আজকের দেশব্রতী : ১১ মার্চ ২০২১ (অনলাইন সংখ্যা)
11 March DeshabratiNo Vote to BJP Kolkata RallyNo Vote to BJP

১০ মার্চ এন্টালির রামলীলা পার্ক থেকে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনির ব্যাপারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠল তীব্রস্বরে। নো ভোট টু বিজেপি, ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক, আরএসএস-বিজেপি বাংলা থেকে দূর হঠো, হাম ছিনকে লেঙ্গে আজাদি – মনুবাদ সে আজাদি ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল এগিয়ে চলল ধর্মতলার দিকে। গোটা মিছিল ছিল নানা বর্ণের পতাকায় সুসজ্জিত, নানা ভাষার স্লোগানে মুখরিত, নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে বৈচিত্র্যে ভরা। বিশেষ করে নজর কাড়ছিল বিপুল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রী, তরুণ তরুণীদের উপস্থিতি। দিল্লির বুকে চলমান কৃষক আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন মিছিলে। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, শ্রমিক কৃষক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা কুশল দেবনাথ, বাসুদেব বসু, অমিতাভ ভট্টাচার্য, জয়তু দেশমুখ, সুব্রত সেনগুপ্ত, শঙ্কর দাস, শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, বর্ণালী মুখার্জী, অভীক সরকার, অতনু চক্রবর্তী, সুমন সেনগুপ্ত সহ অনেকেই। লেখক শামিম আহমেদ, দেবতোষ দাস, নাট্যকর্মী ঋতদীপ ঘোষ, চলচ্চিত্রবিদ্যার অধ্যাপক মৈনাক বিশ্বাস, মানস ঘোষ সহ সাংস্কৃতিক জগতের নানা মুখ। পা মিলিয়েছে কুড়ি-পঁচিশের  অন্বেষা, ত্রিয়াশা, বর্ষা, আমন, ইমতিয়াজ, সায়নি, নিলাশিস, সৌমেন্দু, স্বর্ণেন্দুর মতো অনেকে। সামিল ছিলেন দিল্লীর জেএনইউ থেকে আসা আইসা নেত্রী সুচেতা। ছিলেন আহ্বায়কমন্ডলীর কস্তুরী বসু, অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, সুজাত ভদ্র, শতাব্দী দাশ; শতাব্দীর সঙ্গেই পোস্টার বুকে এঁটে ব্যানার ধরে পথ হেঁটেছে তার ছ-বছরের মেয়ে আঁখি। মিছিলের ব্যানারে ধ্বনিত হচ্ছিল কিছু কেন্দ্রীয় স্লোগান – ‘একুশের ডাক, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাংলা রুখে দাঁড়াক’, ‘নো ভোট টু বিজেপি’। ছিল ক্ষুদিরাম, ভগৎ সিং, প্রীতিলতা, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ সহ অনেকের ছবি দেওয়া রঙ বেরঙের পতাকা। মিছিল যখন এগিয়েছে তখন দু-পাশের জনতার সারি আগ্রহ ভরে দেখেছে তাকে, সেখান থেকে কেউ কেউ ঢুকেও পড়েছেন মিছিলে। তালতলা হাইস্কুলের সামনে দিয়ে যখন মিছিল যাচ্ছে তখন সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের অনেকে বেরিয়ে এসেছে আগ্রহ নিয়ে। সঙ্গের ফোন ক্যামেরায় ধরে রেখেছে মিছিলের স্থির আর ভিডিও চিত্র। মিছিল নিউমার্কেটের সামনে পৌঁছনোর পর শুরু হয় সভার কাজ। দিল্লি থেকে আসা কৃষক আন্দোলনের নেতারা তাদের বক্তব্যে মনে করিয়ে দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলা ও পাঞ্জাবের গৌরবময় সহযোগী ভূমিকার কথা। আজকের দিনেও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের কৃষকের লড়াই আর বাংলার জনতার লড়াই এক জায়গায় এসে মিলছে। বাংলায় বিজেপিকে পরাস্ত করা গেলে তা দিল্লির বুকে চলমান কৃষক আন্দোলনকে যে প্রভূত শক্তি ও মনোবল জোগাবে সেটা উল্লেখ করে তারাও ‘নো ভোট টু বিজেপি’ স্লোগানের গুরুত্বের ওপরে জোর দেন। কুশল দেবনাথ তাঁর বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলার নানা জায়গায় নো ভোট টু বিজেপি-র প্রচার চলছে। এই মিছিল ও সভা সেই প্রচার আন্দোলনেরই অংশ। এই প্রচারকাজ আরো এগিয়ে যাবে। একই কথা উঠে আসে শর্মিষ্ঠা চৌধুরী, শতাব্দী দাশ সহ বিভিন্ন বক্তার কথায়। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, “বিজেপিতে যোগ দিয়েই মিঠুন চক্রবর্তী বলেছেন এক ছোবলেই ছবির কথা। বিজেপি আসলে এটাই। সে যেখানে যায় সর্বত্র বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে দেয়, ধ্বংসের বিষ ছড়িয়ে দেয়। পশ্চিমবাংলাকে বিজেপির বিষ থেকে মুক্ত করার জন্য লড়তে হবে।

পাঞ্জাবের কৃষক নেতারা বলছিলেন বাংলা আর পাঞ্জাবের সম্পর্কের কথা। স্বাধীনতা আন্দোলনে পাশাপাশি লড়াইয়ের কথা। এই দুই ভূখণ্ডই ভাগ হয়েছে দেশভাগের সময়ে। বিজেপি পাঞ্জাবে চেষ্টা করেছিল একে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর। পাঞ্জাব বিজেপিকে হারিয়ে এর জবাব দিয়েছে। বিজেপি বাংলাকেও বিভক্ত করতে চাইছে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে। বিজেপিকে হারিয়ে এর জবাব দিতে হবে।

আগামী দুমাস আমাদের সমস্ত শক্তি, উদ্যোগকে নিয়োজিত করতে হবে বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য। বিজেপি বিরোধী উদ্যোগকে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে। আশার কথা প্রচুর তরুণ তরুণী এখানে এসেছেন। বিহারে এই তরুণ প্রজন্ম বিজেপিকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছিল। ছাত্র যুব নেতাদের বিহারের জনগণ বিধানসভায় পাঠিয়েছেন। বাংলার ছাত্র যুবরাও বিজেপি বিরোধী উদ্যোগকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে সামিল থাকবে।”

No Vote to BJP procession in Kolkata

শ্লোগান --

১) বিজেপি হারাও বাংলা বাঁচাও।
২) দাঙ্গাবাজ, গণতন্ত্র হত্যাকারী, মানুষের জীবন জীবিকার অধিকার হরণকারী বিজেপি’কে পরাস্ত করুন।
৩) রুটি-রুজি গণতন্ত্রের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সিপিআই (এম-এল) প্রার্থীদের ‘পতাকায় তিনতারা’ চিহ্নে ভোট দিয়ে জয়ী করুন।
৪) কর্পোরেট সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী বিজেপি’কে প্রতিরোধের কার্যকরী শক্তি সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন প্রার্থীদের ভোট দিন।
৫) কৃষি ও কৃষককে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিয়ে কোম্পানিরাজ চাপিয়ে দেওয়ার  বিরুদ্ধে, রেশন ব্যবস্থাকে বাঁচাতে
ভোট দিন।
৬) বছরে ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরির দাবিতে ভোট দিন।
৭) ৮ ঘন্টা কাজের আইন সহ শ্রমিকের অধিকার তুলে দিয়ে দাস শ্রমিক প্রথা ফিরিয়ে আনার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিন।
৮) এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের নামে দেশের মানুষকে বিদেশী বানানোর চক্রান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিন।
৯) মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব সৃষ্টিকারী কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে ভোট দিন।
১০) কালা কানুন জারী করে গণআন্দোলনের উপর দমন পীড়ন চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিন।
১১) পুঁজিপতিদের কর ছাড় দেওয়ার বিরুদ্ধে, মাইক্রোফিনান্স কোম্পানীর চড়া সূদের ঋণফাঁদ থেকে ঋণমুক্তির দাবীতে ভোট দিন।
১২) রেল, ব্যাংক বীমা সহ সরকারি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ ও কর্মসংস্থান বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে, সমস্ত শূন্য পদে নিয়োগের দাবিতে ভোট দিন।

 

10 March  Rally in SiliguriIn Siliguri, the citizens' procession

বিজেপি-আরএসএস-এর ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন থেকে রাজ্য তথা দেশকে মুক্ত করা, বিজেপিকে রাস্তায় প্রতিহত করা, বিজেপিকে ভোটে প্রতিহত করার দাবি যখন ক্রমশ জোড়ালো হয় উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে সমাজের বিশিষ্ট মানুষ বুদ্ধিজীবী, মেধাজীবীরা আক্রান্ত হচ্ছেন দিন প্রতিদিন। গণতন্ত্র কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এমতো অবস্থায় শিলিগুড়ি শহরের শিক্ষক, অধ্যাপক, সাহিত্যিক, নাট্যকারদর একটি বড় অংশ একত্রিত হয়েছেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী নাগরিক মঞ্চে। বিগত বেশ কয়েকটি কনভেনশন, মিটিং এর মধ্যে দিয়ে ১০ মার্চ শিলিগুড়ি শহরে মঞ্চের পক্ষ থেকে একটি নাগরিক মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল। অধ্যাপক অজিত রায়, নাট্যকার পার্থ চৌধুরী, পলক চক্রবর্তী, কবি গৌতম চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন-এর রূপক দে সরকার  অধ্যাপক অভিজিৎ মজুমদার, অধ্যাপিকা মধুবন্তী বসু, শিক্ষিকা মুক্তি সরকার, মানবাধিকার কর্মী অভিরঞ্জ ভাদুড়ী, সমাজকর্মী শমীক চক্রবর্তী লালিগুরাসের সহযোদ্ধারা সহ প্রায় দুই শতাধিক মানুষ ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন সম্মিলত একটি মিছিল কখন আমরা করবো জয়, কখনও আমার প্রতিবাদের ভাষা, গাঁও ছোরাব নেহি গাইতে গাইতে হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, পানিট্যাঙ্কি মোড়, বিধান মার্কেট ঘুরে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম গেট এসে শেষ হয়। মিছিল থেকে শ্লোগান ওঠে ফ্যাসিবাদী বিজেপি আরএসএস নিপাত যাক, বিজেপিকে একটাও ভোট নয়।

Press Confrence in Creek RowCPI (ML) Liberation Nominated Candidate

সংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য, জয়তু দেশমুখ এবং কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য তথা জেএনইউএসইউ-র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সুচেতা দে।

১) নমিনেশন জমা দেওয়ার অব্যবহিত পরেই মুখ্যমন্ত্রীর আহত হওয়া উদ্বেগজনক। আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে হতে পারে তা নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করুক।

২) আমরা রাজ্যে মোট ১২টি আসনে আমাদের নির্বাচনী প্রতীক “পতাকায় তিন তারা” নিয়ে  প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এরকম কয়েকজন কমরেডকে সেই সেই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছি আমরা। আমাদের প্রার্থী তালিকা সাথে  দেওয়া হল।

১৬-ময়নাগুড়ি(এসসি) : উদয়শঙ্কর অধিকারী,
২৭-ফাঁসিদেওয়া(এসটি) : সুমন্তি এক্কা,
৫২-মোথাবাড়ি : মহম্মদ এব্রাহিম শেখ,
৬৬-খড়গ্রাম(এসসি) : টুলুবালা দাস,
৮১-নাকাশিপাড়া : কৃষ্ণপদ প্রামাণিক,
৮৫-কৃষ্ণনগর দক্ষিণ : সন্তু ভট্টাচার্য,
১৮৫-উত্তরপাড়া : সৌরভ রায়,
১৯৭-ধনেখালি(এসসি) : সজল কুমার দে,
২৪৯-রানীবাঁধ(এসটি) : সুধীর মুর্মু,
২৫৪-ওন্দা : নির্মল ব্যানার্জী,
২৬২-জামালপুর(এসসি) : তরুণকান্তি মাঝি,
২৬৩-মন্তেশ্বর : আনসারুল আমান মণ্ডল।

৩) সারা দেশের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গেও আমরা বিজেপিকে জনগণের প্রধান শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে লাগাতার প্রচার করে আসছি। বিজেপির বিগ্রেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে “বিষাক্ত ছোবলের” যে বার্তা সামনে এসেছে তার মোকাবিলা করার জন্য জনমত গড়ে তোলা বাংলার সকলের দায়িত্ব। যারা এখনো সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেননা তাঁদের কাছে, বিশেষ করে সমস্ত বামপন্থী দল ও শক্তির কাছে আবারও অনুরোধ জানাচ্ছি।

৪) আমরা যেসব আসনে লড়ছি, সেগুলি ছাড়া এবং জামালপুর আসনটি বাদে অন্যত্র এখনো পর্যন্ত বামফ্রন্টের দখলে থাকা আসনগুলিতে আমরা বামফ্রন্টের প্রার্থিদের সমর্থন জানাচ্ছি। এর সাথে জেএনইউ-তে বিজেপি বিরোধী সংগ্রামের আরেক মুখ ঐশী ঘোষকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি।

৫) নাগরিকত্ব সুরক্ষা আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা সাহিত্যিক কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে আমরা গাইঘাটা আসনে সমর্থন দিচ্ছি।

৬) অন্যান্য বামপন্থীদের সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।

৭) বিজেপিকে হারানোর বার্তা নিয়ে বাংলায় কৃষক জনগণের কাছে দিল্লি ঘিরে আন্দোলনরত যে কৃষক নেতারা আসছেন এবং ১২-১৪ মার্চ বিভিন্ন স্থানে “কৃষক-শ্রমিক পঞ্চায়েত” সংগঠিত করবেন তাঁদের আমরা স্বাগত জানাই।

