করোনার ত্রাস থেকে আবিশ্বের পরিত্রাণ কবে মিলবে? তার কোনো সংকেত মিলছে না। বিজ্ঞানীরা প্রাণপাত করছেন প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য। যদি কিছু দাওয়াই বার করা যায়। কিন্তু তার হদিশ এখনও মিলছে না। ক’দিন একটা পরিসংখ্যান শোনা গিয়েছিল আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ১৮০। ইতিমধ্যে সংখ্যাটা কমেছে না বেড়েছে বোঝার উপায় নেই। যে সব দেশে এখনও সংক্রমণের খবর নেই সেখানে যে করোনা হানা দেবে না সেই নিশ্চয়তা নেই। তেমনি কোথাও প্রকোপ কমার খবর থাকলেও আবার যে সেখানে নতুন করে বাড়বে না তেমন আশ্বাস নেই। চীনের নমুনা লক্ষ্য করা যাক। করোনা ছড়ানোর দায়ী করে চীনের বাপান্ত করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প থেকে শুরু করে ভারতের বিজেপি-আরএসএস-এর আইটি সেল। আশার কথা করোনার উৎস উহানে লকডাউন উঠল ৭৬ দিন বাদে। কিন্তু একইসাথে খবরে প্রকাশ, চীনে নতুন করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। এ খবর ভূয়ো হলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেবে শুধু চীন নয়, গোটা বিশ্ব। কারণ করোনার বীজ মেরে ফেলতে পারার খবরই দিতে পারে সবচেয়ে আনন্দ। কিন্তু তা যদি না হয়, ভাবলে জড়ায় একরাশ শঙ্কা! এখনও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়ে চলাই প্রধান প্রবণতা, যদিও সুস্থ হয়ে ওঠার সাফল্য খাটো করে দেখার নয়, তবু মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। বলাবাহুল্য, দেশ বিশেষে থাকছে অবশ্য বহু তারতম্য।
ভারতে বিরাজমান ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলায় গত মাসদুয়েক আগে থাকতে অনেক কিছুই করার ছিল, করা হয়নি, এখনও বহু কিছু করা প্রয়োজন, তবে সব করা হচ্ছে যেন দায়সারার মতন। সংবেদনশীল নাগরিক সমাজ হাত লাগিয়েছে বহুমুখী উদ্যোগে। কিন্তু সবচেয়ে বড় দায়িত্ব যার, সেই রাষ্ট্রশক্তি কতটা দায়বদ্ধ হচ্ছে কথায় ও কাজে? এই প্রশ্নটাই সবচেয়ে তীব্রভাবে তোলা দরকার। ভারত রাষ্ট্রের ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয়। বরং যথেচ্ছ অবহেলা, গাফিলতি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অপদার্থতা, ব্যর্থতা, স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছে মোদী সরকার। হ্যাঁ, মোদী সরকারই সবচেয়ে দায়ী। কারণ কেন্দ্রের হাতেই রয়েছে সবথেকে বেশি ক্ষমতা। বিপদ ঘনিয়ে আসার বিগত মাস দু-তিনেক দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখে ক্ষমাহীন অন্যায় অপরাধ করা হয়েছে। তারপর জনগণের অপ্রস্তুত অবস্থায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘জনতা কারফিউ’ তকমা লাগানো লক ডাউন। এর ভোগান্তি যে কি মর্মান্তিক তা নিত্য টের পাচ্ছে জনগণ।
পরিস্থিতি ভীষণ এলোমেলো। বিশেষজ্ঞদের মতামতে নানা তর্কবিতর্ক। আমাদের দেশ ‘স্টেজ থ্রী’তে চলে যাবে কি যাবে না! বিপর্যয় ঠেকাতে লকডাউন অব্যাহত রাখা হবে, নাকি অন্য বিকল্প খোঁজা হবে! পরিবর্তিত ব্যবস্থা গ্রহণের বাস্তব বিবেচনাসম্মত ভিত্তিই বা কি হবে! কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে দু’বেলা শুধু কিছু শুকনো পরিসংখ্যান শোনানো হচ্ছে। তাতে মানুষকে আশ্বস্ত করার বদলে করে রাখা হচ্ছে ভীতসন্ত্রস্ত। অথচ সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত ও বাস্তব বিচারসম্মত উপায় নির্ধারণের যোগসূত্র যে একেবারে নেই তা নয়, রয়েছে। সেটা হল “ৠাপিড টেস্ট” ও “ৠাপিড রিলিফ” চালানোর পদক্ষেপ। একদিকে ক্রমাগত “পরীক্ষা”, অন্যদিকে সামগ্রী ও নগদ অর্থ মিলিয়ে ক্রমবর্ধমান “ত্রাণ” বণ্টন চালিয়ে যেতে হবে। দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিপূরক। বাইরের করোনা ঝড় যুঝতে গেলে শুধু লক ডাউনে থাকলে হবে না, ভরপুর থাকতে হবে জীবনী শক্তি, তার জন্য দরকার পুষ্টিকর পর্যাপ্ত খাদ্য-পরিস্রুত জল-পরিচ্ছন্ন পরিধান-ওষুধ পথ্যের সমাহার। আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) বিশেষ জোর দিয়ে বলার পরেও টেস্টে ব্যাপক গতিবেগ নেই। বলা হয়েছে, তিনদিনের ব্যবধানে টেস্টকে দিনপ্রতি ১০০০০ থেকে ২০০০০ করে তোলার কথা। কিন্তু এর জন্য দেশজুড়ে কত পরীক্ষা-কেন্দ্র খোলা হবে? এটা কি সংক্রমণ প্রবণ জেলা-অঞ্চল-এলাকা হিসেব করে চালানো হবে? উপসর্গ বুঝে তারপর পরীক্ষার পদ্ধতির পরিবর্তে চাপা বিপদ বুঝতে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে না। পরীক্ষা অভিযান প্রসঙ্গে তাই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। চালু হওয়া রিলিফের ব্যাপারেও একইরকমভাবে প্রশ্ন থাকছে। সরকার সদ্য একটা পরিসংখ্যান শুনিয়েছে। তা হল রাজ্যে রাজ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, উৎপাদক সংস্থা, পেশাজীবী শাখা, ক্লাব, সংঘ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কি করছে তার হিসাব। ত্রাণকাজে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনও, যে কথা কেন্দ্রের রিপোর্টে অনুল্লেখিত থাকে। যাই হোক, কেন্দ্র সরাসরি বা রাজ্যগুলোর সহায়তায় কি করছে সেই রিপোর্ট কোথায়? রেশনে কেন্দ্রের যে খাদ্যসামগ্রী বাড়ানোর ঘোষণা ছিল তা ঠেকছে কার্যত ধোঁয়াশায় ভরা। মিডিয়ার মাধ্যমে টানা প্রচার চলছে অনবরত পরিস্কার করে হাত ধোওয়ার। বিষয়টা নিয়ে কি নিষ্ঠুর পরিহাস করা হচ্ছে না! কোটি কোটি গরিবশ্রেণীর মানুষের কাছে উপকরণ জোগাচ্ছে সরকার? শুধু হাত ধুলেই হবে? পেট ভরছে কি? ভরবে কি করে? সরকার তার ব্যবস্থা করছে? মোদী সরকার এব্যাপারে চরম ব্যর্থ, বড় মাত্রায় ভাঁওতা দিয়ে চলছে। প্রসঙ্গত সুপ্রীম কোর্টের নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতি সহ তিন সদস্যের ঘরে পিটিশন দায়ের হল। নাগরিক সমাজের মানবদরদী প্রতিনিধিরা আবেদন করলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের হাতে কিছু টাকা দেওয়া হোক। প্রত্যুত্তরে বিচারপতির মন্তব্য, খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে, টাকার আবার দরকার কীসের? যেন সরকার যা বলছে তা ঠিকঠাক জোগান দিচ্ছে! যেন তাতে সপরিবারে উদরপূর্তি হচ্ছে! যেন কোনোমতে খাওয়া জুটলেই যথেষ্ট! প্রধান বিচারপতি সাফ শুনিয়ে দিলেন সরকার যা মনে করছে, করছে; সরকারের ওপর বিচারপতিরা তাদের জ্ঞান চাপিয়ে দিতে চান না। পরন্তু তাঁদের অবস্থানের অজুহাত দেখালেন এই বলে যে এবিষয়ে তাঁরা ‘বিশেষজ্ঞ’ নন। হায়! কিছু খাওয়া-পরা-শরীর স্বাস্থ্যের প্রয়োজন বুঝতে “বিশেষজ্ঞ” নই সাফাই গাইতে হয়। বুঝতে অসুবিধা হয়না এ হল অদৃশ্য দান-প্রতিদান সম্পর্কের অনিবার্য পরিণাম। প্রথম চোটে লক ডাউনের গোড়ার দিকে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার পথে মৃত্যুসংখ্যা বেড়ে চলার ঘটনাপ্রবাহ চলছিল। এরপর আসতে শুরু করেছে ঘরে থাকা গরিবদের অনাহারে মৃত্যু বা ক্ষিদের জ্বালায় আত্মহত্যার ঘটনা। আপার অসমের গোয়ালপাড়া জেলায় অনাহারে জর্জরিত হয়ে নিথর হয়ে গেছে বছর ৪০ বয়সী এক গ্রামীণ দিনমজুর। রিলিফ বিলিবণ্টন পর্যাপ্ত ও পরিকল্পিতভাবে না করলে লকডাউন জনিত অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
কাজের কাজ না করে মোদী সরকার নিজের ঢাক নিজে পেটাচ্ছে।
মোদী ও তার সরকার জুমলাবাজী আর ভাবমূর্তির গলাবাজিতে ওস্তাদ। আবার ধরাও পড়ে স্থূলভাবে। ৫ এপ্রিলের বুজরুকি ও শক্তি প্রদর্শন সাঙ্গ করার পর ৬ এপ্রিল বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসের বার্তায় মোদী বলেছিলেন, করোনার মোকাবিলায় ভারত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ ভারতের প্রশংসা করেছে, বিশ্বে ভারতের মর্যাদা বেড়ে গেছে, সব দেশ ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। আর কদিনের মধ্যেই ভারতীয় ও বিশ্ব জনতা দেখলেন এক সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি। করোনা তাড়ানোর ওষুধ না দিলে প্রকাশ্যে মোদী সরকারকে দেখে নেওয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি। তারপরেই মোদী সরকারের নতজানু রূপ। মার্কিন আধিপত্যবাদের দ্বারা আরও একবার আক্রান্ত হল ভারতের সার্বভৌমত্ব। মার্কিন মুলুকে ওষুধ যাবে গুজরাট থেকে। ট্রাম্প দাদাও বিলম্ব করেননি। মোদীর গুজরাটেশ্বর হওয়া থেকে দিল্লিশ্বর বনে যাওয়ার আখ্যানের পুনরুল্লেখ করে পিঠ চাপড়ে দেওয়া বার্তা দিয়েছেন তুরন্ত। করোনার হানা থেকে বাঁচা আর মোদী সরকারের কৃতকর্মের থেকে মান মর্যাদাকে বাঁচানোর লড়াই একাকার হয়ে যাচ্ছে। এইভাবেই গড়ে উঠতে পারে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে প্রকৃত একতা।
