আজকের দেশব্রতী : অনলাইন সংখ্যা (৩০ জুলাই ২০২০)
issu

 

ddae

 

topgee

রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে এ রাজ্যের কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ। শুধু এ রাজ্যেই নয়, কেরল ও তেলেঙ্গানার বেশ কিছু জায়গায়ও গোষ্ঠী সংক্রমণের রিপোর্ট স্বীকার করেছে সংশ্লিষ্ঠ রাজ্যের প্রশাসন। প্রতিদিন দেশে, এ রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, আর পাল্লা দিয়ে উন্মোচিত হচ্ছে গণস্বাস্থ্য পরিকাঠামোর নিদারুণ দেউলিয়াপনা। অসহায় প্রশাসন লকডাউন ও আনলকের যুগপৎ কৌশল নিয়ে এই সঙ্কটকে মোকাবিলা করছে, আর পুরো বিষয়টাকে আইন শৃঙ্খলার আতস কাঁচে দেখতে গিয়ে পুলিশের উপর ন্যস্ত করছে প্রভূত ক্ষমতা। লাঠিধারী উর্দিবাহিনী সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে বিভিন্ন জায়গায় নামিয়ে আনছে দমন, মাত্রাছাড়া অত্যাচার। সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রীতিনীতিকে শিকেয় তুলে সামনে আনা হয়েছে ঔপনিবেশিক জমানার ‘মহামারী রোগ আইন ১৮৯৭’, ও ‘বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫’-এর এক বিচিত্র মিশেল, যার মাধ্যমে প্রশাসন নিজের হাতে কুক্ষিগত করছে অবাধ ক্ষমতা। অতিমারির অজুহাতে সংকুচিত করা হয়েছে গণপরিসর। যে কোন জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ-বিক্ষোভকে কড়া হাতে মোকাবিলা করা হচ্ছে। পশ্চিমবাংলাও সেই পথে হাঁটছে। মোদীর বেসরকারীকরণ ও জনবিরোধী শ্রমনীতি ও শিল্পনীতির বিরুদ্ধে বা কবি ভারভারা রাও সহ খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদী বিক্ষোভও মমতার প্রশাসন বরদাস্ত করছে না।

lat

 

এই আনলক পর্বে সবচেয়ে বিপন্নতার মুখে পড়েছে শ্রমজীবী তরুণ প্রজন্ম, যাদের নানা ঝুঁকি নিয়ে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দিতেই হচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মারাও যাচ্ছেন। আশা কর্মী, অ্যাম্বুলেন্স চালক, বেসরকারী সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মী, পৌরসভার আপৎকালীন বিভাগের কর্মী সহ গিগ বা অ্যাপস-নির্ভর কর্মীবাহিনী, যারা বর্তমানে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ, তাঁরা আজ রীতিমতো বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে। আর্থিক কর্মকান্ড শুরু করার সময়ে সরকার ও নিয়োগকর্তার তরফ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে প্রোটোকল অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, আজ তা রাতারাতি উধাও। এব্যাপারে রাজ্য সরকারের বিন্দুমাত্র নজরদারি, তদারকি নেই। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যার বড় একটা অংশই করোনার কো-মর্বিডিটির শিকার। ভারতে ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের সংখ্যা প্রায় ৩৯ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশ। এটা গোটা বিশ্বের নিরিখে সর্বাধিক। কিন্তু এই কর্মক্ষম বিশাল তরুণবাহিনী সুস্বাস্থ্যের অধিকারী নন। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে এঁদের মধ্যে অনেকেই ত্রিশের কোঠা পেরোতে না পেরোতেই অকাল বার্ধক্যের কবলে পড়ছেন, উচ্চ রক্তচাপ-ডায়াবেটিস-হার্টের নানা অসুখে ব্যতিব্যস্ত। বিদেশেও দেখা গেছে কোভিডের কারণে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় সেই দেশে বসবাসকারী দক্ষিণ এশিয়দের মৃত্যুহার প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। অথচ, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় তাঁদের গড় বয়স কম। কিন্তু রক্তে শর্করার পরিমাণ অত্যধিক। করোনার মতো অতিমারির ক্ষেত্রে এই অসুখগুলোর জন্য মৃত্যুহার অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে, বিশেষজ্ঞরা তা আগেই সতর্ক করেছেন। এখন, আমাদের দেশে মধ্যবয়সীদের অধিক মৃত্যুহার সেই আশঙ্কাকেই প্রমাণিত করলো। গোটা বিশ্বে অল্প বয়সিদের মানব সম্পদের মধ্যে (যাকে বলা হচ্ছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট) ভারত পয়লা নম্বরে থাকলেও বাস্তবে সেই মানব সম্পদই এক গভীর বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে।

 

sts

 

আইএলও তার নীতি ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে নিরাপদ ও রোগ-প্রতিরোধী কর্মক্ষেত্র, যেখানে কর্মীরা আশঙ্কামুক্ত হয়ে নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন। সর্বোপরি, সমস্ত পক্ষকে নিয়ে ঐকান্তিকভাবে পারস্পরিক আদানপ্রদান, মতবিনিময় করে সমস্যা নিরসনে যে পারস্পারিকতার কথা বলেছে, তা আমাদের রাজ্যে, গোটা দেশে নিদারুণভাবে উপেক্ষিত। গোটা সমাজকে সাথে নিয়ে এই যুদ্ধে না নামলে তা কখনোই জেতা যাবে না। আমাদের শাসকেরা কি আদৌ কখনও তা উপলব্ধি করবে!

rajrad

রাজস্থানে রাজ্য সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত রয়েছে। সরকার বর্তমান সংকটের মোকাবিলায় সক্ষম হয় কিনা তা জানার জন্য আমাদের রাজস্থান হাইকোর্টে এবং রাজ্য বিধানসভায় ঘটনাবলীর বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমান সংকট শেষ পর্যন্ত যে পরিণতিই পাক না কেন, একটা বিষয় কিন্তু আমাদের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগের সৃষ্টি করছে। নোভেল করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে রাজ্য এবং রাজ্যের জনগণকে রক্ষা করাটাই যখন সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়ার কথা ঠিক সেই সময়, মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলার সময়েই চলছে সরকার ফেলে দেওয়ার এই তৎপরতা। মধ্যপ্রদেশে সরকার পাল্টানোর উদ্যোগ যদি গোড়ার দিকে কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় ধাক্কা দিয়ে থাকে তবে রাজস্থানে সরকার ফেলে দেওয়ার খেলাটা চলছে অনেক বেশি সঙ্গীণ এক পরিস্থিতিতে যখন ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে এবং রাজস্থানও তীব্র সংক্রমণে পর্যুদস্ত হওয়া একটা রাজ্য হয়ে দেখা দিয়েছে।

এর আগে মধ্যপ্রদেশে যা ঘটেছে এবং এখন রাজস্থানে যা ঘটছে তা এক আশঙ্কাজনক প্রবণতারই অংশ যা মোদীর সময়ে এক স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার হয়ে উঠতে চাইছে। বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র একের পর এক বিরোধী-শাসিত রাজ্যে সরকার ফেলে দেওয়াটাকে তার অভ্যাসে পরিণত করেছে এবং এই খেলায় সে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে। এমন নিয়মিতভাবেই এটা করা হচ্ছে যার মধ্যে দিয়ে নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে এই বার্তা পৌঁছানো হচ্ছে যে, অ-বিজেপি অ-এনডিএ সরকার নির্বাচিত করা নিরর্থক। উত্তর-পূর্বের ছোট-ছোট রাজ্য এবং গোয়ায় এই কৌশল যাচাই করার পর বিজেপি বিহার, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশের মতো বড়-বড় রাজ্যে সরকার পাল্টে দেওয়া বা সেগুলিতে ক্ষমতা দখল করার খেলায় মেতে ওঠে। ঝাড়খণ্ডেও সরকার ফেলে দেওয়ার উদ্যোগ চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বিহারে বিজেপি ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতে জনগণের জোরালো বিজেপি-বিরোধী রায়কে হাতিয়ে নেয়, মধ্যপ্রদেশে তারা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে ফাঁদ পেতে ধরে, আর রাজস্থানে ওরা ভরসা করছে পূর্বতন উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রদেশ কংগ্ৰেস প্রধান শচীন পাইলটের ওপর।

বিজেপি ঘোড়া কেনাবেচাকে এতটাই স্বাভাবিক করে তুলেছে যে নির্বাচিত বিরোধী দলের সরকারের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই তার হানাদারি চালানো, ব্যাপক সংখ্যক বিধায়কের দলত্যাগ ঘটানো, রাশি-রাশি টাকায় বিরোধী দলের বিধায়কদের কিনে নেওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্নই উঠছে না। এগুলোকে সম্রাটের এমন গতানুগতিক অভিযান এবং বিজেপি সাম্রাজ্যের চলতে থাকা সম্প্রসারণ করে তোলা হচ্ছে যা দেখে আমাদের তাজ্জব বনে যেতে হবে। রাজস্থান নিয়ে গোটা চর্চাটার দিকে তাকানো যাক। এটাকে শচীন পাইলটের একটা ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ কিংবা নিজের বিধায়কদের ধরে রাখতে কংগ্ৰেসের ব্যর্থতা রূপে দেখা হচ্ছে, অথবা দেখা হচ্ছে এমনকি গান্ধি-নেহরু পরিবারের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর সম্ভাবনা আছে এমন অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের দল থেকে বহিষ্কারের কংগ্ৰেসের চাল হিসাবেও। দাবি করা অডিও টেপ ও বিধায়কদের স্বীকারোক্তি থেকে পাইলটের হয়ে আইনি লড়াই লড়ার জন্য বিজেপি ঘনিষ্ঠ প্রথম সারির আইনজীবীদের নামানো – এই সব কিছুই বিজেপির জড়িত থাকাকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান করছে। আর সরকার ফেলার পাইলটের প্রচেষ্টা সফল হলে যে বিকল্প সরকার হবে তা কার্যত বিজেপি সরকারই হবে, বিজেপি-নেতৃত্বাধীন না হলেও বিজেপি সমর্থিত সরকারই হবে। এসবের পরও অতীব গুরুতর জাতীয় সংকটের এইক্ষণে বিজেপির ক্ষমতা দখলের এই নোংরা খেলা নিয়ে আধিপত্যকারী মিডিয়ায় কোনো আলোচনাই দেখা যাচ্ছে না।

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের সাথে-সাথে ভারতীয় রাজনীতিতে বড় টাকার খেলা অভাবিতভাবে বিপুল মাত্রা অর্জন করে। মোদী সরকারের সঙ্গে বড় বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলোর সখ্যতার প্রকাশ্য প্রদর্শনীও আগেকার সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। এসবের পরও রাজনীতিতে বড় অর্থের জোগানকে পুরোপুরি ঝাপসা, পরিচয়হীন ও হিসাব দেখানোর দায়হীন করে তোলা হয়েছে। এমনকি ভারতের নির্বাচন কমিশনও ইলেক্টোরাল বণ্ডের তাৎপর্য এবং পরবর্তীতে ফিনান্স আইন, আয়কর আইন ও জনপ্রতিধিত্ব আইনে ঘটানো পরিবর্তন নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে। এই সমস্ত পরিবর্তনের ফলে এমনকি বিদেশী সূত্র থেকে পাওয়া অনুদানের উৎসকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে না, কেননা, এই বণ্ডগুলোর মধ্যে দিয়ে প্রাপ্ত অর্থের কথা রাজনৈতিক দলগুলোকে জানাতে হবে না। উল্লেখ্য যে, ইলেক্টোরাল বণ্ডের মধ্যে দিয়ে প্রদত্ত অর্থের ৯৫ শতাংশই বিজেপির পক্ষে জমা পড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর প্রকোপ দেখা দিতেই মোদী সরকার পিএম কেয়ারস তহবিল চালু করে এবং এই তহবিলকে সরকারী অডিট ও তার ব্যয়ের জবাবদিহির বাধ্যবাদকতার আওতার বাইরে রাখা হয়। কোভিড-১৯ ব্যাধির সুরাহার নামে সংগৃহীত অর্থ যদি বিধায়ক কেনা এবং রাজস্থান সরকারের পতন ঘটানোর লক্ষ্যে চালিত করা হয়েছে বলে প্রকাশ পায় তবে তাতে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।