Let the voice of protestLet the voice of protest rise

মিডিয়া চিত্রিত করছে ‘হাই ভোল্টেজ’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ-এর ‘সংযুক্ত মোর্চা’র হয়ে সিপিএম এক যুব নেত্রীকে প্রার্থী করেছে। কিন্তু টক্করটা হবে মূলত তৃণমূল নেত্রী আর তৃণমূল থেকে বিজেপিতে চলে যাওয়া কাঁথির ‘অধিকারী সাম্রাজ্যে’র দাপুটে অধীশ্বরের মধ্যে। তৃণমূল নেত্রী বলছেন, ‘খেলা হবে’। বিজেপি বাজী ধরেছে খেল দেখানোর। তার প্রার্থী বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে হারাতে না পারলে রাজনীতি করা ছেড়ে দেবেন। এইসমস্ত বাগযুদ্ধ চলছে। তা চলুক। এর শেষ দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত।

তবে আমজনতাকে মাথায় রাখতে হবে ফ্যাসিবাদী বিজেপির কথা। এর চেয়ে বড় বিপদ আর কিছু হতে পারে না। তাই তার দৌড় চেনা, স্বরূপ উন্মোচন করা, তাকে প্রতিহত করা মায় ভোট না দেওয়া, এবং নির্বাচনে পরাস্ত করা — এই সবকিছুকেই পাখির চোখ করা উচিত। এই সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে তালাশ করা যাক বিশেষত নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে।

সবচেয়ে বড় কথা, নন্দীগ্রাম ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ হয়ে আছে এবং থাকবে কৃষক জনতার প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে। এ প্রতিরোধ ফেটে পড়েছিল দেড় দশক আগে, অধঃপতিত বামফ্রন্ট আমলে। কৃষি জমিতে বিদেশী বহুজাতিক কর্পোরেট বর্গী হানা ডেকে আনার বিরুদ্ধে। নন্দীগ্রামের আগে আগে ঘটেছিল সিঙ্গুর। কৃষক জনতার আরেক ঐতিহাসিক প্রতিরোধ। ঐ প্রতিরোধও ছিল শাসক-কর্পোরেট আঁতাতের জমিগ্রাস নীতির বিরুদ্ধে। উভয় ক্ষেত্রেই ‘শিল্পায়ন’ আর ‘কর্মসংস্থান’ ছিল সরকারপক্ষের বাহানা, আসলে লক্ষ্যটা ছিল কর্পোরেট পুঁজির ইচ্ছাপূরণে দাসখত লিখে দেওয়া, জোর করে জমি গ্রাসের আইন সংশোধন করে নামানো হয়েছিল বর্বর আক্রমণ। তা সত্ত্বেও, বহু মূল্য দিতে হলেও, অবশেষে বিজয়ী হয় কৃষক জনতার প্রতিরোধ।

নন্দীগ্রামে প্রার্থী দিয়ে বিজেপি বিষদাঁত কি বসাবে! বিজেপি যাকে প্রার্থী করেছে তার সামনে উভয় সংকট। যদি জমি রক্ষার আন্দোলনে থাকার অতীত ভাঙিয়ে ভোট চান, তবে সে গুড়ে বালি। কারণ তাহলে বলতে হবে কৃষি জমিতে কর্পোরেট পুঁজির আগ্রাসন ও বিরোধিতার কথা। কিন্তু সেটা এখন বলা খুব মুশকিল, কারণ যে দলের প্রার্থী হয়েছেন তার অনুমোদন মেলার কথা নয়। ইতিমধ্যেই দলবদলু নেতাদের প্রকাশ্যে কবুল করতে হচ্ছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন ছিল ভুল। লোকের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য ঠেকবে না। কারণ, কেন্দ্রের মোদীরাজ ও রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকার নিয়েছে জল-জমি-জঙ্গল সব কর্পোরেটের হাতে তুলে দেওয়ার নীতি। মোদী সরকার প্রথম পর্বেই চেষ্টা করেছিল কর্পোরেট স্বার্থ সর্বস্ব নয়া জমি অধিগ্রহণ (সংশোধিত) আইন চাপিয়ে দিতে। কিন্তু জোর ধাক্কা খায়। দ্বিতীয় পর্বে আবার এনেছে কৃষি ও কৃষক বিরোধী তিনটি আইন। যার মধ্যে রয়েছে ছলে-বলে-কৌশলে কৃষি জমি গ্রাস করে নেওয়ারও ফাঁস। যার বিরুদ্ধে রাজধানীর নাকের ডগায় কৃষক জনতার দিবারাত্রির আন্দোলন চলছে লাগাতার। আন্দোলন পার করেছে একশ দিন। আন্দোলনের প্রতি চূড়াম্ত অবিচার করছে মোদী জমানা-বিজেপি। বিনিময়ে কুড়োচ্ছে দেশব্যাপী ধিক্কার। সেই কৃষক নেতারা আসছেন বাংলায়। তারা যাবেন নন্দীগ্রামে, সিঙ্গুরে, সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে। তাদেরও ইস্যু, বিজেপিকে ভোট নয়। বিজেপি হারাও, বাংলা বাঁচাও।

বিজেপি নিশ্চিত মরীয়া হবে আরও ছলনার জাল পাততে, টাকাকড়ি ছড়িয়ে বিবশ করতে, সন্ত্রাসের হুঙ্কারও দেবে ‘জয় শ্রীরাম’! জবাবে আবার প্রতিরোধে উঠে দাঁড়াক, আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে উঠুক নন্দীগ্রাম।

Assembly elections Turn into an anti-fascist resistanceTurn the assembly elections

কেরল, তামিলনাড়ু, আসাম ও পশ্চিম বাংলা — এই চারটি রাজ্য বিধানসভা এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল পুদুচেরির নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্ঘন্ট ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে। বিহারের পর এটাই হবে কোভিড-১৯ অতিমারী চলাকালে দ্বিতীয়বারের জন্য বড় আকারের নির্বাচন অনুষ্ঠান। তামিলনাড়ু, কেরল ও পুদুচেরিতে যেখানে একদিনেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে, সেখানে আসামে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তিনটি পর্যায়ে আর পশ্চিমবাংলার নির্বাচনের জন্য গোটা এপ্রিল মাস জুড়ে নির্দিষ্ট হয়েছে একেবারে আটটি পর্যায়। কোনো কোনো জেলাকে আবার ভাঙ্গা হয়েছে দুটি বা তিনটি পর্যায়ে। বিহারের মতো বড় রাজ্যে তিনটি পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা সম্ভব হলেও পশ্চিমবাংলার জন্য অভূতপূর্ব মাত্রায় আটটি পর্যায়ের প্রয়োজন হচ্ছে কেন? নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকই এর থেকে অবধারিত যে সিদ্ধান্তটা টানছেন তা হল, অত্যন্ত বেশি সংখ্যক পর্যায়ে ছড়ানো নির্ঘন্ট থেকে বিজেপি’রই বেশি সুবিধা হওয়ার কথা।

প্রতিটি রাজ্যের নির্বাচনেরই একটা রাজ্য-নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিত থাকলেও দেখা যাচ্ছে – মোদী সরকার ক্রমান্বয়ে সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতে কেন্দ্রীভূত করে ভারতের অর্থনীতিকে নিজেদের কবজায় নিয়ে আসার কর্পোরেটদের এজেণ্ডা এবং ভারতীয় সংবিধানকে বিপর্যস্ত করে তুলে ভারতকে ফ্যাসিস্ত চরিত্রের হিন্দু আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার আরএসএস এজেণ্ডাকে আগ্ৰাসিভাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে; আর তাই, প্রতিটি নির্বাচনেই ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে পরাস্ত করার আহ্বান সারা ভারতেই গণতন্ত্রপ্রেমী ভোটারদের কাছে সাধারণ লক্ষ্য রূপে আবির্ভূত হয়েছে। মোদী সরকার তার দ্বিতীয় পর্বে যে দ্রুততায় তার এজেণ্ডাকে রূপায়িত করে চলেছে তা এই চ্যালেঞ্জকে আরো জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। পাঁচটা রাজ্যর মধ্যে বিজেপি এখন আসামে ক্ষমতায় রয়েছে। পশ্চিমবাংলায় ২০১৯’র লোকসভা নির্বাচনে তারা জোরদার লড়াই করে দ্বিতীয় স্থান পায়, লাভ করে ১৮টি আসন ও ৪০ শতাংশ ভোট। বিজেপি তামিলনাড়ু, কেরল ও পুদুচেরিতে সুকৌশলী জোট গঠন, কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ এবং আরএসএস-এর ক্রমবর্ধমান সাংগঠনিক জাল বিস্তারের মধ্যে দিয়ে দ্রুতই তার প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে।

মোদী সরকার অনুসৃত সর্বনাশা নীতিমালা দেশকে এক বড় ধরনের সংকটে নিমজ্জিত করেছে। এনআরসি-এনপিআর-সিএএ প্যাকেজ লক্ষ-লক্ষ মানুষকে চূড়ান্ত নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে, তাদের নাগরিকত্ব এবং তার থেকে উদ্ভূত অধিকারগুলোকে ঢেকে দিয়েছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। এবারের নির্বাচনে বিজেপি এ বিষয়ে হেঁয়ালি ভরা নীরবতা চালিয়ে গেলেও আসাম এবং পশ্চিম বাংলা উভয় রাজ্যেই বিষয়টা যথেষ্ট উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। অবিবেচনাপ্রসূত লকডাউন লক্ষ-লক্ষ শ্রমজীবী জনগণ, বিশেষভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের অস্তিত্ব এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কাছে এক নির্মম আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি শূন্যের নীচে নেমে গেলেও সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সম্পদের বিক্রি নিয়ে মেতে উঠেছে, আর তার পরিণতিতে সৃষ্টি করছে অভূতপূর্ব মাত্রার বেকারি ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। সরকার এখন আবার কৃষির নিয়ন্ত্রণকে কর্পোরেটদের কব্জায় তুলে দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, যে কৃষি হল একমাত্র ক্ষেত্র যা লকডাউন ও অতিমারির মধ্যে প্রকৃত বৃদ্ধির সাক্ষর রেখেছে।

যে বিষয়গুলো সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে বিজেপিকে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে তার একটা হল বিভিন্ন পরিচিতির ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে জাতি রূপে ভারতের এক ধারণা অথবা ঘেরাওয়ের পরিস্থিতির মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের থাকার ধারণা গড়ে তুলে এক ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনী জোট গড়ে তোলার তার সামর্থ্য। আরো যে ব্যাপারটা তাদের সাফল্যে অবদান যোগায় তা হল তুলে ধরা এই ধরনের সংকটময় পরিস্থিতিতে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে সবচেয়ে শক্তিশালী বিকল্প রূপে তুলে ধরা। তবে বিহার নির্বাচন আমাদের দেখিয়েছে বর্তমানের জ্বলন্ত ইস্যুগুলোকে ধরে জনগণের শক্তিশালী ঐক্য ও আত্মঘোষণার মধ্যে দিয়ে কিভাবে ঐ কৌশলের মোকাবিলা করা যায়। কাজের ইস্যুকে সামনে রেখে বিহারের যুবক-যুবতীরা ব্যাপক সংখ্যায় বিজেপি-জেডিইউ জোটের বিরুদ্ধে ভোট দেয়, সিপিআই(এমএল)-কে এনে দেয় ১২টা আসন যা এতদিনের মধ্যে তাদের সর্বোচ্চ আসন সংখ্যা এবং আরজেডি-বাম-কংগ্ৰেস মহাজোটকে নিয়ে আসে সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি। আসন্ন নির্বাচনগুলোতে এই নজিরের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

জাতপাত-সম্প্রদায় বিভাজন নির্বিশেষে কৃষির সঙ্গে যুক্ত জনগণের শক্তিশালী ঐক্যের ভিত্তিতে চলমান কৃষক আন্দোলনও একই ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করছে। কৃষক আন্দোলন মোদীর সর্বনাশা কৃষি আইনগুলোর বিরুদ্ধে এক নতুন ঐক্য গড়ে তোলায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে চলে আসা দীর্ঘকালের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দাঙ্গা-বিধ্বস্ত মুজফ্ফরনগর অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে তীব্র বিভাজন পিছনে চলে যাচ্ছে। কৃষক আন্দোলন আদানি-আম্বানি কোম্পানিরাজের আধিপত্যের বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ বার্তাও পাঠিয়েছে। বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলন, কাজের দাবিতে যুব সম্প্রদায়ের আন্দোলন এবং জনশিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পরিবহনের জন্য সাধ্যায়ত্ত ব্যবস্থার লক্ষ্যে ব্যাপকতর স্তরে অনুভূত প্রয়োজনীয়তার মধ্যে এই বার্তাকে অঙ্গীভূত করে নিয়ে মোদী সরকারের সর্বনাশা নীতিগুলোর বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী গণজাগরণের জন্ম দিতে হবে। জনগণের এই ধরনের লড়াকু ঐক্য, সরকারের দমন পরিকল্পনা এবং দেশে এখন বহাল অঘোষিত জরুরি অবস্থাকেও চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে। আসন্ন নির্বাচনগুলোতে স্থানীয় ইস্যু এবং জনগণের উদ্বেগগুলোকে তুলে ধরার সময় আমাদের নির্বাচনী লড়াইগুলোকে দেশে বিকাশমান ফ্যাসি-বিরোধী প্রতিরোধের একটা মঞ্চেও পরিণত করতে হবে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়, ২ মার্চ ২০২১) 