ভারতে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর দ্রুত হারে বেড়ে চলার খবরকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ২১ দিনের লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করল, যে লকডাউন সারা দেশে চলার কথা প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ২৪ মার্চ সন্ধ্যায়। এই এক সপ্তাহে আমরা তিনটে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি: (১) লকডাউনের নির্মম এবং পীড়নমূলক চরিত্র ও তার বিপর্যয়কর প্রভাব, (২) এক অতিমারীর মোকাবিলায় চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা এবং ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার চূড়ান্ত দুরবস্থার মধ্যে দুস্তর ব্যবধান, (৩) করোনা সংকটকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দিতে এবং তাদেরই একান্ত ফ্যাসিবাদী প্রকল্পকে উসকিয়ে তোলার মোদী সরকার এবং সংঘ-বিজেপি বাহিনীর সমবেত এবং মরিয়া প্রয়াস।
লকডাউন চাপানোর দুদিন আগে মোদী ১৪ ঘন্টার এক মহড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন যেটার নাম তিনি দিয়েছিলেন জনতা কারফিউ। পুরো তিন দিন সময় হাতে নিয়ে সেটা সংগঠিত করা হয়েছিল, কিন্তু ২১ দিনের লকডাউনকে নামানো হল মাত্র চার ঘন্টা সময় দিয়ে! লকডাউনের এই পর্যায়ে দিন মজুররা এবং দরিদ্র ও অসহায় জনগণের ব্যাপক অংশ টিকে থাকবে কিভাবে, মোদী তাঁর ভাষণে এসবের ধারকাছ দিয়েই গেলেন না। পরবর্তীতে অর্থমন্ত্রী তথাকথিত যে ত্রাণ প্যাকেজের ঘোষণা করলেন, কিংবা পরিযায়ী শ্রমিকদের খাদ্য ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশ রাজ্যগুলোকে দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে বিজ্ঞপ্তি জারি করল, সেগুলো আমাদের সেই তিমিরেই রাখল যে তিমিরে আমরা ছিলাম।
এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই যে, এই লকডাউন ব্যাপক সংখ্যাধিক জনগণের জীবন ও জীবিকায় কি প্রভাব ফেলবে সে ব্যাপারে সরকার কোন ভাবনা-চিন্তাই করেনি। যারা বাড়িতে থাকতে পারবে লকডাউনের সময় তাদের সময় কিভাবে কাটবে সেটা নিয়েই সরকার মাথা ঘামিয়েছে, আর সেই সমস্যার সমাধানে মোদী যোগার একটা অ্যনিমেশন ভিডিও জনসাধারণের কাছে ছেড়েছেন, আর তাঁর মন্ত্রীরা বাড়িতে বসে মিউজিক্যাল গেম খেলা বা টিভি-তে রামায়ন দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। বেঁচে থাকার কোনো রসদ না পেয়ে দলে-দলে শ্রমিক ও তাদের পরিবারগুলো পায়ে হেঁটে শত-শত মাইল পেরিয়ে বাড়ি যাবার লক্ষ্যে রাস্তা দিয়ে মিছিল করে চলেছেন – এদের কোনো ঠাঁই মোদীর ভারতে নেই। আর এ কথা তো ঠিক, যাদের বাড়ি বলে কিছু নেই অথবা বাড়িতে থাকা বা বাড়ি থেকে কাজ করার কোনো সম্বল নেই, লকডাউনের নীল নকশায় তাদের জায়গা হবেই বা কি করে। কিন্তু খিদের জ্বালায় যে কোনো লকডাউন চলে না, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই বোধদয়টা আমাদের আরও একবার হচ্ছে।
আজকের এই কঠিন সময়ে সরকার হৃদয়হীনতা ও নির্মমতা দেখালেও আমাদের কিন্তু সার্বিক সহানুভূতি ও অঙ্গীকার নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। সহায়সম্বলহীন অবস্থায় আটকে পড়া শ্রমিকদের খাদ্য ও রেশন দিয়ে সাহায্য করতে এবং তাদের সহগামী হয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে; করোনা ভাইরাস অতিমারী থেকে জনগণকে রক্ষা করার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত সতর্কতা এবং আচরণবিধি মেনে চলে গ্ৰামে তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে; এগুলোর সাথে অস্তিত্বের সংকটের মুখোমুখি হওয়া বিপর্যস্ত শ্রমজীবী জনগণের সাহায্যে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। কাজের খোঁজে বাইরে যান না, গ্ৰাম ও শহরের এমন দরিদ্রদের জীবন ও জীবিকাতেও বিপর্যয় এনেছে লকডাউন, এবং ত্রাণ সংগঠিত করে আর জনগণকে রক্ষা করা ও তাদের সেবা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ওই সমস্ত দুর্গত মানুষদের কষ্টের লাঘবে আমাদের সক্রিয় উদ্যম নিতে হবে।
করোনা অতিমারীর মোকাবিলায় যে চিকিৎসা পরিকল্পনা অনুসৃত হচ্ছে তা হল – করোনার লক্ষণ রয়েছে বা করোনা-আক্রান্ত দেশগুলো থেকে এসেছেন বা করোনা সংক্রমিতদের সংশ্পর্শে এসেছেন এমন প্রচুর সংখ্যক মানুষের রোগনির্ণয় পরীক্ষা করা। চিকিৎসার অন্য দিকে রয়েছে, করোনা রোগীদের বিচ্ছিন্ন করা বা কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া আর সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা। ভারতে পরিকাঠামো এবং প্রস্তুতিতে প্রতিটি বিষয়েই আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় শোচনীয় ঘাটতি রয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মীরা বুনিয়াদি সুরক্ষা সরঞ্জাম পাচ্ছেন না, এটা পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে। করোনা সংক্রামিতদের সংখ্যা যখন বেড়ে চলেছে এবং ক্রমেই আরো বেশি সংখ্যায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে তখন আমাদের চিকিৎসা প্রস্তুতির শোচনীয় দুর্বলতা প্রকট হয়ে সামনে আসছে।
নয়া উদারবাদী স্বাস্থ্য নীতি সরকারি স্থাস্থ্য পরিষেবাকে গৌণ অবস্থানে ঠেলে দিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার লাগামছাড়া বাণিজ্যিকীকরণ ও বেসরকারীকরণ ঘটিয়েছে। স্বাস্থ্য বিমা আসলে হল এই বাণিজ্যিকীকরণ ও বেসরকারীকরণ মুদ্রারই উল্টো দিক এবং সর্বজনীন উৎকৃষ্ট স্বাস্থ্য পরিষেবার বুনিয়াদি অধিকারের গোটা বিষয়টাকেই বড়-বড় কর্পোরেট হাসপাতাল এবং ওষুধ তৈরি ও বিমা কোম্পানিগুলোর গাঁটছড়ার স্বার্থের অধীন করে তোলা হয়েছে। জন স্বাস্থ্যের এতবড় সংকটের মুখোমুখি হয়েও সরকার তার অগ্ৰাধিকারে বদল আনতে অস্বীকার করেছে। ১৬০০০-এর কিছু বেশি হালকা মেশিন গান কিনতে সরকার ইজরায়েলের সঙ্গে ৮৮০ কোটি টাকার চুক্তি করেছে। এমনকি, নয়া দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইণ্ডিয়া গেট পর্যন্ত বিস্তৃত সেন্ট্রাল ভিস্তা অঞ্চলের সৌন্দর্যায়ন ও নব রূপায়নের জন্য যে পরিমাণ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, করোনা মহামারীর মোকাবিলায় আপৎকালীন মেডিক্যাল মিশনে মঞ্জুর করা টাকার পরিমাণ তার চেয়ে অনেক কম।
জনস্বাস্থ্যের এই অতিকায় সংকটে সরকারি তৎপরতায় প্রতীয়মান হচ্ছে নির্মম ঔদাসীন্য, এবং এরই সাথে তাল মিলিয়ে চলছে সরকারের পীড়নমূলক প্রশাসনিক ধারা এবং ফ্যাসিবাদী প্রকল্পের কেন্দ্রে থাকা সাম্প্রদায়িক এবং জাত-শ্রেণীর কতৃত্ববাদের উগ্ৰতা। পুলিশকে অবাধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিদিনই আমরা এক পুলিশ রাষ্ট্রের কিছু আভাস পাচ্ছি। বেরিলিতে বাইরের রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের সংক্রমণমুক্ত করার নামে তাদের সঙ্গে যে চরম অসম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে এবং বিপদের সম্ভাবনাময় প্রক্রিয়ার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, লকডাউন বলবৎ করার নামে নিয়মিতভাবেই নাগরিকদের যে ভাবে প্রহার করা হচ্ছে এবং অন্য ধরনের পৈশাচিক “শারীরিক শাস্তি” দেওয়া হচ্ছে – এ সবই সংবিধান ঘোষিত আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের “দমনমূলক স্বাভাবিকতার” নতুন স্তরকেই দেখিয়ে দেয়।
বাস্তবিকই, প্রতিটি পদক্ষেপেই ব্যক্তিপূজাকে কেন্দ্র করে স্বৈরাচারী শাসনের লক্ষণগুলো এবং ক্রমেই আরও বেশি করে কেন্দ্রীভূত এবং গুপ্ত প্রশাসনিক ধারাকে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। সরকার সদ্য-সদ্যই এক নতুন অর্থ তহবিল চালু করেছে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিএম কেয়ারস’, যে তহবিলের ওপর কোনো গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ বা তাতে কোন স্বচ্ছতা থাকবে না। এখন আবার গুজব নিয়ন্ত্রণের নামে সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে আর্জি জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যম সহ সমগ্ৰ মিডিয়ায় করোনা সংক্রান্ত খবরাখবরের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে দেওয়া হোক। ইতিমধ্যে, আধিপত্যকারী মিডিয়া চক্রগুলো ভারতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য তবলিঘি জামাতের ওপর দোষ চাপিয়ে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের এক প্রচারাভিযান শুরু করেছে।