অন্য যে প্রশ্নটা আলোচনার দাবি রাখে তা হল – কংগ্ৰেসের নেতা ও বিধায়কদের কাছে বিজেপিতে যোগদান এত সহজ ও স্বচ্ছন্দ হচ্ছে কিভাবে। মিডিয়াতে আলোচনাধারা যে বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে চলছে তা হল, কংগ্ৰেসের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের অপ্রতুলতা, গান্ধি-নেহরু পরিবারের বংশানুক্রমিক আধিপত্য অব্যাহত থাকা এবং ভালো কাজ দেখালেও তরুণ নেতাদের পুরস্কৃত না করা। আরএসএস-এর কঠোর ও ছায়াবৎ নিয়ন্ত্রণে বিজেপির চালিত হওয়া এবং মোদী-শাহ জুটির আধিপত্য ক্রমেই বেড়ে চলা ও বাকি নেতৃত্বের গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে ওই সব ব্যাপারে বিজেপি কখনই কংগ্ৰেসের চেয়ে উৎকৃষ্ট বিকল্প হয়ে দেখা দেয় না। তবুও বিজেপি বংশানুক্রমিক আধিপত্যের নামে এখনও কংগ্ৰেসকে প্রশ্নের মুখে ফেলে। কিন্তু তার নিজের কর্মীদের মধ্যে থেকে যে সমস্ত নেতাদের সে ক্রমান্বয়ে তুলে ধরছে কিংবা কংগ্ৰেস থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে তারা সবাই বংশানুক্রমিক আধিপত্যেরই ফসল। সঞ্জয় গান্ধির উত্তরাধিকারকে অঙ্গীভূত করে নিয়ে তারা গান্ধি-নেহরু পরিবারের একটা অংশকেও নিজেদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে। স্বঘোষিত “ভিন্ন ধরনের পার্টি” কংগ্ৰেস বা অন্যান্য বিরোধী দলের দলত্যাগীদের সাদর অভ্যর্থনার স্থল হয়ে উঠেছে। আমাদের এই কথাটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, প্রাধান্যকারী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে বিজেপির উত্থান ঘটায় এবং সংঘ-বিজেপির নিজস্ব ভাষ্যের হিন্দুত্ব বা হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদী জাতীয়তাবাদ ক্রমেই আরও দক্ষিণ মুখে মোড় নেওয়ায় ও তার “স্বাভাবিকীকরণ ঘটায়” কংগ্ৰেস এবং বিজেপির মধ্যে ঐতিহাসিক ভাবে যে রাজনৈতিক প্রাচীরের অস্তিত্ব ছিল তা একেবারে অপ্রয়োজনীয় না হলেও তাতে অনেক ফাটল ধরেছে এবং তা আর কাজে দিচ্ছে না।

রাজস্থান সংকটের পরিণতি যাই হোক না কেন, এর থেকে দুটো সিদ্ধান্ত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। দশম তপশিলের দলত্যাগ-বিরোধী আইন দলত্যাগ রোধে একেবারেই অক্ষম বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। বিধায়ক ও সাংসদরা যে নানান পথে দলত্যাগ-বিরোধী আইনের সংস্থানগুলোকে খেলো করে তুলছেন তা আমরা দেখেছি। এই আইন দলত্যাগকে মূলত দলীয় আনুগত্যের লঙ্ঘন বলেই দেখেছে। দলত্যাগকে প্রধানত নির্বাচকমণ্ডলীর সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধির চুক্তির লঙ্ঘন হিসাবেই দেখতে হবে। এই আইনে অতএব কেবলমাত্র সমস্ত দলত্যাগীর নির্বাচিত প্রতিনিধির পদ থেকে ইস্তফাদানের সংস্থানকে বাধ্যতামূলক করলেই হবে না, অন্ততপক্ষে ছ-বছরের জন্য জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো পদে অধিষ্ঠান অথবা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে তাদের অনুপযুক্ত করেও তুলতে হবে। অন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা মতাদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত। মূলত একদলীয় শাসনব্যবস্থায় পর্যবসিত হওয়ার হাত থেকে ভারতীয় গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে গেলে মতাদর্শগত-রাজনৈতিক সংগ্ৰামকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষিণমুখী প্রবণতা ও তার আধিপত্যের বিরুদ্ধে ফলপ্রসূ মতাদর্শগত প্রতিরোধ বামেদের শক্তিশালী পুনরুত্থানের মধ্যে দিয়েই আসতে পারে। ভারতীয় জনগণের বড় অংশের জীবন ও স্বাধীনতার ওপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলা আক্রমণ বামেদের পুনরুত্থানের নতুন সুনিশ্চিত সম্ভাবনার সৃষ্টি করছে যা গণতন্ত্রের কাছে সুরক্ষর এক অবলম্বন হয়ে উঠবে। বামেদের পরিস্থিতির যোগ্য হয়ে উঠতে হবে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়, ২১ জুলাই ২০২০) 

dedsree

চারু মজুমদারের ৪৮তম শহীদ দিবস। বলা বাহুল্য ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে এই দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কেবল ভারতেই নয়, এই উপমহাদেশে বৈপ্লবিক সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামের এক অমোঘ স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তিনি স্মরণীয়। সমগ্র পার্টিকে জনগণের সেবায় দায়বদ্ধ করে তুলতে, জনগণের স্বার্থের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার অঙ্গীকার নতুন করে স্মরণ ও ঘোষণা করার দিন হিসেবে কমরেড চারু মজুমদারের শহীদ দিবসকে উদযাপন করে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। ১৯৭৪ সালে পার্টি পুনর্গঠনের পর্বে এই দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল নতুন করে পার্টি-কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে।

এবছর অঙ্গীকার দিবসে কেন্দ্রীয় আহ্বানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে মহামারী পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত জনগণের পাশে সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়ানো এবং জনগণের বিভিন্ন স্তর থেকে লড়ায়ে এগিয়ে আসা মানুষের চারপাশে ব্যাপক সংহতি ও ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শাসকের ছক বাঞ্চাল করে দেওয়া। কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর থেকে শুরু করে সমস্ত রাজ্য, জেলা বা স্থানীয় পার্টি অফিস সহ বহু গ্রাম ও শহরে পার্টির সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন বয়স ও বিভিন্ন পেশা ও স্তরের মানুষ এই অঙ্গীকারে সামিল হন।

ddasar

৫ আগষ্ট ২০২০ সরোজ দত্ত’র ঊনপঞ্চাশতম শহীদ দিবস। ৫ আগষ্ট ২০২০ দিনটিতে, কাশ্মীরের গণতন্ত্র ও স্বাতন্ত্র‍্য কেড়ে নিয়ে কাশ্মীরকে বন্দী করে নয়া উপনিবেশ বানানোর কু’দিনের এক বছর পূর্ণ হবে। ঐদিনই রামের নামে ভারতের জনতাকে টুকরো টুকরো করার লক্ষ্যে গোটা দেশকে সাম্প্রদায়িক জিঘাংসার উল্লাস মঞ্চ বানাতে চলেছে ফ্যাসিস্ত বিজেপি। এই সময়ে, সরোজ দত্ত স্মরণে কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের বলা কয়েকটি কথা আমরা আরেকবার পড়ে নিতে পারি, “ইতিহাসে দেখা গেছে সরফরাজি চণ্ড ও ভণ্ডদের দাপটের সামনে অনেকেই ক্লীব, পঙ্গু ও অসাড় হয়ে পড়ে। মানুষ যত চুপ করে থাকে, যত অন্যায় মেনে নেয় তত বাড়তে থাকে রাক্ষসদের হম্বি-তম্বি ও রাক্ষসদের কর্তাভজা খোক্কসদের বিকট কোরাস। এই অসময়ে যারা নীলকমল লালকমল হতে চাইবে তাদের বিবেক সবল ও তরতাজা থাকা দরকার। কোনও কোনও মানুষের কথা ভাবলে কাজটা করে ফেলা অসম্ভব নয়। সেরকমই একজন মানুষ ছিলেন সরোজ দত্ত। নিজের প্রাণ দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন জুলিয়াস ফুচিক বা গ্যাব্রিয়েল পেরির পাশে।”

raddjol

২৬ জুলাই ২০২০ ছিল ধূর্জটি প্রসাদ বক্সীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। নকশালবাড়ি অভ্যুত্থানের দিনগুলি থেকে শুরু করে ধাক্কা-পরবর্তীতে পার্টির পুনর্গঠন ও বহুমুখী কার্যকলাপের বিকাশে তাঁর সৃজনশীল অনুশীলন তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে। আর, পার্টি ও তার সমস্ত গণসংগঠনগুলির কয়েক প্রজন্মের অসংখ্য কর্মীর মনের মানুষ হয়ে কতটা গভীরে নীরবে তিনি ব্যাপ্ত হয়ে ছিলেন তা তাঁর প্রয়াণের পরই আমরা উত্তরোত্তর উপলব্ধি করতে পেরেছি। এই দ্বিতীয় বার্ষিকিতে বাংলা, আসাম, ওড়িশা তো বটেই, উত্তর ও দক্ষিণ ভারত জুড়েও, বিভিন্ন স্তরে তাঁর স্মরণে কমরেডদের স্বতস্ফুর্ত কর্মসূচী সংগঠিত হয়েছে। সে সবের বিস্তারিত রিপোর্ট দেওয়ার বদলে, “কমরেড প্রণবদাকে স্মরণে রেখে” পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ছোট লেখাটি আমরা নীচে তুলে দিচ্ছি। - সম্পাদক মণ্ডলী

bed


pndএবারের ২৬ জুলাই কমরেড প্রণবদার (ধূর্জটি প্রসাদ বক্সী) দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। অক্লান্ত এই বিপ্লবীর নকশালবাড়ি আন্দোলন অনুপ্রাণিত যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে দুর্গাপুরের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রাবস্থা থেকেই। মারণব্যাধি ক্যান্সার দু-বছর আগে এই যাত্রার সমাপ্তি ঘটায়। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পাঞ্জাবের মানসায় আমাদের দশম পার্টি কংগ্ৰেস অনুষ্ঠিত হয়। নিজের সহজাত সাংগঠনিক বোধ ও প্রশিক্ষণের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে কমরেড প্রণবদাই হলেন পাঞ্জাবের বাইরের প্রথম কেন্দ্রীয় নেতা যিনি মানসার ক্যাম্পে গিয়ে সেখানে থেকে ওই বিশাল কর্মকাণ্ডের আয়োজনে পাঞ্জাবের কমরেডদের সাহায্যে হাত লাগিয়েছিলেন। তবে আমরা দেখেছিলাম তাঁর শরীরে অবসাদের চিহ্ন দেখা দিতে শুরু করেছে এবং ক্যান্সারের সঙ্গে অল্প কিছুদিন লড়াই করার পর তাঁর দীর্ঘ ও ক্লান্তিহীন যাত্রার অবশেষে সমাপ্তি ঘটে সে বছরের ২৬ জুলাই।

তিনি ছিলেন এক অসামান্য সংগঠক, বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া এবং নানান পৃষ্ঠভূমি থেকে আসা কমরেডদের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় তাঁর ছিল অনায়াস পারদর্শিতা। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনে আসাম উত্তাল হয়ে ওঠার পর্বে প্রণবদা কয়েক বছর আসামে ছিলেন, অসমিয়া ভাষায় সাবলীল দক্ষতা অর্জন করেন এবং কার্বি আংলং-এর পার্বত্য জেলা সহ আসামের বিভিন্ন অংশে পার্টির সম্প্রসারণে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। পরবর্তী বছরগুলোতে উড়িষ্যা এবং ঝাড়খণ্ডেও তাঁকে আমরা একই ধরনের ভূমিকা পালন করতে দেখি। পাঁচ দশক ব্যাপী কমিউনিস্ট জীবনে লেগেপড়ে থাকা এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল তাঁর দুটি বিশিষ্ট গুণ, আর এই পাঁচ দশকের মধ্যে, সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের দমনমূলক শাসনাধীন পশ্চিম বাংলার জেলেও তাঁকে কয়েক বছর কাটাতে হয়েছিল।

লেগেপড়ে থাকা এবং মানিয়ে নেওয়ার এই ক্ষমতা তিনি কিসের থেকে পেয়েছিলেন? কমরেড প্রণবদা এবং তাঁর প্রজন্মের অন্যান্যদের কাছে এগুলো ছিল আদর্শ কমিউনিস্ট গুণাবলী, যেগুলোকে তাঁরা একেবারে শুরুর দিকেই এম-এল আন্দোলনের বুনিয়াদি বৈশিষ্ট্য হিসাবে, নকশালবাড়ি ঐতিহ্যের কেন্দ্রীয় মূল্যবোধ রূপে গ্ৰহণ করেছিলেন, এবং বুনিয়াদি কমিউনিস্ট শিক্ষার অঙ্গ হিসাবে এই গুণাবলীগুলোকে নিয়েই বেড়ে উঠেছিলেন। বুদ্ধিজীবীসুলভ ঔদ্ধত্য এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী আচরণকে সম্পূর্ণরূপে ঝেড়ে ফেলা, জনগণের সঙ্গে একাত্ম হওয়া এবং দৃঢ়চিত্ত অধ্যবসায়ের অনুশীলনের মধ্যেই রয়েছে বিজয়ের চাবিকাঠি – এই নীতিমালাকে অঙ্গীভূত করেই তাঁরা বাঁচতে শিখেছিলেন।