Hooghly tow AssemblyLiberation contest at two centers in Hooghly

হুগলির দুটি কেন্দ্রে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে — গ্রামীণ এলাকা ধনেখালি ও শহরাঞ্চলের উত্তরপাড়া কেন্দ্রে। দুই তরুণ প্রার্থী সজল দে ও সৌরভ রায় শিক্ষকতা পেশার সাথে যুক্ত — একজন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক অন্যজন কলেজে অধ্যাপনা করেন। কিন্তু পেশাগত এই পরিচয়কে ছাপিয়ে যায়  মানুষের দাবি দাওয়া আন্দোলনের পাশে থাকা ও  তাকে সংগঠিত করার সংগঠকের  পরিচয়। ধনেখালিতে লকডাউন পর্বে কাজ হারানো মানুষ বিশেষত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ঋণ মুক্তি, গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের জবকার্ড, আদিবাসীদের লোকশিল্প ভাতা, কৃষি শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিতে, উত্তরপাড়া এলাকায় ফিল্ম সিটি তৈরির নামে ইটভাটা তথা ইটভাটা শ্রমিক উচ্ছেদ, মহিলা নিপীড়ন, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবি কিংবা পরিবেশ রক্ষার মতো বহু দাবিতে সিপিআই(এমএল) ও তার গণসংগঠনগুলি ধারাবাহিক আন্দোলনে থেকেছে। এই নির্বাচনেও বাংলাকে বিজেপির হাত থেকে রক্ষা করা এবং মানুষের দাবিগুলি নিয়ে বাম আন্দোলনের উঠে দাঁড়ানো, পারষ্পরিক সম্পর্কযুক্ত এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত লাগিয়েছেন প্রার্থী এবং দলীয় সংগঠক ও কর্মীরা। রঙ তুলি নিয়ে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গেছে, গ্রামের চুন করা মাটির দেওয়াল কিংবা শহরের বড় রাস্তার পাশের আর অলি-গলির দেওয়াল ভরে উঠছে বিজেপি রুখে দেওয়া, জনগণের বিভিন্ন দাবিতে লড়াইয়ের স্লোগান আর প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার আবেদনে। ৮ মার্চ শ্রমজীবী নারী দিবস উপলক্ষ্যে প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সদস্যরা এই দুই নির্বাচনী কেন্দ্রে কর্মসূচী পালন করেন, আমাদের দুই প্রার্থীকে আহ্বান জানিয়ে প্রচার পত্র বিলি করা হয়, এই কর্মসূচীতে প্রার্থীও উপস্থিত ছিলেন। ইতিমধ্যে ধনেখালির আদিবাসী ও কৃষিমজুরদের গ্রামে বাড়ি বাড়ি প্রচার গাড়ি নিয়ে প্রার্থী ও সংগঠকরা যেতে শুরু করেছেন। উত্তরপাড়ায় বিজ্ঞানমঞ্চ, পরিবেশ সংগঠন এবং বিভিন্ন ক্লাবের সাথে কোভিড মোকাবিলায় সম্পর্ক শুরু হয়েছিল,  সংগঠনের কিছু মানুষ ‘একুশের ডাক’ নিয়ে কর্মসূচীতে এসেছিলেন, নির্বাচনী কাজেও তাঁরা যুক্ত হচ্ছেন। এই বিধানসভায় দীর্ঘদিনের  বসবাসকারী অথচ নিজের বাড়ি নেই এইরকম ভাড়াটিয়া ভালোসংখ্যক মানুষদের সাথে পার্টির পক্ষ থেকে একটি বৈঠক হয়। উত্তরপাড়ার অন্তর্গত পঞ্চায়েত এলাকাতে দেওয়াল লিখন হচ্ছে, এই এলাকায় আমাদের সংগঠন না থাকলেও, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতাকে কাজে লাগিয়ে বিজেপির অনুপ্রবেশের চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রচার শুরু হয়েছে।

নির্বাচন পর্যন্ত সময়কালে ব্রাঞ্চস্তর পর্যন্ত সংগঠনকে সক্রিয় করে, সমস্ত পার্টি সদস্য এমনকি দূরবর্তী সমর্থকটিকে সামিল করে এই কঠিন লড়াই লড়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হয়েছে, শুরুর কাজে তারই এক উৎসাহব্যাঞ্জক ছবি চোখে পড়ছে এই দুই কেন্দ্রে।

Massage of Partha GhoshMessage from State Secretary

বর্তমানে আমি অসুস্থ অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ডিসেম্বর মাসে পার্টির রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে আমাদের নির্বাচনী অভিযানের পরিকল্পনা গৃহীত হওয়ার পরই আমি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়ি, গুরুতর অসুস্থতার মোকাবিলা করে এখনও হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাইনি। আমার বিশ্বাস রাজ্যের সমগ্র পার্টি শক্তি সেই পরিকল্পনা কার্যকরী করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমিও হাসপাতালে এক কঠিন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।

রাজ্যের পার্টি কর্মী, দরদী, শুভার্থী এবং সেই সাথে বাংলার বামপন্থী বিবেক ও বাম-গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন মানুষ এই রাজ্যের বুকে বিজেপিকে এক ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দেবে না, এই দৃঢ় বিশ্বাস আমার রয়েছে।

বিজেপির বিপদ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই,সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের উন্মত্ত হামলা সারা দেশজুড়ে বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, সেটা আমরা প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছি। একই সাথে আমরা দেখছি কৃষকদের প্রতিরোধ। “আইন পাশ করিয়ে” কৃষকদের সর্বশান্ত ও প্রতারিত করার বিরুদ্ধে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। পঞ্জাব-হরিয়ানা জানিয়ে দিয়েছে সেখানে বিজেপির কোনো স্থান নেই, পশ্চিমবাংলাও নিশ্চিতভাবে সেটা জানিয়ে দেবে। আজ রাজ্যের ছাত্র-যুব-মহিলা সহ সমস্ত অংশর মানুষ পথে নেমেছে, প্রতিরোধ চলছে, চলবে।

ফ্যাসীবাদী হামলার মুখে বিভিন্ন রূপে বামপন্থী মহলে আলাপ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশে বিজেপি সাংবিধানিক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটাকে ধ্বংস করতে চাইছে। রাস্ট্র ব্যবস্থাকে স্বৈরতান্ত্রিক করে তোলা, আইন কানুন সংবিধানকে নিজের মতো করে পরিবর্তন করা, এসব ছাড়াও বিজেপির লক্ষ হলো দেশের সমগ্র কাঠামোকেই ভেঙ্গে দেওয়া। সাংবিধানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। ওরা যে “ডবল ইঞ্জিন” সরকারের ধারণা নিয়ে আসছে সেটা এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করার একটা ষড়যন্ত্র! বিহারে ওরা সেই অপচেষ্টা চালিয়েছে, অন্যান্য সমস্ত রাজ্যেও চালাবে। এটা আমাদের কাছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম একটা প্রধান ইস্যু।

অতীতে বাংলাকে ভাঙ্গা হয়েছে, তার রয়েছে এক দুঃখজনক রক্তাক্ত ইতিহাস। পঞ্জাবও সেই একই জায়গা থেকে আজ উঠে দাঁড়িয়েছে। বাংলাকেও সেই দায়িত্ব নিতে হবে। এই প্রেক্ষাপটেই আমাদের নির্বাচনী প্রধান স্লোগান হয়ে উঠেছে বিজেপিকে হারাও বাংলা বাঁচাও।

বামপন্থীদের কাজ হলো মতপার্থক্য দেখা দিলো সেটা সুস্থভাবে পরিচালনা করা। মতপার্থক্য দেখা দিলেই ভয় পেয়ে বা ঘাবড়ে গিয়ে একে অপরকে কটু কথা বলা এটা বামপন্থীদের কাজ হতে পারে না। ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে আলাপ আলোচনা চলুক, এর মধ্য দিয়ে বামপন্থীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠবে। এই অবস্থানকে বিবেচনা করেই আমরা ১২টি আসনে লড়ছি, বামপন্থীদের জয়ী আসনে তাঁদের সমর্থন দিচ্ছি, আরও দুটি আসনে বামদের সমর্থন দিচ্ছি। যেমন বাকি আসনে ফ্যাসীবাদকে পরাস্ত করাকেই আমাদের প্রাথমিক কর্তব্যরূপে নির্ধারণ করছি।

- ১১ মার্চ ২০২১ 

Women's DayMarch 8 International Women's Day

সেই কবে ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট মহিলারা বিশ্বের শ্রমজীবী নারীদের স্বাধীনতা, অধিকার, মর্যাদার দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারীদিবস’ ঘোষণা করেছিলেন! কিন্তু আজও কেন নারী পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে এত বৈষম্য ও হিংসার শিকার? কেন এনআরসি-এনপিআর-সিএএ-র জন্যে তাদের ডিটেনশান ক্যাম্পে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে? কেন ‘লাভ জিহাদ’ আইনের হুমকি? আজও কেন প্রকল্প কর্মী যারা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের শিক্ষা স্বাস্থ্য পুষ্টি প্রকল্পের পুরো ভারটা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন, তাদের সঙ্গে  জঘন্য প্রতারণা চলছে? কেন তাদের বেতন ও সরকারী কর্মীর স্বীকৃতির জন্যে মূক-বধির সরকারগুলোর দরজায় ধর্ণা দিতে হচ্ছে দিনের পর দিন? কেন ‘ডাইনি’ অপবাদে খুন হতে হচ্ছে? কেন ভারত ক্ষুধা সূচকে ১০২তম অবস্থানে? কেন প্রতিদিন ভারতীয় নারী গৃহহিংসা, ধর্ষণ ও নারকীয় অত্যাচারের বলি? কেন দেবাঙ্গনা, সাফুরা জারগর, দিশা রবির মতো দেশপ্রেমিক তরুণীদের – সুধা ভরদ্বাজ, সোমা সেনের মতো সমাজসেবী মানবাধিকার কর্মীদের ‘দেশদ্রোহী’ তকমা দিয়ে জেলে পোরা হচ্ছে ? বিনা বিচারে বছরের পর বছর আটকে রাখা হচ্ছে? কেন আজও মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস হল না?

এইসব প্রশ্ন শাসক শ্রেণী, বিশেষ করে কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপি’র সরকারের মুখের ওপর ছুঁড়ে দিতে গোটা ভারত জুড়ে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির নেত্রী ও সদস্যরা রাস্তায় নেমেছিলেন। অবশ্য রাস্তায় তারা রোজই থাকেন, বাধ্য হন থাকতে।

আমরা বাংলার শ্রমজীবী নারীদের ঘৃণা ও প্রতিবাদকে তুলে ধরলাম।

কলকাতা

কলকাতায় অ্যাপোয়া অন্যান্য নারী সংগঠনগুলির সঙ্গে এক যৌথ প্রোগ্রামে সামিল হয়। নারী-ক্যুয়ার দিচ্ছে ডাক : ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক – এই স্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিভিন্ন নারী এবং ক্যুয়ার সংগঠনের মিলিত উদ্যোগে কলকাতার ধর্মতলায় প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নারী, ক্যুয়ার (বিশেষত ট্রান্স), দলিত ও মুসলিম মানুষদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। নারীর সব রকম শ্রমের স্বীকৃতি, মর্যাদা ও আইনি নিরাপত্তা দিতে হবে। রাজনীতিতে সমানভাবে নামার অধিকার দিতে হবে। সব মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা খারিজ ও সব নারী রাজবন্দী সহ ঐ সব মিথ্যা মামলার সব বন্দীদের শুধু জামিন নয়, নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। ‘লাভ জিহাদ’ আইন দ্রুত বাতিল করতে হবে। ট্রান্স মানুষদের নিজ লিঙ্গ নির্ধারণের পথ সুলভ করতে হবে এবং তাদের শিক্ষা ও চাকরিস্থলে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সমগ্র ক্যুইয়ার মানুষদের যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে, কর্মস্থলে বৈষম্য ও শিক্ষাস্থল-কর্মস্থল-গৃহে হিংসার বিরুদ্ধে আইন আনতে হবে। প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ টাকা বাড়াতে হবে। এই দাবিগুলো নিয়ে প্ল্যাকার্ড পোস্টারে মঞ্চ সুসজ্জিত করা  হয়েছিল।

নারীর অধিকারের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলতে হবে। এই বক্তব্য তুলে ধরেন ‘মৈত্রী’র রত্নাবলী রায় ও দোলন গাঙ্গুলী। তিস্তা, মালবিকা ও অনুরাগ বলেন, রূপান্তরকামী ও সমকামীদের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলেও ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে হবে। সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির ইন্দ্রাণী দত্ত, এআইআরডব্লিউও-র শিখা সেন রায় ও শ্রমজীবি নারী মঞ্চের তপতী চ্যাটার্জি বলেন, ফ্যাসিস্ট শক্তি বিজেপিকে পথে ও ভোটে পরাস্ত করতে হবে। তারা নো-ভোট-টু-বিজেপি ক্যাম্পেইনে যোগ দেওয়ার আহ্বানও রাখেন। পার্কসার্কাসের এনআরসি-সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন সকাত আর দেশের গণতন্ত্রের প্রশ্ন তুলে ধরেন নিশা বিশ্বাস। এই দিনটিকে কৃষক আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘কিষাণী দিবস’ হিসাবে পালন করার কথা বলে এই বিষয়টিকেও এই মঞ্চে তুলে আনা হয়। এ ছাড়াও গান করেন নীতীশ রায়, কুহূ, ও জনগণমনের সাথিরা। কবিতা-আবৃত্তি ও নাটকও মঞ্চস্থ হয়।

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আওয়াজ তুলেছে বজবজের নিশ্চিতপুর পঞ্চায়েতের মহিলারা – মজুরি সম্মান এবং শ্রমিকের অধিকার চাই। বিজেপি-কে পশ্চিমবঙ্গে ঠাঁই দেবে না মহিলারা – এই বিষয়ে আলোচনা চলে।

হাওড়া

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে হাওড়া জেলার বালি দুর্গাপুরে অ্যাপোয়ার পক্ষ থেকে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন মহিলা সমিতির কল্যাণী গোস্বামী সহ আরও কমরেডগণ। বক্তারা রাজ্য পরিস্থিতি এবং মোদী সরকারের চরম জনবিরোধী নীতির বিপর্যয়কর ফলাফলের কথা তুলে ধরেন। বিজেপিকে ভোট না দেবার জন্য জনগণের কাছে আহ্বান জানান। সভায় গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন ‘ইঙ্গিত’ সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীরা। সভা শেষে মোদীর কুশ পুতুল পোড়ানো হয়। ৬ মার্চ কামারডাঙায় পালিত হয় আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস।

নদীয়া

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির উদ্যোগে নদিয়া জেলার ধুবুলিয়া নেতাজী পার্কে এক সভার আয়োজন করা হয়। নারী দিবসের আহ্বান পাঠ করে সভার সূচনা করেন শিল্পী দত্তগুপ্ত। নারী দিবসকে স্মরণ করে আজকের শ্রমজীবী নারীর সংগ্রাম নিয়ে বক্তব্য রাখেন বিড়ি শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী বেলা নন্দী। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমগ্র সমাজের আন্দোলনে মহিলাদের সক্রিয় অংশ গ্রহণের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন সংগঠনের নদিয়া জেলা সম্পাদিকা অপু কবিরাজ। সভায় উপস্থিত রাজ্য নেত্রী জয়শ্রী দাস আজকের দিনে শ্রমজীবী থেকে সমগ্র নারী সমাজের উপর যে হামলা নেমেছে তাকে মোকাবিলা করতে বৃহত্তর মহিলা সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান রাখেন। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন নদিয়া জেলা সদস্য ও কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রের পার্টি প্রার্থী কমরেড সন্তু ভট্টাচার্য ফ্যাসিবাদী বিজেপির বিপর্যয়কারী রাজনীতি, সংস্কৃতির মোকাবিলায় নারী পুরুষ জোট গড়ে তোলার আহ্বান রাখেন। সমগ্র সভাকে সংগ্রামী সঙ্গীতে উজ্জীবিত করে তোলেন গণ শিল্পী মল্লিকা সরকার।

