নদীয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের পানিঘাটা অঞ্চলে তিনটি গ্রামে একসময় আমাদের কাজ ছিল। তার মধ্যে রাধাকান্তপুর গ্রামে নতুন করে সংযোগ শুরু হয় লোকসভা নির্বাচনকে ধরে। নির্বাচনের পরে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, পঞ্চায়েত নির্বাচন সহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখানকার কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল, সিপিএম-এর প্রভাবিত জনগণ তৃণমূল হঠাতে এখানে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, সেটা জানালেন সিপিএমের দীর্ঘদিনের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত একজন গরিব কৃষক। একুশে জুলাই ঐ গ্রামে প্রকাশ্য সভায় তিনি উপস্থিত থেকে আমাদের বামপন্থী দল হিসাবে আলাদাভাবে বসে মন খুলে তাদের পার্টির নেতাদের দুর্বলতা নিয়ে বলেন।
গ্রামের বেশিরভাগই গরিব কৃষক ও নিম্ন মধ্য কৃষক, যারা ধনী চাষি চাকরিজীবীদের জমি লিজ নিয়ে অথবা ভাগে চাষ করে। গ্রামটিতে ৯০ ভাগ মুসলিম সম্প্রদায়ের বাকি ১০ ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের, যারা বেশিরভাগই তপশিলি জাতি সম্প্রদায় ভুক্ত।
এই গ্রামে তিনবার ঘরোয়া সভা করা হয়। প্রথম সভায় দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি বিশেষ করে বিজেপি আরএসএস-র হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির পরিকল্পনা ও উদ্যোগের বিষয়গুলো পার্টির পক্ষ থেকে সহজ করে বুঝিয়ে বলা হয়, পাশাপাশি রাজ্য সরকারের জনবিরোধী কাজগুলো নিয়ে বলা হয়। পরে ঘরোয়া সভাতে উপস্থিত কমরেডদের কাছে গ্রামের সমস্যাগুলো জানতে চাওয়া হলে তারা তৃণমূলের পঞ্চায়েত ভোটে দুর্নীতির প্রশ্ন তোলেন, পঞ্চায়েত সদস্যরা গ্রামের কৃষকদের স্বার্থে কোনো কাজই করছে না, বর্ষায় ঘরের চালের ওপর ত্রিপল দরকার, গরিবদের অনেকে এখনো ঘর পাইনি, এই ঘর নিয়ে আর্থিক দুর্নীতির কথা বলেন, তাছাড়া দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কথাও বলেন। এই বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিডিও দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়ার প্রস্তাব নেওয়া হয়। এই গ্রাম থেকে ডেপুটেশনে ১৫ জন অংশগ্রহণ করেন। তারপর তৃতীয় ঘরোয়া সভায় পার্টির প্রার্থী সদস্য হিসাবে ৬ জন আবেদন করেন এবং গ্রামে একটি সভা করার জন্য কমরেডরা প্রস্তাব দেন, সভা করার সমস্ত খরচ তারাই বহন করবেন চাঁদা তুলে, তারা বলেন ভালো বক্তা দরকার, তার মধ্যে একজন মহিলা বক্তা চাই।
সভার জায়গা স্থির হয় একটি ক্লাবের সামনে। ক্লাবটি তৃণমূলের প্রভাবে আছে কিন্তু আমাদের এই সভা করার ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলে কমরেডরা জানান। নির্দিষ্ট দিনে দেবগ্রাম থেকে আসা ও এই গ্রামের কমরেডদের নিয়ে একটা ছোট মিছিল সভায় উপস্থিত হয়। ইতিমধ্যে কাশ্মীর নিয়ে হাতে লেখা পোস্টার, সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির লিফলেট নিয়ে গ্রামে মাইক প্রচার করা হয়, তাতে একটি সাড়া পড়ে। সভায় প্রায় শতাধিক শ্রোতা উপস্থিত ছিল। বর্তমানে গ্রামের সক্রিয় কমরেডরা পাশের আরো দুটো গ্রামে জনসংযোগ করার উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রামের সভা ছাড়াও কৃষকদের সাথে আলাদা কথা বলার সময় তারা বলেন, ফসলের লাভজনক দাম বিশেষ করে ধানের সহায়ক মূল্যে তারা বিক্রি করতে পারছেন না। কারণ ফড়ে মহাজনরা গ্রামের কৃষকদের কিছু অর্থ ঘুষ দিয়ে তাদের কাগজপত্র নিয়ে কিষাণ মান্ডির সাথে যোগসাজশ করে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করে, আর নিজেরা সেই কার্ড দিয়ে ধান বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। কিষান মান্ডিতে ধান বিক্রি করার কার্ড পেলেও কোন কৃষক নিজে সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারছেন না, কারণ অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত কার্ড নিয়ে ক্রমাগত ফড়ে-মহাজনরা ধান বিক্রি করে যাচ্ছে। যদিও কেউ সুযোগ পেলেন তবে সেখানে কুইন্টাল প্রতি ১২ থেকে ১৫ কেজি ধান বাদ দেওয়া হচ্ছে, তাছাড়া দূর থেকে ধান বহন করে এনে বিক্রিতে অনিশ্চয়তা থাকার জন্য বাড়িতে ফড়ে-মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