দুর্গাপুর আরই কলেজের ছাত্র আন্দোলন এবং দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার শ্রমিক আন্দোলনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ পারস্পরিক প্রভাবই ছিল সেই মন্থন প্রক্রিয়া, যার মধ্যে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছাত্র এবং ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের থেকে অনেক কমিউনিস্ট বিপ্লবীরই জন্ম হয়। বৈশিষ্ট্যমূলক এই লেগেপড়ে থাকা ও শৃঙ্খলা, নির্ভীকতা ও উদ্যমকে সম্বল করেই তাঁরা ১৯৭০ দশকের গোড়ার দিকে বড় ধরনের ধাক্কার পর সিপিআই(এমএল) পার্টি ও আন্দোলনকে নতুন করে গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। এরসঙ্গে নিপীড়তদের অভ্যুত্থানের প্রাণপ্রাচুর্য ও ক্ষমতাকে যুক্ত করে ভোজপুর ও বিহার, যা ধাক্কা সামলিয়ে ভারতীয় সমাজের গভীরে শিকড় ছড়িয়ে দিতে সিপিআই(এমএল)-কে সাহায্য করে।

আসুন, প্রণবদার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে এই কমিউনিস্ট স্রষ্টা এবং সিপিআই(এমএল)-এর বিকাশে তাঁদের বিপুল অবদানকে আমরা কুর্ণিশ জানাই। দুর্গাপুরের ‘ইস্পাত গলানোর কারখানা’ থেকে উঠে আসা চার কমরেডের প্রতি আমি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করি – ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে দুজন, কমরেড বিনোদ মিশ্র ও প্রণবদা, এবং অগ্ৰণী শ্রমিকদের থেকে দুজন, কমরেড অনলদা (সুদর্শন বোস) ও শান্তনু বক্সি, যাঁরা আজ আর নেই। নির্দিষ্ট এই পৃষ্ঠভূমি থেকে উঠে আসা আরও অনেকেই আমাদের কাছেপিঠে থেকে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছেন, এবং তাঁদের নামের উল্লেখ না করেই তাঁদের আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।

- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য  

dderded

একটা মহকুমা (বনগাঁ) হাসপাতাল থেকে আরেকটা হাসপাতালে যাওয়া আর হল না! এ্যাম্বুলেন্স পেয়েও তাতে ওঠানো গেল না! এক বৃদ্ধ কাতরাচ্ছেন হাসপাতাল চত্বরে। তাঁর স্ত্রী কত কাতর আবেদন করলেন, একটু এগিয়ে এসে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতাল কর্মীরা কেউই এগিয়ে এলেন না। অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা স্বাস্থ্য বিধির কারণে সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারলেন না। বৃদ্ধের জীবনসঙ্গিনী চেষ্টা করলেন অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে। তীব্র শ্বাসকষ্টে জর্জরিত স্বামীকে এ্যাম্বুলেন্সে টেনে তুলতে। ড্রাইভারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গাড়ি স্টার্ট দিলেও রোগীকে গাড়িতে তুলতে হাত লাগাননি; তাঁর কথা হল তিনি তখন ব্যস্ত ছিলেন হাসপাতালের স্টাফ খুঁজতে। ততক্ষণে রোগী প্রাণাম্তকর অবস্থায় গাড়ির গা পর্যন্ত গিয়েও গাড়িতে উঠতে পারলেন না, গা এলিয়ে গেল, নিথর হয়ে গেল। গোটা দৃশ্যপট কী মারাত্মক মর্মান্তিক! রোগীকে বাঁচানোর প্রয়োজনে যে হাসপাতাল স্টাফদের পাওয়া যায়নি, তাদের অগত্যা আসতেই হয়েছে রোগীর প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার পর। শবদেহ যে সরাতেই হবে। তবু সবক্ষেত্রে তা নিয়ম মেনে হচ্ছে তাও নয়। করোনার চিকিৎসা থেকে শুরু করে মৃতদেহ সরানো, সৎকার – সবকিছুতেই স্বাস্থ্য প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকার গেরো ও গাফিলতি ক্ষমার অযোগ্য।

কলকাতার বেহালা এলাকায় বাড়িতে করোনায় মৃত এক ব্যক্তির দেহ বাড়িতেই রয়ে গেল পনেরো ঘন্টা! ওয়ার্ডের টিএমসি পৌর প্রতিনিধি মুহর্মুহু ফোন যাওয়া সত্বেও মৃত নাগরিকের বাড়িতে এলেন না, এলাকার বিধায়ক, যিনি রাজ্য মন্ত্রীসভায় ওজনে দুনম্বর, তিনিও যা আশ্বাস শুনিয়ে গেলেন তার ফল মিলতে সময় লেগে গেল পনেরো ঘন্টা। নাগরিক সমাজ এসব আর কত সহ্য করবে! দোষীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন হয়ত কিছু কিছু ঘটনায় তদন্তের কথা দিচ্ছে। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, তদন্ত ঠিকঠাক হবে কি? তার নাগরিক সাক্ষী-সাবুদ-নাগরিক তদারকি ব্যবস্থা স্বীকার করা হবে কি? যে হারে দোষ চিহ্নিত হচ্ছে সেভাবে বিচার করতে গেলে পরিচালন ব্যবস্থা উজার হয়ে যাবে, কার্যকরী ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার বিষয়টা বহুলাংশেই থেকে যাবে অকার্যকরী অবস্থায়।

এই অব্যবস্থার কঠিন বাস্তবতা স্বীকার করে, তার দ্রুত পরিবর্তনের জন্য রাজ্য সরকারকে যেমন প্রতিনিয়ত প্রশাসনিক পর্যালোচনা করে খোলনলচে পাল্টাতে হবে; তেমনি আরও বড় মাত্রায় পদক্ষেপ করবে না কেন? উদ্যোগ ও সক্রিয়তার সরকার বহির্ভূত উপাদানগুলোকে কেন সমাবেশিত করা হবে না? এই সমাজেই দু-চাকা চার-চাকা যান চালকদের অনেকে দিনরাত এক করে জীবনকে বাজি রেখে চালু করেছে ‘করোনা স্পেশ্যাল’। রয়েছে কত জনস্বাস্থ্য সংগঠন, ওয়েলফেয়ার সংগঠন, ব্লাডব্যাঙ্ক সংস্থা, রক্তদান শিবির করা ক্লাব সংগঠন। রয়েছে অফুরন্ত শক্তির যুবছাত্র সমাজ। এদের মধ্যে করোনা মোকাবিলার নানা কাজে দক্ষ-অদক্ষ, অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ ভাগ-যোগ করে, পিপিই পরিধানে পরিবৃত করে, সমস্ত স্বাস্থ্য বিধিতে মুড়ে, ঝুঁকি অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিমার আওতায় এনে সেবায় লাগানো যায়। উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান দেওয়া যায়, সমাবেশিত করার ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দম্ভ আর ঔদ্ধত্যের মিনার থেকে নেমে এসে, তথ্যের কারচুপি বা মিথ্যাচার থেকে সরে এসে, বিভ্রাট ও অচলাবস্থার শিকার হওয়া থেকে নাগরিক সমাজকে বাঁচাতে রাজ্য সরকারকে এখনই সরকার বহির্ভূত সমস্ত শক্তিকে কাজে লাগাতে ঝাঁপাতে হবে। নাহলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না, ইতিহাসও ক্ষমা করবে না।

mmrrerdeg

গত ২৬ জুলাই বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে এ্যাম্বুলেন্সের সামনে আমাদের এক সহনাগরিকের মৃত্যু জেলার সমস্ত মানুষকে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এই মৃত্যু সভ্যতার লজ্জা, অমানবিকতার চুড়ান্ত নিদর্শন। একটি মহকুমা হাসপাতালের রেফার করা রোগীকে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই ! এটা নিছক মৃত্যু নয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অপদার্থতার কারণে এটা হত্যা! একথা উল্লেখ করে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশানের জেলা সংগঠনের পক্ষ থেকে এক স্মারকলিপি পাঠানো হয়। ঐ স্মারকলিপিতে আরও হুঁশিয়ারী দেওয়া হয় যাতে জেলায় ও রাজ্যের আর কোথাও এই ধরনের অমানবিক আচরণের মুখোমুখি না হতে হয় কোনো‌ রোগীকে।

বনগাঁ মহকুমায় প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের বাস। ৪ মাস পার হয়ে গেল, অথচ এই অঞ্চলে কোভিড চিকিৎসার কোন ব্যবস্থাই গড়ে তোলা হলো না! প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, আর জনসাধারণ বিশেষ করে গ্রামীণ গরিব মানুষেরা অসহায় ভাবে আতঙ্কে দিন গুনছেন। স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়েছে, দ্রুত বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিট সহ ১০০ বেডের কোভিড হাসপাতাল, প্রতিটি পৌরসভা ও ব্লকে মৃদু সংক্রমিত করোনা রোগীদের জন্য ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসা পরিষেবা সহ সেফ হোম, গ্রামেগঞ্জে ভ্রাম্যমান গাড়িতে টেস্টের ব্যবস্থা, করোনা রোগী পরিবহনের জন্য দু’জন হেল্পার সহ এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থ এবং প্রতিটি ওয়ার্ড-গ্রামে হেল্প ডেস্ক চালু করতে হবে। জেলার সমস্ত মহকুমাতেই এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উপরোক্ত কাজগুলো এড়িয়ে গিয়ে পুলিশের-লাঠি-রক্তচক্ষু দেখিয়ে খাপছাড়া লকডাউন জনগনের উপর চাপিয়ে দিয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব নয় এটা আপনিও (সিএমওএইচ) বোঝেন। আমরা চাই করোনা মোকাবিলায় অঞ্চলের আগ্রহী ছাত্র-যুব ও সমাজকর্মীদের অংশগ্রহণ ও সামাজিক সংহতি। জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ দেখেই আমরা পরবর্তী জনআন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করব।

স্মারকলিপির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, উত্তর ২৪ পরগণা জেলাশাসক ও বনগাঁ মহকুমা শাসকের উদ্দেশ্যে।

aeeededd

আশা, অঙ্গনওয়ারী, মিড-ডে-মিল কর্মীদের সর্বভারতীয় “ফোরাম অব স্কীম ওয়ার্কার্স” গঠন হয়েছে। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন-এর নেতৃত্বে, যার অন্যতম এআইসিসিটিইউ।

গত ১৪ ও ১৬ই জুলাই এই ফোরামের মিটিংয়ে সিন্ধান্ত হয় আগস্ট ৭, ৮, ৯ প্রকল্প কর্মীদের দেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হবে।

