তেলেঙ্গানার স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কর্মচারীরা ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনকে সরাসরি সরকারি সংস্থার সাথে সংযুক্তিকরণ সহ ২৬ দফা দাবিতে ৫ অক্টোবর শুক্রবার মধ্যরাত্রি থেকে ধর্মঘট শুরু করেছিলেন। এই সংযুক্তিকরন হলে শ্রমিক কর্মচারিরা সরকারি কর্মচারির মতো সুযোগ সুবিধা পাবেন। এই আন্দোলনে শ্রমিক কর্মচারিদের সাথে সামিল ছিলেন ডিপো ম্যানেজার ও সুপারভাইজারাও।
শ্রমিক-কর্মচারিরা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ায় গত ৬ অক্টোবর তেলেঙ্গানা সরকার প্রায় ৪৮ হাজার শ্রমিক কর্মচারিকে বরখাস্ত করেছে। ইতিমধ্যে ৬ জন শ্রমিক আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে এবং আত্মহত্যা করে মারা গেছেন।
এআইসিসিটিইউ-র পক্ষ থেকে বিশেষত অল ওয়েষ্ট বেঙ্গল স্টেট ট্রান্সপোর্ট সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারি ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তেলেঙ্গানা সরকারের এই শ্রমিক বিরোধী অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এবং অবিলম্বে সকল শ্রমিকদের উপর থেকে বরখাস্তের নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
১৯ অক্টোবর সকল বিরোধী পার্টি ও ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তেলেঙ্গানা বনধ্ পালিত হয়। ঐদিন দেশের প্রতিটি রাজ্যে তেলেঙ্গানার পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে সংহতি দিবস পালন হল। তেলেঙ্গানা রাজ্যের ধর্মঘট সর্বাত্মক সফল হয়েছে। হায়দ্রাবাদ শহর সহ ৩২টা জেলায় সকাল থেকে শিক্ষক, ছাত্র যুবকরা অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়েন। পুলিশ আন্দোলনকারী বহু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। জোর করে বাস চালানোর চেষ্টা করলে শ্রমিকরা অবরোধ সৃষ্টি করে। প্রায় ১২টার মতো বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সরকার পক্ষ আন্দোলনকারী ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চ জ্যাক-এর সাথে বৈঠকে বসেনি। এর মধ্যে নতুন করে ওলা উবের এর শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছে। পরিবহন শ্রমিকরা পরবর্তী আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন।
অন্যান্য রাজ্যের মতো আমাদের রাজ্যেও ঐদিন বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ ও সংহতি দিবস পালন করা হয়েছে। কলকাতার মৌলালী মোড়ে বিক্ষোভ সভা ও তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ করা হয়েছে। সভায় বক্তব্য রাখেন অল ওয়েষ্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা রাজু দাস, চটকল ইউনিয়নের নেতা ওমপ্রকাশজী, এআইসিসিটিইউ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বসু, সভাপতি অতনু চক্রবর্তী, নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের রাজ্য সম্পাদক কিশোর সরকার প্রমূখ। সভা পরিচালনা করেন রাজ্য সম্পাদক দিবাকর ভট্টাচার্য্য।
ভিন রাজ্যের শ্রমিক আন্দোলনের সংহতিতে জুট, নির্মাণ ও অসংগঠিত শ্রমিকদের সাথে এ রাজ্যের পরিবহন শ্রমিকরাও এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এইভাবেই নিজেদের দাবী আদায়ের লড়াইয়ের সাথে সাথে রাজ্যের, দেশের শ্রমিক আন্দোলনের পাশে নিজেদের সামিল করানোর প্রক্রিয়া জারি রাখতে হবে।