আসামের ‘জাতীয় নাগরিকপঞ্জি’-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। জানা যাচ্ছে যে ১৯ লক্ষের বেশি (সঠিক সংখ্যাটি ১৯,০৬,৬৫৭ জন) মানুষ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। তালিকা থেকে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের বাদ পড়া যে মারাত্মক মাত্রায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করতে পারে তা নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যারা বাদ পড়লেন তাঁদের ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে।
যদিও আসাম সরকার বলেছে যে তারা আইনি সহায়তা আরো বাড়িয়ে তুলবে, এবং নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংগঠনগুলিও আইনি এবং আধা-আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করছে, তবু বাস্তব ঘটনা হল যারা এই তালিকার বাইরে স্থান পেয়েছেন তাঁদের পক্ষে এই এই প্রক্রিয়া এক অতি কঠিন বিষয় হতে চলেছে। তাই আমরা বামপন্থী কর্মীদের এবং ন্যায়বিচার-প্রেমী নাগরিকদের কাছে আবেদন করছি যাতে তাঁরা তাঁদের শক্তি ও সম্পদ একত্রিত করে এইসব মানুষের পাশে দাঁড়ান। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল এবং আদালতে সুবিচারের দাবিতে এই বাতিল করে দেওয়া মানুষগুলির পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়টি হল, সম্ভাব্য রাষ্ট্রহীনতার মুখোমুখি এই প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের ভবিতব্য কী তা নিয়ে রাজ্য বা কেন্দ্র কারোরই কোনো পরিকল্পনা নেই। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের শুনানির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এই নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া মানুষগুলিকে তাদের নাগরিকত্বের পূর্ণ অধিকার ভোগ করতে দিতে হবে। জানা গেছে আসামে বিরাট বিরাট ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা চলছে। বিদ্যমান ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে ইতিমধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হত্যার ভয়াবহ ঘটনাগুলি ঘটেছে। তাই আমরা দাবি করছি এই আটক শিবিরগুলি বন্ধ করে দিতে হবে এবং নতুন শিবিরগুলি তৈরির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। যে কোনও ব্যক্তিকে ‘সন্দেহজনক ভোটার’ হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি আটক শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া অমানবিক এবং অসাংবিধানিক।
আমরা সকল গণতান্ত্রিক মনের মানুষকে অনুরোধ করছি যে এনআরসির নামে যে কোনোরকম চিহ্নিতকরণ এবং নিপীড়নের মোকাবিলা করার জন্যে সর্বদা সজাগ থাকুন। দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যটিকে জর্জরিত করে রাখা বিষয়গুলির অবসানের আশা নিয়ে আসামের জনগণ যখন বহু কষ্টসাধ্য এনআরসির প্রক্রিয়াতে অংশগ্রহণ করেছেন, তখন তার সুযোগ নিয়ে বিজেপি ইতিমধ্যেই এনআরসিকে ভাঙিয়ে তার সাম্প্রদায়িক এবং বিভেদমূলক এজেন্ডাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এখন বিজেপি এটিকে সাম্প্রদায়িক পরিকল্পনায় নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীটির সাথে যুক্ত করতে অধিক আগ্রহী এবং নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া ও সম্প্রদায়গত ভেদাভেদ তৈরির একটি হাতিয়ার হিসেবে এই এনআরসিকে সমগ্র দেশে কার্যকরী করতে আগ্রহী। এই প্রয়াসকে প্রতিহত করতে এবং ব্যর্থ করতে সমস্ত গণতন্ত্রপ্রেমী ভারতীয়কে একসাথে রুখে দাঁড়াতে হবে
- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই(এমএল)