জাতীয় দাবি সনদ

  • ১) স্বাস্থ্য, শিশু পুষ্টি প্রকল্প, মিড-ডে-মিল বেসরকারীকরণ বন্ধ কর।
  • ২) আইসিডিএস, জনস্বাস্থ্য, মিড-ডে-মিল প্রকল্প শক্তিশালী কর ও বরাদ্দ বৃদ্ধি কর।
  • ৩) ৪৫ ও ৪৬তম শ্রম সম্মেলনের সুপারিশ লাগু কর। প্রকল্প কর্মীদের স্থায়ী কর্মীর স্বীকৃতি দাও। মাসে ২১,০০০ টাকা মজুরি ও ১০,০০০ টাকা পেনশন দাও।
  • ৪) শিক্ষা ও খাদ্যের অধিকারের মতোই “সকলের জন্য স্বাস্থ্য অধিকার” আইন চাই।
  • ৫) করোনা সংকটের নামে মালিকদের স্বার্থে বর্তমান শ্রম-আইন বদল, মজুরি হ্রাস,কাজের ঘন্টা বৃদ্ধি চলবে না।
  • ৬) কর দেননা এমন সমস্ত দরিদ্র পরিবারদের আগামী ৬ মাস বিনামূল্যে রেশন ও মাসিক ৭,৫০০ টাকা নগদ দিতে হবে।
  • ৭) করোনার সাথে সম্মুখ সমরে নিযুক্ত আশা ও অঙ্গনওয়ারী কর্মী সহ বিশেষত স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যুক্ত কর্মীদের নিরাপত্তা, পিপিই কিট দিতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য ও কোভিড পরীক্ষা করতে হবে।
  • ৮) করোনার সাথে যুক্ত সমস্ত কর্মীর মৃত্যুতে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, নির্ভরশীল পরিবারের পেনশন ও কোভিড চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে।
  • ৯) কোভিড-১৯ চিকিৎসার সাথে যুক্ত কর্মীদের ১০,০০০ টাকা অতিরিক্ত ঝুঁকি ভাতা দিতে হবে। প্রকল্প কর্মীদের সমস্ত বকেয়া ভাতা/মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে।
  • ১০) করোনার সাথে যুক্ত প্রকল্প কর্মীদের সংক্রমণে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
  • ১১) বর্তমান বিমাপ্রকল্প (ক) প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনা (খ) প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা
  • (গ) অঙ্গনওয়ারী কার্যকর্তী বীমা যোজনা, নির্দিষ্ট ক্ষেত্র অনুযায়ী সকলের জন্য কার্যকর করতে হবে।
  • ১২) স্কুল বন্ধ থাকাকালীন সমস্ত মিড-ডে-মিল কর্মীদের মাসিক ১০,০০০ টাকা দিতে হবে। এই প্রকল্প কেন্দ্রীভূত/বেসরকারীকরণ করা চলবে না।
  • ১৩) অঙ্গনওয়ারী ও মিড-ডে-মিলে বরাদ্দ বাড়িয়ে অতিরিক্ত ভালো মানের খাদ্য দাও। এই প্রকল্পে পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের শিশুদের যুক্ত কর।
  • ১৪) আয়করদাতা বিহীন সমস্ত পরিবারদের বিনামূল্যে কোভিড পরীক্ষা ও চিকিৎসা করতে হবে। হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন-এর পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে হবে। সরকারী চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী কর। চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নয়নে জিডিপির ৬ শতাংশ ব্যয় কর।
  • ১৫) তহবিল সংগ্রহের নামে “সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রজেক্ট” তৈরি বন্ধ কর। অতি ধনীদের উপর কর চাপাও। ব্যংক ঋণ খেলাপী ধনীদের বকেয়া আদায় করে তহবিল সঞ্চয় কর।
bddevvder

(৯ আগষ্ট দিনটিকে দেশ জুড়ে কৃষক-মুক্তি-দিবস হিসেবে পালন করার আহ্বান রেখেছে সারা ভারত কিষান মহাসভা। এ বিষয়ক আহ্বান পত্রটি গত সংখ্যার দেশব্রতীতে আপনারা পড়েছেন। এই আহ্বানে তুলে ধরা একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি আদিবাসীদের জমি সংক্রান্ত প্রশ্নে। এমনকি বনসৃজনের আইনকেও হাতিয়ার করে আদিবাসীদের উৎখাত করা হয়। গত সংখ্যায় বাঁকুড়া জেলাজুড়ে এভাবে ‘বন-কমিটি’-র নামে স্থানীয় চক্রের দ্বারা আদিবাসীদের জমিতে হামলার খবর ও সে সম্পর্কে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন জেলা সম্পাদকের আবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।)

গত ২৮ জুলাই ছিল সিপিআই(এমএল)-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক চারু মজুমদারের ৪৮তম শহীদ দিবস। যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশে গরিবের রাজ প্রতিষ্ঠা হবে। ভূমিহীন গরিব মানুষ জমি পাবে। সেই চারু মজুমদারকে স্মরণ করে বাঁকুড়া ব্লক-২ বিডিও অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হয় ‘সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি’র নেতৃত্বে। দাবি জানানো হয়

dere

 

(১) কোষ্ঠিয়া অঞ্চলের খেমুয়া গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী ও বনবাসীদের অধিকারে থাকা ও বাড়ি করে বসবাস করা বনের জমিতে বাস্তু পাট্টা দিতে হবে (২) আদিবাসী ও বনবাসীদের দখলে থাকা বনের চাষের জমিতে পাট্টা দিতে হবে। (৩) বনদপ্তরের মদতপুষ্ট উচ্চবর্ণের প্রাধাণ্যকারী বনকমিটি দ্বারা আদিবাসীদের নষ্ট করা ফসলের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। (৪) বনের জমি থেকে আদিবাসী ও বনবাসীদের নয়, উচ্চবর্ণের মানুষদের উৎখাত করে বনসৃজন করতে হবে। (৫) লকডাউনের দরুন কাজ হারা সব মানুষকে মাসে ১০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

উপস্থিত জনতাকে সম্বোধন করে  সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জি বলেন, দাবি পূরণ না হলে আগামী ১৫ আগষ্ট স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সবাইকে (শতাধিক পরিবার) নিয়ে বনদপ্তরের রেঞ্জার অফিস ঘেরাও করে রাখা হবে।

vad

বিভিন্ন বাম-গণতান্ত্রিক গণ সংগঠন দেশজুড়ে গত ২৩ জুলাই যে বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল তার অংশ হিসেবে পুর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ডেপুটেশন সংগঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্ত ২৩ জুলাই দিনটিকে রাজ্য জুড়ে লকডাউন ঘোষণার হওয়ায় ২৪ জুলাই পুর্বস্থলী-১ ব্লক-এর নাদনঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতে যৌথ বিক্ষোভ ডেপুটেশন সংগঠিত করা হল। এই ডেপুটেশনে জোরদার দাবি উঠে আসে ১০০ দিনের কাজ, জবকার্ড, বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের জবকার্ড ও কাজ পাওয়ার ব্যাপারে পঞ্চায়েতের উদাসীনতার বিরুদ্ধে ও দলবাজির বিরুদ্ধে। বিক্ষোভসভায় বক্তব্য রাখেন আয়ারলার জেলা কমিটির সদস্য ইব্রাহিম সেখ যিনি নিজেও একজন পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি তাঁর বক্তব্যে কেরলে থাকাকালীন পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার মোকাবিলার জন্য সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের ভূমিকা ও গ্রামে ফেরার পর পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ ও জবকার্ডের দাবিতে আন্দোলনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পঞ্চায়েত সদস্য, সুপারভাইজারের কাছে দাবি জানিয়ে কোন ফল না হলে প্রধান অফিসে বারবার সংগঠিতভাবে যাওয়ার পরেও কাজ এবং জবকার্ডের আবেদন পর্যন্ত নিতে রাজি হল না। বাধ্য হয়ে বিডিও অফিসে ডেপুটেশন ও আবেদন জমা দেওয়ার পর ইসলামপুর গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক সহ সমস্ত গ্রামীণ গরিবদের কাজ দিতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের ফলে ৭ বছর পর প্রথম ইসলামপুর গ্রামের মানুষ কাজ পেলেন। ডেপুটেশনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে নাদনঘাট লোকাল কমিটির সম্পাদক জিয়াদুল সেখ এবং সিপিআই(এম) নেতৃত্ব বক্তব্য রাখেন। ‘প্রধান’ দাবিগুলোর ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন এবং যথাসাধ্য সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন।

daertkal

গত ২৬ জুলাই কালনা ২নং ব্লকের বৈদ্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হাসনহাটি গ্রামের বন্ধন, আশীর্বাদ ও অন্যান্য মহাজনী সংস্থার ঋণের দায়ে জর্জরিত মহিলাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। বৈঠকে ৫০ জনের মতো মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও অংশগ্রহণ ছিল। বৈঠক পরিচালনা করেন সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদীকা সুমি মজুমদার। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত। আলোচনার পর ৯ জনের একটি ঋণমুক্তি কমিটি গঠন করা হল।

kalnae

 

২৭ জুলাই কালনা ২নং ব্লকের অকালপোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের তেহাটা গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে বন্ধন, উজ্জীবন ও অন্যান্য মহাজনী সংস্থার ঋণের দায়ে জর্জরিত মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। গ্রামীণ মধ্যস্তরের মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল। ঋণমুক্তির আন্দোলনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সমস্ত মহিলারা। বৈঠকের পরিচালনা করেন সুমি মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত। আরও অন্যান্য গ্রামের মহিলাদের নিয়ে বৈঠক করার পরিকল্পনা করা হয়।

- সজল পাল 

geredeeee

জরায়ুর সংক্রমণে মারা যান ২৬ বছর বয়সী পূজা নট। তাঁর মরদেহ সৎকারের মাঝেই বাধা দেয় গাঁয়ের ‘উচ্চবর্ণ’ ঠাকুর সম্প্রদায়। মাঝপথে চিতা নিভিয়ে মৃতদেহ অন্যত্র নিয়ে যেতে বাধ্য হয় পূজার পরিবার। উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহর থেকে ২০ কিমি দূরের এক গ্রামের ঘটনা। ঠাকুরদের ক্ষমতাতেই যোগি আদিত্যর ক্ষমতা, যোগিরাজে তাই ঠাকুরদের পশ্চাদপদ সামন্ততান্ত্রিক সামাজিক উৎপীড়ন চাগাড় দিয়ে উঠেছে। উত্তর প্রদেশে দলিতদের ওপর নতুন নতুন হামলা চলছে। অস্পৃশ্যতা ফিরে আসছে। পূজা নট-এর ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য হল, শান্তিপূর্ণভাবে মিটমাট হয়ে গেছে। মাঝপথে চিতা নিভিয়ে যুবতীর মৃতদেহ নামিয়ে নিতে, গ্রাম থেকে চার কিলোমিটার দূরে গিয়ে সৎকারের বাকি কাজ করতে দলিতদের বাধ্য করা যায়। বিজেপি রাজত্ব কেমন সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে চায় তা পূজা নট-এর শেষকৃত্য দেখিয়ে দেয়।

aereup

উত্তরপ্রদেশে নারী-বিরোধী হিংসা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি আমেথির দুই মহিলা (মা ও মেয়ে) ন্যায়বিচারের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সচিবালয় লোকভবনের সামনে আত্মাহুতি দেওয়ার লক্ষ্যে গায়ে আগুন দেন। তাঁদের দেহ যথাক্রমে ৮০ শতাংশ ও ২০ শতাংশ পুড়ে যায়। এই সবের বিরুদ্ধে আইপোয়া সারা রাজ্যে ২১ জুলাই প্রতিবাদ সংগঠিত করে। প্রতিবাদের সময় মহামারী সংক্রমণ ঠেকাতে দূরত্ব বিধি ও অন্যান্য নিয়ম মানা হয়। তাঁরা উত্তরপ্রদেশে চলা গুণ্ডারাজ এবং দরিদ্র, দলিত, আদিবাসী ও নারীদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের নামিয়ে আনা নিপীড়নের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন।

সেদিনের প্রতিবাদ কর্মসূচীতে আইপোয়ার রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণা অধিকারী বলেন, উত্তরপ্রদেশের জনগণ যখন মহামারীর মোকাবিলায় তীব্র সংগ্ৰাম করছেন, বিজেপি শাসনাধীনে তখন নারীদের বিরুদ্ধে হিংসা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের সামনে দুই মহিলার আত্মাহুতির চেষ্টা দেখিয়ে দিচ্ছে যে এই রাজ্যে দরিদ্রদের জন্য ন্যায়বিচারের দরজা বন্ধ হয়েই রয়েছে। উচ্ছেদের লক্ষ্যে এই সরকার দলিত ও আদিবাসীদের ওপর নিপীড়নকেও যথেষ্ট মাত্রায় বাড়িয়ে তুলেছে। লক্ষ্ণৌ, সোনভদ্র, চন্দৌলি, কানপুর, লখিমপুর, আজমগড়, প্রভৃতি স্থান থেকে এই ধরনের নিপীড়নের খবর পাওয়া গেছে, কিন্তু কোনো এফআইআর করা হয়নি এবং কেউ গ্ৰেপ্তারও হয়নি।

ade

 