উত্তর চব্বিশ পরগনা

আট মার্চ বারাসাত স্টেশন চত্বরে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটি এক পথসভায় আয়োজন করে।

অনেক রক্তক্ষয়ী কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বের শ্রমজীবী নারীর স্বাধীনতা, মর্যাদা, অধিকারের দ্যোতক ‘আট মার্চ ‘প্রতিষ্ঠিত হয়। সময়ের সাথে সাথে আন্দোলনের লক্ষ্য, দিশা ও ক্ষেত্র পাল্টেছে। কিন্তু আট মার্চের তাৎপর্য ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে। আট মার্চ – লিঙ্গ বৈষম্যসহ সমস্ত বৈষম্যমুক্ত নারীসমাজ গড়ার অঙ্গীকার নেওয়ার দিন। আজকে ভারতবর্ষে বিজেপি-আরএসএস-এর ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনকে রোখা ভারতীয় নারীর প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য। আর সেই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তার স্বাধীনতা স্বায়ত্ততা মর্যাদা অধিকারের লড়াই আরও বলিষ্ঠ হবে। সামগ্রিক বিচারে ‘আট মার্চ ‘শুধু নারীদের জন্য নয়, পুরুষদের জন্যও এক বিশেষ বার্তা বহন করে। এই পথসভায় অ্যাপোয়া রাজ্য নেত্রী অর্চনা ঘটক, জেলা নেত্রী মৈত্রেয়ী বিশ্বাস, জয়ন্তী  দাশগুপ্ত, এআইপিএফ নেতা নির্মল ঘোষ এবং গণসংস্কৃতি পরিষদের নেতা অনুপ মজুমদার বক্তব্য রাখেন। কমরেড অনুপ সুউপযোগী একটি গণসঙ্গীতও পরিবেশন করেন। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন সুনীতা নাথ।

হুগলি

এ বছর নারীদিবসের আহ্বান : বাংলায় বিজেপিকে রুখে দিতে হবে

ভারতবর্ষে একুশের নারীদিবস এল এক সংগ্রাম মুখরিত পরিবেশে, যার কেন্দ্রে আছে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন। তাতে কিষাণীরা সামিল হয়েছেন বড় সংখ্যায় বিপুল উদ্যমে। তাঁরা ১৮ জানুয়ারী মহিলা কিষাণ দিবস পালন করেছেন এবং ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসও উদযাপন করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে নারী দিবস পালিত হচ্ছে নির্বাচনী আবহাওয়ায়। তাই বাংলা বাঁচাতে সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে পরাস্ত করুন — এই মর্মে হুগলি জেলায় প্রচার শুরু হয়েছে ৭ মার্চ উত্তরপাড়া নির্বাচনী কেন্দ্রের চলচ্চিত্রম মোড়ে এক পথসভা থেকে। এখানে বক্তব্য রাখেন সমিতির রাজ্য নেত্রী চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী ও চৈতালি সেন, প্রার্থী সৌরভ রায় ও সম্প্রীতি মুখার্জি। নির্বাচনকে মাথায় রেখে নারী দিবস উপলক্ষ্যে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা শাখার প্রচার পত্র বিলি করা হয়। সভা পরিচালনা করেন স্থানীয় নেত্রী কৃষ্ণা পাল।

৮ মার্চ ধনেখালি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত তালবোনা গ্রামে সমিতির জেলা নেত্রী অর্পিতা রায়ের নেতৃত্বে এক বৈঠক হয়। এতে এলাকার বেশ কিছু নতুন মহিলাও সামিল হয়েছিলেন। বৈঠকে আজকের ভারতে নারী দিবসের তাৎপর্য ও আমাদের করণীয় কাজ এবং শ্রমজীবী মহিলাদের নানা বঞ্চনা ও সংগ্রাম প্রসঙ্গে চর্চা হয়। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় বিজেপির নারী বিরোধী জনবিরোধী কার্যকলাপ নিয়েও মেয়েরা সরব হন।

একই দিনে পোলবার বরুনান পাড়ায় আদিবাসী গ্রামে নারী দিবস পালিত হয়। এখানে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবী মেয়েরা মিলিত হন। সভায় নারী দিবসের তাৎপর্য ও চলমান কৃষক আন্দোলনে মেয়েদের অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন সমিতির জেলা সম্পাদিকা শিপ্রা চ্যাটার্জি এবং চৈতালি সেন। কেবল মোদী সরকারের জনবিরোধী ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপ নয়, সাম্প্রতিক একটি ধর্ষণ মামলায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নারী – বিদ্বেষী মন্তব্য নিয়েও কঠোর সমালোচনা করা হয়।আলোচনা হয়, আমরা লড়াই করছি পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়, তাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শোষণ-অত্যাচার-কদাচার ও মেয়েদের দাবিযে রাখার পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। পারস্পরিক কথোপকথনের মধ্যে দিয়ে জীবন্ত সব অভিজ্ঞতা উঠে আসছিল। আলোচনায় বোঝা গেল, সাধারণ মেয়েরা কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। উপস্থিত মহিলাদের মধ্যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও, মমতা কিছু করেছে — এ কথাও বলেন অনেকে। তাঁরা বিজেপির অশুভ কার্যকলাপ সম্পর্কেও যথেষ্ট সচেতন। কথার সুরে মনে হল, উপস্থিত কেউই বিজেপিকে ভোট দেবেন না।

International Women's Day

 

আলোচনার শেষে বিভিন্ন দাবিতে পোস্টার হাতে মেয়েরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। প্রধান দাবি ছিল :
* নয়া কৃষি আইন ও নয়া শ্রম কোড বাতিল ।
* মেয়েদের স্বাধীনতা, কর্ম সংস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা।
* মেহনতি মহিলাদের ঋণ মকুব।
* দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ
* গ্রামীণ রোজগার যোজনায় ২০০ দিন কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি। এবং স্কীম ওয়ার্করদের সরকারী কর্মচারির স্বীকৃতি ও নূন্যতম মজুরি।
* লাভ জেহাদের অজুহাতে ধর্মান্তরকরণ আইন বাতিল।
* আদিবাসী নৃত্যশিল্পীদের সম্মানিক ভাতা ও যথাযথ নিয়োগ।

সভার শেষে আদিবাসী মহিলারা নাচ ও গানের মাধ্যমে তাঁদের লড়াই এর কথা তুলে ধরেন।

হাতে কাজ নেই। বাজার আগুন। পেটে ভাত নেই। চরম সংকটে মানুষ বুঝেছে – কে আপন, কে পর। অন্তত মোদী সরকার যে কোনোভাবেই গরিব মানুষের পাশে নেই – এটা লক্ষ লক্ষ প্রকল্প কর্মী, ঋণমুক্তির আন্দোলনরত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা, কাজ হারানো স্বনিযুক্তির কর্মীরা হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন। শুধু পেটের ভাত নয় – জীবনের নিরাপত্তা সুরক্ষাও কেড়ে নিয়েছে। মেয়েরা কী খাবে, কী পরবে, কাকে ভালবাসবে, কাকে বিয়ে করবে, সন্তানকে কীভাবে পালন করবে, কীভাবে বাঁচবে – সব কিছু এই বিজেপি সরকার ঠিক করে দেবে – এটা তারা মানবেন না। শহর-গ্রামে মিলে মিশে থাকার পরম্পরা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির রামধনু নিয়ে তারা শান্তিতে বাঁচতে চান। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষা করতে চান। তাই প্রতিটি সভায় আওয়াজ উঠেছে ‘বিজেপি রুখে বাংলা বাঁচাও’।

- চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরী 

Modi's Briged in KolkataModi's brigade speech

এ যাবৎ কোনো প্রধানমন্ত্রীর ব্রিগেড ভাষণে এতো কম জনসমাগম হয়নি। তাও মোদীকে বলতে শোনা গেল, জীবনে এতো বিপুল লোকসমাগম এর আগে নাকি তিনি কখনই দেখেননি। কপট আবেগে বাংলার মানুষের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। এতোই নির্লজ্জ বেহায়া এই দলটি যে কয়েক বছর আগে ব্রিগেডে বাম দলগুলোর অভূতপূর্ব জনসমাবেশের ছবি নিজেদের ৭ তারিখের সমাবেশ বলে সামাজিক মাধ্যমে চালাবার চেষ্টা করে। তাঁদের এই জালিয়াতি ধরা পড়ে যায়, ওই ছবিতে লাল পতাকার উপস্থিতিকে ঢাকতে না পারার ফলে।

আসলে, মোদী যা বলেন, ঘোষণা করেন, নির্দ্বিধায় বলা যায়, তার বিপরীতটাই সত্য।

ঠিক যেমন, তাঁর আনা কৃষি আইন নাকি কৃষকদের মঙ্গলের জন্যই। অথচ, কৃষকরা জানেন, সেগুলো তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ভারতীয় সংসদের সামনে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে “গণতন্ত্রের ওই পবিত্র মন্দিরকে রক্ষা করার” প্রতিশ্রুতি দেন। আর, বিপরীতে সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর স্টিমরোলার চালিয়ে আজ কাশ্মীর সহ ধীরে ধীরে গোটা দেশই পরিণত হয়েছে আস্ত এক জেলখানায়। তিনি ব্রিগেডে দাঁড়িয়ে বাংলায় ‘আসল পরিবর্তনের’ স্লোগান আওড়ালেন। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতেতে মিঠুন চক্রবর্তী ফিল্মী ডায়লগ দিয়ে আসল কথাটাই বলে দিলেন যে, তার দলটি হলো গোখরো সাপের মতো ভয়ংকর — এক ছোবলেই ছবি হয়ে যাবে যে কোনো প্রতিবাদী সত্ত্বা। বিজেপি’র সদ্য গজিয়ে ওঠা পোস্টার বয় শুভেন্দু অধিকারী খোলাখুলি জানালেন, বাংলাকে কাশ্মীর বানাবেন। আজ এই মুহূর্তে, মানবাধিকার সহ সমস্ত গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বৃহৎ কারাগার হয়ে উঠেছে যে কাশ্মীর সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এক সাংবাদিকের পরিভাষায়, এখন চলছে গোটা দেশের কাশ্মীরীকরণ! আর, এইতো দিন কয়েক আগে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জানালো, ভারত এখন এক ‘আংশিক স্বাধীন দেশ’।

মোদী রাজ্যবাসীকে বলেছেন, বাংলা চায় শান্তি, বাংলা চায় প্রগতি, বাংলা চায় উন্নতি। বাংলাকে নাকি তিনি সোনার বাংলা করবেন। অথচ, তাঁর আমলে দেশে চল্লিশ বছর পর অর্থনীতি গভীর মন্দার কবলে। যে এনএসএসও’র তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ০.৪ আর্থিক বৃদ্ধিকে মোদী সরকার বিরাট এক ইতিবাচক লক্ষ্মণ হিসাবে ডুগডুগি বাজাচ্ছে, সেই এনএসএসও তাদেরই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে যে এই সমস্ত আনুমানিক পরিসংখ্যানে বড়সড় সংশোধন করা হবে। গোটা দেশের মানুষ যখন বেলাগাম পেট্রল ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে নাজেহাল, তখন ব্রিগেড ভাষণে ঘুণাক্ষরেও তার উল্লেখ করলেন না প্রধানমন্ত্রী।

নাটকীয়তার চরমে, মোদী তাঁর ৬৮ মিনিট ভাষণে কখনও গলা চড়ালেন, কখনো বা খাদে নামালেন, দু’হাতে হাজারো মুদ্রা সহযোগে। মঞ্চের একপাশে রাখা টেলিপ্রম্পটার দেখে ভাষণ দেওয়ার কারণেই মোদীকে কখনই মঞ্চের সোজাসুজি থাকা জনতার দিকে তাকিয়ে ভাষণ দিতে দেখা যায়নি। নির্লজ্জের মতো তিনি বাংলার উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিলেন। কিন্তু, তাঁর আমলেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ঐতিহাসিক তলানিতে। এজন্য কোভিড ১৯-র দোহাই দেওয়া চলবে না, কারণ ভারতের মতো আর কোনো দেশেরই এমন বেহাল দশা আর কোথাও হয়নি। মোদীর আমলে দেশের কর্মহীনতার হার অর্ধশতকের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, আর, মনে রাখা দরকার তা কোভিড ১৯-র আগেই। গ্রামীণ ভারতে ভোগব্যয় সরাসরি হ্রাস পেয়েছে। তাঁর জমানাতেই ভারতের পরিসংখ্যান বিশ্বমঞ্চে সম্মানের গৌরব খুইয়ে পরিণত হয়েছে হাসির খোরাকে। ক্রমে ক্রমে তলিয়ে যাওয়া অর্থনীতির হাত ধরেছে ব্যক্তি স্বাধীনতা পরিসরের আতঙ্কজনক সংকোচন। আর এই দু’টোর ভয়ংকর মিশেল গোটা দেশকে এক গভীর বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আশার কথা, কেন্দ্রীয় সরকারের আজ্ঞাবহ শীর্ষ আদালত দিল্লীর সীমানায় কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে সামিল হওয়া মহিলাদের ঘরে ফিরে ঘরকন্নায় মনোনিবেশ করার পরামর্শকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে আবার দলে দলে সামিল হলেন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নতুন উদ্যমে। এবার, আন্দোলনরত কৃষক সংগঠন ও দেশের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলো একযোগে শুরু করছে নানা কর্মসূচী –  ১৫ মার্চ বেসরকারীকরণ বিরোধী দিবস। এখানে থেমে থাকছে না। কৃষক আন্দোলনকে নতুন রাজনৈতিক মাত্রা দিতে যে যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সমাগত, সেই সেই রাজ্যে বিজেপি’র বিরুদ্ধে সর্বাত্মক রাজনৈতিক প্রচারে অবতীর্ণ হওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁরা নিয়েছেন।

