সিপিআই(এম-এল) লিবারেশনের ডাকে ৩ অক্টোবর সমস্ত রাজ্যে কাশ্মীর সংহতি দিবস উদযাপিত হয়। দু-মাস হয়ে গেল ভারত সরকার তার নিজ দেশেরই এক রাজ্যের জনগণকে শত্রুরূপে গণ্য করে তাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার এবং এমনকি বুনিয়াদি নাগরিক সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। গত ৫ আগস্ট ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা বিলোপ করে কাশ্মীরকে বন্দী করার পর ৬০তম দিনে এই সংহতি দিবস পালন করা হয়। সারা দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং সংহতি জ্ঞাপন অনুষ্ঠানগুলি সংগঠিত করে কাশ্মীরি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং কাশ্মীরে স্বাভাবিক জীবন পুনর্বহাল করার দাবি জানানো হয়। মোদী সরকার এবং তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে দিনের পর দিন যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে চলেছে, এই প্রতিবাদ কর্মসূচীগুলির মধ্যে দিয়ে তাকে উন্মোচিত করা এবং ধিক্বার জানানো হয়।
কাশ্মীরে সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকে জেলে বন্দী করে সরকার সুপরিকল্পিতভাবে এটা সুনিশ্চিত করেছে যে, কাশ্মীরে কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যেন রূপ পেতে না পারে এবং কাশ্মীরের সাধারণ জনগণের উপর সেনা বাহিনীর নিপীড়নও অব্যাহতভাবে চলতে পারে, আর নিপীড়নের ঐ সমস্ত খবর যেন প্রকাশ না পায়। হাজার-হাজার ছোট-ছোট ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে (গ্ৰেপ্তারি নথিবদ্ধ করে বা না করে) এবং সেই শিশুদের ও তাদের মা-বাবাদের ধারাবাহিক নির্যাতনের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলির মধ্যে দিয়ে আরও যে দাবি জানানো হয় তা হল – আটক ও নিপীড়নের পদক্ষেপগুলি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং জেলে বা অন্যত্র আটক সমস্ত রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। মোবাইল, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য সংযোগ ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা, ওষুধপত্রের যথাযথ সরবরাহ এবং কাশ্মীরের সমস্ত স্থানে হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার সুযোগ সুনিশ্চিত করার দাবিকেও জোরের সাথেই তুলে ধরা হয়।
দেশের অসংখ্য শহর-নগরে চলা বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলিতে শ্লোগান ওঠে – কাশ্মীরকে বন্দীত্ব থেকে মুক্তি দাও, মোদী-শাহ মিথ্যাচার বন্ধ কর তা সারা দুনিয়ার নজরে পড়ছে, কাশ্মীরী জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে মর্যাদা দাও এবং স্বাভাবিক জীবনকে পুনর্বহাল কর। এই সমস্ত দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি ভারত সরকারের কাছেও পাঠানো হয়। নয়া দিল্লীর যন্তর-মন্তর এবং বেঙ্গালুরু, পাটনা, লক্ষ্ণৌ, রাঁচি, চণ্ডিগড় সহ বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীতে সমবেত হয়ে সিপিআই(এম-এল) কর্মীরা প্রতিবাদ কর্মসূচীগুলিতে অংশ নেন।
সিপিআই(এম-এল)-এর উত্তরাখণ্ড রাজ্য সম্পাদক রাজা বহুগুণা কাশ্মীরের বন্দীত্বকে আরএসএস-এর এক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন যার লক্ষ্য শুধু কাশ্মীরিয়তকে আক্রমণ করাই নয়, তার আরও লক্ষ্য ভারতের সমন্বয়ী সংস্কৃতিকে বিপর্যস্ত করা যে সংস্কৃতিই হল ভারতের গণতন্ত্র ও সংবিধানের বুনিয়াদ। ফ্যাসিবাদী হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক সমাজ এবং জনগণের উপর আক্রমণ চালানোর সংঘের বিভেদমূলক অভিপ্রায়ের অংশ রূপেই তা প্রতিপন্ন হচ্ছে।
আরএসএস-বিজেপির কাশ্মীর এজেন্ডার লক্ষ্য যে সারা দেশেই সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে তীব্রতর করে তোলা, জনগণ তা ধীরে-ধীরে বুঝতে পারছেন, এর জন্য তারা যে মিথ্যাচার করছে সেগুলোও তাঁরা ধরে ফেলছেন। প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলিতে বক্তারা সরকারের মিথ্যাচারকে উন্মোচিত করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সঞ্চারের উপর গুরুত্ব দেন। কাশ্মীরের মতো আক্রমণ অন্যত্র হতে পারে বলেও তাঁরা জনগণকে সতর্ক করে দেন।
কাশ্মীরের উপর সরকারের আক্রমণকে ধিক্কার জানাতে অনেক স্থানেই সিপিএম, সিপিআই ও অন্যান্য বাম দলের কর্মীরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচিগুলিতে অংশ নেন। ঝাড়খণ্ডের ডালটনগঞ্জ এবং অন্যান্য অনেক শহরে শ্রমিক ইউনিয়ন, নাগরিক সংগঠন, আইপিটিএ এবং এআইএসএ বিক্ষোভে অংশ নেয়। বোকারোতে শ্রমিকরাও প্রতিবাদে সক্রিয় থাকেন।
পুর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ২নং ব্লকের ফলেয়া বাজারে কাশ্মীর সংহতি দিবস উপলক্ষে গত ৩রা অক্টোবর বিকেল চারটে নাগাদ পার্টির উদ্যোগে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল। সভায় বক্তব্য রাখেন পর্যায়ক্রমে লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড বিনয় মন্ডল ও অশোক চৌধুরী। সভায় উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির রাজ্য সভাপতি সজল পাল । সভা পরিচালনা করেন এরিয়া কমিটির সম্পাদক শিবু সাঁতরা। বক্তারা কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ও ৩৫এ ধারা বহাল করার দাবিতে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। কাশ্মীর সহ বিভিন্ন রাজ্যে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সমস্ত স্তরের মানুষকে সংগঠিত করতে ‘কাশ্মীর সংহতি দিবস’ পালন এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। উপস্থিত ছিলেন আরওয়াইএ নেতা কমরেড সমীর বসাক।