সেদিনের কর্মসূচীতে নিম্নলিখিত দাবিগুলোকে তুলে ধরা হয়।

  • মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের সামনে দুই মহিলার আত্মাহুতির চেষ্টার হৃদয়বিদারক ঘটনায় আইপোয়া তীব্র ক্রোধ ব্যক্ত করছে, প্রবল রূপে অগ্নিদগ্ধ হওয়া সাফিয়ার জন্য উচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসা প্রদানের এবং তাঁর মেয়ের জন্যও যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছে। আমেথিতে তাঁদের জমি বিবাদের ঘটনায় সত্বর ন্যায়বিচারের দাবিও আমরা জানাচ্ছি।
  • অযোধ্যার হায়দারগঞ্জ থানার সানওয়ারধির গ্ৰামে সামন্ততান্ত্রিক শক্তির হাতে দলিত মহিলাদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় এবং ওই ঘটনায় শ্লীলতাহানির শিকার দলিত মহিলাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা এফআইআর হওয়ার ব্যাপারে আইপোয়া তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে। এই ঘটনার সময় সংঘর্ষে যে দলিত মহিলারা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আহত হন আইপোয়া তাঁদের প্রতি সংহতি এবং তাঁদের ডাক্তারি পরীক্ষা ও যথাযথ চিকিৎসার দাবিও জানায়। এই গ্ৰামের যে সমস্ত দলিত পরিবার ন্যায্য মজুরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন আইপোয়া তাদের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে।
  • চন্দৌলি জেলার চাকিয়া ব্লকে শাসক শক্তি সমর্থিত জেলা পঞ্চায়েত সদস্য মহেন্দ্র রাও দুই দলিত মহিলাকে অর্ধনগ্ন করে প্রহার করে। এই ঘটনায় আইপোয়া তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে এবং নিগৃহীত দুই মহিলার প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের যথাযথ চিকিৎসার দাবিকে তুলে ধরছে। মূল অভিযুক্তর নামে এফআইআর করার দাবিও আমরা রাখছি।
  • মির্জাপুরে আইপোয়া নেত্রী জিরা ভারতির ওপর যৌন হেনস্থার পর ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও দুষ্কৃতীরা এখনও অধরা। আইপোয়া আক্রমণকারীদের অবিলম্বে গ্ৰেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে, এবং তা না হলে মিরজাপুর জেলার জেলাশাসক ও এসপি-কে সাসপেন্ড করতে হবে।
recebre

পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছিল সিপিআই(এমএল), এআইসিসিটিইউ, আয়ারলা এবং প্রবাসী মজদুর ইউনিয়ন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ৭ জুলাই সারা বিহারের ব্লক সদর দপ্তরগুলোতে পৌঁছে বিডিও-দের কাছে স্মারকলিপি জমা দিলেন। এক যৌথ বিবৃতিতে সিপিআই(এমএল)-এর রাজ্য সম্পাদক কুনাল এবং আয়ারলা-র সাধারণ সম্পাদক ধীরেন্দ্র ঝা বলেছেন, বিজেপি এবং জেডিইউ পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে যে অভাবনীয় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তার বিরুদ্ধে পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্রোধের প্রতিফলন ঘটেছে তাদের এই প্রতিবাদের মধ্যে। বিবৃতিতে তাঁরা আরও জানিয়েছেন, বিহার সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের এই আশ্বাস দিয়েছিল যে, যাদের যেমন দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে, সেই অনুযায়ী তাদের কাজ দেওয়া হবে; কিন্তু বিহার সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের কি করোনা পরীক্ষা কী কাজের ব্যবস্থা, কিছুই করছে না। একদিকে করোনা সংক্রমিতদের সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে, আর এই রাজ্যে কাজ না পেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সমস্ত বিষয়ে বিজেপি-জেডিইউ কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না, উল্টে ভার্চুয়াল সমাবেশের মধ্যে দিয়ে বিহার নির্বাচনকে হাতিয়ে নেওয়ার দিকেই তাদের ধ্যানজ্ঞান, বিহার জনগণকে তারা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই দেখে নিতে বলছে।

gar

 

কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক ৭ জুলাই সারা বিহারের শতশত ব্লকের সদরে পৌঁছে সরকারের বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও কাজের নিশ্চয়তার দাবি জানালেন। সেদিনের প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে তাঁরা যে দাবিগুলোকে তুলে ধরলেন সেগুলো হল :

  • পরিযায়ী শ্রমিক এবং নাপিত, ছুতোর, কামার, কুমোর, রিক্সাচালক-ঠেলাচালক-টেম্পোচালক এবং দোকানদার সহ সমস্ত স্বনিযুক্তদের ১০,০০০ টাকা করে লকডাউন ভাতা দিতে হবে;
  • আয়করের আওতার বাইরে রয়েছে এমন পরিবারগুলোর প্রত্যেক সদস্যকে ছ-মাস ধরে ১০ কেজি করে খাদ্যশস্য দিতে হবে;
  • দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ দিতে হবে, এবং যারা স্বনিযুক্ত কাজে যুক্ত হতে চায় তাদের সুদহীন ঋণ দিতে হবে;
  • এমএনআরইজিএ-র অধীনে ২০০ দিন কাজ এবং ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হবে, এবং এই কর্মসূচীকে শহরেও সম্প্রসারিত করতে হবে;
  • বিহারে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য শিক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে;
  • কৃষক এবং ভাগচাষিদের কেসিসি ঋণ মুকুব করতে হবে;
  • স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোর ঋণ পুরোপুরি মুকুব করতে হবে;
  • প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ২৪ ঘন্টা ডাক্তারদের থাকা এবং কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে;
  • জেলা হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা এবং আইসিইউ-র ব্যবস্থা করতে হবে;
  • এর আগে যেমন ঘোষণা করা হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি রেখে কোয়রান্টিন কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসা শ্রমিকদের ২,০০০ টাকা করে দিতে হবে এবং কোয়রান্টিন কেন্দ্রগুলোর ব্যয়ের সামাজিক অডিট করতে হবে।

যে সমস্ত জেলার ব্লকে-ব্লকে সেদিন প্রতিবাদ সংগঠিত হয় তার মধ্যে ছিল দ্বারভাঙ্গা, মধুবনী, মুজাফফরপুর, সহর্ষ, নালন্দা, গোপালগঞ্জ, ভোজপুর, আরওয়াল ও পাটনা গ্ৰামীণ।

halddare

আরও একজন শিক্ষাবিদকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হল। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ প্রফেসর হানি বাবু, জাতবর্ণের নিপীড়ন ও জাতবৈষম্যের বিরুদ্ধে এক নিরন্তর জোরালো কন্ঠস্বর, এবারে গ্রেপ্তার হলেন ভীমা কোরেগাঁও এলগার পরিষদ মামলার সূত্রে। আনন্দ তেলতুম্বড়ে ও গৌতম নভলাখা গ্রেপ্তার হওয়ায় ভীমা-৯ বেড়ে ভীমা-১১ আগেই হয়েছে, এখন হানি বাবুর গ্রেপ্তারির মাধ্যমে তা ভীমা-১২ হল।

ভীমা কোরেগাঁও মামলা ও দিল্লী দাঙ্গা মামলা – এই দুই ক্ষেত্রেই সহিংস হামলা চালিয়েছে যারা তাদের বেমালুম মুক্ত রাখা হয়েছে, আর মামলাগুলিকে সম্পূর্ণ উল্টে দেওয়া হয়েছে প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, লেখক ও আন্দোলন-কর্মীদের অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করে ফাঁসাতে। সুবিচারের ওপর এ এক জঘন্য হানাদারি। সামাজিক ন্যায় ও মানবাধিকারের লড়াকু কর্মীদের বিরুদ্ধে এক কদর্য ষড়যন্ত্র হয়ে উঠেছে ভীমা কোরেগাঁও মামলা, আর দিল্লী দাঙ্গার মামলাটিকে বানানো হয়েছে সিএএ-বিরোধী আলোড়ক তথা সংবিধান রক্ষার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার হাতিয়ার।

মোদি সরকার ভাবছে লকডাউনের ফলে কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না, ন্যায় বিচারের বিরুদ্ধে যা খুশি আক্রমণ চালিয়ে পার পেয়ে যাবে। ওদের হিসেব অবশ্যই উল্টে দিতে হবে আমাদের।

- দীপঙ্কর ভট্টাচার্য  

dareefkaf

"মোটা ভাই আমাদের মানুষ হতে বলছে না, বলছে হয় হিন্দু হও অথবা মুসলমান"

২৭ জুলাই এলাহাবাদ হাই কোর্টে ডাক্তার কাফিল খানের শুনানি ছিল। কিন্তু তারিখ আবারও পিছিয়ে দেওয়া হল। এই নিয়ে গত পাঁচ মাসে এলাহাবাদ হাই কোর্ট মোট ১২ বার কফিল খানের মামলার শুনানি পিছলো। ১৩ ডিসেম্বর সিএএ বিরোধী এক সভায় বক্তব্য রাখার পর তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করে ইউপি পুলিশ, ২৯ জানুয়ারী তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় মহারাষ্ট্রে একটি সিএএ-বিরোধী সভায় যোগদান করার সময়, ১০ ফেব্রুয়ারী আলীগড় আদালত তাঁর জামীন মঞ্জুর করে। কিন্তু আদালতের রায় অমান্য করে সরকার তাঁকে বেআইনিভাবে জেলে আটকে রাখে। আদালতের রায়ের ওপর দাঁড়িয়ে আলিগড়ের ম্যাজিস্ট্রেট মথুরা জেলের কর্তৃপক্ষের কাছে কাফিল খানের জামীন কার্যকর করার নির্দেশ পাঠানোর পরও তাঁকে ছাড়া হয় না। তিনদিন পর তাঁর বিরুদ্ধে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ প্রয়োগ করে রাজ্য সরকার এবং আলিগড় থেকে সরিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়া হয় মামলাটি। তারপর থেকে ১২ বার শুনানি পেছানো হল।

২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে গোরখপুরের এক হাসপাতালে অক্সিজেন সাপ্লায়ের অভাবে ৭০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। ডাক্তার কাফিল খান নিজের প্রচেষ্টায় অক্সিজেন জোগাড় করে কিছু শিশুকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। একদিকে গণ হারে শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ি মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথের প্রতি মানুষের ধিক্কার, অন্যদিকে কাফিল খানের জনদরদী কাজের খবর – এই পরিস্থিতিতে যোগির সরকার কাফিল খানের বিরুদ্ধেই চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মামলা করে এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করে। দেশ জুড়ে এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় যোগি সরকার একটি ওয়ান-ম্যান কমিশন বসায়। এই কমিশন কাফিলের কোনও দোষ খুঁজে পায়নি, বরং তাঁর প্রশংসা করা হয়, বলা হয় যে শিশুদের এই মারণ রোগএর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার আগেই ওই হসপিটালটির শিশু রোগ বিভাগের দায়িত্ব থেকে ডাক্তার কাফিল খান পদত্যাগ করেছিলেন, রোগ ছড়ানোর খবর হতেই তিনি নিজে এসে আবার পদে যোগ দেন, অক্সিজেন সরবরাহ বা পেমেন্ট সংক্রান্ত দায়িত্ব তাঁর ছিল না, নিজের চেষ্টায় বিভিন্ন কোম্পানি থেকে ৫০০ বড়ো সিলিন্ডার অক্সিজেন জোগাড় করে অনেক শিশুর প্রাণ রক্ষা করেন। ২০১৯-এর এপ্রিলে কমিশনের এই রিপোর্ট জমা পড়ার পর কাফিল জামিন পান দীর্ঘ ন’মাস জেলে থাকার পর। সেপ্টেম্বরে আদালত তাঁকে সমস্ত অভিযোগ থেকে করে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করে। সাধারণ মানুষ এই জনদরদী ডাক্তারকে বিপুল সম্বর্ধনা দেয়, কিন্তু যোগি আদিত্যনাথ সমগ্র বিষয়টিকে “ড্রামা” বলে বিষোদ্গার করে এবং সরকারের বদনাম করার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আবার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে। জুন মাসে কাফিলের ভাই কাসিফ জামিলের ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়, দেহে তিনটি বুলেট নিয়েও কোনোমতে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

এবছর ২৭ জুলাই আরেকবার তাঁর মামলার শুনানি পেছানো হল। জামিন পাওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে এনএসএ আরোপ করা হয়। এই আইনে ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয় তার কোনও ব্যাখ্যা নাই। কাফিল খান ঠিক কীভাবে জাতীয় সুরক্ষা বিঘ্নিত করেছেন তা জানতে চাইলে জানানো হয় যে সিএএ বিরোধী সভায় ডাক্তার কাফিল খান বলেছিলেন, “মোটা ভাই আমাদের মানুষ হতে বলছে না, বলছে হয় হিন্দু হও অথবা মুসলমান”। বলা বাহুল্য, ‘মোটা ভাই’ বলতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে বোঝানো হচ্ছে, এবং আমরা সকলেই জানি যে কাফিল সাধারণ একটি সত্য কথাই বলেছেন। দেশ ও জাতির সুরক্ষা ও সুস্থতার সামনে সবচেয়ে বড়ো বিপদ তো অমিত শাহ ও তার দলবল।

varseod

স্বার্থের পরতে পরতে পিষ্ট শব্দগুলোকে
জাগাতে হবে ঝাঁকুনি দিয়ে,
জোর করে হাঁটাতে হবে
পঙ্গু হাত পা নিয়ে স্রেফ ডানার জোরে
আবার উড়তে পারে কিনা দেখতে হবে।

দীর্ঘ খরার পরে প্রথম বৃষ্টি যেমন
আর কারো নয়, আমার দগ্ধ কানে
আমারই নিজস্ব ভুবনে আশ্চর্য সুধা বর্ষণ করে
যেভাবে আকাশ
হারানো মৌসুমীকে ফিরে পেয়ে আত্মহারা হয়
তেমন এক কোলাহলময় পৃথিবীর মাটিতে
আমি ফুটে উঠতে চাই।

বড় সাধ হয় আরো একবার
স্কুলে আর কমিউনে
শিক্ষার্থী আর সাধারণ মানুষের কাছে
নতুন করে বলতে শিখি,
ইতিহাসের প্রত্যেক ক্ষেত থেকে
নতুন করে তুলে আনি অক্ষরের ফসল।

তেমন গর্জন ছাড়া
আমার ভিতরে এতকাল জমে থাকা নৈঃশব্দ্য
কী করে বিস্ফোরণ ঘটাবে?