এই নতুন জাগ্রত জনমতই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আসল প্রতিষেধক। এই পথ ধরেই উপড়ে ফেলতে হবে তার বিষবৃক্ষ।

- অতনু চক্রবর্তী 

Hathras is once againthe rogue power is again in Hathras

২ আগস্ট মালদহে বিজেপির নির্বাচনী প্রচারে এসে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যে ভাষণ দেন তার মধ্যে এই কথাগুলোও ছিল – “এমনকি নারীদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না (এই রাজ্যে)। যে সরকার নারীদের এবং সামগ্ৰিকভাবে রাজ্যের অধিবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকার তাদের নেই।” পরিস্থিতির কি পরিহাস, যেদিন আদিত্যনাথ এই কথাগুলো উচ্চারণ করছিলেন সে দিনই তাঁর রাজ্যের হাথরসের নজলপুর গ্ৰামে শ্লীলতাহানির শিকার এক যুবতীর বাবাকে গুলি করে হত্যা করল যৌন নিগ্ৰহে অভিযুক্তরা। তাঁর রাজ্যে সমাজবিরোধীদের কিভাবে তিনি শায়েস্তা করেছেন, সেই আস্ফালনও আদিত্যনাথ সেদিনের ভাষণে করেছিলেন। প্রসঙ্গত, হাথরস হল উত্তরপ্রদেশের সেই জেলা যেখানে ধর্ষিতা দলিত তরুণীর মৃত্যু এবং প্রশাসনের অমানবিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতা গত বছরের সেপ্টেম্বরে সারা দেশে আলোড়ন তুলেছিল। অভিযোগ, ধর্ষণের প্রমাণ লোপাটের অভিপ্রায়ে পুলিশ পরিবারের অসম্মতি সত্ত্বেও ধর্ষিতার দেহ পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।

বাবার মৃত্যুর পর কাঁদতে-কাঁদতে করজোড়ে ন্যায়বিচার চাওয়া নিগৃহীতা তরুণী জানিয়েছেন – তাঁর শ্লীলতাহানি ঘটানোয় তাঁর বাবা অম্বরীশ শর্মা ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মূল অভিযুক্ত ছিল গৌরব শর্মা এবং অন্যান্য অভিযুক্তরা ছিল ললিত শর্মা, রোহিতাস শর্মা, নিখিল শর্মা ও আরো দুজন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর গৌরব শর্মা গ্ৰেপ্তার হলেও ১৪ দিন পরই সে জামিন পেয়ে যায়। এরপর দু’বছর ধরে অভিযুক্তরা এবং পুলিশও মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাদের ওপর চাপ দিতে থাকে। হত্যার দু’দিন আগেও তার বাবাকে খুন করার হুমকি গৌরব দিয়েছিল বলে নিগৃহীতা জানিয়েছেন। অবশেষে, ২ আগস্ট তাঁর বাবা যখন তাঁদের আলু জমিতে কাজ করছিলেন, সে সময় গাড়িতে করে গৌরব সহ ছয় দুষ্কৃতী এসে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বাবাকে হত্যা করে। তিনি আরো জানিয়েছেন, বাবাকে গুলি করার পর সাহায্য চেয়ে তিনি পুলিশকে ফোন করলেও তারা আসেনি, নানা বাহানায় বিলম্ব করেছে।

উত্তরপ্রদেশে দুর্বৃত্তদের দাপট তথা মাফিয়া পরিঘটনাটা কতটা প্রভাবশালী তার অনুধাবনের জন্য বিকাশ দুবে আখ্যানের উল্লেখ এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবে না। গত বছরের জুলাই মাসের গোড়াতেই পুলিশ বিকাশ দুবে ও তার শাগরেদদের ধরতে গেলে বিকাশ দুবে চালিত দুর্বৃত্ত বাহিনী একজন ডিএসপি ও তিন জন সাব-ইন্সপেক্টর সহ আট পুলিশ কর্মীকে হত্যা করে। অভিযোগ, পুলিশ যে বিকাশ দুবে ও তার দলবলকে ধরতে যাচ্ছে, সে খবর প্রশাসনের ওপরতলা থেকে বিকাশ দুবের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ৫০টারও বেশি অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ থাকলেও বিকাশ দুবে কিভাবে দীর্ঘদিন গ্ৰেপ্তারি এড়িয়ে চলেছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল এবং উত্তরটা যে রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ও প্রশাসনের অন্দরে নিহিত রয়েছে তাও দ্বিধাহীন ভাবে উঠে এসেছিল। পরে বিকাশ দুবের গ্ৰেপ্তারি ও ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হওয়ার ঘটনা যথার্থই সংঘর্ষের ঘটনা নাকি দুর্বৃত্ত-পুলিশ-প্রশাসন গাঁটছড়ার উন্মোচনকে ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে উন্মোচনের সম্ভাবনাময় উৎসকে সাফ করা, সেই প্রশ্নকে সে সময় এড়ানো যায়নি।

উত্তরপ্রদেশে বারবারই সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্যের খবর ও নারী নিগ্ৰহের ঘটনার উন্মোচন আদিত্যনাথের দুষ্কৃতী দমনের আস্ফালনকে রাজনৈতিক চালবাজি বলে প্রতিপন্ন করেছে। এই প্রতিবেদন লেখা যেদিন চলছে সেই ৬ আগস্টেও শামলি জেলার রাজবির গ্ৰামে ঘরে একা থাকা ২৮ বছরের এক যুবতীর শ্লীলতাহানির ঘটনা খবর হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ এমনই এক রাজ্য যেখানে সশস্ত্র ডাকাতি, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহরণ, নারী নিগ্ৰহ, তোলাবাজি, জমি গ্ৰাসের মতো অপরাধ প্রাত্যহিকের ব্যাপার এবং রাজনীতি-পুলিশ-দুর্বৃত্ত আঁতাত এক অবিসংবাদী বাস্তবতা। নিগৃহীতার বাবার হত্যার পর বিজেপি গৌরব শর্মাকে সমাজবাদী পার্টি সমর্থক রূপে প্রচার করছে, অখিলেশ যাদব আবার গৌরব শর্মার সঙ্গে আলিগড়ের বিজেপি সাংসদের ছবি সামাজিক মাধ্যমে টুইট করছেন। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে বর্তমানে ৪০৩ জন বিধানসভা সদস্যর মধ্যে ১৪৩ জনের বিরুদ্ধেই অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। যে দলের শাসনাধীনে উত্তরপ্রদেশ দুর্বৃত্তদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন যেখানে প্রশ্নহীন প্রবল বাস্তবতা, সেই দল পশ্চিমবাংলায় শাসন ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবাংলারও আর একটা উত্তরপ্রদেশ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার নয়। এই প্রতিবেদনের শুরুতে আদিত্যনাতের ভাষণের যে অংশবিশেষ উল্লিখিত হয়েছিল, যাতে নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার অক্ষমতায় সরকারের একদিনও ক্ষমতায় থাকার অধিকারকে নাকচ করা হয়েছিল, সেই অঙ্গীকারকে আদিত্যনাথ প্রত্যাশিতভাবেই ভুলে গেছেন বলে দেখা যাচ্ছে!

Fir in Koilaghat Railway BuildingThe death of this fire

অর্ধশতক পার করা নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিং-পূর্ব রেলের সদর দপ্তর। প্রায় দু’হাজার মানুষের কর্মস্থল। সেখানেই ঘটে গেল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। চলে গেল ন’টি প্রাণ।

দুটি লিফ্ট – যেন দুটি মৃত্যুযান। একটিতে কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় দমবন্ধ হয়ে মারা গেলেন রেলের ডেপুটি চিফ কমার্সিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল এবং শিয়ালদহ’র সিনিয়র কমার্সিয়াল ক্লার্ক শ্রবণ পাণ্ডে।

অন্যটিতে আগুনে ঝলসে জীবন্ত দগ্ধ হলেন উদ্ধার করতে যাওয়া চার দমকলকর্মী – অনিরুদ্ধ জানা, গৌরব বেজ, বিমান পুরকায়েত এবং গিরিশ দে। হেয়ার স্ট্রিট  থানার এএসআই অমিত কুমার ভাওয়াল। আরও দু’জন।

আমরা শোকাহত, স্তব্ধ-বিপন্নকে উদ্ধার করতে গিয়েই তারা প্রাণ দিলেন! সরকারী কর্মচারিদের বাপান্ত না করে যারা জলগ্রহণ করেন না এবং বেসরকারীকরণের ওকালতি করেন – তাদের একটু ভাবতে অনুরোধ করছি!

কিন্তু এই মৃত্যু কি অনিবার্য ছিল?

লিফ্ট – অভিশপ্ত লিফ্ট! কিন্তু কেন অগ্নিকাণ্ডের পর লিফ্ট চলল? কেন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি? কেন উদ্ধার কাজে গিয়ে দমকলকর্মীরা রেল ভবনের ম্যাপ চেয়ে পাননি? রেল আধিকারিকরা কেন উপস্থিত থেকে দমকল ও প্রশাসনকে সাহায্য করেননি? কেন উদ্ধার কাজে সমন্বয়ের অভাব ছিল? যে লিফ্টে দমকলকর্মীরা উঠেছিলেন সেটি কি আদৌ ‘ফায়ারম্যানস লিফ্ট’ ছিল? তবে ‘স্লাইডিং ডোর’ কেন? কেন কোলাপসিবল গেট নয়? আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য তো সেটাই থাকার কথা! যদি আদৌ ফায়ারম্যানস লিফ্ট না থেকে থাকে – তবে কেন নেই? যে বাড়িতে দৈনিক দু’হাজার কর্মী আসা যাওয়া করেন? বিল্ডিং-টিতে গত তিরিশ বছর কেন আপৎকালীন মহড়া হয়নি? নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ঠিকমত কাজ করেনি – ঐ ভবনের কিছু কর্মী জানিয়েছেন। কেন? ফায়ার অ্যালার্ম আদৌ বেজেছিল কি? বিল্ডিং এর হাইড্র্যান্টে জল ছিল না কেন?

আগুনের উৎস সম্পর্কে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত – বাড়ির পুরোনো ওয়্যারিং ও ওভারলোড থেকেই অগ্নিকাণ্ড। সম্ভবত সার্ভার রুম থেকে। পুরোনো বহুতল। বিভিন্ন তলে বিভিন্ন অফিস। রয়েছে সার্ফেস ওয়্যারিং। বছরের পর বছর জমেছে ফাইলের পাহাড়। সেগুলোকে সরানোর জন্যে তৈরি হয়েছে ফলস সিলিং। আর যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে অস্থায়ী স্টোর রুম। হতে পারে সেটা সিঁড়ির পাশেও। মানে চলাচলের পথটুকুও সংকীর্ণ! জতুগৃহ থেকে পালাবার পথও নেই! ভবনের সংরক্ষণের, আপৎকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই হাল! অথচ সেটা দেখার জন্যে তো অনেক বড় বড় পদে রয়েছেন বড় বড় আধিকারিক! তারা শুধু দুর্ঘটনা ঘটার পর নীচুতলার কর্মীদের ওপর দায় চাপাবেন – তারা কেন নির্বোধের মতো মৃত্যুকে বরণ করে নিল! চার সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে রেল। তাতে আছেন অনেক পায়াভারি লোক। তারা রিপোর্ট দেবেন। অনেক সুপারিশ করবেন। কিন্তু সাধারণ কর্মীদের নিরাপত্তা যে আঁধারে সেই আঁধারেই থাকবে! কারণ রেলটাই তো বিক্রি হয়ে যাবে কিছু দিন পর! তাই অবসরের পর নতুন নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ। উপযুক্ত দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। নিরাপত্তার বিষয়টা দেখার লোক কোথায়?

আমাদের অতি-সক্রিয় রাজ্যপাল যাকে কেউ কেউ বিজেপি’র রাজ্য মুখপাত্র বলে থাকেন তিনি তার প্রগলভতার নয়া নজির রাখলেন। দমকলের ওপর যাবতীয় দোষ চাপিয়ে সপাটে বলে দিলেন ‘রেলের কোনো গাফিলতি নেই’! হায় রে! যিনি কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা কানাকড়িটুকু উদ্ধারে আজ অবধি কোনো ভূমিকা নেননি, তার বিলাসী জীবন যাপনের জন্য রাজ্যকে কত গুণগার দিতে হয়? যাক সে কথা। তবে রাজ্যপাল মশাই, ঠিক ঠাক তদন্ত হলে, রেলের গাফিলতি কিন্তু ধরা পড়বেই!

দমকলকর্মীরা লিফ্টে উঠেছিলেন কেন? এই সব ক্ষেত্রে তো লিফ্ট ব্যবহারের কথাই নয়! তারা কি তা জানতেন না? এর উত্তর দেওয়ার জন্য আজ আর কেউ বেঁচে নেই!

তবে কি তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, যথেষ্ট দক্ষ অগ্নিযোদ্ধা ছিলেন না? তাদের কি অগ্নিপ্রতিরোধী পোশাক, উপযুক্ত জুতো-এসব ছিল না? এর উত্তর অবশ্য দিয়েছেন তাদের সহযোদ্ধারা – কান্না গিলে, বুকভাঙা আফশোসে!

