আবেদন
কৃষি ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হোন

কৃষি ও কৃষকের সংকট আজ চরম হয়ে উঠেছে। মোদির দ্বিতীয় দফা, জনগণের দফারফা, দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা করুণ হয়ে উঠেছে। সারা দেশের শিল্প,ব্যবসা-বাণিজ্যে বর্তমানে যে প্রবল সংকট দেখা দিয়েছে তার পেছনে একটা বড় কারণ হলো কৃষকের দুরবস্থা। কৃষক উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, কৃষিকাজে যুক্ত দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। ফলে শিল্পের নানাবিধ পণ্যের বিক্রিও কমে গেছে। একের পর এক শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ বেকার! তাই আওয়াজ উঠেছে-দেশের অর্থনীতি বাঁচাও! এবং সবার আগে কৃষক ও কৃষি বাঁচাও! কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কেবল কাশ্মীর-এনআরসি-রাম মন্দির এসব বিষয়গুলি সামনে নিয়ে এসে রুটি রুজির মূল প্রশ্ন থেকে মানুষের নজরকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। ওরা ধর্মের নামে বিভেদ-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে “রাম রহিম”-এর ঐক্য বিনষ্ট করতে চাইছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে নকল জাতীয়তাবাদের হাওয়া, ধ্বংস করছে দেশের সংবিধান। বড় পুঁজিপতিদের নানা রকম সুযোগ সুবিধা-কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে, সরকারের হেফাজতে থাকা খাস জমি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ চাষির বেলায় কেবল ফাঁকা আওয়াজ! সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশ স্বত্বেও ফসলের উৎপাদন খরচের দেড়গুন দাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ওরা পালন করছে না, উল্টে ডিজেল সার বীজ, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চাষের খরচ বৃদ্ধি করে চলেছে। চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া দুরের কথা, কৃষকরা আজ ঋণফাঁদে জর্জরিত, তাঁদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে আত্মহত্যার পথে। এই চরম কৃষক বিরোধী বিজেপি এ রাজ্যে বিকল্প হতে চাইছে, তৃণমূলের দুর্নীতি, দলবাজি, গণতন্ত্রহরণ — এসব কিছুকে কাজে লাগিয়ে ওরা ক্ষমতায় আসতে চাইছে।

এ বছর খরা-অনাবৃষ্টির কারণে চাষের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। শস্যবীমা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নানা ঘোষণা শোনা গেলো, কিন্তু রাজ্যের কৃষকরা, ছোট ভাগচাষি, চুক্তি চাষিরা তার কোনো সুবিধাই পেলো না। পাট ভেজানোর জন্য জল সরবরাহ করা হলো না, ফলে উৎপাদনে বিরাট ক্ষতি হলো। ধান চাষিরা সরকারী দরটুকুও পেলো না। কিষাণমান্ডিতে প্রকৃত কৃষকরা ফসল বিক্রি করতে পারছে না। সেগুলিকে দখল করে নিয়েছে ফড়ে-মহাজন-দালালরা। চাষির পাওনা টাকা যারা মাঝপথে চুরি করছে, সেই মধ্যস্বত্বভোগীদের স্বার্থ রক্ষা করছে তৃণমূল সরকার। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতির ফলে কৃষিপণ্যের বাণিজ্য বড় পুঁজিপতিরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে চাষিরা ফসলের অভাবী বিক্রি করে যৎসামান্য দর পাচ্ছে, চরম লোকসানে  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ বাজারে সেই ফসল বিক্রি হচ্ছে তিন-চার গুণ বেশি দামে।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে আামাদের দাবি –

(১) খরা ও অনাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

(২) ফসলের লাভজনক দাম ও ঋণমুক্তি নিশ্চিত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে আইন প্রনয়ণ করতে হবে।

(৩) কেন্দ্রীয় সরকারকে ৬০০০ টাকা কুইঃ পাট ও ২৩৫০ টাকা কুইঃ ধানের সরকারী দাম ঘোষনা করতে হবে। আলু তৈলবীজ সহ সমস্ত ফসল খরচের দেড় গুণ দামে কিনতে হবে।

(৪) পাট ভেজানোর জন্য চাষিদের জল সরবরাহ করা হলো না কেন জবাব দাও।

(৫) গরীব-মধ্য-চুক্তি চাষিদের ফসল কেনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে, এদের সকলকে কার্ড দিতে হবে।

(৬) ভাগচাষি চুক্তিচাষীদের ক্ষতিপূরণ এবং তাদের ব্লক বা কৃষি দপ্তর থেকে পরিচয়পত্র দিতে হবে।

(৭) গ্রামে ক্যাম্প করে সরাসরি প্রকৃত চাষিদের থেকে পাট-ধান কিনতে হবে।

(৮) খাস-বেনামী জমি বিলিবন্টন; দখলী জমির পাট্টা দিতে হবে। ল্যান্ড ব্যাংকের জমির তথ্য প্রকাশ করতে  হবে।

(৯) আদিবাসীদের জমির পাট্টা দাও, বেদখল হয়ে যাওয়া জমি ফেরত দাও।

(১০) কৃষকদের সরকারী সহায়তা প্রকল্পে দুর্নীতি দলবাজি বন্ধ করতে হবে।

আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ব্লকে ব্লকে ডেপুটেশন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা শাসক ডেপুটেশনেদলে দলে যোগ দিন।

অভিনন্দন সহ,
সারা ভারত কিষাণ মহাসভা

খণ্ড-26
সংখ্যা-28