আমরা যখন লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করছি তখন প্রথম সপ্তাহের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, বাড়িয়ে তুলতে হবে মানবিক সহমর্মিতা ও সংহতির শক্তিশালী বন্ধন দিয়ে সংকটের মোকাবিলায় আমাদের প্রহরা ও সমবেত অঙ্গীকারকে।
কলেজ জীবন প্রায় শেষ হবার মুখে। ১৯৮০ সালের গোড়ার দিক। সকাল আটটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত একটানা ক্লাস হবার পর একটু অবসর মিলেছে। দলবল নিয়ে এবার চায়ের ঠেকে যাবার তোড়জোড় চলছে। ক্যান্টিনের উল্টোদিকে একটা সিঁড়ির উপর বসে আছি, আর ও দু-একজন আসা বাকি। দলবল জুটিয়ে এবার বেশ কিছুটা সময় আড্ডা। আগের ক্লাসগুলোতে যারা নোট নিয়েছে তাদের উপর একটু হম্বিতম্বি। একটা ফটোকপি করে দিবি। সাধারণত মেয়ে বন্ধুরাই মন দিয়ে নোট নিতো। আর ওদের পয়সায় ওদের দিয়েই পরের দিন ফটোকপি করিয়ে আনা! আমাদের মত ফাঁকিবাজ ছেলেরা এসব জানতো। ওরা ঠিক করে আনবে। বন্ধুত্ব বলে কথা। এমন সময় হঠাৎ দেখি পাড়ার ২৫-৩০ জন বন্ধু আমায় খুঁজছে। কি ব্যাপার ? বলল, বড় এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। পাড়ার এক বন্ধু ইউনিভার্সিটিতে যাবার সময় বাস থেকে পড়ে যায়, একটা পা থেঁতলে গেছে। পা-টা কেটে বাদ দিতে হবে। একটা ইনজেকশন ওরা কোথাও খুঁজে পাচ্ছেনা। চায়ের পাট বন্ধ রেখে ওদের সঙ্গে দৌড় শুরু হল। শ্যামবাজার অঞ্চলের কোনও ওষুধের দোকানে এ্যান্টি গ্যাসগ্যা়ংরিং ( anti gas gangrene) ইনজেকশন পাচ্ছি না। সাপ্লাই নেই। দু-এক জন বলল, বেঙ্গল ইমিউনিটিতে যান, যদি থাকে। দৌড়, দৌড়। আমাদের মৌলালী পার্টি অফিস থেকে লেনিন সরণী ধরে ধর্মতলার দিকে ১০-১২ মিনিটের হাঁটা পথ ডানদিকে বেঙ্গল ইমিউনিটি'র অফিস। ঝকঝকে বাড়ি। না, এখনকার কথা বলছি না। এ রাজ্যে সবার ইমিউনিটি এসে যাবার পর বাংলা ও ভারত সরকার বেঙ্গল ইমিউনিটিকে সজ্ঞানে মরার সুযোগ দেবার জন্য লিকুইডেশন-এ পাঠিয়ে দিয়েছে। বছর দেড়েক অফিস কর্মচারীরা লাল ব্যানার নিয়ে বসে ছিলেন, এখন প্রায় প্রতিদিন যাওয়া আসার পথে তাঁদের আর কোথাও দেখতে পাই না। কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন। সে কথায় আবার আসা যাবে।
সোজা এমডি’র ঘরে পৌঁছে পরিচয় (ডাক্তারির ছাত্র + নকশাল) দিয়ে এক নিঃশ্বাসে সব বলে দুটো ইনজেকশন ফাইল চাইলাম। তিনি প্রথমে বললেন, স্টক তো নেই। তার পর কি ভেবে বললেন “কাশীপুরে আমাদের প্রোডাকশন ইউনিট আছে, ওখানে একবার খোঁজ নিন। আমি ওদের ফোন করে দিচ্ছি” । আবার দৌড়। ওখানে পৌঁছে একই সংবাদ। স্টক নেই। আমরা নাছোড়বান্দা। দিতেই হবে। একটু অপেক্ষা করতে বললেন। তারপর বললেন, ফ্রিজ থেকে দুটো দিলাম। কাউকে বলা চলবে না। আমাদের বলার সময় কোথায়। একদৌড়ে (ট্যাক্সিতেই) কাশীপুর থেকে আর জি কর হাসপাতালের সার্জারি বিল্ডিং এ। বন্ধুর পা-টা বেঁচে গিয়েছিল।
সেই ‘বেঙ্গল ইমিউনিটি’ আজ বন্ধ। শ্রমিকরা হারিয়ে গেলেন আহত অভিমান নিয়ে। আজ করোনা ভাইরাস আমাদের মনে করালো আমাদের ইমিউনিটি কোথায় আছে। Rapid card test-এর কথা এখন সবাই বলছেন। রক্তে IGM ও IGG level কী অবস্থায় আছে। করোনা রুখতে কাজে লাগবে।
এরমধ্যে আবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ঢুকে পড়েছে। করোনা নিয়ে এদেশে যখন মহামারির দিন গোনা শুরু হয়েছে, তখন এই বোম্বেটে-ই বুকে জড়িয়ে নরেন মোদীকে বিশ্বনেতা বানাচ্ছে!! ওষুধ আমরা দেব, আমাদের কষ্ট স্বীকার করেও। কিন্তু হুমকি দিলে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইনের একটা ট্যাবলেট ও দেবনা। দেব, আমেরিকার জনগণকে বাঁচাতে। ইউ এন ব্রহ্মচারী যখন কালাজ্বর-এর ওষুধ আবিষ্কার করলেন তখন সারা বিশ্বকে সেই ওষুধ আমরা যোগান দিয়েছি। সবার মনে থাকার কথা। এমনকি দেশ দখলে আসা ব্রিটিশ সেনারা যখন এদেশে ম্যালেরিয়ায় মারা যাচ্ছিল, তখনও আমরা ওদের ক্লোরোকুইন খাইয়েছি। আর আজ আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। উত্তরবাংলায় যারা দার্জিলিং, কালিম্পং গেছেন, তাঁরা দেখেছেন, ৭-১০/১৫ মিটার উঁচু প্রায় ২৫ প্রজাতির সিনকোনা গাছ। ১৬৩২/৩৩ সাল থেকেই এই গাছের ছাল বাকল থেকে রস বার করে মানুষ ঐ কাঁপুনি জ্বরের চিকিৎসা করতেন। এই দার্জিলিং কালিম্পং জেলায় প্রায় ২৬,০০০ একর জমিতে সিনকোনার চাষ হত। শুধু ম্যালেরিয়া নয়, লুপাস ইরিথোমেটোসাস এবং আর্থ্রাইটিস এর মত অটোইমিউন ডিজিজেও এর ব্যবহার আছে। তাই তো ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর এত হম্বিতম্বি ! সে কথা পরে হবে। আমাদের বেঙ্গল কেমিক্যাল ও বেঙ্গল ইমিউনিটি পারস্পরিক সহযোগিতায় হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ট্যাবলেট তৈরি করত। বেঙ্গল ইমিউনিটিকে মেরে ফেলা হল, আর বেঙ্গল কেমিক্যালকে মেরে ফেলার কাজ মোটামুটি সেরে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আমাদের সরকার কত বিবেচক। দার্জিলিং কালিম্পং এর ঐ ২৬০০০ একর জমি থেকে ১০০০ একর জমি এনটিপিসি-কে দিয়েছে ।বিদ্যুৎ তৈরি করতে হবে না। আমাদের বাম বন্ধুরা তখন রাজ্যের ক্ষমতায়। আমরা চিৎকার করে উঠেছিলাম, এই সর্বনেশে কাজ করবেন না। ঐদিকে কমরেড অভিজিৎ, বাসু চিৎকার করছে, এদিকে বরেণদা (প্রয়াত বরেণ ভট্টাচার্য) একের পর এক সংবাদপত্রে এই সর্বনেশে পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লিখে চলেছেন। কাকস্য পরিবেদনা। সিনকোনা গাছগুলো চোখের সামনে মরে যাচ্ছে। প্রতিভা বসু লিখেছিলেন, “স্মৃতি সততই সুখের”। সত্যিই কি? রোগ তো শুধু শরীরে হয় ? না সমাজেরও হয়। করোনা সে কথাটা নতুন করে মনে করালো। আসুন আমরা সমাজের রোগ সারাতে তৎপর হই।
পাকিস্তানে ঘৃণা করতে শেখানো হয় একটি নামকে – চার্লস ডারউইন। স্কুলশিক্ষক এবং ইউনিভার্সিটি প্রফেসর, যাদের কাজ ডারউইনের বিবর্তনবাদ পড়ানো, তাঁরা হয় এই বিষয়টিকে বাদ দিয়ে যান অথবা অবজ্ঞাভরে বিষয়টিকে খানিক মোলায়েম করে পরিবেশন করেন। সাধারণভাবে জীববিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টিকে বাজে জঞ্জাল হিসেবে প্রতিভাত করে পড়ানো হয়, ব্যাখ্যা এইভাবে দেওয়া হয় যে দুটি রিক্সার ধাক্কায় “একটি মোটরগাড়ির বিবর্তন” আর একটি প্রজাতির বিবর্তন যেন প্রায় এক জিনিস। ইমরান খান তাঁর ২০০২ সালের একটি প্রবন্ধে পশ্চিমী দুনিয়ার মূর্খতা তুলে ধরতে লিখেছেন, “ডারউইনের মতো দার্শনিকের বিবর্তনবাদের আধখেচড়া তত্ত্ব যা কি না সৃষ্টিতত্বকে ও সেইসাথে ধর্মের অস্তিত্বকে ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছেন তা নিয়ে বাড়াবাড়ি চর্চা হয়।”
করোনার রূঢ় ভবিষ্যৎ যখন আমাদের দোরগোড়ায় উপস্থিত তখন এতে কিছু যায় আসেনা যে ডারউইন প্রকৃতিবিদ ছিলেন নাকি জীববিজ্ঞানী, ভূবিজ্ঞানী ছিলেন না দার্শনিক। এতেও কিছু যায় আসেনা যে খ্রিষ্টান, ইহুদী এবং হিন্দু অন্ধবিশ্বাসীরা ডারউইনকে উঠতে বসতে গালিগালাজ করেন। বরং আজকের এই বিভীষিকাময় ভাইরাসকে হারানোর উপায় একমাত্র ডারউইনের ২০০ বছরের পুরনো আবিষ্কার – ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’-এর মধ্যেই খুঁজতে হয়।
খুব সংক্ষেপে, প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ বলে যে, পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব কোনো পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্য বা আকার নিয়ে হয়নি। এই ধারণা পারম্পরিক মতবাদের অন্তরায়। বিবর্তনবাদ অনুসারে, মানুষ হোক বা আণুবীক্ষণিক কোনো জীব, বেঁচে থাকে তারাই যারা কোনো বিশেষ পরিবেশের উপযোগী হয়, বাকিরা খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে কালের নিয়মে পৃথিবী থেকে নিশ্চিন্হ হয়ে যায়। এলোমেলো ও উদ্দেশ্যহীনভাবে তৈরি হওয়া নতুন ধরনের প্রাণ বা প্রাণকণাকে বিবর্তনবাদ খুব গুরুত্বের সাথে প্রাধান্য দেয়। কিছু জিনিস যেমন করোনা ভাইরাস নানা প্রাণী বা মনুষ্য শরীরের সংস্পর্শে এসে উপযোগী পরিবেশ পেয়ে বিবর্তিত হয়ে জাঁকিয়ে বসে।
বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই ভাইরাসের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার একমাত্র উপায় লুকিয়ে রয়েছে ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদ তত্ত্বের ওপর।