চার জনের মধ্যে তিনজনই ছিলেন অস্থায়ী কর্মী। হ্যাঁ, প্রশিক্ষণ তাদের ছিল – সম্ভবত ২২ দিনের – ৩ মাসের নয়। যেটা স্থায়ী কর্মীরা পেয়ে থাকেন। স্থায়ী কর্মীদের বেতন কাঠামো ভালো, তারা দুর্ঘটনায় আহত হলে বিনামূল্যে চিকিৎসা পান। কিন্তু অস্থায়ীদের মাসিক ভাতা সাড়ে সতেরো হাজার টাকা। বিনামূল্যের চিকিৎসাও তাদের প্রাপ্য নয়। এসব ক্ষোভ তারা উগড়ে দিয়েছেন দমকলমন্ত্রীর সামনেই।

তাহলে তাদের পাঠানো হল কেন ঐ বিপর্যয়ের মধ্যে? আসলে এখানেও সেই একই ছবি। বেশ কয়েক বছর ধরে ‘ফায়ার অপারেটর’ পদে নিয়োগ বন্ধ। ‘অক্সিলিয়ারি ফায়ারম্যান’ দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। দক্ষতা? সেটা তো অভিজ্ঞতা সাপেক্ষ। কাজটা ভালোবেসে মনপ্রাণ দিয়ে করবেন বলেই তো ইংরিজিতে স্নাতকোত্তর হয়ে সাংবাদিকতার ডিগ্রি নিয়ে এই অস্থায়ী কাজে ঢুকেছিলেন এদের একজন! (উপযুক্ত অন্য কাজ না পেয়েই হয়তো ঢুকতে বাধ্য হয়েছিলেন।) উপযুক্ত পোশাক, জুতো, ওয়াকিটকি ও অনান্য সরঞ্জাম প্রতিবছর কেনা হয়, ফায়ার স্টেশনে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রয়োজনের সময়ে পাওয়া যায় না। কর্মীরাই জানিয়েছেন। কেন? মন্ত্রী দাবি করেছেন, দপ্তরটিকে আধুনিক করে তোলার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হয়েছে হয়তো। কিন্তু কর্মীদের যদি এমন অসুরক্ষিত অবস্থায় যুদ্ধে যেতে হয়, তাহলে তো এমন মর্মান্তিক পরিণতিই ঘটতে থাকবে। কর্মী সুরক্ষা, উন্নত পরিকাঠামো, প্রশিক্ষণ – এসব দেখার জন্যে নিশ্চয়ই দায়িত্বশীল আধিকারিকরা আছেন। তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করলে তো এই বেহাল অবস্থার করুণ চিত্র উঠে আসতো না! ২৫টা ইঞ্জিন নিয়ে সহযোদ্ধাদের হারানোর মর্মান্তিক কষ্ট বুকে চেপে রেখে, বাঘের মতো প্রায় দশ ঘন্টা  লড়ে দমকলকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, তাই-ই তারা করে থাকেন সব সময়ে, নিজেদের জীবন বাজি রেখে। যদিও এই আগুন স্টিফেন কোর্ট বা আমরির মত অত তীব্র, অত ভয়ঙ্কর ছিল না।

তাই এই ন’টি মৃত্যু একেবারেই অনিবার্য ছিল না! সংশ্লিষ্ট কর্তারা, কর্তৃপক্ষ বুকে হাত রেখে নিজেদের বিবেককে একটু প্রশ্ন করবেন! বারবার কিন্তু ছাড় পাবেন না জবাবদিহি থেকে! আর ক্ষমতাসীন-ক্ষমতালিপ্সু সব দলের কাছে আবেদন – নত মস্তকে নীরব থেকে এই মৃত্যুকে সম্মান জানাতে শিখুন, এবার থেকে অন্তত! ওঁরা মানুষের জন্য, মানবতার জন্য জীবন দিয়ে গেলেন, আপনাদের সংকীর্ণ স্বার্থে নয়!

- জয়ন্তী দাশগুপ্ত 

Farmer Protest's 100 DayOne hundred days of peasant movement

অনাদিকালের কোনো মহাকাব্যীয় বীরগাথা থেকে শুরু করে মানবজাতির লিখিত ইতিহাসের বহু বিচিত্র উপাখ্যানে বর্ণিত সমস্ত ন্যায়সংগ্রামের কাহিনীগুলি — সব কিছুই ম্লান হয়ে গেছে স্বার্থকুটিল এক বিংশ শতাব্দির এই কালবেলায় এক অনন্য সাধারণ কৃষক সংগ্রামের স্পর্ধার কাছে। যে অসামান্য ধৈর্য ও সংকল্প নিয়ে রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় বিধানকে পালটে দেওয়ার জন্য মহানগরী দিল্লীর সীমান্তে দেশের লক্ষ লক্ষ অন্নদাতা কৃষকদের যে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচী তা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে কেন সারা বিশ্বেই অভূতপূর্ব, নজিরবিহীন। যখন তাপমাত্রা নেমে গেছে হিমাঙ্কের নীচে সেই কনকনে ঠান্ডার দিনগুলিতে শুরু হওয়া এই বিপুল গণঅবস্থান একশ দিন পাড় করে যখন আরো বিশালতর হচ্ছে তখন প্রবল উত্তাপে ঝলসে যাচ্ছে উত্তর ভারত। কৃষকদের এই হার না মানা এই জিদকে দেশ দুনিয়া যখন কুর্নিশ জানাচ্ছে তখন অন্তত দুই শত আন্দোলনকারী চলে গেছেন ‘না ফেরার দেশে। ‘সন্ত বাবা রাম সিং, ভীম সিং, জয় সিং, গুরবচ্চন সিং সিবিয়া থেকে গুরমেইল কাউর – দেশের শস্যভান্ডার পাঞ্জাব-হরিয়ানার নাম না জানা গ্রামগুলি থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে এরা প্রত্যেকেই শহিদ হয়েছেন। তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি সরকারের চরম অবহেলা ও হৃদয়হীনতায়। সাধারণ পরিবার থেকে আসা এই কিষাণ-কিষাণীদের সাথে মুহূর্তের জন্য মোদিজির দেখা করার সময় হয়নি। প্রতীক্ষায় থেকে, শীতের রাত্রে খোলা আকাশের নীচে ঠান্ডায় জমাট বেঁধে কিম্বা ক্লান্তিতে চিরবিদায় জানিয়েছেন তাঁরা। অথচ প্রধানমন্ত্রী প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাড়ম্বর অভ্যর্থনা জানাতে আমেদাবাদ যাওয়ার সময় পান কিম্বা কৃষকদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে কোনো ‘সাথারি পার্কে বিজ্ঞাপনের জন্য’ স্যুটিং করতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেননি। উলটে তাঁর তাঁবেদাররা আন্দোলনকারী কৃষকদের ফড়ে, দালাল, খালিস্তানপন্থী, অতি স্বচ্ছল চাষি, শুধু পাঞ্জাবওয়ালা ইত্যাদি নানা শব্দে নিন্দা করে গেছেন। ঠিকই, আন্দোলনকারীদের মধ্যে পাঞ্জাবের স্বচ্ছল চাষিরাও আছেন বৈকি। ‘সবুজ বিপ্লবের’ প্রথমদিকে আধুনিক চাষবাসের সুযোগ তাঁরা ভোগ করেছেন। কিন্তু আজ যখন সরকার আর শস্য কিনবে না আর খাদ্যশস্য কেনা বেচা সহ কৃষিক্ষেত্রের দন্ডমুন্ডের মালিক হবে আদানি-আম্বানি – তখন খেতমজুর, গরিব-মাঝারি চাষিদের সাথে সাথে স্বচ্ছল চাষিরাও প্রতিবাদে সামিল হলে বিজেপির গাত্রদাহ কেন? কিন্তু শত কুৎসা প্রচার সত্বেও কৃষক আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও ধীরে ধীরে উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাপক গ্রামীণ জনগণ সামিল হয়েছেন আন্দোলনে আর সেই ধাক্কায় বিজেপির জোট সঙ্গীরা একে একে এনডিএ শিবির থেকে সড়ে দাঁড়াচ্ছে। আকালি দলের সাংসদ হরসিমরত সিং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় লোকদলের নেতা জয়ন্ত চৌধুরী খোলাখুলি কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে এনডিএ-র থেকে দূরত্ব বাড়িয়েছেন। অবস্থা সঙ্গীণ বুঝে কেন্দ্রী সরকারের কৃষি ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রীরা কৃষকনেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক ডেকেছেন। তিন কৃষি আইন প্রণয়নের সময় কৃষকদের সঙ্গে কথা না বলার ত্রুটি মন্ত্রীরা কবুল করেছেন এবং আইনের বহু দিক সংশোধন করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কৃষক নেতারা তিন কৃষি আইন সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে দাবিতেই অবিচল থাকেন। প্রথমে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান তারপর আলোচনায় মিষ্টি কথা। সরকারের সব অস্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর (মোদির পরামর্শে) সুপ্রিম কোর্টকে আসরে নামতে হয়। সর্বোচ্চ আদালত কিছুদিনের জন্য কৃষি আইন প্রয়োগে স্থগিতাদেশ ও  সরকার এবং কৃষকদের মধ্যে আলোচনার জন্য চার সদস্যের এক কমিটি গঠন করে। গণআন্দোলনের চাপে সুপ্রিম কোর্টের নিজের থেকেই এভাবে রেফারির ভূমিকায় মাঠে নামা – আগে কখনো দেখা যায়নি। এসব কমিটি গঠনের প্রস্তাবে কৃষক নেতারা পত্রপাঠ; ‘না’ করে দিয়েছেন। এমনকি কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ (যথা ভূপিন্দর সিং মান কমিটিতে থাকতে নারাজ হলে সরকারের ‘সুপ্রিম কোর্ট চালাকিও” ভেস্তে যায়। কৃষক আন্দোলন নৈতিক শক্তিতে আরও বলীয়ান হতেই, কৃষক সংগঠনগুলির সংযুক্ত মোর্চা (এআইকেএসসিসি) ২৬ জানুয়ারী ঐতিহাসিক ট্রাক্টর প্যারেডের অভিনব ও প্রাণবন্ত কর্মসূচী ঘোষণা করে। এর কদিন আগেই (১৮ জানুয়ারী) এআইকেএসসিসি মহিলা কিসাণ দিবস পালন করে – যদিও শুরুর দিন থেকেই কৃষক ও খেতমজুর মহিলারা আন্দোলনে সামিল থেকে দেখিয়ে দেন – এ লড়াই কিষাণ-কিষাণীদের সম্মিলিত লড়াই। ১৮ জানুয়ারী কৃষক মহিলারা আইএমএফ ও ডব্লিউটিওর কুশপুতুল জ্বালান – কেননা এই দুই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মোদি সরকারের তিন কৃষি আইনের হয়ে ব্যাট ধরেছিল। বিদেশী প্রতিষ্ঠান মোদির হয়ে দেশের ব্যাপারে নাক গলাবে অথচ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানালে তাঁকে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হবে – এই দ্বিচারিতার পরতিবাদ জানান যশবীর কাউর নাট। এই কৃষকনেত্রী টিকরি বর্ডারে দিনের পর দিন অবস্থান করছেন এবং গণআন্দোলনের পত্রিকা ‘ট্রলি টাইমসে’ প্রতিদিন কৃষক সংগ্রামের খবর ছেপেছেন।

peasant movement on the Delhi border

 

২৬ জানুয়ারী ঐতিহাসিক ট্রাক্টর প্যারেডে হাজার হাজার কৃষক সুশৃংখলভাবে দিল্লী নগরীকে যখন উত্তাল করে তুলছেন তখন লালকেল্লায় এক বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে (যেখানে কিছু মানুষ শিখ ধর্মের প্রতীক ‘নিশান সাহিব’ উড়িয়েছিলেন। অতিরঞ্জিত করে কৃষক আন্দোলন ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদতপুষ্ট’ বলে গোদি মিডিয়া ব্যাপক প্রচার চালায়। আর রাষ্ট্রের মদতে উন্মত্ত কিছু হাঙ্গামাকারী টিকরি, সিঙ্ঘু ও গাজিপুর বর্ডারে কৃষকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।বহু কৃষকনেতার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। কৃষকদের ছাউনিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সন্ত্রাসের পরিবেশে অবস্থান শিবিরগুলি থেকে বেশ কিছু কৃষক ঘরে ফিরে যান। আন্দোলনে যখন ভাঁটা পড়ে যাওয়ার উপক্রম তখনই উৎসাহী দিল্লী পুলিশ ও উত্তরপ্রদেশ সরকার গাজিপুর বর্ডারে কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতকে গ্রেপ্তারের জন্য এগিয়ে আসে। টিকায়েত বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করা হলে আমি প্রাণ বিসর্জন দেব।’ তাঁর অশ্রুসজল বক্তব্য সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ, বিশেষকরে মুজফপরনগর জেলায় এক গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়। জাঠ সম্প্রদায়ের হাজার হাজার কৃষক বিভিন্ন উপায়ে রাত্রিবেলায়ই গাজিপুর বর্ডারের উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁরা বলেন, ‘বিজেপিকে ভোট দিয়ে কী ভুলটাই না করেছিলাম! যে বিজেপি কৃষক আন্দোলনকে খতম করতে চায় সেই বিজেপিকে একঘরে করে দিতে হবে।‘ সাত বছর আগে মুজফফরনগরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে জাঠ সম্প্রদায়কে প্ররোচিত করা হয়েছিল। এবার কৃষক সংগ্রামের অভিঘাতে আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ফিরে এসেছে মিরাট-মুজফফরনগরের মাটিতে। একের পর এক মহাপঞ্চায়েত থেকে ধ্বনি উঠছে, ‘বিজেপি হটাও, কৃষি বাঁচাও।‘ নতুন করে প্রাণস্পন্দনে কৃষক ছাউনিগুলি জেগে উঠতেই শ্রমিক, ছাত্র-যুব,এমনকি ক্রীড়া জগতের মানুষেরাও প্রত্যক্ষ্যভাবে এসে দাঁড়িয়েছেন কৃষকদের পাশে। দিল্লীর উপকণ্ঠে কুন্ডলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে বকেয়া মজুরির দাবিতে লড়ছিলেন যে শ্রমিকরা তাঁরা এসে কৃষকদের ছাউনিগুলিতে ময়লা সাফাই-এর কাজে হাত লাগান। এদেরই একজন, ২৩ বছরের শ্রমিক তরুণী নদীপ কাউর ছাউনিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা নিয়েছেন। আর তার এই বিশিষ্ট ভূমিকার ‘পুরস্কার’ হিসেবে মোদি সরকারের পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আবার দেশজোড়া প্রতিবাদের মুখে তাকে মুক্তিও দিতে হয়েছে। হরিয়ানার কুস্তিগিররা এবং তাঁদের প্রশিক্ষকেরাও কৃষক ছাউনিগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও জল সরবরাহ ব্যবস্থা ফেরানোর কাজে বড় ভূমিকা নিয়েছেন। এভাবেই বিজেপি ও সঙ্ঘপরিবার সমাজের সর্বস্তর থেকে আজ নিন্দার মুখোমুখী। তারা বলেছিল, আন্দোলন কেবল পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় সীমাবদ্ধ। কিন্তু রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ — সর্বত্রই কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে বিশাল বিশাল ধর্না কর্মসূচী সংগঠিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক আদিবাসী কৃষক মহিলার কথা সবিশেষ স্মরণীয়। তিনি সীতাবাই রামদাস তাদভি(৫৬), মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। গত ২৫ বছর ধরে গণআন্দোলনের তিনি এক অগ্রণী সৈনিক। গত ২২ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে চালিত প্রতিবাদ মিছিলে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি হেঁটেছেন। ২৬ ডিসেম্বর দিল্লীর ট্রাক্টর প্যারেডে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে ঠান্ডায় ও ক্লান্তিতে তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। জীবন দিয়েই তিনি বোধহয় জানান দিলেন সারা দেশই আজ তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার চায়।