প্রতিধ্বনি বিস্ফোরক না হলে
বহুকালের দুর্বোধ্য দৃশ্য
কেমন করে ঝকমকিয়ে উঠবে?

আমাকে আরো একবার বলতে শিখতে হবে
মানুষের কমিউনে মানুষের কথা শুনে;
আমাকে শব্দের কাছে বাঁধা পড়তে হবে
তার আদেশ মানতে হবে।
শব্দের সাথে যে বিশ্বাসঘাতকতা করে
তার কোন উত্তরাধিকার থাকে না।

শব্দকে দুর্বল করতে পারে না কোন শক্তি।
কালের গনগনে ফার্নেসে
ভীম বেগে নেমে আসা হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে
এখনই আমার ভাষা নির্মাণের সময়।

(ভারভারা রাওয়ের কবিতাটি অনুবাদ করেছেন প্রতীক, যিনি স্বনামে কবিতা ও হুতোম ছদ্মনামে গদ্য লেখেন। সমকালীন রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক বোধে অনুবাদকের সম্মতিতে কবিতাটি দেশব্রতীতে প্রকাশিত হল। সেই সাথে রাখা হল অনুবাদকের মন্তব্যটিও।)

var

 

“আর পাঁচটা কূপমণ্ডূক বাঙালির মতো আমারও ইংরেজি জানা আছে, হিন্দি ছবি দেখি অনেক, বলতেও পারি কাজ চালানোর মতো। ফরাসী, স্প্যানিশ, জার্মান শিখতেও ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। কেবল অন্য কোনো ভারতীয় ভাষা শেখার প্রয়োজন অনুভব করি না। দক্ষিণের ভাষাগুলোর প্রতি অবজ্ঞা তো তামিলকে আন্ডু পান্ডু বলে ঠাট্টা করা আর তেলুগুকে আজীবন তেলেগু বলে আসা দিয়েই পরিষ্কার। ফলে ভারাভারা রাওয়ের কবিতা তাঁর ভাষায় হয়ত এজন্মে পড়া হয়ে উঠবে না। কিন্তু কবিদের প্রতি যে কোনো কারণেই হোক আমার বিশেষ পক্ষপাত। উপরন্তু ইনি বামপন্থী। এমন একজনকে বিনা বিচারে নির্দিষ্ট অভিযোগের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও রাষ্ট্র আটকে রেখেছে এতদিন — হজম করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। খবরে প্রকাশ কবির পরিবার আশঙ্কা করছেন তিনি আর বেশিদিন বাঁচবেন না। আর কিছু তো করতে পারছি না, তাই ইন্টারনেটে তাঁর ইংরেজিতে অনূদিত একটা কবিতা পড়ে বাংলায় অক্ষম অনুবাদের চেষ্টা করলাম।

কী আর করা যাবে? আমার ভাষার সক্ষম কবিদের তো এসব করার সময় নেই। তাঁরা কেউ রাষ্ট্রের পক্ষে, তো কেউ মিষ্টি মিষ্টি মিলের কবিতা লিখতে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে বিশ্বাস হয় না, এই ভাষায় কেবল সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মার্কামারা বামপন্থী কবি লেখেননি, রবীন্দ্রনাথের মতো লোক লিখেছেন, যিনি রাজনৈতিক নেতারা কী প্রতিক্রিয়া দেবেন ঠিক করতে পারার আগেই নিজের পুরস্কার ত্যাগ করেছিলেন।”

eeedest

আপনি পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত? প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার আর দূষণের সমস্যা আপনাকে ভাবায়? আপনি কি চান দেশের পরিবেশ আইন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হোক? পরিবেশ রক্ষা, সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেন, জল জঙ্গল জমির অবক্ষয় নিয়ে লেখালেখি করেন?

ব্যাস হয়ে গেল। যেকোনো দিন আপনার সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে আপনার উপরে ইউএপিএ আইনে মামলা করা হতে পারে! কারণ জানতে চাইছেন?

কারণ পরিবেশ রক্ষা নিয়ে কথা বলা তো আজকাল রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ! তাতে নাকি দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়!

বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে জেনে নিন।

wwq

 

লকডাউনের মধ্যে “পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা খসড়া নির্দেশিকা ২০২০” (ইআইএ) এনে বিভিন্ন প্রকল্পে পরিবেশ সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির হিসেবনিকেশ করার প্রক্রিয়াটিকেই শিথিল করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে খোদ পরিবেশমন্ত্রক। কর্পোরেট লবিকে তুষ্ট করতে ‘ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়’-এর নামে একের পর এক পরিবেশ বিধিগুলিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে মোদী সরকার। পরিবেশ মন্ত্রকের (MoEFCC) ওয়েবসাইটে এই নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করার পরেই তা বিরোধিতার মুখে পড়ে। কেন্দ্র সরকার লকডাউনের সুযোগ নিয়ে কোনো জনমত সংগঠিত হতে না দিয়ে দ্রুত পাশ করিয়ে নিতে চেয়েছিল এই নির্দেশিকা। কেন ও কিভাবে এই নতুন ইআইএ নির্দেশিকা দেশের পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও পরিবেশ সম্পৃক্ত জনজাতিগুলির জন্য বিপজ্জনক তা নিয়ে বিস্তারিত লেখা এই পত্রিকার ২১ মে সংখ্যায় ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। পরিবেশ সচেতন সমস্ত মানুষ, বৈজ্ঞানিক মহল, এনজিও, পরিবেশ কর্মী ও পরিবেশ সংগঠনগুলি লাগাতার এই ইআইএ ২০২০-এর বিপদ নিয়ে সোচ্চার হওয়ায় ও কোর্টের চাপে এই বিষয়ে জনগণের মতামত দেওয়ার সময়সীমা খানিক বাড়িয়ে ১১ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়। সেই মতোই বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন থেকে ইমেল করে মতামত জানান হচ্ছিল পরিবেশ মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভারেকারকে। কেন এই নির্দেশিকা পরিবেশ-বিরোধী সেই বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগ জানিয়ে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকেও ইমেল করা হয়, যার বাংলা কপি ১৬ জুলাই দেশব্রতীতে প্রকাশিত হয়েছে।

greta

 

সুইডেনের বিশ্বখ্যাত পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের পরিবেশ আন্দোলনের আন্তর্জাতিক মঞ্চের ভারতীয় চ্যাপ্টার “ফ্রাইডেস ফর ফিউচার ইণ্ডিয়া”-র পক্ষ থেকেও তাদের মতামত ইমেল করা হয়। সংগঠিতভাবে ইআইএ নোটিফিকেশন ২০২০’র বিরুদ্ধে পরিবেশ দপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রীকে লাগাতার ইমেল পাঠানোর ‘অপরাধে’ “ফ্রাইডেস ফর ফিউচার ইণ্ডিয়া”-র ওয়েবসাইট ব্লক করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তাদের ওয়েবসাইটের ডোমেন হোস্টের কাছে ইউএপিএ চাপানোর ধমকি দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে সাইবার ক্রাইম সেল থেকে। আর তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে সেই চিঠি পাঠান হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রীর নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই। পরিবেশ রক্ষার কথা নাকি দেশের শান্তি সার্বভৌমত্ব বিঘ্নিত করে!! এমনকি চিঠিতে সরাসরি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগে ইউএপিএ আরোপ করার কথা বলা হয়েছে! এই চিঠি সামনে আসতেই ব্যাপক শোরগোল পরে যায় দেশ জুড়ে, এমনকি আন্তর্জাতিক মহলেও। এরপরেই চাপে পড়ে দিল্লি পুলিশ বলে ইউপিএ-র নোটিসটি নাকি নেহাৎই টাইপিং মিসটেক, আসলে ওটা আইটি (ইনফরমেশন টেকনোলজি) অ্যাক্ট হবে! বুঝতে অসুবিধা হয়না এ নেহাতই পরিস্থিতি সামলানোর জন্য দিল্লি পুলিশের মরিয়া চেষ্টা। দেশের সংবিধান আর গণতন্ত্র রক্ষা করতে পথে নামলে কিম্বা পরিবেশ তথা জল জঙ্গল জমি খনিজের অবাধ কর্পোরেট লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষায় সোচ্চার হলেই আপনি সরাসরি মোদী সরকারের নিশানায় চলে আসবেন, হয়ে যাবেন ‘দেশদ্রোহী’!

এরপরেও সন্দেহ আছে দেশের আসল শত্রু কারা?

- মধুরিমা 

aeswkkkk

শিক্ষার উপর নামলো আরেকটা হামলা
খসড়া প্রস্তাবনার ওপর বহু শিক্ষাবিদ ও ছাত্রছাত্রী সংগঠনের বিরোধিতা সত্বেও ‘নয়া শিক্ষানীতি’-কে শিলমোহর দিল মন্ত্রীসভা
নয়া শিক্ষা নীতি নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনাই হল না
অতিমারীকে ঢাল করে শিক্ষাক্ষেত্রকে বেসরকারীকরণ করা হচ্ছে

২৯ তারিখে ক্যাবিনেট অনুমোদন করল নয়া শিক্ষা নীতির খসড়া। শিক্ষাক্ষেত্রে সকলের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্যই নাকি রয়েছে এই শিক্ষানীতিতে। অন্তত এমনই দাবি সরকারের। কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে ঠিক এর বিপরীতটাই উঠে আসছে। সমাজে আর্থিক ও সামাজিকভাবে যারা রয়েছেন প্রান্তসীমায়, এই খসড়া তাদের আরও বেশি কোনঠাসা করে দিল।

* যে কোনো সময়ে উচ্চশিক্ষায় ঢোকা ও বেরিয়ে আসার সুযোগটা একমাত্র অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী সামাজিক স্তরের জন্য তুলে রাখা হল, যাতে তারা তাদের ডিগ্রী সম্পূর্ণ করতে পারে। আর গরিব ছাত্রদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে ডিপ্লোমা নিয়ে। এর বিকল্প কী হতে পারতো? সকলের জন্য সরকার বৃত্তির সুযোগ দিতে পারতো, যাতে নিজেদের বা পরিবারের জন্য রোজগারের চিন্তায় না থেকে তারা তাদের ডিগ্রী সম্পূর্ণ করতে পারতো।

* উচ্চশিক্ষা ম্যাকডোনাল্ডের দোকানের মতো যেন “ক্রেডিট ব্যাঙ্কে” রূপান্তরিত হচ্ছে। যার দেদার পয়সা আছে, সে খরচ করতে পারবে অনেক বেশি। ঠিক যেমন, যার বেশি পয়সা আছে, সে ম্যাকডোনাল্ডের দোকান থেকে চিজ=এ ঠাসা বার্গার ও নরম পানীয় কিনবে, কিন্তু অন্যদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে সাদা মাটা এক বার্গারে।

* কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বশাসন হবে স্তরভিত্তিক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মান-নির্ভর করবে স্বশাসনের মাত্রার উপর। যার মান যত উপরে, সে ততই বাড়াতে পারবে ফি। ফলে গরিব ছাত্ররা শিক্ষার গুণমান থেকে ছিটকে পড়বে।

*প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই নিজেদের শংসাপত্র দেবে। সেটা আর যাচাই করা হবে না। ফলে, এক একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষাপ্রদানের পদ্ধতি, পরিকাঠামো, ফি ও অন্যান্য সবকিছু নিজেদের মনমতো নির্দিষ্ট করবে।

* প্রথম ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর অনলাইন শিক্ষাপ্রদানের জোর পড়েছে। প্রান্তিক ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাঙ্গন থেকে দূরে রাখতে এটা একটা পদক্ষেপ। দূর শিক্ষার (ডিস্টান্স এডুকেশন) এর উপর গুরুত্ব আরোপ শিক্ষার মূল ভাবনার বিরুদ্ধেই যাচ্ছে।