ব্যাপারটা মনঃপূত হয়নি? তাহলে নিজের জন্য কিছু স্লাইড আর একটি শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ব্যবস্থা করুন – আসলে এক্ষেত্রে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র সবচেয়ে ভালো হবে। তারপর ধৈর্য ধরে পর্যবেক্ষণ করতে থাকুন যতক্ষণ কোষ বিভাজন হচ্ছে। খুব শিগগির আপনি দেখতে পাবেন, যে প্রতিলিপিগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলি নানারকম খুঁতে ভরা। এদের মধ্যে বেশিরভাগ বাজে কোষ, মরে যাবে, আর ভালো কোষগুলি বহুলসংখ্যায় বংশবৃদ্ধি করে চলবে।
ক্যান্সার কোষ এইভাবে তৈরি হয়। স্লোয়ান-কেটেরিং ক্যান্সার কেন্দ্রের পরীক্ষানিরীক্ষায় দেখা যায় খুব সাধারণভাবে প্রাপ্ত ব্যাক্টিরিয়া কী ধরনের আচরণ করে যখন তাদেরকে তাদের স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এথেকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আণবিক জীববিজ্ঞানী, হর্মিত মালিক বলেছেন, “প্রাকৃতিক বিবর্তন পৃথিবীর ভাগ্য-নির্ধারক ইঁদুর বেড়ালের খেলা বিশেষ। ভাইরাসরা বিবর্তিত হয়, ভাইরাসের আশ্রয়দাতা নিজেকে সেই অনুযায়ী পরিবর্তন করে, প্রোটিনরা পরিবর্তিত হয়, ভাইরাসরা হাল ছেড়ে দেয় বা আক্রমণের নতুন রাস্তা খুঁজে নেয়। এই ঘটনাপ্রবাহ অন্তহীন।”
নিউটনের তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানে যতটা মৌলিক, জীববিজ্ঞানে ডারউইনের চয়নবাদ ঠিক ততটাই। মাধ্যাকর্ষণের তত্ত্ব না মানলেও মাধ্যাকর্ষণ উধাও হয়ে যায় না। যদিও এই তত্ত্ব না মানলে পদার্থবিদ্যা পড়ার ক্ষমতা থাকবে না আমাদের। একইভাবে, বিবর্তনবাদ পড়ানো বন্ধ করলেই নতুন নতুন ভাইরাসের বিবর্তন থেমে যাবে না। কিন্তু সেক্ষেত্রে রোগব্যাধি, মহামারিকে বৈজ্ঞানিকভাবে জানার চেষ্টা ভুলে যেতে হবে।
ডারউইনের চয়নবাদ ব্যতিরেকে জীবাণু ও তার আশ্রয়ের মধ্যেকার মিথস্ক্রিয়া তথা রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর বিবর্তন বোঝার প্রক্রিয়াও শুরু করা যাবেনা এবং এদের ওষুধ আর টীকা বানানোর প্রক্রিয়াও শুরু করা যাবেনা। দিন এবারে ডারউইনকে যত খুশি গালি যোগ্যতম জীবের উদ্বর্তনের নীতি আবিষ্কারের জন্য। কিন্তু তাহলে নিউটনকেও গালিগালাজ করতে হবে কারণ আপেল কিন্তু ওপর দিকে চলে যাওয়ার বদলে নীচেই পড়তে চায় শুধু।
বর্তমান সুসমাচার : অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ বুঝতে শুরু করেছেন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় এগোলে কাজ হয়, অবৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় হয় না। তার থেকেও ভাল খবর হল, বিজ্ঞান-প্রত্যাখ্যানকারী এবং সবচেয়ে গোঁড়া বিশ্বনেতারাও বিজ্ঞানীদের অনুরোধ করছেন দ্রুত একটা নিরাময়ের পথ বের করতে। তাদের সব ধর্মবিশ্বাস, ব্যালকনিতে থালা বাজানো আর হাততালি দেওয়া, ইত্যাদির পরেও শেষ অবধি করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক ও ওষুধের জন্যই প্রার্থনা করতে হচ্ছে। ধাপ্পাবাজি, তর্জন-গর্জন আর ফাঁকা বাগাড়ম্বরের সীমা রয়েছে।
যেমন ধরুন নরেন্দ্র মোদী ও তার প্রাচীন ভারতের ঔষধশাস্ত্রের দক্ষতার দাবি। তিনি এবং তার হিন্দুত্ববাদী সাঙ্গপাঙ্গরা বছরের পর বছর গোমূত্রের ঔষধগত গুণাগুণের ব্যাপারে চেঁচিয়ে চলেছেন, এবং আয়ুর্বেদ আর যোগার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থেকেছেন। কিন্তু ভারত তার সবথেকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলিতে জরুরি ভিত্তিতে ‘কাউ-কা-কোলা’ আর গোবর তৌ পাঠাচ্ছে না।
আবার, সীমানার এই প্রান্তে আমরা এখনো জাহাজভর্তি আজওয়া-খেজুর আনার আদেশও তো দিইনি। পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ধর্মপ্রচারক তথা ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ মিত্র মৌলানা তারিক জামীলের মতে এই খেজুর তো যেকোনো রোগ সারিয়ে দিতে পারে। প্রশাসন এখনো ১০ লাখ কালো পাঁঠা বলীর আয়োজনও করছেনা বা পাইকারি হারে অলিভ তেল বা কালো জিরেও আমদানি করছে না।
পরিবর্তে ক্ষমতার অলিন্দে মেজাজ এখন শঙ্কাচ্ছন্ন চিন্তায় নিমগ্ন। গত শনিবার পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানে একটি নাটকীয় একান্ত প্রর্থনার আয়োজন করেন। গা-ছমছমে, ফাঁকা চত্বরের দিকে তাকিয়ে তিনি পৃথিবীবাসীকে আহ্বান জানান কোভিড-১৯ মহামারীকে নিজেদের ঐক্য ও সংহতির পরীক্ষা হিসেবে দেখতে। তিনশো বছর আগে চার্চ প্লেগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ‘স্বর্গীয় শাস্তিপ্রদান’ আখ্যা দেওয়া বন্ধ করেছে।
ইরানেরও তিক্ত শিক্ষা হয়েছে। গত মাসে, তার ধর্মীয় প্রশাসকরা বুঝতে পারেন যে শুরুর দিকে তারা কোম বা মাষাদের মত তীর্থক্ষেত্রে তীর্থযাত্রীদের যেতে দিয়ে ঐতিহাসিক ভুল করেছে। এই ছাড়পত্র পরে খারিজ করা হয়, কিন্তু ইরান জানিয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা ইতিমধ্যে ৩০০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং এই রোগ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও ছড়িয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা হল, সৌদি আরব উমরাহ স্থগিত করেছে এবং ঘোষণা করেছে শিগগিরি তারা হজের বিষয়েও সিদ্ধান্তে আসবে। কোটি কোটি মানুষ একজায়গায় আসবে, যারা অবধারিতভাবে নিজেদের দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে দেবে – এই ব্যাপারটা প্রত্যেক মুসলিম প্রধান দেশের রাজধানীতে এক একটা আণবিক বোমার বিস্ফোরণের মতোই ভয়াবহ। উদাহরণস্বরূপ, চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডের অর্ধেক মানুষ মারা গেছিল এবং ইউরোপের অন্যান্য জায়গায় ২.৫ কোটি লোক মারা গেছিল।
যদি এই বছরের হজ মোহম্মদ বিন সালমানের তত্ত্বাবধানে না হয়ে ইমরান খানের তত্ত্বাবধানে হত? সেক্ষেত্রেও তিনি একই সিদ্ধান্ত নিতেন তো? পিটিআই প্রশাসন এই ঘটনার গুরুত্ব খুবই হালকাভাবে নিয়েছে। তাবলিঘি জামাতের বৈঠক নিষিদ্ধ হয়েছে এখন, কিন্তু তার আগেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। তীর্থযাত্রা এখনও হয়ে চলেছে।
সৌভাগ্যবশত, সিন্ধ এবং বালোচিস্তান কর্তৃপক্ষ অনেক বেশি দৃঢ়তা দেখিয়েছে। তদুপরি, সামরিক বিভাগ মনে হয় প্রশাসন ছাড়া অন্য জায়গা থেকেও আদেশ নিচ্ছে এবং কড়া হাতে সম্ভাব্য রোগের জায়গাগুলিকে বন্ধ করছে। পাকিস্তানের শহরে শহরে চেকপয়েন্ট বসানো হয়েছে যার সাহায্যে মানুষের এবং তাদের বহন করা ভাইরাসের মুক্ত গতিবিধি বন্ধ করা হচ্ছে। এই ব্যবস্থা পর্যাপ্ত হবে কিনা তা ভবিষ্যৎ বলবে।
জীববিজ্ঞান – চার্লস ডারউইন যার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন – এর সুবাদে করোনা ভাইরাস কালক্রমে এক ভয়ানক কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য পরিঘটনায় পর্যবসিত হবে। সব শেষে পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা হয়ত বহু দশক বা শতকের হাজার গুণ হবে। কিন্তু বিজ্ঞান-পূর্ববর্তী যুগের প্লেগের মৃত্যুহারের তুলনায় এই সংখ্যা হবে নগণ্য। আপনার জীবনও এখনও আবিষ্কার না হওয়া ওষুধ বা টীকার কল্যাণেই বাঁচতে পারে। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুফল ভোগকারী প্রত্যেক ব্যাক্তির ডারউইনকে তাঁর তথাকথিত পাপের জন্য ক্ষমা করে দেওয়াই উচিত।
লেখক লাহোর এবং ইসলামাবাদে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
৪ঠা এপ্রিল, ২০২০র Dawn পত্রিকায় প্রকাশিত। ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন কৌশিকী ভট্টাচার্য।
মূল প্রবন্ধ "Herd-immunity" is Epidemiological Neoliberalism - Isabel Frey; March 19, 2020, The Quarantimes
সারানুবাদ- নির্মাল্য দাশগুপ্ত
যখন সারা ইউরোপ সামগ্রিক বন্ধের বা lock-down র দিকে এগোচ্ছিল, ব্রিটেন তখনো গয়ংগচ্ছ ভাব দেখাচ্ছিল। আর নেদারল্যান্ড, সুইডেন তো এই lock-down এর বিরোধিতাই করছিল, WHO এর প্রচুর গালাগাল সত্বেও।
এদের মত ছিল, এসব সামগ্রিক lock-down বিশেষ কাজের কথা নয়। বুড়ো বুড়িদের ঘরে রাখ, কারণ তাদের খতরা বেশি। ছেলে ছোকরাদের খতরা কম, তাদের চড়তে দাও। তাদের করোণা হলেও দেহে করোণার বিরুদ্ধে সম্মিলিত-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা Herd-immunity তৈরি হবে। এর ফলে আবার যদি করোণা ফিরে আসে, তখন আর কোনো বিপদ হবে না। এদিকে ব্যবসা পত্তর , বাজার হাট যেমন চলছে তাও দিব্যি গড়গড়িয়ে চলবে। এই সব মহামারির ভয়ে অর্থনীতির গতি থামানো ভাল কথা নয়!