৮ মার্চ দিল্লী সীমান্তে চলা কৃষক আন্দোলনের ১০০ দিন পূর্ণ হল। সেদিন আন্তর্জাতিক নারী দিবসে গাজিপুর-সিঙ্ঘু-টিকরি — সর্বত্রই কৃষক পরিবারের ছাত্রী, তরুণী ও নানা বয়সের মহিলারা দৃপ্তকণ্ঠে নারী মুক্তির সাথে সাথে কৃষিতে কোম্পানিরাজ কায়েমের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তুলেছেন। সন্ত্রস্ত মোদি সরকার বলছে, তারা অনির্দিষ্টকাল কৃষি আইনগুলি স্থগিত রাখতে চায়। তারা নাকি আইনগুলি সংশোধন করতেও রাজি। পাশাপাশি মোদি সরকারের কোনো কোনো প্রভাবশালী মন্ত্রী (যেমন নীতিন গদকরি) বলছেন, ”মূল সমস্যা হল ভারতে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন ও বাজার দরের চেয়ে বেশি এমএসপি।“ তাঁরা নিদান দিচ্ছেন, খাদ্যশস্য উৎপাদন কমিয়ে জৈব ইন্ধন (বায়ো ফুয়েল) উৎপাদনে জোর বাড়ানো। কিন্তু কৃষকরা এ সমস্ত সুপারিশ নাকচ করেছেন এবং তিন কৃষি আইনের নিঃশর্ত প্রত্যাহার দাবি করেছেন। তাঁরা আগামী ২ অক্টোবর (গান্ধী জয়ন্তী) পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন – সরকারের কাছে এটাই তাঁদের চরম সময়সীমা। এই কঠিন দৈর্য্য পরীক্ষায় কৃষকরা নিশ্চিতভাবেই জয়ী হবেন। একথা সত্যি, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ। এই ‘সংখ্যার জোরে’ পরাক্রান্ত বিজেপি ও সঙ্ঘপরিবার ফ্যাসিবাদ কায়েমের জন্য সব বাধা চূর্ণ করতে চায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দুর্বল অস্তিত্ব ফ্যাসিবাদকে আরও উৎসাহ জোগায়। কিন্তু এমতো দৃশ্যপটে যে সুবিপুল কৃষক ঐক্য গড়ে উঠছে— তা বয়ে আনছে গণতান্ত্রিকতার এক বেনজির দৃষ্টান্ত। বিচিত্র মত ও ধারার অগণিত কৃষক সংগঠন, একের সাথে অন্যের দুস্তর মতপার্থক্য — অথচ তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সকলেই সঙ্ঘবদ্ধ। বৈচিত্রের মধ্যকার এই ঐক্য চেতনাই ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করার শ্রেষ্ঠতম হাতিয়ার। সুতরাং দেশের অন্নদাতা কৃষকরা জয়ের পাথেয় নিজেরাই সংগ্রহ করছেন, আলোকিত হচ্ছি আমরা সকলেই।

- মুকুল কুমার  

rape CaseChief Justice's opinion on rape

সম্প্রতি দু’টি মামলার শুনানি গ্রহণ কালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবডে ধর্ষণ সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন যা যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করে, সমালোচনা, বিক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম দেয়। একটি খোলা চিঠিতে ৫,২০০-র বেশি স্বাক্ষরকারী, যাদের মধ্যে নারী আন্দোলনের অনেক কর্মী-বিশিষ্ট নাগরিক-লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী রয়েছেন, বোবডের মন্তব্যের সমালোচনা করে অবিলম্বে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে তাঁর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। ভারতের বার কাউন্সিল আবার বৃন্দার চিঠিকে অনভিপ্রেত এবং অসৎ উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে বলে বিবৃতি জারি করে এবং বৃন্দা কারাটও আবার বার কাউন্সিলের বিবৃতির পাল্টা জবাব দেন। প্রথমে ধর্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য দুটি বিচার করা যাক।

এক তরুণী মহারাষ্ট্র বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার এক ইঞ্জিনিয়ার, রোহিত সুভাষ চহ্বানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন — তিনি যখন নাবালিকা ছিলেন ঐ ব্যক্তি তাঁকে বারবার ধর্ষণ করে। তাঁর নির্দিষ্ট অভিযোগ – হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করা হয়, মুখ খুললে চোখে অ্যাসিড ঢালা, পুড়িয়ে মারা, বাবা-ভাইকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। মেয়েটি আত্মহত্যা করতে গেলে তার মা ধর্ষণের কথা জানতে পারেন। এরপর অভিযুক্তর মা ধর্ষিতার মা-বাবাকে প্রস্তাব দেয় – মেয়েটি পূর্ণ বয়স্কা হলে, অর্থাৎ ১৮ বছর বয়স হলে অভিযুক্ত তাকে বিয়ে করবে। কিন্তু অভিযুক্ত সেই প্রতিশ্রুতি না রেখে অন্য আর একটি মেয়েকে বিয়ে করে। অভিযুক্ত দায়রা আদালতে আবেদন জানান, তিনি সরকারি কর্মী, ফলে পকসো আইনে তাঁকে গ্ৰেপ্তার করা হলে তিনি চাকরি খোয়াবেন, তাই তাঁকে গ্ৰেপ্তারি থেকে রেহাই দেওয়া হোক। দায়রা আদালত তাঁর আর্জি মঞ্জুর করলেও বম্বে হাইকোর্ট দায়রা আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘জঘন্য’ বলে অভিহিত করে গ্ৰেপ্তারি থেকে অব্যাহতি দিতে অস্বীকার করে এবং বম্বে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানালে মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। শুনানি চলাকালে প্রধান বিচারপতি অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসা করেন – “আপনি কি ওঁকে বিয়ে করবেন?” তিনি আরো বলেন – “আপনি ওঁকে বিয়ে করতে রাজি হলে আমরা সাহায্য করতে পারি। তা না হলে আপনাকে চাকরি খুইয়ে জেলে যেতে হবে।” অভিযুক্ত ইতিমধ্যেই বিবাহিত, আর তাই প্রধান বিচারপতির প্রস্তাবে সায় দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বোবডে অবশ্য গ্ৰেপ্তারি থেকে তাঁকে চার সপ্তাহের জন্য রেহাই দেন। এর আগে আমরা অন্য বিচারপতিদের কাছ থেকে ধর্ষিতাকে বিয়ে করার প্রস্তাব ধর্ষককে দিতে শুনেছি। ২০২০ সালের জুন মাসে অপরাধী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটা এক ধর্ষক কেরল হাইকোর্ট আবেদন জানায় – তাকে জামিন দেওয়া হোক যাতে সে ধর্ষিতাকে বিয়ে করতে পারে! ঐ একই মাসে উড়িষ্যা হাইকোর্ট ধর্ষিতাকে বিয়ে করার জন্য এক ধর্ষককে জামিন দেয়। এবার নারীর পক্ষে চরম অপমানজনক, অমর্যাদাকর প্রস্তাব এল বিচারবিভাগের একেবারে সর্বোচ্চ স্তর থেকে। (ধর্ষকের প্রতি প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব বলে এখানে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে নেওয়া। যে বার কাউন্সিল প্রধান বিচারপতির সমর্থনে অত্যন্ত তৎপরতা দেখিয়েছে তারাও কিন্তু বলেনি যে, প্রধান বিচারপতি এই ধরনের প্রস্তাব ধর্ষককে দেননি। প্রধান বিচারপতি এখন যদিও বলছেন যে, তাঁর কথা ভুলভাবে বিবৃত হয়েছ। ধর্ষককে তিনি শুধু জিজ্ঞাসা করেছিলেন – “তুমি কি বিয়ে করতে যাচ্ছ?”)

অন্য একটি মামলায় এক অভিযোগকারিণী জানান – তিনি ও বিনয় প্রতাপ সিংহ নামে জনৈক ব্যক্তি মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে স্বামী-স্ত্রীর মতো বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু ঐ ব্যক্তি তাঁর ওপর চরম যৌন অত্যাচার চালাতে থাকে, যৌনসঙ্গমের সময় হিংস্র আচরণ করে। যৌন অত্যাচার এমন পর্যায় পৌঁছয় যে, যৌনাঙ্গে ক্ষত নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এলাহাবাদ হাইকোর্টের কাছে আবেদনে সুবিধা না হলে অভিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ঐ মামলায় বোবডে মন্তব্য করেন – “একজন পুরুষ ও এক মহিলা যখন স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করছেন তখন পুরুষটি যতই হিংস্র আচরণ করুন না কেন, তাই বলে কি তাঁর সঙ্গে মহিলার শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণ বলা যাবে?” তিনি গ্ৰেপ্তারি থেকে অভিযুক্তকে আট সপ্তাহের রেহাই দেন। দম্পত্য জীবনে ধর্ষণ গ্ৰাহ্য হওয়ার মতো কোনো আইন ভারতে না থাকলেও প্রধান বিচারপতির মন্তব্য অসংবেদনশীল এবং অভিযোগকারিণীর যন্ত্রণা ও মর্মপীড়ার প্রতি মমত্বহীন বলে প্রতিভাত হয়েছে।

বার কাউন্সিল তাদের ৪ মার্চের বিবৃতিতে এই যুক্তির অবতারণা করে যে, শুনানি চলাকালে বিচারপতিদের মন্তব্য রায়ের অংশ নয়, ফলে সেগুলির আইনি গ্ৰাহ্যতা নেই, আর তাই সেগুলির সমালোচনা এবং সামাজিক মাধ্যমে সেই সমালোচনার প্রচার আদালত অবমাননারই শামিল। বার কাউন্সিলের বিবৃতিতে বৃন্দা কারাতের বিরুদ্ধে ‘অনুচিত রাজনৈতিক সুবিধা’ আদায়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। বার কাউন্সিলের সমালোচনাকে খণ্ডন করে বৃন্দা কারাত বলেছেন, “মন্তব্যগুলোর আইনি গ্রাহ্যতা না থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলো অবশ্যই সামাজিক দিক থেকে পশ্চাদপদ দৃষ্টিভঙ্গিগুলোতে বৈধতা প্রদান করে”। ভারতের মতো পিতৃতন্ত্রের আধিপত্য সমন্বিত সমাজে এই মন্তব্যের যথার্ততাকে অস্বীকার করা যাবেনা। ধর্ষকের প্রতি ধর্ষিতাকে বিয়ের প্রস্তাবকে ধিক্কার জানিয়ে প্রতিবাদীদের খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ঐ মন্তব্য “ধর্ষকের কাছে এই বার্তাই দেবে যে, বিবাহ হল ধর্ষণের একটা লাইসেন্স; এবং ঐ লাইসেন্স পেয়ে ধর্ষক পরবর্তী সময়ে তার দুষ্কর্মের ওপর থেকে অপরাধের কলঙ্ক চিহ্ন মুছে ফেলতে এবং অপরাধকে বৈধ করে তুলতে পারবে”। আর দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে যৌন হিংসার ক্ষেত্রে বোবডের মন্তব্যকে খণ্ডন করে তাঁদের পর্যবেক্ষণে প্রতিফলিত হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা ভারতীয় নারীর নির্মম ও অবদমিত বাস্তবতা : “এই মন্তব্য শুধু স্বামীর চালানো যে কোনো ধরনের যৌন, দৈহিক এবং মানসিক হিংসাকে বৈধ করে তোলে না, তা ভারতীয় নারীরা বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে কোনো আইনি অবলম্বন ছাড়াই যুগ-যুগ ধরে যে নির্যাতন সহ্য করে আসছে তাকেও স্বাভাবিক করে তোলে”।

নারীকে, তার শরীরকে পুরুষের সম্পদ রূপে গণ্য করার পশ্চাদমুখী চিন্তাধারা ভারতীয় সমাজে প্রবল ভাবেই বিদ্যমান। এই ধ্যানধারণার বশবর্তী হয়েই পুরুষ নারীকে গৃহকোণে আটকে রাখতে, তার আত্মঘোষণাকে নিয়ন্ত্রিত করতে এবং এমনকি তার ওপর বলপ্রয়োগ করতেও উদ্যত হয়। এই ধরনের আচরণ যে মনুবাদ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করে তা এক অবিসংবাদী বাস্তব। মনুবাদের প্রতি তাদের আনুগত্য বিজেপি গোপন করে না। কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর নারীর ওপর পুরুষের প্রভুত্বকামিতার প্রবণতা তীব্রতর হয়েছে। বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যে লাভ জিহাদ আইনের প্রবর্তন নারীর স্বাধীনতায়, জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার তার অধিকারে আরো বিপর্যয় ঘটিয়েছে। প্রধান বিচারপতির কণ্ঠে ভারতীয় সমাজে ব্যাপ্ত পুরুষতন্ত্রের প্রাবল্যেরই প্রতিধ্বনি। নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে মধ্যস্থাকারীর ভূমিকার চেয়ে পুরুষের সাপেক্ষে নারীর সমানাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভূমিকাই প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে প্রত্যাশিত। নিজেদের অধিকার আদায়ে, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে এতদিন লড়াই চালিয়ে নারীরা যেটুকু অগ্ৰগতি অর্জন করেছেন, প্রধান বিচারপতির মন্তব্যে ঘড়ির সেই কাঁটাকে বিপরীতমুখী করার আভাস। সংঘ পরিবারের যাবতীয় প্রয়াস সত্ত্বেও তা কখনই সফল হতে পারবে না, নারীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়াটা তার অনিবার্য নিয়তি হয়ে রয়েছে।