অপর একজন কৃষক পাট চাষ নিয়ে বলেন, এবারের পাট চাষে বেশি লোকসান হবে। কারণ একে বৃষ্টি নেই, মাটির তলার জল নিয়ে সেচ দিতে হয়েছে, পাট ভেজানোর জন্য মাটির নিচের জল তুলে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। ফলে পাটের রং ভালো হয়নি, এক বিঘা জমিতে প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ, পাটের দাম কুইন্টাল প্রতি ৩,৫০০ টাকা, বিঘাতে উৎপাদন আড়াই থেকে তিন কুইন্টাল, বিক্রি করে লোকসান। তবুও চাষ করছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক’মাস ধরে নিজেই এবং পরিবারের লোকেরা জমিতে কাজ করতে পেরেছে, বাইরের মজুর কিনতে হয়নি। এটাই নাকি তাদের লাভ! সবদিক দিয়েই কৃষক এখন খুবই দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে।
দেবগ্রাম অঞ্চলে এ পর্যন্ত তিনটি সভা হয়েছে। তার মধ্যে একটি মহিলাদের নিয়ে পার্টির রাজ্য কমিটির নেত্রীর আলাদা সভা। যে পাড়ায় এই সভাটি হয় সেখানে বেশিরভাগই ঋষি সম্প্রদায়ের দলিত আর মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। এখানে একটি পরিবার আমাদের পার্টির সমর্থক। প্রায় ২২/২৩ জন যারা বিবাহিত, অবিবাহিত ও বিবাহ বিচ্ছিন্ন মহিলা। তারা তৃণমূল ও বিজেপি প্রভাবিত বলে ওই দুই দলকে ভোট দিয়েছেন, কিন্তু কোনো অধিকার তারা পান না। প্রাথমিকভাবে তারা আমাদের বক্তব্য শুনেছেন, কিন্তু তাদের বক্তব্য ওই সভায় ব্যক্ত করেনি। পরে আলাদাভাবে তারা এই পার্টি কি দেবে তাদের জানতে চেয়েছেন। বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছোট ছোট পুত্র-কন্যাদের নিয়ে যে মানসিক ও আর্থিক সমস্যায় আছেন তাদের কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যাবে সেটা করে দেখানোর জন্য প্রস্তাব দেন।
দেবগ্রাম গঞ্জ এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিদার শ্রেণী চাকরিজীবী ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া আধিপত্য থাকলেও ধীরে ধীরে তা ক্ষয়িষ্ণু। এখানে দাসপাড়া, বাগদী পাড়া, ঘোষপাড়া, হালদার পাড়া, স্টেশন পাড়া, বাবু পাড়া, শিবের দালান পাড়া, কুমোর পাড়া, মুসলিম পাড়া ইত্যাদি আছে। উচ্চবর্ণের দাপট ও আধিপত্য এখনো ভালো মাত্রায় আছে। এরা একসময় সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির মাথা হিসেবে কাজ করতো, এখন বিজেপি ও তৃণমূল করছে, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এদের আধিপত্যটা কিছুটা কমেছে। এখানে একসময় সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এই সমস্ত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে সামনে এসেছিল। যাই হোক, এখানে দলিত (বাগদি) সম্প্রদায়ের মধ্যে দুটো ছোট ছোট আলোচনা সভা হয়। তারা বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে পুলিশ তাদের উপরে মিথ্যা কেস দিয়ে, হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার চেষ্টা করছে। কোনো পরিবারে তাদের নিজেদের মধ্যে কারো পুত্রবধূকে নিয়ে, কারো স্ত্রীকে হত্যা করা নিয়ে বিভিন্ন আইনি মামলা-মোকদ্দমার চলছে, এছাড়া জমির সীমানা, রেকর্ড, আবাস যোজনায় ঘর পাওয়া, রাস্তাঘাট নিয়ে সমস্যার কথা বলেন। পার্টির পক্ষ থেকে পুলিশের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ভিডিও করে প্রচার করলে পুলিশ বিরত হয়। তাতে তপশিলি জাতির বাগদী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ভালো প্রভাব পড়ে।