* ইউজিসি ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অবসান ঘটিয়ে তৈরি হচ্ছে শিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যেটি অর্থকরী, সিলেবাস ও অন্যান্য প্রশাসনিক কাজকর্মগুলোকে দেখভাল করবে। গভর্নরদের বোর্ড নিয়ে পরিচালনা করার এই মডেল সব কিছুকে কেন্দ্রীভূত করে ধ্বংস করবে স্বায়ত্ততা ও শিক্ষাক্ষেত্রে উৎকর্ষতাকে।

* নয়া শিক্ষানীতি ঘোষণা করেছে, বেসরকারী ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনো ফারাক টানা হবে না। এর অর্থ, সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরকার নিজের আর্থিক সাহায্য বিরাট মাত্রায় কাটছাঁট করবে।

* অন্তর্ভুক্তির মুখোসের আড়ালে বিযুক্তির এক মারাত্বক বন্দোবস্ত করেছে এই নয়া শিক্ষানীতি। আইসা শীঘ্রই এ নিয়ে বিস্তারিতভাবে তার মূল্যায়ন রাখবে। এক ঝলকে দেখলে বোঝা যাবে, এই খসড়া হল শিক্ষার বেসরকারীকরণ, যার প্রধান মতলবই হল ব্যাপক সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীকে এর বৃত্তের বাইরে রাখা।

এই শিক্ষা বিরোধী খসড়াকে আইসা প্রত্যাখান করছে। দাবি জানাচ্ছে, এটা বাতিল করে আগে সংসদে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হোক।

gggergegt6

২২ মার্চ সারা দেশ ব্যাপি অপরিকল্পিত লকডাউন ঘোষণার পর চারমাস অতিবাহিত। দেশের কোণায় কোণায় অস্তিত্বের সংকটের বিবিধ চিত্র, মোদি সরকারের অকর্মণ্যতার করুণ নিদর্শন। আর্থ-সামাজিক পুঁজির বংশানুক্রমিক সুবিধা ব্যতিরেকে এই টালমাটাল সময় টিঁকে থাকাই প্রায় অসম্ভব। এই নিদারুণ অনিশ্চয়তার মাঝে দেশের ৩২৬ লক্ষ গবেষক এই মুহুর্তে চরম সংকটে, আর তাদের আগামী ভবিষ্যৎ ততোধিক ধোঁয়াশার মধ্যে বিলীন।

ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের উচ্চশিক্ষার উপর করা সার্ভের তথ্য অনুযায়ী ভারতে ৯৯৩টি বিশ্ববিদ্যালয়, ৩৯,৯৩১টি কলেজ এবং ১০,৭২৫টি একক ইন্সটিটিউট বর্তমান। ভারতে প্রতি বছর ৩ কোটি ৭৪ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য নথিভুক্ত হন। ৩২৬.১ লক্ষ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার কাজে যুক্ত। শুধুমাত্র ২০১৮ সালে ৪০,৮১৩ জন পিএইচডি ডিগ্রীর জন্য নথিভুক্ত হয়েছেন। গবেষণার কাজের সাথে যুক্ত মানুষরা শুধুই শিক্ষার্থী নন, তাদের গবেষণা লব্ধ ফল দেশের জ্ঞানচর্চা ও প্রগতির কাজে ব্যবহৃত হয়। করোনার দাওয়াই ভ্যাক্সিনের পথ চেয়ে সমাজকে তাকিয়ে থাকতে হয় কোনো গবেষকের সফল অনুসন্ধান ও পরীক্ষার অপেক্ষায়। আবার দেশের নাগরিকদের বাস্তবিক ছবি তুলে ধরতে সামাজিক নিরীক্ষণের কাজে গবেষকদের শ্রম ও অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগে। সমাজের ক্রমবিকাশ ও অগ্রগতির দিশায় কাঁচামাল সরবরাহ করেন এই গবেষকরাই। করোনাকে অজুহাত করে উচ্চশিক্ষার সাথে যুক্ত ছাত্রছাত্রীর প্রতি দায় ঝেড়ে ফেলেছে কেন্দ্র। গবেষণার কাজ, লাইব্রেরী, পরীক্ষাগারের প্রবেশ, শিক্ষা-সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ বা গাইড/ সুপারভাইজারের পরামর্শ – গবেষণার জন্য জরুরি এই প্রতিটি প্রয়োজন বড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। গবেষকদের প্রাপ্য সরকারী ফেলোশিপ বা স্কলারশিপগুলি পাচ্ছেন না এরা। নির্দিষ্ট রাজ্য সরকার কিছু ব্যবস্থা নিলেও সামগ্রিকভাবে ইউজিসি বা এমএইচআরডি-র তরফ থেকে এই প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ আঁটা হয়েছে।

gretr

 

খড়গপুর আইআইটি-র জিওলজির এক গবেষকের কথায়, মার্চ মাস থেকে রিসার্চের কাজ বন্ধ। লাইব্রেরী বা পরীক্ষাগারই গবেষণার মূল ক্ষেত্র হওয়ায় গবেষণার কাজ নূন্যতম এগোয়নি বিগত সময়। অন্যদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবীবিদ্যার এক গবেষক বলছেন, স্কলারশিপের টাকা নিয়মিত না মেলায় তিনি গবেষণার কাজ ছেড়ে জীবনধারণের জন্য অন্য চাকরির খোঁজ করে চলেছেন। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েটির কাছে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া বিলাসিতা মনে হচ্ছে। গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডের পরামর্শ সুষমভাবে সকল গবেষকরা পাচ্ছেন না। তদুপরি পিএইচডি বা এমফিলের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া বা পরীক্ষার সবটাই অনলাইনে। নির্দিষ্ট ব্যান্ডউইথের সুবিধাযুক্ত যথার্থ ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছাড়া এই পরীক্ষাগুলির আবেদন বৃথা যাবে। আপনি টাকা দিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করার পর, পরীক্ষার সময় আপনার মেশিনের ইন্টারনেট ব্যবস্থা পরীক্ষাকেন্দ্রের নির্দেশের যথোপযোগী না হলে পরীক্ষা বাতিল হয়ে যেতে পারে। সম্প্রতি সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি তাদের প্রকাশিত এমফিল, পিএইচডির আবেদনপত্রে এই মর্মে আবেদনকারীর লিখিত সম্মতিও নিয়ে নিয়েছে। প্রসঙ্গত, এই গবেষকদের একটা অংশ শহরাঞ্চলে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন, যারা লকডাউনের ফলে বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্রের মতো মৌলিক প্রয়োজনগুলির সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি বাক্য খরচ করেনি উচ্চশিক্ষা মন্ত্রনালয়। বরং উচ্চশিক্ষার সাথে যুক্ত বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজগুলি লকডাউনের অজুহাতে বন্ধ এবং কবে সেগুলি খুলবে কেউ জানে না। এই প্রজেক্টগুলির কাজ উচ্চাশিক্ষায় যুক্ত বড়ো অংশের ছাত্রছাত্রীদের রোজগারের সংস্থান ছিলো। এগুলির অবর্তমানে এই বৃহৎ অংশের যুবসমাজের জীবন-ধারণের পরিপূরক কোনো পথের ব্যবস্থা সরকার খোলা রাখেনি। মহামারীর সময় গবেষকের কাজ স্থগিত থাকা বা পুনরায় শুরু নিয়ে নূন্যতম নির্দেশিকা অনুপস্থিত। গবেষণাক্ষেত্রে পরিকল্পিত উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত এই অবহেলায় বেকারত্বে ধুঁকতে থাকা দেশের চাকরি ক্ষেত্র দ্বিগুণ চাপের মুখে দাঁড়িয়ে। ইন্যদিকে, করোনাকালের অচলাবস্থাকে কাজে লাগিয়ে সরকারের দিকে আঙুল তোলা গবেষকদের কন্ঠরোধে অভূতপুর্ব উদাহরণ তৈরি করে চলেছে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

ggasr

 

পাঠক মনে রাখবেন, সাফুরা জারগার, দেবাঙ্গনা কাটিলা, নাতাশা নারয়াল বা সারজিল ইমাম এরা সকলেই এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রীতে নথিভুক্ত গবেষক। যারা অর্জিত শিক্ষা দেশ ও দশের কাজে নিয়োগ করেছেন। মনে রাখবেন মোদী-শাহ রাজের বদান্যতায় এদের সকলের ঠাঁই হয়েছে কারাগারের অন্ধকারে। সমাজ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা সমাজের হিতে ব্যবহার করার অপরাধে এরা দেশদ্রোহীতায় অভিযুক্ত। বাবা সাহেব আম্বেদকর বলেছিলেন “শিক্ষাই মানুষকে অকুতোভয় করে তোলে, তাকে ঐক্যের পাঠ দেয়, শিক্ষালাভে মানুষ নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় আর শিক্ষাই মানুষকে অধিকারের জন্য লড়তে অনুপ্রাণিত করে।” পৃথিবীর সাম্যবাদের প্রদর্শক কার্ল মার্ক্স বিকল্প সমাজের রুপরেখা তৈরি করতে গিয়ে বলেছেন, “শিক্ষা অমূল্য। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রনের আইনানুগ প্রয়োগ দ্বারা শিক্ষা মানুষের উপভোগ্য হয়।”

book

 

মার্ক্স বা আম্বেদকরের শিক্ষার মডেল জনসাধারণের পক্ষের। এর বিপরীতে অবস্থান পুঁজিবাদী ফ্যাসিস্ট ভারতের শাসক শ্রেণীর। সার্বভৌম ভারতে মনুবাদী শিক্ষা-ব্যবস্থার পুনর্বহাল চায় ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকার। শোষক শ্রেণীর হাতে রাষ্ট্রের আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিণতি আজকের ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা। মহামারীর সময় শিক্ষার জন্য নিযুক্ত মন্ত্রকগুলির চুড়ান্ত ব্যর্থতায় ভারতের ছাত্রসমাজ ফুঁসছে। ফাইনাল ইয়ারের অনলাইন পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে দেশজুড়ে চলছে ছাত্রদের বিক্ষোভ প্রদর্শন। গবেষণার সাথে যুক্ত শিক্ষার্থীদের নিজেদের দাবি নিয়ে সংহত হওয়ার সময় এসেছে। নিজ অধিকার, মর্যাদা, প্রাপ্যের দাবি বুঝে নেওয়ার সময় আজ। দেশের কিয়দংশের স্বার্থে মনুবাদের অন্ধকারে ঢাকা পুঁজিবাদী শিক্ষা নয়, দেশের জনসাধারণের হিতে শিক্ষার সুষম বন্টন সুনিশ্চিত হোক। আগামীর ভারতে সবার জন্য শিক্ষা সবার হাতে কাজের দাবিতে ভারতের যুবসমাজের মুখে ধ্বনিত হোক “এডুকেট রজিটেট অর্গানাইজ”।

- সম্প্রীতি মুখার্জী   

pootgre4d

হরেক মাল সাড়ে ছ’টাকার সুরটা এখনও কানে বাজে। ছোটবেলার সেই মধুর সুরের মধ্যে কোথায় যে একটা ভালবাসার টান লুকিয়ে আছে তা জানাও যায়না। পরিসংখ্যান বলছে ভারতের ১৩৫ কোটি নাগরিকের মধ্যে অন্তত আশি কোটি মানুষ ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করেন। পোশাক-আশাক থেকে শাকসব্জি খেলনাপাতি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সবেতেই ফুটপাত।

৭৭ শতাংশ মানুষ ফুটপাথ থেকে দৈনিক কুড়ি টাকার জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন। সে হিসেবে দৈনিক বিক্রিবাট্টার পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা।

এটা সমগ্র ভারতের খতিয়ান। করোনার প্রাদুর্ভাবে সারা দেশেই হকারদের মাধ্যমে পরিচালিত বিকল্প অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দেশের অন্তত পাঁচ কোটি হকার-পরিবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। করোনা বিদায় নেওয়ার পরেও সরকারী আর্থিক সহায়তা ছাড়া হকারদের মাথা তুলে দাঁড়ানো যে সম্ভব নয়, ইতিমধ্যেই সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন হকার সংগঠনগুলির নেতারা।

grrt

 

কলকাতা শহরের ফুটপাথে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন ২ লক্ষ ৭৫ হাজার হকার। মহানগরীর যে কোনো প্রান্তে ফুটপাথ জুড়ে অসংখ্য দোকান। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষের চাহিদা মেটায় ফুটপাথে সাজানো হরেক রকম পসরা।

বাঙালির পয়লা বৈশাখ পেরিয়েছে। দেখতে দেখতে কেটে গেল ইদও। আর কয়েক মাস পরে দুর্গোৎসব। লকডাউনে চৈত্র সেলের বাজার পুরোপুরি মার খেয়েছে। কোটি কোটি টাকার বেচাকেনা বন্ধ। ইদেও সেই একই পরিস্থিতি। হকার সংগঠনগুলির আশঙ্কা, আসন্ন পুজোতেও ব্যবসাপত্র ব্যাপক মার খেতে পারে।