No NRC Citizen YatraNo NRC Campaign From Nadia

নতুন ভারতের সরকার যখন নাগরিকদের জীবিকা, গণতান্ত্রিক অধিকার এমনকি মতপ্রকাশের অধিকার ও কেড়ে নেওয়ার পর ভারতীয় পরিচয়টুকু পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়, তখন আমরা ভারতীয় নাগরিক এই পরিচয়টুকু রক্ষা করতে, নাগরিকত্ব সুরক্ষা যাত্রা করতে হচ্ছে আজকের ভারতে।

২৬ ফেব্রুয়ারী নদীয়া জেলার সীমান্তঘেঁষা বেতাই থেকে শুরু হয়ে ছিল এই যাত্রা।

নাগরিকপঞ্জি-বিরোধী যুক্তমঞ্চের উদ্যোগে ২৬ ফেব্রুয়ারী নদীয়া জেলার গ্রাম বেতাই, তেহট্ট, কৃষ্ণনগর, বাদকুল্লা, রানাঘাট, কুপার্স ক্যাম্প, ধানতলা, পানিখালি, ট্যাংরাখাল, ভায়না, বগুলা, দত্তফুলিয়া হয়ে এই যাত্রা উত্তর ২৪ পরগনায় ঢোকে ১ মার্চ। সিন্দ্রানি, হেলেঞ্চা, বনগাঁ, গাইঘাটা, মছলন্দপুর, বাদুরিয়া হয়ে বারাসাতে পৌঁছয় ৩ মার্চ। পরের দিন বাদুতে প্রচার চালিয়ে বিকেলে হাতিয়ারা, সন্ধ্যেবেলা যাত্রাগাছির মৃধা মার্কেটে সভা করা হয়। প্রতিদিন সকালে ২টি বা ৩টি পথসভা আর সন্ধ্যে বেলা ২টি জনসভা ছিল যাত্রার প্রচারের অংশে ছাড়া অসংখ্য লিফলেট বিলি করা হয় পুরো যাত্রা পথে।

যাত্রাপথের একটা বিরাট অঞ্চলের সাংসদ নিজেকে ভারতীয় নাগরিক না বলতে পারেন ও তার নির্বাচকমন্ডলী বা ভোটারদের বিশেষত মতুয়ারা ভারতীয় নাগরিক নয় একথা প্রচার করতে পারেন। এই অদ্ভুত প্রচারের বিরুদ্ধে নাগরিকদের সচেতন করাই ছিল যাত্রার মূল উদ্দেশ্য।

এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের বার্তা, বিশেষত তাদেরকে দিয়ে ৪৮ সালের পরে বাংলাদেশ থেকে আসার লিখিত স্বীকৃতি আদায় করাই যে এই মিথ্যা প্রচারের উদ্দেশ্য তা মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়। বিজেপির বিষাক্ত প্রচারে এই অঞ্চলের বহু মানুষ প্রভাবিত থাকলেও এবং নাগরিক পরিচয় পত্রের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ থাকলেও আমাদের প্রচার বিরাটভাবে তাদের সমর্থন লাভ করে।

এনআরসি বিরোধী প্রচার স্বাভাবিকভাবেই বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে আগামী নির্বচনে পরাস্ত করার আহ্বানে পরিণত হয়। যাত্রা শেষে যাত্রার অন্যতম আহবায়ক প্রসেনজিৎ বোস স্পষ্ট করে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানান।

বাংলার গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের প্রচার আগামীদিনে বহু মানুষকে বিজেপির মিথ্যা প্রচারকে মোকাবিলা করে বিজেপি বিরোধিতায় সংগঠিত করতে পারবে এই বিশ্বাস যাত্রা থেকে অর্জন করেছি।

প্রতিবেদক : তমাল চক্রবর্তী  

South 24 Pgs AIARLA ProgrammeSouth 24 Parganas

আয়ারলা, ঋণমুক্তি কমিটির উদ্দোগে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচীর অংশ হিসাবে গত ৩ মার্চ দক্ষিণ ২৪ পরগনার কালীপুর, বজবজে অবস্থান কর্মসূচী পালিত হয়। সভা পরিচালনা করেন আয়ারলা’র জেলানেত্রী দেবযানি গোস্বামী। বক্তব্য রাখেন কৃষক মহাসভার জেলানেতা দিলীপ পাল ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার। সভায় উপস্থিত ছিলেন ঋণমুক্তি কমিটির রাজ্যনেত্রী কাজল দত্ত।

Citizen Convention against Fascism

শনিবার ৬ মার্চ বারাসাত শহরের সুভাষ ইন্সটিটিউট হলে অনুষ্ঠিত হল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নাগরিক সভা। বারাসাত শহরে এআইপিএফ, আইসা, নো এনআরসি এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের সম্মিলিত প্রয়াশে গড়ে উঠেছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামী মঞ্চ (বৃহত্তর বারাসাত)। মঞ্চের পক্ষ থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রচার কাজের সুচনা হিসাবে কনভেনশন আহবান  করা হয়েছিল। ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বাংলা মঞ্চের’ পক্ষ থেকে চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়, প্রতিরোধের সিনেমা নির্মাতা এবং নো ভোট টু বিজেপি আন্দোলনের সংগঠক কস্তুরি বসু, মানবাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব মুখ সুজাত ভদ্র এবং বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী কনিষ্ক চৌধুরী কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন। মঞ্চের প্রতিভু বক্তারা পশ্চিমবংগের নির্বাচনে যাতে ফ্যাসিস্ট বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে না পারে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে নো ভোট টু বিজেপি শ্লোগানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। কনিষ্ক চৌধুরী  ফ্যাসিবাদের মনস্তাত্ত্বিক দিক এবং পিতৃস্বত্তার আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করেন। ছাত্র সংগঠন আইসার পক্ষে অন্নেষা রায় ফ্যাসিস্ট  বিজেপি সরকারের নয়া শিক্ষানীতি ২০২০ বিভিন্ন দিকের উল্লেখ করেন। মনোজ্ঞ এই আলোচনা সভার অংশ হিসাবে এক ঘন্টার একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব রাখা হয়েছিল। সেখানে বক্তারা সভায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সভা পরিচালনার জন্য মনিরুল হক, সুজিত ঘোষ এবং রৌনক মল্লিককে নিয়ে সভাপতি মন্ডলী গঠন করা হয়। সঞ্চালনা করেন নীলকণ্ঠ আচার্য। কনভেশনের আগের দুদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ‘বিজেপিকে একটি ও ভোট  নয়’ আহবান সম্বলিত পোস্টার লাগানো হয়। আগামী সপ্তাহের শুরু থেকেই পথ সভা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

adani's godown in HariyanaThe facts are old

সিএজি বা ক্যাগ-এর নাম আপনাদের অনেকেরই জানা। কম্পট্রোলার অ্যাণ্ড অডিটর জেনেরাল অব ইণ্ডিয়া। এটি একটি সংবিধানিক সংস্থা। অর্থাৎ আমাদের দেশের সংবিধানের একটি ধারার মাধ্যমে এই সংস্থা স্থাপিত। সরকারের খরচখরচার হিসাব-নিকাশ যাচাই বা অডিট করা হলো এর কাজ। টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি ফাঁস করার পেছনে এই সংস্থার প্রধান ভূমিকা ছিল। ২০১৮ সালের কথা। ক্যাগ এফসিআই (ফুড কর্পোরেশন অব ইণ্ডিয়া)-কে জানায় যে এফসিআই-র ঢিলেমির জন্যে সরকারের সাড়ে ছয় কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। কিভাবে? এফসিআই খাদ্যশস্য সঞ্চয়নের জন্যে অনেক সময় বেসরকারী গুদাম ভাড়া নেয়। সেবছর হরিয়ানার কৈথাল শহরে স্থিত আদানি গোষ্ঠীর একটি গুদাম তারা ভাড়া নেয় যদিও সেই গুদাম তারা ব্যবহারই করেনি। লাগাতার চার বছর ধরে এফসিআই এই গুদামগুলো ব্যবহার না করেই ভাড়া গুনেছে। এফসিআই উপভোক্তা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংস্থা। ওই মন্ত্রক চিঠি লিখে ক্যাগকে হুকুম দিয়েছে যে ক্যাগের রিপোর্ট থেকে যেন এই কারচুপির তথ্য সরিয়ে দেওয়া হয়।

Little Magazine in Faver of Pesent MovementLittle Magazine Fair

৪ থেকে ৬ মার্চ তিন দিনব্যাপী কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সারা বাংলা লিটল ম্যাগাজিন মেলা। লিটল ম্যাগাজিন সমন্বয় মঞ্চের উদ্যোগে এ’বছর ছিল এই মেলার চতুর্দশ বার্ষিকী। এবারের মেলা ছিল চলমান কৃষক আন্দোলনের পক্ষে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার লক্ষ্যে এক অভিনব কর্মসূচী। একদিকে যেমন প্রচুর সংখ্যক লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও সংগঠকরা তাঁদের সম্ভার নিয়ে এই মেলায় বসেছিলেন, তেমনই অন্যদিকে শোনা গিয়েছে কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে এবং বিজেপি’র ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের সোচ্চার উচ্চারণ। এই মেলায় কবিতা আবৃত্তি, গান, নাটক নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন বনশ্রী চক্রবর্তী, বাবলি চক্রবর্তী, বাবুনি মজুমদার, অসীম গিরি নীতীশ রায়, সংহিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালন, সুতপা কর গোস্বামী, জনগণমন, নক্ষত্র সাহিত্য পত্রিকা, মিতালি, অমৃতা, ঋত্বিকা, দীপক এবং খইবুর ফকির প্রমুখ। নাটক নিয়ে এসেছিলেন জনগণমন, শ্যামবাজার নাট্যচর্চা কেন্দ্র, ব্যতিক্রম, দৃশ্যান্তর, বিদূষক, থ এবং পথসেনা। কৃষি আন্দোলনের সমর্থনে এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধতা করা বক্তব্য রাখেন কণিষ্ক চৌধুরী এবং অশোক মুখোপাধ্যায়। তিন দিনের এই মেলায় ভালোই লোক সমাগম হয়েছিল।

siliguri 31 No WardMemorandum

শিলিগুড়ি ৩১ নং ওয়ার্ডের পানীয় জল সরবারহকারী জলাধারটি গত নভেম্বর মাস থেকে ভাঙা অবস্থায় পরে থাকাতে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিত জল সরবারহ হচ্ছিল। বর্তমানে যা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শক্তিগড়, নৌকাঘাট, শীতলাপাড়া, প্রগতীপাড়া, নতুনপাড়ার মানুষেরা জলহীন অবস্থায়  দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুত এই অবস্থার সমাধান এবং যতদিন তা না হয়, ততদিন বিকল্প জলের ব্যবস্থার দাবিতে ঐ ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর দীপা বিশ্বাসকে স্মারকলিপি দেওয়া হয় সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের শক্তিগড় ব্রাঞ্চ কমিটির পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন  রেনু দাস, রজত বর্মণ, রুবী সেনগুপ্ত, ভাগ্য মন্ডল, মন্টু সাহা, মিলি ভট্টাচার্য, শাশ্বতী সেনগুপ্ত  প্রমুখ।

Comrade Arup Chatterjee

৪ মার্চ কালিঘাট চেতলা-ভবানীপুর আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে এয়াসবিহারি এলেকার সদানন্দ রোডে তপন থিয়েটার হলে কমরেড অরূপ চ্যাটার্জীর স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক বছর আগে এই দিনেই আকস্মিকভাবে প্রয়াত হন এলাকায় রূপা নামে জনপ্রিয় এই কমরেড। পার্টির বিভিন্ন কর্মী সমর্থক ছাড়াও অল ইণ্ডিয়া ডিফেন্স একাউন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন এই স্মরণসভায়। এছাড়া ছিলেন বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন, টালিনালা পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা কমিটি ও পরিবারের অনেক সদস্য। সভার সঞ্চালক চিন্ময় মুখার্জি কমরেড অরূপের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে সংক্ষেপে বলার পর এক মিনিট নীরবতা পালন হয়। বাসুদেব বোস স্মৃতিচারণে অরূপের সাথে প্রথম দেখা হওয়ার কথা, টালিনালা আন্দোলন ও অন্যান্য নাগরিক আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্বকারী ভূমিকার কথা বলেন। কমরেড রূপার সহকর্মী অল ইণ্ডিয়া ডিফেন্স একাউন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সেন্ট্রাল বডির অরূপ চক্রবর্তী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে রূপার উদ্যমি ভূমিকা, সর্বভারতীয় স্তরে সঙ্গঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দলমত নির্বিশেষে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার কথা স্মরণ করেন। সিপিআই(এম)-এর উপস্থিত বন্ধুরা বাম ঐক্য প্রশ্নে রূপার উদ্যোগ ও বর্তমান সঙ্কট মুহুর্তে রূপার অভাব অনুভূত হওয়ার কথা বলেন। সংযুক্তা চক্রবর্তী ও রাকা ভট্টাচার্যের গানের পরে এলাক্র বিশিষ্ট নাগরিক চন্দন পাল চৌধুরি রূপার অসংখ্য সামাজিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। অপর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মানস রায়চৌধুরি নাগরিক আন্দোলনে রূপার রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও আজকের দিনে রূপার মতো মানুষের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। এছাড়াও ক্লাবের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য আন্দোলন, রক্তদান শিবির, ফ্রি মেডিক্যাল সেন্টার, নাট্য উৎসব পরিচালনা প্রভৃতি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। স্মরণসভার শেষদিকে কমরেড পার্টির কলকাতা জেলা সম্পাদক অতনু চক্রবর্তী কমরেড রূপাকে একাধারে পার্টিনেতা যুবনেতা ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ফ্যাসিবাদী বিজেপি যখন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে তখন তার বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ খাড়া করাই হবে কমরেড রূপাকে সত্যিকার অর্থে স্মরণ করা। পরিশেষে গণকবিয়াল নীতীশ রায়ের স্মৃতিচারণার পরে তাঁর মর্মস্পর্শী লোকগীতি ও আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় কমরেড রূপার স্মরণসভা। সৌমেন, মহারাজ, ফাল্গুনি, রামু, কুট্টু সুপর্ণ, মনা সহ আরও অনেকে সভাটি সম্পন্ন করতে ভূমিকা রাখেন।

- মানস ভট্টাচার্য 

সমাপ্ত

খণ্ড-28
সংখ্যা-9