প্রচুর বিজ্ঞানী, ভাইরাস বিশেষজ্ঞ, মহামারী বিশেষজ্ঞ এই নিয়ে এদের তুলোধোনা করলেও এই তিন দেশ গা করেনি। শেষে যখন অঙ্ক কষে দেখা গেল এই মনোভাবে ব্রিটেনে আড়াই লাখ লোক মরতে চলেছে। তখন ব্রিটেন তার নীতি বদলালো।
কিন্তু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে, এই তিনটি দেশের নিজের নাগরিকদের প্রতি এই মনোভাব আকাশ থেকে পড়েনি। ১৯৮০ র দশক থেকে প্রচলিত নব্যউদারনীতির একটি অনুশীলন মাত্র এই নীতি। যে নীতি বলে, আগে টাকা, তারপর জনসাধারণ। এবং লোককে বিশ্বাস করানো হয়, তার দারিদ্র, তার বেকারত্ব, তার বঞ্চনা সব তার নিজের কারণে। বাজার তো খোলা ছিল, সবাই লড়ে নিল, তুমি পারলে না বাপু, এ তোমার দোষ! এজন্য কাঁদুনি গাইবার কোনো মানে নেই। রাষ্ট্রের এতে কোনো ভূমিকা নেই।
তার ফল কি দাঁড়ায়? আরো আরো বেশি করে বৈষম্য বৃদ্ধি। জনতাকে এই বিশ্বাস করানো খালি ভুল নয়, নৃশংসতা। ফলস্বরূপ, ধনী আরো ধনী হতে থাকে, গরীব আরো গরিব।
সম্মিলিত-প্রতিরোধ ক্ষমতা বা herd-immunity এই নব্য উদারবাদেরই আরেকটি রূপ।এবং তার চরিত্র অনুযায়ী হিংস্র ও নৃশংস। সংক্রমণ ছড়াতে দাও, মারা যাবে কে? কেনা জানে, দারিদ্র আর অসুস্থতার মাণিকজোড় সম্পর্ক। তাই মারা যাবে সবদিক থেকে দুর্বল শ্রেণী। গরিব, অপুষ্ট, অশক্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গৃহহীন, অন্যান্য রোগাক্রান্ত, শরণার্থী, এরা। কারণ অর্থের অভাবজনিত অপুষ্টি আর বিনা চিকিৎসা।
ইউরোপের দুই দেশ ব্রিটেন আর নেদারল্যান্ড ঘোষিত ভাবেই কয়েক দশক ধরে এই নীতির ধারক-বাহক। অত্যন্ত সুচারু ভাবে এই দুই রাষ্ট্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা আর আবাসন সমস্যা থেকে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলেছে। তাই অর্থনৈতিক ক্ষতি করে সংক্রমণ বন্ধের চেষ্টা এদের কাছে বাতুলতা। সামাজিক গণতান্ত্রিক সুইডেনও আজ নব্য উদারবাদের পথিক হয়েছে বেশ কয়েক দশক হল।
ইউরোপের অন্যান্য দেশ যখন, সংক্রমণের গতিরোধ করতে lock-down করছে, যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা রোগীর চাপে ভেঙ্গে না পড়ে এই ভেবে, তখনও এরা কিন্তু নির্বিকার ছিল।
অথচ, ইটালির তুলনায় ব্রিটেন আর নেদারল্যান্ডের জনপ্রতি হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা আর্ধেক, সুইডেনের আরো কম।
এই সংখ্যাক শয্যা সংখ্যা দিয়ে তারা যে এই মহামারি সামলাতে পারবেনা, এতো তাদের জানাই ছিল, তাও তারা এরকম করল কেন?
কারণ, এই herd-immunity তাদের নব্য উদারবাদের সাথে একদম খাপে খাপে মিলে যায়। রাষ্ট্র পুরো দোষটা চাপাতে পারে তার নাগরিকদের ওপর। তোমরা যা বলা হয়েছিল মান নি, যথেষ্ট চেষ্টা করনি, তোমরা ঘুরে বেড়িয়েছ, আক্রান্তদের দায়ী করা যায়, তোমরা আক্রান্ত হয়েও কোয়ারেন্টাইনে যাওনি ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রকৃতি, কপাল, তোমার বেপরোয়া ভাব, যাকে খুশি দায়ী করো, সরকারকে দায়ী না করলেই হল।
Herd-immunity তাই খালি বিজ্ঞান হিসেবে ভ্রান্ত বা নীতি হিসেবে ভ্রান্ত নয়, এটা একটা জৈবযুদ্ধে নাগরিককে ঠেলে দেবার নৃশংস প্রক্রিয়া। যারা সামাজিক ক্ষেত্রে ডারউইনের “survival of the fittest” বা যোগ্যতমের উদ্বর্তন নীতিটি আপ্তবাক্য করে নিয়েছে, কয়েক দশক আগে, তারই চূড়ান্ত রূপ হল এই পদক্ষেপ। কারণ যারা এই মতবাদের ধারক-বাহক, তারা খোলা বাজার আর খোলা মহামারী দুটোতেই একই ভাবে বিশ্বাস করে – তার জন্য কিছু মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু এসে যায় না।
দীর্ঘ লকডাউন যে খাদ্য সংকটের জন্ম দিতে চলেছে তা মোকাবিলায় বহুমুখী উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকার রেশন দেওয়ার কিছু কর্মসূচী নিচ্ছে কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। খাদ্যশস্য জোগান এবং তা কেনার জন্য গ্রামীন জনতার হাতে টাকা – এই দুই দিক নিশ্চিত করা জরুরি। কৃষকের ফসল ফলানো, তা ঘরে তোলা ও সরকার দ্বারা তার সংগ্রহ এবং কৃষিপণ্যের বেসরকারী পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত রাখা – এই সমগ্র বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, লকডাউনের পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যেই যা সংকটে পড়ছে।
রবিশস্য ঘরে তুলে খারিফ চাষে নামার মরশুম শুরু হচ্ছে এপ্রিলের এই সময়টা। ফসল কাটার ক্ষেত্রেই প্রথম সমস্যা। লকডাউনের বিধিনিষেধ ও ভাইরাস আতঙ্কের কারণে লেবার পাওয়া কঠিন হবে, গম কাটা-ঝাড়া মেশিন বা ডিজেল ইত্যাদিও সহজে পাওয়া যাবে না। তার থেকেও বড় কথা হল অধিকাংশ কৃষকই এসবের খরচের জন্য সাধারণত বিভিন্ন ব্যবসায়ী এজেন্টদের লোনের ওপর নির্ভর করে যা পাওয়া এবার অতটা সহজ হবে না। সরকার সঠিক সময়ে কৃষকের ফসল সংগ্রহ করবে কি না এই অনিশ্চয়তার ফলে লোন দিতে অস্বীকার করবে ব্যবসায়ি ও এজেন্টরা, অথবা কৃষকদের চাপে ফেলে সস্তায় ফসল হাতিয়ে নেবে। কৃষকদের পক্ষেও সরকারী সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ওপর ভরসা করে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠবে। অথচ উদ্বৃত্ত ফসল বাজারজাত করা কঠিন হবে। সব মিলিয়ে কৃষকের সংকট গভীর হবে। সাধারণ সময়েই অভাবী বিক্রি এক অবশ্যম্ভাবী প্রবণতা হয়ে থাকে। লকডাউনের এই সময়ে তা চরম আকার নেবে। মধ্যবিত্তদের দ্বারা স্টক করে রাখার প্রবণতা ব্যবসায়িদের মজুদদারি বাড়িয়ে দেবে যা সাধারণ গরিব মানুষের জন্য খাদ্য জোগান ও ক্রয়কে সংকটময় করে তুলবে।
এই সময় সরকারের জরুরি কর্তব্য হল সমস্ত কৃষকের কাছ থেকে, সরকার ঘোষিত মূল্য সুনিশ্চিত করে, সমস্ত রবিশস্য কিনে নেওয়া, ফসল পরিবহনের জন্য গ্রাম স্তর পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনা সরবরাহ করা এবং আন্তঃজেলা ও আন্তঃরাজ্য কৃষি পণ্য পরিবহনে সরকারী সহায়তা বা ইনসেনটিভের ব্যবস্থা করা। আসন্ন খারিফ মরশুমে আরও বেশি বেশি খাদ্য শস্য উৎপাদনে কৃষকদের সর্বতভাবে উৎসাহিত করতে হবে সরকারকে। খরচ কমাতে সেচের বিদ্যুত ও ডিজেলে ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন। একই রকম ভাবে সার ও কীটনাশক সরবরাহ করাটাও জরুরী। সমবায়গুলির মাধ্যমে বেনফেড কনফেড প্রভৃতি সরকার নিয়ন্ত্রিত এজেন্সির মাধ্যমে উপকরণ প্রধানত সার সরবরাহ করা দরকার। ভাগ-চুক্তি চাষিরা চাষাবাদের বড় জায়গাটা ধরে রেখেছে, অথচ তারা কোনোরকম সরকারি সহায়তাই পাচ্ছে না। কৃষিদপ্তর থেকে সরাসরি এদের নথিভুক্তিকরণ প্রয়োজন যাতে বীমা বা অন্যান্য সরকারী সহায়তা তারা পায়।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ ভারতের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। করোনা ভাইরাস মনুষ্য সমাজকে এমন এক বিপদের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যেমনটা এর আগে বিশ্ব সভ্যতা কোনদিন সম্মুখীন হয়নি। করোনা ভাইরাস বিশ্ব ও আমাদের দেশের অর্থনীতির অভূতপূর্ব ক্ষতি করেছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে এই বিপদের অবসান কবে হবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে আমাদের অনেক সময় লাগবে।
কিন্তু দেশে আপাতকালীন সমস্যার মধ্যে একটি হল অনাহার সমস্যা। কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাঙ্কের খাতায় টাকা পাঠাচ্ছে। কিন্তু লকডাউন সরানো অবধি অনেক গ্রামের মানুষ ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা তুলতে পারবে না। লকডাউন ওঠার পর ব্যাঙ্কগুলো অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। রেশন দোকানের মাধ্যমেও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু রেশন কার্ড দিয়ে তোলা খাবার পরিবারে সমস্ত সদস্যকে পেতে হলে তাদেরকে একসাথে থাকতে হবে। কিন্তু বহু মানুষ কাজের সূত্রে শহরে থাকে। তারা কিভাবে খাবার পাবে? সেইজন্য প্রবাসী শ্রমিকরা হাজারে হাজারে গ্রামে আসার চেষ্টা করেছেন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে শহর থেকে গ্রামের দিকে মানুষের প্রত্যাবর্তন শুরু হয়েছে। গ্রামে যারা ভূমিহীন পরিবার তাদের পয়সা রোজগার করার আর কোন জায়গা থাকবে না। একশ দিনের কাজ বেশির ভাগ জায়গায় বন্ধ। তৎকালীন ভাবে মানুষের কাছে থালায় খাবার জোগানোর উপায় প্রায় নেই। তাদের পক্ষে অন্য জেলায় কৃষি কার্য করতে যাওয়াও সম্ভব না। যারা রেশন ব্যবস্থার আওতার বাইরে বা রেশন দোকানের সুবিধা নিতে পারছে না তাদের অনাহার ছাড়া গতি নেই। জাত এবং শ্রেণী বিভাজন এখানে অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।
এমতো অবস্থায় সবচেয়ে জরুরী প্রয়োজন হল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কোনো শর্ত ছাড়া খাবার দেওয়া দেশের সব জায়গায়। রাজ্য সরকারগুলি কিছু কিছু জায়গায় এরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে কিন্তু কেন্দ্রীয় সহায়তা দরকার। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৬ কোটি টন খাদ্য শস্য মজুত করা আছে। সেগুলোর ব্যবহার করার সময় চলে এসেছে। সমস্ত মজুদ ভাণ্ডারকে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সময় এখন। দেশের মানুষকে এই অনাহার সংকট থেকে সুরক্ষা দিতে না পারলে তারা আরও ভীত হয়ে উঠবে এবং পুরো ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে। খাদ্যের জন্য দাঙ্গাও দেখতে হতে পারে।
দিল্লিতে কাজ খুইয়ে পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়ির পথে পা বাড়িয়ে ছিলেন। তারা অনেকেই অস্থায়ী আস্তানায় আছেন। গাজিপুর অস্থায়ী আস্তানার পরিযায়ী শ্রমিকরা জানালেন আলো জ্বালানোতে তাদের মন নেই। বিভিন্ন রাজ্যে ২৭৬৬১ টি ত্রাণ শিবিরে ১২.৫ লক্ষ শ্রমিক আটকে আছেন। (সূত্র আনন্দবাজার।)
সকালে খবর কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে ভাবছিলাম বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। করোনায় স্বজন হারানো বা যে সব স্বাস্থ্যকর্মীরা পিপিই ছাড়া কাজ করে চলেছেন তারা কি দীপাবলিতে মেতে ছিলেন ? সংবাদ প্রতিদিনের একটা খবর নজরে পোড়লো ‘অনাহারে দিল্লিতে মৃত বাংলার শ্রমিক’। অনাহারে মৃত্যু হলো পরিযায়ী শ্রমিক মনিরুল পাইকের। বয়স ২৭। বাড়িতে স্ত্রী ও বাচ্চা একটি মেয়ে আছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল, এই মৃত্যু সংবাদে। ইতিমধ্যে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা, অসুস্থতায় এবং অনাহারে প্রায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও কত মৃত্যু সংবাদ আসবে জানা নেই।