লকডাউন কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হচ্ছে। এরফলে নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কলকাতার হকাররা ফের ফুটপাথে পসরা সাজিয়ে বসলেও ব্যবসা আদৌ জমবে কিনা, এই আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। হকার সংগঠনগুলির নেতাদের মতে, এর অন্যতম কারণ মানুষের হাতে পয়সা নেই। লকডাউনে ইতিমধ্যে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ফলে বাজার করার মতো আর্থিক সামর্থ্য বহু মানুষের থাকবে না। ধরে নেওয়া যায়, অনেকেই এ বছর পূজোয় নতুন জামাকাপড় কিনবেন না।

কলকাতার ফুটপাথে বসে যে হকাররা ব্যবসা করেন তাঁদের ৬০ শতাংশই কলকাতার বাসিন্দা। বাকিদের অধিকাংশই মহানগরীতে ব্যবসা করতে আসেন আশপাশের জেলাগুলি থেকে। এ ছাড়া কলকাতার ফুটপাথে যাঁরা হকারি করেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশ, বিহারের বাসিন্দারাও। তাঁরাও সংখ্যায় বেশ উল্লেখযোগ্য। লকডাউনে তাঁদেরও এখন না-চলার দশা। এ দিকে ঘরে ফেরার রাস্তা বন্ধ। দিন চলছে কোনো মতে। যদিও কলকাতার ৮০ শতাংশ বাসিন্দাই হকারদের উপর নির্ভরশীল।

হকার সংগ্রাম কমিটি সূত্রে জানা গেল, কলকাতা শহরের ২ লক্ষ ৭৫ হাজার হকারের মধ্যে ৪০ শতাংশ মহিলা। দৈনিক যে পরিমাণ সামগ্রী হকাররা বিক্রি করেন, তাতে লভ্যাংশ থাকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।

graet

 

এও জানা গেল, কলকাতার হকারদের একটা বড়ো অংশ কেবলমাত্র খাবার বিক্রি করেন। এঁরা মোট হকার সংখ্যার ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া একটা বড়ো অংশ সব্জি ও ফলমূল বেচেন। অন্যরা বেচেন পোশাক-আশাক কিংবা অন্য নানা ধরনের সামগ্রী। লকডাউনের পর থেকে মহানগরীর ফুটপাত শুনশান। শহরের সর্বত্র একই ছবি।

হকার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শক্তিমান ঘোষ বললেন, কলকাতা সহ সারা ভারতে হকাররা লকডাউন পর্যায়ে যে মার খেলেন তাতে ওদের ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল – যদি না সরকারী সহায়তা মেলে। লক্ষ লক্ষ হকারের হাতে এখন পুঁজি নেই। লকডাউনে পুঁজি ভাঙিয়ে সংসার প্রতিপালন করছেন ওঁরা। এ দিকে পুঁজি নেই উৎপাদকের কাছেও। ফলে পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ।

হকার সংগ্রাম কমিটির তরফে সরকারের কাছে ইতিমধ্যে কয়েক দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে, অবিলম্বে আগামী তিন মাস প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে হকারদের নগদ সহায়তা করা হোক। কলকাতা-সহ সারা বাংলার ১৬ লক্ষ হকারকে এই আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য দাবি জানানো হলেও এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সাড়া মেলেনি।

লকডাউন কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল হয়েছে। নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হকারদের ফুটপাতে বসার অনুমতি মিলেছে। তাতেও পুজোর বাজার জমবে বলে আশা করছে না হকার সংগঠনগুলির নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে হকার সংগ্রাম কমিটির বক্তব্য, লকডাউনে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। এখন সংসার টানতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। পুজোর বাজার করার মতো উদ্বৃত্ত টাকা বেশিরভাগ মানুষের হাতেই থাকবে না।

gar

 

দুর্গাপুজোর সময় হকাররা ফি বছর যে পরিমাণ ব্যবসা করেন তাতে দুর্গাপুজোর পরের ৬ মাস চলার মতো পুঁজি তাঁদের হাতে জমে। এ বছর সে আশাতেও জল। এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে হকার সম্প্রদায়ের মানুষের এখন খাবারটুকু জোগাড় করারও সংস্থান নেই। মহাজনের কাছে হাত পাতলেও মিলছে না কিছুই।

তাহলে কি লকডাউন উঠে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে? হকার সংগ্রাম কমিটির বক্তব্য, তেমন আশা নেই। লকডাউনে হকাররা যে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন তার মোকাবিলা করতে হলে বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে রূপায়িত করতে হবে।

হকার সংগঠনগুলির নেতাদের দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত হকারদের ৪ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ মঞ্জুর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়িত করতে হবে কেন্দ্রকে। এ ছাড়া জিডিপির খরচের অনুপাত বাড়াতে হবে। তাঁদের অভিযোগ, দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল, এ পর্যন্ত হকারদের টিকিয়ে রাখতে কোনো ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কেন্দ্র।

দরিদ্র মানুষের রোজনামচায় অভিনবত্ব কিছু নেই। দু’বেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থানের উপায়ের সন্ধানে তাঁদের দিনগুজরান করতে হয়। এছাড়াও আছে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, পরিবারের সদস্যদের অসুখ-বিসুখবাবদ আনুষঙ্গিক খরচ। সে সব কীভাবে জুটবে তা ভেবে পাচ্ছেন না হকাররা।

- সুতপা চক্রবর্তী  

geergger

২০১৮ সালের ২৬ জুলাই কমরেড ধূর্জটি প্রসাদ বক্সী প্রয়াত হন । ২০১১ সালের এই দিনেই প্রয়াত হয়েছিলেন কমরেড শংকর ব্যানার্জি। কমরেড শংকর ব্যানার্জি ছিলেন চুঁচুঁড়া লোকাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক ও এআইসিসিসিটিইউ-র জেলা কমিটির সদস্য। কমরেড প্রণবদারও আদি বাড়ি ছিল এই চুঁচুড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই ২০১৮ সালের পর থেকে ২৬ জুলাই দিনটি এই দুই কমরেডের স্মরণসভা একত্রে সংগঠিত হয় চুঁচুড়ায়। এবছর আন্তর্জাতিক সঙ্গীত সহ গানে, কবিতা পাঠে স্মরণ ও ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করার অঙ্গীকার নেওয়া হয়। স্থানীয় কমরেডরা ছাড়াও জেলা সম্পাদক, বর্ষীয়ান নেতা সনৎ রায়চৌধুরি ও কমরেড শঙ্কুর পরিবারের মানুষেরা এই স্মরণ ও অঙ্গীকার সভায় ছিলেন।

japgar

২৪ জুলাই প্রয়াত হলেন জাপানদা। ১৯৭০ দশক থেকেই বাঁকুড়ার বুকে বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় জেলা সদর বাঁকুড়া শহরের বুকে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে পার্টিকে বুক দিয়ে আগলে ধরে রেখেছিলেন যারা তাদের অন্যতম ছিলেন সকলের প্রিয় জাপানদা, কমরেড তরুণ প্রকাশ কুন্ডু। অত্যন্ত জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন। একটা বড় এলাকায় যে কোনো সামাজিক কাজে থাকতেন অগ্রণী ভূমিকায়। একদিকে অত্যন্ত মানবিক, নম্র বিনয়ী ব্যবহার, অপরদিকে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী দৃঢ়তা নিয়ে রুখে দাঁড়ানো এ দুটি দিক মিলেমিশে এক বিশেষ চারিত্রিক গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্য ছিলো তাঁর। রাজনৈতিক ভাবে ছিলেন অত্যন্ত নীতিনিষ্ঠ। এসব কারণেই অবিবাহিত এই মানুষটি শহরের বুকে এমনকি শহর লাগোয়া পার্টি কাজের বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলেও ছিলেন অত্যন্ত সুপরিচিত এক ব্যক্তিত্ব। শহরের বুকে তাঁর দোকানটা ছিলো অঘোষিত পার্টি অফিসের মতো, গোপন পার্টির সময়কাল থেকে জীবন্ত যোগাযোগের কেন্দ্র। পাশাপাশি বিভিন্ন বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক মানুষের মেলামেশার জায়গা। দোকান ব্যবসা সামলেও শহরের বুকে প্রতিটি মিটিং মিছিল ও নানা কর্মসূচীতে তিনি থাকতেন একেবারে সামনের সারিতে। বাঁকুড়া শহরের সতীঘাটে পার্টি অফিস নির্মাণে তাঁর এবং তাঁর ছোট ভাই শহরের সুপরিচিত কমিউনিস্ট বিপ্লবী কর্মী গান্ধীদার বিশেষ সাহসী ভূমিকা ছিলো। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বেশ কয়েক বছর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে প্রায় গৃহবন্দী জীবন কাটাতে হয়েছে। তবুও পার্টির খোঁজ খবর রাখতেন। বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। অশক্ত শরীর কিন্তু সংগ্রামী মেজাজে ও আশাবাদে ছিলেন ভরপুর। তাঁর প্রয়াণে বাঁকুড়ার বুকে পার্টি-কাজের এক উজ্বল অধ্যায়ের অবসান ঘটলো। তিনি ছিলেন আমাদের মতো সমস্ত সংগঠক ও কর্মীদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ একজন অভিভাবকের মতো। কমরেড জাপানদাকে জানাই অন্তরের শ্রদ্ধা ও লাল সেলাম।

- জয়তু দেশমুখ  

cceetree

কোন্নগর অরবিন্দ পল্লী নিবাসী কমরেড তৃপ্তিলতা রায় (বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর) কিছু অসুস্থতা নিয়ে গত ১৭ জুলাই উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং গত ১৮ জুলাই দুপুরে অনেক টালবাহানার পরে পার্টির তৎপরতায় তাঁর কোভিড টেস্ট করে হাসপাতাল। ঐদিন রাতেই কমরেডের মৃত্যু হয়। টেস্টের রিপোর্ট না আসায় তাঁর দেহ পরিবারকে দেওয়া হয় না এবং সময় চলে যেতে থাকে। এমতাবস্থায় গত ২১ জুলাই দুপুরে পার্টির তরফ থেকে উত্তরপাড়া হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানো হয়। জবাবদিহি চাওয়া হয় হাসপাতাল সুপার ও প্রশাসনকে। এই চাপে পড়ে সরকারের স্বাস্থ্য দফতর ও কর্তৃপক্ষ জরুরিভিত্তিতে গত ২২ জুলাই সকালে তাঁর ছেলে ও পার্টির সদস্য কমরেড তারক রায়কে হাসপাতালে ডেকে তার মৃতদেহ দেখায় এবং ডেথ সার্টিফিকেট ও টেস্ট রিপোর্ট দেয় যাতে জানা যায় যে কমরেড তৃপ্তিলতা রায় কোভিড পজিটিভ ছিলেন। ফলত তাঁর দেহ পরিবারের হাতে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কোন্নগর-উত্তরপাড়া অঞ্চলে বামপন্থী রাজনীতি বিশেষত প্রথম পর্বে সিপিআই পরে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পার্টি গঠনে কমরেড তৃপ্তিলতা রায়ের গোটা পরিবার ও বাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম। শুরুর দিকে একটা লম্বা সময় ওঁদের বাড়িতেই ছিল পার্টি অফিস। বিভিন্ন কর্মসূচীতে কমরেড তৃপ্তিলতা রায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ থেকেছে। পার্টি তাঁর লড়াকু জীবনকে লাল সেলাম জানাচ্ছে ও তাঁকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছে এবং তাঁর পরিজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছে। কমরেড তৃপ্তিলতা রায় অমর রহে।

vear

দক্ষিণ ২৪ পরগণার বজবজ গ্রামাঞ্চলের পার্টি সদস্য কমরেড সুশান্ত রায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ জুলাই প্রয়াত হয়েছেন । শ্রমজীবী মানুষ বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ‍্য থেকে গোটা পরিবারকে নিয়ে পার্টি ও ইউনিয়নে সামিল হয়েছিলেন। পরিবারের অন‍্য সদস‍্যরা আজও বজবজ গ্রামাঞ্চলে মানুষকে সংগঠিত করে চলেছেন। এরকম এক লড়াকু কমরেডের অকাল প্রয়াণে পরিবারের সাথে পার্টির জেলা কমিটিও শোকাহত। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি পার্টির জেলা কমিটি সমবেদনা জানাচ্ছে। কমরেড সুশান্ত রায় অমর রহে। কমরেড সুশান্ত রায় লাল সেলাম।

দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা কমিটি 
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন 

deekisreedewe

 

খণ্ড-27
সংখ্যা-26