বড় চওড়া পাকা রাস্তা যা চলাচলের পক্ষে অযোগ্য হয়ে উঠেছে তা নিয়ে ৩০০ জনের গণস্বাক্ষর করে বিডিও দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। এই গণস্বাক্ষর করার জন্য স্বাধীনভাবে কয়েকজন যারা আমাদের পার্টির নয় — তারা উদ্যোগ নিয়ে করেছেন। উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিছু বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে, সবজি হাটের কৃষকদের, কিছু দোকানদার ও পথচলতি মানুষের কাছ থেকে পার্টির কর্মীরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এই উদ্যোগের ফলে প্রতিপক্ষ হিসাবে স্থানীয় বিজেপি নেতা সাংবাদিক এনে রাস্তাটা তারাই করছেন বলে প্রচার করার চেষ্টা করে।
রাজারামপুর ঘোড়ায়ক্ষেত্র অঞ্চল। এটা কালিগঞ্জ ব্লকের অধীনে হলেও বিধানসভা নাকাশিপাড়ার মধ্যে পড়ে। এই অঞ্চলটি মূলত গঙ্গার উপকূলবর্তী গ্রাম নিয়ে। ঘোড়ায়ক্ষেত্র নামে গ্রামটিতে মূলত হিন্দু জমিদার-জোতদার শ্রেণীর বাস ছিল, বর্তমানে তাদের কিছু আধিপত্য আছে। এছাড়া দলিত (পূর্ববঙ্গ থেকে আসা নমঃশূদ্র) আদিবাসী ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের আধিক্য ভালো মাত্রায় আছে। কয়েকটা বড় বড় খাল-বিল থাকলেও জমির উর্বরতা কোথাও কোথাও ভালো মাত্রায় আছে। পাট ধান ছাড়াও সবজি ফসল বিশেষ করে টমেটো চাষ দুই-একটা মাঠে ভালো উৎপাদন হয়। একসময় এই গ্রামে বর্ষাকালে যাতায়াত করাই ছিল কষ্টকর। তৃণমূল সরকার আসার পরে গ্রামের রাস্তাঘাট কিছুটা উন্নত হয়েছে। এই রাস্তায় টোটো চালকদের, বিশেষ করে যারা গ্রামীণ বেকার তাদের কিছু কাজ হয়েছে। মুসলিম সমাজের মানুষের পাড়াগুলোর রাস্তা উন্নয়ন তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পাড়ার থেকে কিছুটা উন্নতি লাভ করেছে। ফলে কৃষি ফসল নিয়ে যাওয়ার একটা সুবিধা হয়েছে।
এখানে নির্বাচনের পরে দুটো বড় ঘরোয়া সভা হয়েছে, তাছাড়া বাড়ি বাড়ি গিয়ে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ছোট ছোট আলোচনা করা হয়েছে। একটি সভা করা হয় যুবকদের সংগঠিত করার জন্য। সাথে যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য নেতা আসেন। তাদের নিয়ে একটা ছোট সাংগঠনিক কাঠামো সকলের মতামত নিয়ে তৈরি করা হয়। সভাগুলোতে বিজেপি সরকারের দেশ বিরোধী ভূমিকা, কাশ্মীর নিয়ে আমাদের পার্টির অবস্থান সহজ করে বোঝানো হয়। আলোচনার মধ্য থেকে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হল — ফসলের লাভজনক দাম, খাস জমির পাট্টা, গরিব কৃষকের রায়তি জমি রেকর্ড করা, ইটের রাস্তা পাকা করা, বিধবা ভাতা, গ্রামীণ পোস্ট অফিসের দুর্নীতি ইত্যাদি। এই এলাকায় একসময় অগ্রদ্বীপের জমিদারদের প্রভাব ছিল। প্রচুর জমি বেনামে করে এখনো লুকিয়ে রাখা আছে। পার্টির পক্ষ থেকে আদিবাসী, মুসলিম ও হালদার সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০/৮০ ঘর গরিব মানুষদের মধ্যে দখলকৃত খাস জমি পাট্টা পাওয়ার আন্দোলন করে সাফল্য এসেছিল।
কালীগঞ্জ অঞ্চলের গ্রামগুলির মধ্যে পার্টির কাজ ছিল। একসময় ঘাসুরিয়া ডাঙ্গা গ্রামে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের তরফ থেকে পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। কিন্তু সেই ধারা ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। সিপিএমের বিরুদ্ধে এই শক্তির একটা বড় অংশ কংগ্রেসের প্রভাবিত ছিল। ভোটে জেতার পর পঞ্চায়েত গঠনে স্বাধীন ভূমিকার পরিবর্তে তারা কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল। তখন তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা হয়, একটা সময় পর্যন্ত কোনো যোগাযোগই থাকে না। ফলে এরা কখনও প্রথমে তৃণমূল, তারপরে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল, তারপরে আবার তৃণমূল হয়ে যায়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত নিয়ে নতুন করে এই শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য