ প্রতিযোগিতায় তারা আদৌ টিকে থাকতে পারবে না।
  • উন্নত পুঁজিবাদী দেশের কৃষকরা ভর্তুকিতে কৃষি উপকরণ ও সরকারি কৃষি পরিকাঠামোর সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। এর বিপরীতে আমাদের দেশের সরকার চড়া হারে কর বসিয়ে কৃষি-উপকরণের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে চাষের খরচ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। অথচ ফসলের লাভজনক দাম না পেয়ে তারা ঋণ-ফাঁদে জর্জরিত। তাদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে আত্মহত্যার পথে। “আরসিইপি” বা অবাধ বাণিজ্য-চুক্তি কৃষি ও কৃষকের এই সংকটকে আরও তীব্রতর করে তুলবে।
  • মোদী সরকার এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে সম্পূর্ণ গোপন কায়দায়। চুক্তির বয়ান জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। লোকসভা বা বিধানসভাগুলিতে কোনোরকম আলোচনাই করা হয়নি।
  • এই চুক্তি কৃষি ও দুধ উৎপাদন ক্ষেত্রে চাষিদের জীবনে চরম সংকট ডেকে আনবে। কৃষিকে সাধারণত যে কোনো বাণিজ্য চুক্তির বাইরে রাখা হয়ে থাকে, এই প্রথম কৃষিকে যুক্ত করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী বিনা শুল্কে বিদেশ থেকে কৃষিপণ্যর অবাধ আমদানি করা হবে, ফলে কোটি কোটি দুধ উৎপাদক চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষত অস্ট্রেলিয়া ও চীন থেকে গম, তুলা, তৈলবীজ এবং নারকোল, রবার প্রভৃতির আমদানি বাগিচা চাষিদের চরম ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
  • কেবল কৃষিপণ্যর ক্ষেত্রেই নয়, এই চুক্তি বীজ, গবাদিপশুর খাদ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রেও চাষিদের বিরাট বিপদের মুখে ফেলবে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এই সমস্ত কিছুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করবে, এমনকি চাষিদের নিজস্ব চিরাচরিত বীজ ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারী হয়ে যাবে।
  • চুক্তির বলে দেশী বিদেশী কর্পোরেট পুঁজিপতিরা কৃষিজমি দখলের অবাধ অধিকার পেয়ে যাবে। কৃষিপণ্যের সরকারী ক্রয় ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বানচাল করে দিয়ে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও খুচরো ব্যবসায় তারা একচেটিয়া দখলদারি কায়েম করবে।
  • এই চুক্তি আমাদের দেশের কৃষকদের সর্বনাশ করে তাদের কর্পোরেট পুঁজিপতিদের উপর নির্ভরশীল করে তুলবে।
খণ্ড-26
সংখ্যা-35