কালনা ২নং ব্লকের অকালপৌষ গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনটি গ্রাম আগ্রাদহ, বাজিতপুর ও ঝিকরে গ্রামে গ্রাম সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্তেশ্বর ব্লকের মামুদপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের শুটরে গ্রামে গ্রাম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সদর ১নং ব্লকের কামারকিতা গ্রামে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মেমারী ২নং ব্লকের ২টি গ্রামে, পুর্বস্থলী ১নং ব্লকের ৪টি গ্রামের লোক জমায়েত হয়ে একসাথে সভা হয়। পূর্বস্থলী ২নং ব্লকের বাররপাড়া ও সিমলা গ্রামে গ্রাম সভা অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রাম সভা করার বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। যে সমস্ত গ্রামে সিপিআই(এমএল)-এর গণভিত্তি আছে বা রাজনৈতিক প্রভাব আছে সে সমস্ত গ্রামে গ্রামের সমস্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে গ্রামের মানুষ তাদের মতামত রাখেন। গ্রামের বিভিন্ন সমস্যার কথা ও দাবি তুলে ধরেন। আবার যে সমস্ত গ্রামে সিপিআই(এমএল)-এর সংগঠন, গণভিত্তি, প্রভাব দুর্বল সে সব গ্রামে বৈঠক ডাকা হলে সিপিআই(এমএল)-এর সমর্থক কয়েক জনই উপস্থিত হবেন। তাতে গ্রামের সাধারণ মানুষের মতামত জানা সম্ভব হবে না। তাই সেই সব গ্রামে মাইক দিয়ে প্রচার করে সভা আহ্বান করলে সিপিআই(এমএল) তথা গণ সংগঠনগুলোর বক্তব্য তুলে ধরা সম্ভব হয়। এবং উপস্থিত গ্রামবাসীদের মতামত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই(এমএল)-এর গণ সংগঠনগুলোর গণভিত্তি সম্পন্ন গ্রামের সংখ্যা স্বল্প সংখ্যকই আছে। তাই ব্যাপক সংখ্যক গ্রাম সভা সংগঠিত করতে হলে দ্বিতীয় ধরনের সভা বেশি করতে হবে। এমনকি যে সমস্ত গ্রামে সংগঠনের লোক নেই সে সমস্ত গ্রামে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের সভা সংগঠন বিস্তারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ।
পুর্ব বর্ধমান জেলায় দুই ধরনের সভা সংগঠিত করা হচ্ছে। কালনা ২নং ব্লকের অকালপৌষ গ্রাম পঞ্চায়েতে তিনটি গ্রামে সিপিআই(এমএল)-এর গণভিত্তি আছে। তাই এই গ্রামগুলোতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ঝিকরে গ্রামে ৮০ জন, আগ্রাদহ গ্রামে ৬০ জন, বাজিতপুর গ্রামে ৩০ জন জমায়েত হয়েছে। পূর্বস্থলী ২নং ব্লকের বাররপাড়া গ্রামে সিপিআই(এমএল)-এর অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ আছে তাই মাইক দিয়ে প্রচার করা হয়। সভায় ১০০ জনের বেশি মানুষ জমাযেত হয়। সভায় আহ্বান করা সত্ত্বেও মাইকে কোনো সাধারণ মানুষ মতামত রাখেননি। কিন্তু সভা শেষে মানুষ নিজেদের মতামত নেতৃত্বের কাছে রাখতে থাকে। মেড়তলা পঞ্চায়েতের সিমলা গ্রামে সিপিআই(এমএল)-এর গণভিত্তি থাকলেও গ্রামটি অনেকগুলো পাড়া নিয়ে গঠিত। তাই বৈঠক করে এক জায়গায় সাধারণ মানুষকে জমায়েত করা সমস্যা। মাইক দিয়ে প্রচার করে সভা করা হয়। শতাধিক মানুষ জমাযেত হয়। সাধারণ মানুষ ১০০ দিনের কাজ করে টাকা পাচ্ছেন না। কাজ দেওয়া হচ্ছে না। একজনের কাজের টাকা অন্যজন বিশেষ করে তৃণমূলের সুপারভাইজারের নিজের লোকের একাউন্টে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মন্তেশ্বর ব্লকের শুটরে গ্রামে বৈঠক করতে গিয়ে কার্যত একটি পাড়ার বৈঠক হয়। সেই পাড়ায় বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশ থেকে আসা আদিবাসী ওঁরাও সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা এনআরসি প্রশ্নে আতঙ্কগ্রস্থ। সদর ১নং ব্লকের কামারকিতা গ্রামে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মূলত পার্টি সদস্যদের নিয়ে যা গ্রামে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের ইসলামপুর চৌরাস্তায় গ্রাম সভা হওয়ার পর গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঐ গ্রাম সভার প্রভাবে ইসলামপুর স্কুলে ২৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ২ শতাধিক মহিলা কর্মী বৈঠক করেন যাদের মধ্যে রন্ধনকর্মীও আছে। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য রন্ধনকর্মী ইউনিয়নের সভানেত্রী মীনা পাল। স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ধরে সরকারগুলো কর্মসংস্থানের ও গ্রামীণ গরিদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঢাক বাজালেও বাস্তবে বর্তমানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে সরকারের সহায়তা খুব সামান্যই দেওয়া হচ্ছে। কার্যত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো ব্যাংকগুলোর নিশ্চিত ঋণ ব্যবসার জায়গা হয়ে উঠেছে। তাই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়ে চলেছে। আগে গোষ্ঠীগুলোকে ভর্তুকি বা অনুদান দেওয়া হত। বর্তমানে দেওয়া হয় না। কর্মসংস্থানের কথা বলা হতো। বাস্তবে বর্তমানে একটা অংশ স্কুলগুলোতে রান্নার কাজ করে মাসে ২০০-৩০০ টাকা মজুরি পায়। বাকিরা কোনো কাজই পায় না। তাই দাবি উঠেছে বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পে গোষ্ঠীগুলোর কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণের ভর্তুকি ও অনুদানের ব্যবস্থা করতে হবে। রন্ধন কর্মীদের মজুরি বাড়াতে হবে এবং কাজের নিশ্চয়তা দিতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী সংগ্রামী কমিটির নামে ১৯ সেপ্টেম্বর পূর্বস্থলী ১ নং ব্লকে ডেপুটেশন সংগঠিত করা হবে।