লোকসভা নির্বাচনকে ধরে উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাতে হাতে গোণা কিছু ভোট পাওয়া যায় এবং বেশ কিছু যুবক যারা প্রকাশ্যে পার্টির বিল বইয়ে অর্থ সংগ্রহ করে, গ্রামে পোস্টার লাগায়। এতে বোঝা যায় গ্রামের তৃণমূল শক্তিটা অনেকটা দোদুল্যমান, সিপিআই(এমএল)-এর প্রতি নরম। নির্বাচনের পরে ডাকা হাঁকা না করে দু ‘একজন জন যুবককে সঙ্গে নিয়ে দিনের বেলায় কৃষকদের ছোট ছোট জটলার মধ্যে গিয়ে তাদের কথা শোনা আর কিছু বক্তব্য বলা হয়। এই গ্রামে নদীর চরের জমি নিয়ে, গ্রামের ভিতরে খাস জমির দখল নিয়ে, রেশনের দুর্নীতি নিয়ে, বন্যায় ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি দাবিতে তাদের পাশে সহানুভূতির সাথে দাঁড়িয়ে আগেকার সফল আন্দোলনের সুবাদে তারা আমাদের প্রতি এমএল সংগঠনের প্রতি আজও কৌতূহলী। মনোযোগ দিয়ে তারা শোনেন। এখানে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কিছু করা হয়েছে, গ্রাম সংলগ্ন গঙ্গার চরের জমিগুলি গ্রামের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে আগের থেকে কিছু উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।
যুবকদের একটা অংশ আছে যারা কয়েকজন উচ্চশিক্ষিত কিন্তু বেকার। যুব সংগঠন আরওয়াইএ-র নেতা তাদের সাথে কথা বলেন। তারা বেকার ভাতার প্রশ্ন তোলেন, টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার প্রতারণার বিরুদ্ধে বলেন। কৃষকদের আরো দুটো জায়গায় ছোট ছোট জটলার মধ্যে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ ও আমাদের কথা আলোচনা হয়।
গোবরা অঞ্চল, বসতপুর গ্রাম, এখানে আমাদের পুরনো কাজ ছিল এখনো কিছু কিছু আছে। গঙ্গার পাড় সংলগ্ন এই গ্রামগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি মানুষের বাস, এছাড়া ঘোষ সম্প্রদায়, পূর্ববঙ্গ থেকে আসা মানুষ, অল্প কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। কৃষি এলাকা হলেও মূলত তপশিলি জাতির প্রজাতির মানুষের বেশিরভাগই কৃষি মজুর, গঙ্গায় বালি তোলার মজুর অন্যান্য পেশায় যুক্ত মানুষ। এখানে বসতপুর গ্রামে তপশিলি জাতি ও উপজাতির মধ্যে পার্টির কিছু কাজ ছিল। মদের ভাটির বিরুদ্ধে মহিলাদের প্রতিবাদ, খাস জমির পাট্টা, উচ্চবর্ণের অত্যাচারের বিরুদ্ধে, পুলিশী জুলুমের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করে সফল হয়েছিলাম। কিন্তু কোনো একটি বিশেষ ঘটনায় একটি যুবক অপরাধমূলক কাজ করার ফলে পার্টি তার বিরোধিতা করে। সেই থেকে বেশ কিছু যুবক যারা একসময় সক্রিয় ছিল তারা এখন বিজেপি অথবা তৃণমূলের প্রভাবিত। বর্তমানে তাদের সাথে লাগাতার সংযোগ করার চেষ্টা চালিয়ে কিছুদিন আগে তাদের সাথে বসা হয়। তারা পুরনো ওই অপরাধমূলক ঘটনায় পার্টির অবস্থানকে সমালোচনা করে, গ্রামীণ মহিলা নেত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করে। পার্টির অবস্থান তাদের বুঝিয়ে বলার পরে তারা অপরাধমূলক কাজের সমর্থন থেকে সরে আসে, সুর নরম করে। বিজেপি ও তৃণমূল এর ভূমিকা নিয়ে পার্টির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বুঝিয়ে বলার পরে তারা পুনরায় বৈঠকের জন্য বলে। পার্টি সংগঠকদের গ্রামে থাকার ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা করে। বর্তমানে খাস জমির পাট্টা রেকর্ড করার জন্য আবেদন নিয়ে পুনরায় আলোচনার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এখানে যতগুলো আলোচনা সভার কথা বলা হল সেখানে সংগঠকরা গ্রামে কমরেডদের বাড়িতে থেকেছেন, তাদের দেওয়া খাদ্য খেয়েছেন এবং বেশিরভাগ সময়টা পাড়ায় ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছ থেকে জেনেছেন ও আলোচনা করেছেন। যে সমস্ত দাবি উঠে এসেছে সেগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে তাতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।