প্রসঙ্গে ফিরি। প্রথম দিকে বিভিন্ন রাজ্য থেকে যে বার্তাগুলো আসছিল, সেই বার্তাগুলা প্রধানত ছিল পরিজনদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যে। এআইসিসিটিইউ দ্রুততার সাথে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে যাওয়া মানুষের সাথে যোগাযোগ করে তাদের আশ্বস্ত করেছে, আপনারা একা নন। এখন বেশিরভাগ খবর আসছে মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা শ্রমিকদের অসুবিধার কথা নিয়ে। ঝাড়খণ্ডে তো ‘মহা কন্ট্রোল রুম’ চালু করেছে মহারাষ্ট্রে আটকে পড়া ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকদের জন্য। যাতে সেখানকার শ্রমিকদের খবরা খবর ঠিকঠাকভাবে পাওয়া যায়।
কেরল সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের অতিথি বলে সম্মানিত করছে এর জন্য কেরলের বাম সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। ত্রিবান্দমপুরমে ট্রেড ইউনিয়ন, ছাত্র-যুব, মহিলা সংগঠন এবং এনজিও সংগঠনের স্বেচ্ছা সেবকরা কাজের সময় যাতে পুলিশ ও প্রশাসনের বাধার মুখে না পড়েন, তা দেখতে আবেদন করা হয়েছে। এদিকে কেরল সরকারও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছে খাদ্যদ্রব্য আন্তঃরাজ্যে চলার জন্য ব্যবস্থা করার।
রাজস্থানের ভিনওয়ারা ৪০ জন ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উদয়পুরে এআইসিসিটিইউ এবং এআইপিডাব্লিউএ রেশন দিয়েছে। চিত্রগড়ে বিধবা, বয়স্কদের রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছ। জয়পুরে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী, জেলা শাসকদের কাছে চিঠি দিয়ে ত্রাণ, স্বচ্ছ বিশুদ্ধ পানীয় জল এবং হ্যান্ড স্যানিটিজার ও সাবানের দাবি জানানো হয়েছে।
বিহারে মুর্শিদাবাদের শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তেলেঙ্গানা ও ছত্তিশগড়ের পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কৈখালী (বাগুইহাটি)-তে বিহারের শ্রমিকদের সাহায্য করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে দেখা গেলো কয়েকটি এনজিও এবং টিইউ একসঙ্গে কাজ করছে। ছত্তিশগড়ে সিপিআই এক জায়গায় বা মহারাষ্ট্রে এনএফআইডাব্লিউ, সিপিআই(এমএল), সিপিআই(এম) এক সঙ্গে পুলিশের লাঠিচার্জের বিরোধিতা করেছে। দিল্লির উষ্মানগরে বর্ধমানের শ্রমিকদের খাদ্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তামিলনাড়ুর শ্রীপুরে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ঝাড়খণ্ড থেকা আসা ২০০ জন শ্রমিকের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঝাড়খণ্ডে কোলিয়ারিতে সিএনডাব্লিউইউ ও সিপিআই(এমএল) ২৫ মার্চ থেকে প্রতিদিন ৪০০ লোকের কমিউনিটি কিচেন চালাচ্ছে।
মহারাষ্ট্র দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ জীবিকার জন্য চলে আসেন। করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও এখন পর্যন্ত দেশের মধ্যে সর্বাধিক। কোলাপুরে কয়েকজন শ্রমিক বিপদের মধ্যে আছেন। ধারাভি মাদর্সায় কিছু মানুষ আটকে আছেন। ধারাভিতে জেলা শাসকের সাথে অভিলাশের কথা হয়েছে। কল্যাণে ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকরা আছেন। তামিলনাড়ু ও কেরলের শ্রমিকরা মুম্বাইতে আছেন। শৌচাগার ও খাদ্যের অভাব আছে, পুলিশের লাঠিচার্জ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। অমরাবতীতে সহযোগিতা করা হয়েছে। বম্বে এনইএসকো (বম্বে এস্টাবলিশ সেন্টার, গোরেগাঁ ইস্ট) পরিযায়ী শ্রমিকদের আশ্রয় দিচ্ছে। মহারাষ্ট্রে বিভিন্ন এনজিও-রা ব্যাপকভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করছে। মহারাষ্ট্রে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেছে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কেউ সেখানে যেতে পারছেন না। তবে প্রশাসন সক্রিয়।
এই ভাবে লক ডাউন আর কতদিন চলবে মানুষ জানতে চায়। সারা দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে অস্থায়ী আস্তানার শিবিরগুলি আছে, তা আর কত দিন চলবে? ভাবতে গেলে রক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে।
ট্রাম্প কোভিড-১৯ কে “চীনা ভাইরাস” নামে অভিহিত করার পর থেকে এই শব্দবন্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মিডিয়ায় বারবার প্রতিধ্বনিত হতে থাকে, এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে এশীয় জনগোষ্ঠীর ওপর এবং ভারতবর্ষে উত্তর-পূর্বের মানুষের ওপর জাতিভেদমূলক আক্রমণ নেমে আসতে থাকে।
কিন্তু এই মহামারির প্রাক্কালে পৃথিবী শুধুমাত্র জাতিবিদ্বেষী প্রতিক্রিয়াই প্রত্যক্ষ করেছে এমনটা নয়। চিকিৎসক সম্প্রদায়ের অসীম সাহস এবং তাঁদের আন্তর্জাতিক সংহতি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।
চীন যখন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত প্রথম দেশ ছিল, তখন জাপান তাকে সাহায্যার্থে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছিল। ত্রাণসামগ্রীর বাক্সে ১৩০০ বছর পুরোন একটি চীনদেশীয় কবিতা লেখা ছিল : “যদিও আমরা আলাদা আলাদা জায়গায় থাকি, আমাদের মাথার ওপরের আকাশ একটাই।”
ঐতিহাসিকভাবে চীনের সাথে জাপানের সম্পর্ক তিক্ত ও চাপানোতরে ভরা। তৎসত্ত্বেও এই সংহতির বার্তা, চীনের মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছিল।
একইভাবে, চীন ইটালিতে ডাক্তার এবং ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর সময়, চিকিৎসাসামগ্রী ও ত্রাণদ্রব্যের বাক্সের ওপর একটি রোমান কবিতার লাইন লিখে পাঠিয়েছিল : “আমরা একই সমুদ্রের তরঙ্গ”।
কিউবার প্রবাদপ্রতিম নেতা, ফিদেল কাস্ত্রো একবার বলেছিলেন, “আমাদের দেশ অন্য কোন দেশের মানুষের ওপর বোমা ফেলে না। আমাদের কাছে জৈবিক বা পারমাণবিক বোমা নেই। আমরা আমাদের ডাক্তারদের অন্যান্য দেশের মানুষের সাহায্য করার প্রশিক্ষণ দিই।” চিকিৎসা বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা উদার হস্তে বিলিয়ে দেওয়ার নিজেদের বহু পুরনো পরম্পরা বজায় রেখে কমিউনিস্ট-শাসিত ছোট্ট দেশ কিউবা ভেনিজুয়েলা, নিকারাগুয়া, জামাইকা, সুরিনাম, গ্রানাডা এবং ইটালিতে ডাক্তার এবং নার্সের দল পাঠিয়েছে। একটি সংবাদ-প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “১৯৫৯-এর বিপ্লবের পর এই ক্যারিবিয় দ্বীপটি নিজেদের “সাদা পোশাকের সেনানী”কে বিশ্বের বহু দুর্যোগস্থলে, মূলত গরিব দেশগুলিতে, পাঠিয়েছে। ২০১০-এর দশকে, এই দেশের ডাক্তাররা কলেরার বিরুদ্ধে হাইতির লড়াইয়ে এবং ইবোলার বিরুদ্ধে পশ্চিম আফ্রিকার লড়াইতে প্রথম সারিতে ছিলেন।”
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এবং অবশ্যই ফ্যাসিবাদ, পুঁজিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে – আন্তর্জাতিক সংহতি দীর্ঘজীবী হোক।
সারা দুনিয়ার সঙ্গে ভারতকেও আজ করোনা নামক ভয়াল প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে, আর এই লড়াইয়ের একেবারে সামনের সারিতে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা হলেন ডাক্তার, নার্স সহ চিকিৎসাকর্মীরা, এম্বুলেন্স চালকদের মত অন্যান্য কর্মীরা। প্রতিটি ভারতবাসীই এঁদের লড়াইয়ে অকুণ্ঠ স্বীকৃতি জানাচ্ছেন, এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এদের নিস্বার্থ কাজের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে ‘জনতা কারফিউর’ দিন জনগণকে পাঁচ মিনিট ধরে হাততালি দিতে, থালা ইত্যাদি বাজাতে বলেছিলেন। কিন্তু যারা জীবনকে বাজি রেখে জনগণের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করছেন, নরেন্দ্র মোদীর সরকার তাদের নিরাপত্তার কথা কতটা ভেবেছ? করোনার আক্রমণ থেকে তাদের সুরক্ষা দিতে সরকার কতটা আন্তরিকতা দেখিয়েছে? প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ডাক্তার-নার্সরা সুরক্ষাদায়ী সরঞ্জাম না পেয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এন ডি টি ভি ১ এপ্রিল তাদের এক প্রতিবেদনে জানালো, “ভারতের পূর্বের শিলিগুড়ি থেকে সুদূর উত্তরের ডাক্তাররা, যাঁরা কোভিড১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামনের সারিতে রয়েছেন, ব্যক্তির সুরক্ষাদায়ী সরঞ্জাম (পিপিই) – বিশেষভাবে তৈরি গাঢাকা স্যুট, গ্লাভস, নির্দিষ্ট রূপের গগলস, মাস্ক, ইত্যাদি – না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন, এমনকি ধর্মঘট করার হুমকিও দিয়েছেন।” সংবাদ সংস্থা রয়টারও ৩১ মার্চ-এর এক প্রতিবেদনে জানাল, “করোনা ভাইরাসের মোকাবিলায় ভারতে সুরক্ষাদায়ী স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাব কিছু ডাক্তারকে রেনকোট ও হেলমেট পরতে বাধ্য করছে; কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যায় বিপুল বৃদ্ধি ঘটবে বলে যখন অনুমান করা হচ্ছে তখন এটা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বল অবস্থাকেই দেখিয়ে দিচ্ছে।” ( বেলেঘাটার আই ডি হাসপাতালের এক ডাক্তারের রেনকোট পরে চিকিৎসা করার ছবিও বেরিয়েছে।) কোথাও আবার ডাক্তাররা তাঁদের দেওয়া সরঞ্জামের মান নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, যথা শ্রীনগরের এসকেআইএমএস বেমিনা হাসপাতালের ডাক্তাররা। কোথাও-কোথাও পিপিই না পাওয়ায় এম্বুলেন্স চালকদের বিক্ষোভ দেখানোর খবরও প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমনটা হল কেন? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর সরকারকে বারবারই চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষাদায়ী সরঞ্জাম, নমুনা পরীক্ষার কিট মজুত করার আবেদন জানিয়ে এসেছে। ভারতে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঘটনাটা ধরা পড়ে ২১ জানুয়ারি। এর পরও হু-র পরামর্শ মেনে সক্রিয়তা দেখাতে মোদী সরকার এত গড়িমসি করল কেন? আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর সরকারের মতো নরেন্দ্র মোদী সরকারও কি এই মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল যে, করোনার মারণ ক্ষমতাকে অতটা গুরুত্ব না দিলেও চলবে?
চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষাদায়ী সরঞ্জাম তৈরি নিয়ে সরকার আলোচনা শুরু করে জানুয়ারির শেষে। কিন্তু ওই আলোচনা পরিণতি পেতে সময় লেগে যায় পুরো এক মাস। পিপিই-র মানকে নির্দিষ্ট করতে, হু-র নির্দেশিকার সঙ্গে সেগুলির নকশাকে সংগতিপূর্ণ করে তুলতে সরকারের সময় নয়নয় করে ৩ মার্চ পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। এর পরও কি এগুলোর যোগাড়ে এবং তৈরিতে সরকার যথেষ্ট তৎপরতা দেখিয়ছে? প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, এগুলোর তৈরিতে যে কাঁচামাল লাগে, সরকার সেগুলো মজুত করার কথা না ভেবে ১৯ মার্চ পর্যন্ত সেগুলোর রপ্তানিতে অনুমতি দিয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার ৩১ মার্চ সংখ্যার একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “যে সরকারি হাসপাতালগুলো পি পি ই চাইছে, তাদের বলা হচ্ছে যে সেগুলো সরবরাহ করতে কম করে আরও ২৫ থেকে ৩০টা কাজের দিন লেগে যাবে।” এই দেরির কারণ হিসাবে ওই প্রতিবেদনে “পিপিই তৈরি করতে কাঁচা মালের যোগানের ঘাটতি এবং লকডাউন অবস্থায় বর্তমান পরিবহন পরিস্থিতি”র কথাই বলা হয়েছে। ইতালি, স্পেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন সহ করোনার ব্যাপক সংক্রমণ ঘটা দেশগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে, করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে গিয়ে চিকিৎসাকর্মীদের সংক্রমিত হয়ে পড়ার ঘটনাও কম ঘটছে না। যাঁরা দেশকে ও দেশের জনগণকে বাঁচাচ্ছেন, তাঁদের বাঁচানোটাও তো রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আজ চারদিকে যখন চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জামের এত আকাল, তার পিছনে মোদী সরকারের চরম নির্লিপ্ততা ও উপেক্ষাই কি প্রকট হয়ে সামনে আসছে না?
এবার টেস্ট কিট তথা করোনা সংক্রমণের সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে দু-একটা কথা। হু গুরুত্বের সঙ্গে বারার বলেছে, করোনা সংক্রমণকে প্রতিহত করতে গেলে সন্দেহভাজনদের খুঁজে বার করে নমুনা পরীক্ষা করা ছাড়া অন্য উপায় নেই। পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা – এটাই করোনা সংক্রমণের কবলে থাকা দেশগুলোর মূলমন্ত্র হতে হবে। কিন্তু ভারতের চিকিৎসা গবেষণা পর্ষদ (আইসিএমআর) গোড়ার দিকে নমুনা পরীক্ষার যে মাপকাঠি তৈরি করে তাতে সেই সমস্ত ব্যক্তিদেরই নমুনা পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয় – বিদেশ থেকে ফেরা যে সমস্ত মানুষের দেহে করোনার লক্ষণ রয়েছে, যারা আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছে, যে সমস্ত চিকিৎসাকর্মীর দেহে সংক্রমণের লক্ষণ রয়েছে এবং গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসসপাতালে ভর্তি হওয়া মানুষজন। গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকানোর উপায় হিসাবে সংক্রমণের নজির থাকা কোন অঞ্চলে লক্ষণ না থাকা অথবা সামান্য লক্ষণ থাকা মানুষদের নমুনা পরীক্ষার আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আইসিএমআর-এর বিজ্ঞানী নিবেদিতা গুপ্তও সে সময়ে বলেন, “নিরর্থক নমুনা পরীক্ষায় আমাদের সামর্থ্যকে নিঃশেষ না করে ফেলাটা” একটা “সুবিবেচনা সম্মত” সিদ্ধান্ত। এটা কি শুধুই যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত নাকি টেস্ট কিটের অপ্রতুলতাই “সুবিবেচনা সম্মত” সিদ্ধান্তে যুক্তিযুক্ত পরিণতি পেয়েছে? ভারতে প্রয়োজনের তুলনায় নমুনা পরীক্ষা কম কেন হচ্ছে সে সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত হল – “ভারতে যথেষ্ট সংখ্যায় টেস্টিং কিট নেই।” টেস্টিং কিটের যখন এত টানাটানি তখন আবার এ নিয়ে স্বজন পোষণের এক ন্যক্কারজনক বৃত্তান্ত উন্মোচিত হয়ে সামনে এল। মার্চ মাসের চতুর্থ সপ্তাহতেও যথেষ্ট সংখ্যায় টেস্টিং কিট সংগ্ৰহে সরকারের তেমন তৎপরতা দেখা গেল না। উল্টে চেষ্টা হল সরকার ঘনিষ্ঠ একটি সংস্থাকেই ভারতে টেস্টিং কিট বিক্রির সুবিধা করে দেওয়া। আনন্দবাজার পত্রিকার ২৫ মার্চ সংখ্যায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হল, “শনিবার (২১.৩.২০২০) স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করে, শুধুমাত্র আমেরিকা ও ইউরোপের সংস্থার দ্বারা অনুমোদিত টেস্টিং কিটই এদেশে ব্যবহার করা যাবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতের কোসারা ডায়গনিস্টিকস সংস্থাই একমাত্র এদেশে টেস্টিং কিট বেচতে পারবে।” এইভাবে দেশে অনুমোদন পাওয়া অন্যান্য কিটগুলোকে বাতিল করতে ব্যবহারযোগ্য কিটকে শুধুমাত্র আমেরিকা-ইউরোপের সংস্থার অনুমোদনের শর্তাধীন করে তুলে সরকার টেস্টিং কিট-এর অপ্রতুলতার পথই প্রশস্ত করল। কোসারা ডায়গনিস্টিকস-এর মালিক মোদী-শাহদের প্রিয়পাত্র ও দোসর। পেটোয়া লোকেদের স্বার্থসিদ্ধিতে মহামারীকে সুযোগ করে তুলতেও কুন্ঠিত হল না মোদী-শাহরা।
দেশে করোনা মোকাবিলাকে আর একটু ফলপ্রসূ করে তুলতে, চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষায় আন্তরিক হতে, আক্রান্তদের খুঁজে বার করতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোয় সরকারের গাফিলতি নিয়ে আজ চারদিক থেকেই সমালোচনা আসছে, করোনার বিপর্যয় ক্ষমতায় যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। অতএব, পাঁচ মিনিট ধরে হাততালি দেওয়া-থালা বাজানোর আহ্বান কি নিজেদের অবহেলা ও ঔদাসীন্যকে আড়াল করতে মোদীর এক কদর্য কায়দাবাজি হয়েই দেখা দিচ্ছে না?
করোনা সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর সংকটের পরিস্থিতিতে পুলিশ ও প্রশাসনের নিপীড়নমূলক আচরণ এবং সংকটের প্রতিষেধক হিসেবে জনগণের ওপর অপরিকল্পিত ও নির্মম লকডাউন চাপিয়ে দেয়ার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে সিপিআই(এমএল)। প্রত্যাশা ছিল যে এই সংকটের পরিস্থিতিতে পুলিশ ও প্রশাসন দরিদ্রদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে, কিন্তু বাস্তবে তারা ঠিক এর বিপরীত আচরণ করছে। সরকারকে অবশ্যই জন-হিতৈষী দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করতে হবে এবং অবিলম্বে দমনমূলক পদক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
জাহানাবাদ ও গোপালগঞ্জে পুলিশি কার্যকলাপের যে খবর তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। জাহানাবাদে, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে জনগণকে পরামর্শ ও বোঝানোর পরিবর্তে পুলিশ পাশবিক দমন পীড়ন চালাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর থেকে ৪০ জন শ্রমিক জেহনাবাদ জেলার মদনগঞ্জ ব্লকের দয়ালী বিগাহা গ্রামে ফিরে আসেন, তাদের করোনা পরীক্ষা হয়। এরপরে আরও ৬ জন শ্রমিক ফিরে আসেন, কিন্তু তারা কোনো করোনা সংক্রান্ত শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেননি। খবরের প্রতিবেদন অনুসারে সার্কেল অফিসার পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে ওই ৬ জন কর্মীকে বোঝানো ও পরামর্শ দেওয়ার পরিবর্তে গালিগালাজ শুরু করে। সার্কেল অফিসারের এই আচরণ গ্রামের পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং একটি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়, এর পরে সার্কেল অফিসার ফিরে যায়। কিন্তু শীঘ্রই ডিএম ও এসপির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে এসে পৌঁছায় এবং গ্রামবাসীদের বেপরোয়া লাঠিপেটা শুরু করে। এই মহল্লাটিতে প্রায় দেড়শো বাড়ি রয়েছে। পুলিশ বাড়িগুলিতে ঢুকে বারান্দায় উঠে গিয়ে লোকজনকে মারধর করে। পুলিশ হ্যান্ড পাম্পগুলির হ্যান্ডেল ভেঙে দিয়ে যায়। সমগ্র গ্রামটাই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
সিপিআই(এমএল) নেতৃত্ব এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে যোগেন্দ্র যাদব সহ আরও তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়।
গোপালগঞ্জের ভোরে ব্লকেও অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ভোরে সার্কেল অফিসার জিতেন্দ্র কুমার সিং-এর দমনমূলক কার্যকলাপে জনতা ব্যাপক ক্ষোভে ফেটে পড়ে। জিতেন্দ্র কুমার সিং লোকজনকে নির্বিচারে মারধর করে, অনেকেই সেই নির্মমতায় মারাত্মক আহত হয়েছেন।
২৮ শে মার্চ একই সার্কেল অফিসার ঢারিকশান মোড়ের কাছে জামা কাপড় ইস্ত্রির দোকানের মালিক ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে তার দোকান বন্ধ করাবার অজুহাতে নৃশংসভাবে মারধর করে, ভদ্রলোক মারাত্মক আহত হন। কালী মোড়ে এমনই আরও একটি ঘটনা ঘটে। সেখানে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ যখন বাড়ি ফিরছিলেন পথে পুলিশ তাকে ধরে ব্যাপক মারধর করে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে চলে যায়। তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে বিশ্রামপুরে। সেখানে সর্ষের জমিতে কাজ করতে যাওয়া দুই মহিলাকে মারধর করা হয়। চতুর্থ ঘটনায় দু'জন যখন রান্না করছিলেন তখন তাদের মারধর করার ঘটনা ঘটে, সার্কেল অফিসার তাদের বাসনপত্র এবং গ্যাস স্টোভও কেড়ে নেয়। প্রতিবাদে ৩০ শে মার্চ বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ভোরে পীরগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে। এই অবরোধে সার্কেল অফিসারের গুন্ডামির বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে।
সিপিআই(এমএল) দাবি করেছে যে প্রশাসনকে অবিলম্বে এই ধরনের দমনমূলক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে এবং জাহানাবাদে সিপিআই(এমএল) নেতা সহ আরো যাদের ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের সকলকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। ডিএম, এসপি এবং মদনগঞ্জ সার্কেল অফিসার, ভোরের (গোপালগঞ্জ) সার্কেল অফিসারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে।
আসামের সংবাদ সংস্থা প্রতিদিন-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রঞ্জন গগৈ এই বলে রাজ্য সভায় তাঁর মনোনয়নকে সমর্থন করলেন যে, “তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, দেশ গড়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ক্ষণে আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে একত্রে কাজ করতে হবে”, এবং তিনি আরও দাবি করলেন যে, তাঁর “সংসদে উপস্থিতি আইন সভার সামনে বিচার বিভাগের অভিমতকে তুলে ধরার এবং এর বিপরীতটারও সুযোগ রূপে দেখা দেবে।” এখন এটা বলা যেতেই পারে যে, গগৈ যখন বিচার বিভাগের অংশ ছিলেন তখন তিনি “আইন বিভাগের অভিমতকেই তুলে ধরেছিলেন”, যেটা এখন তিনি সংসদে করতে থাকবেন।
প্রথমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং তারপর ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসাবে রঞ্জন গগৈ এমন একগুচ্ছ রায় দেন যাতে মোদী সরকার সুবিধা পায়। এগুলোর মধ্যে ছিল রাফাল চুক্তিতে ক্লিন চিট দেওয়া; ইলেক্টোরাল বণ্ড প্রকল্পের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো মামলায় শুনানিকে ততদিন বিলম্বিত করা যতদিন না তা এক অবিসংবাদী বিষয়ে পরিণত হয়; কাশ্মীরে লকডাউন চাপানোয় বৈধতা প্রদান; যে ফ্যাসিস্টরা বাবরি মসজিদকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল তাদের হাতেই বাবরি মসজিদ স্থলকে তুলে দেওয়া; এ ছাড়া আরও এমন রায় দেন ও মন্তব্য করেন যা এনআরসি-র মধ্যে দিয়ে “অবৈধ অভিবাসীদের” চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত আখ্যানকেই মদত জোগায়, যে অভিবাসীরা মায়ানমারের নাগরিকত্ব লাভ না করা রোহিঙ্গা শরণার্থী হলেও যাদের পত্রপাঠ মায়ানমারে নির্বাসিত করতে হবে অথবা আটক শিবিরগুলোতে বন্দী করে রাখতে হবে। সুপ্রিমকোর্টে তাঁর কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার চার মাস পর শাসক দল তাঁকে রাজ্য সভায় মনোনীত করে। সুপ্রিমকোর্টের এবং রাজ্য সভায় মনোনয়নের ইতিহাসে এটাই স্বার্থের সংঘাতের সবচেয়ে প্রকট ও নির্লজ্জ নজির (যা স্পষ্টতই কলঙ্ক মাখা এবং নিষ্কলুষ নয়)।
বিচারপতি গগৈ এবং রাজনীতিবিদ গগৈ – এই দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যাবধান বলতে গেলে চোখের পাতা ফেলার সময়ের বেশি নয়। রাজনীতিবিদ হওয়ার লক্ষ্যে মন ঠিক করার জন্য কোনো সময়কালই (কুলিং অফ পিরিয়ড)-এ ক্ষেত্রে বলতে গেলে ছিল না। এর থেকে এ প্রশ্নটা মাথাচাড়া দিচ্ছে যে – রঞ্জন গগৈ যে রায়গুলো দিয়েছিলেন, পার্টিজান রাজনীতিবিদ হিসাবে রঞ্জন গগৈ-এর স্বার্থ ও অভিমত সেগুলোকে প্রভাবিত করেছিল কিনা।
ছাঁচে রূপ পাওয়া নতুন সাংসদ গগৈ-এর মন্তব্যগুলো বিশেষ উদ্বেগের, কেননা, আমরা দেখছি খোলাখুলিভাবে এক পক্ষে ঝুঁকে থাকা মানুষটি এমন শব্দসম্ভারের আশ্রয় নিচ্ছেন যেগুলো রাজনৈতিক সমালোচকদের অপদস্থ করতে বানিয়েছে দক্ষিণপন্থী টি ভি সঞ্চালক ও রাজনীতিবিদরা, আর তাঁর মন্তব্যগুলো আমাদের মনে পড়িয়ে দিচ্ছে যে, এই মানুষটিই এই সেদিনও দেশের সবচেয়ে সংবেদনশীল নিরপেক্ষ পদটিতে আসীন ছিলেন।
সাংসদ হিসাবে শপথ নেওয়ার পরপরই গগৈ এমন কিছু চ্যানেলের সঙ্গে কথা বললেন যারা মোদী সরকার সম্পর্কে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারী সমস্ত ব্যক্তি ও দলগুলো সম্পর্কে “দ্য লবি” ও “শহুরে নকশাল” শব্দবন্ধগুলো বানিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রিপাবলিক টি ভি-র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন যে তিনি এই আশা করেন যে, তাঁর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যারা বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সুপ্রিম কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার বিচার শুরু করবে। গগৈ-এর কথাগুলো আমাদের ইংল্যাণ্ডের রাজা দ্বিতীয় হেনরির কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে যিনি ক্যান্টারব্যারির আর্চবিশপ টমাস বেকেটকে নিয়ে প্রশ্ন রাখছেন, “অনধিকার চর্চায় অভ্যস্ত এই যাজকটা থেকে কেউ কি আমায় রেহাই দেবে না?” রাজার প্রতি অনুগত নাইটরা ব্যঞ্জনাময় এই প্রশ্নটার মধ্যে বেকেটকে হত্যার যথেষ্ট সংকেতই পেয়েছিল। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে তাঁর পূর্বতন সহকর্মীদের কাছে এই সুস্পষ্ট ইঙ্গিতই রাখলেন যে, তাঁর মনোনয়ন নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে তাঁরা যেন তাদের শাস্তি দেন।
বিজেপির হয়ে প্রচার করে এমন আর একটা চ্যানেল টাইমস নাওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গগৈ বললেন, যারা তাঁর মনোনয়নের বিরোধিতা করছে তারা একটা “লবির” প্রতিনিধিত্ব করে – সরকারের সমস্ত সমালোচকদেরই বৈধতাহীন করে তুলতে এই শব্দটা বিজেপির পেটোয়া চ্যানেলগুলোর কাছে কী ভীষণই না পছন্দের। তিনি যখন প্রধান বিচারপতি ছিলেন তখন তাঁর নিজেরই বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগের বিচার তিনি নিজেই করেছিলেন, এবং সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ থেকে ঐ অভিযোগকে একটা “লবির” বানানো বলে ধিক্কার জানিয়েছিলেন। তিনি নিজেই আবার অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন যার পরিণামে সুপ্রিম কোর্টে তার কাজ অভিযোগকারিণীকে হারাতে হয়। পরবর্তীতে নিজের পদে অভিযোগকারিণীর পুনর্বহাল দেখিয়ে দিচ্ছে যে তিনি নির্দোষ ছিলেন, আর গগৈ এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
ইলেক্টোরাল বণ্ড মামলাটাকে একদমই মনে করতে পারছেন না বলেও গগৈ দাবি করলেন! ঐ মামলার শুনানি গ্ৰহণে গড়িমসি করায় বিজেপি বণ্ডের মাধ্যমে অস্বচ্ছ পথে অর্থ প্রদানের ৯৫ শতাংশই পেয়ে লাভবান হয়েছিল, অন্য সব দলকে পিছনে ফেলে দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে সে সবচয়ে অর্থশালী দল হয়ে উঠেছিল এবং ওই নির্বাচনে সে জয়ীও হয়েছিল। এটাকে সুবিধামত স্মৃতিভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিই বা বলা যায়!
রঞ্জন গগৈ এখন যেহেতু একটি দলের অনুগামী রাজনীতিবিদ, তাই মাত্র কয়েক মাস আগেই তাঁর দেওয়া সমস্ত মামলার রায় সুপ্রিম কোর্টেরই একটা বেঞ্চের নতুন করে পর্যালোচনা করা দরকার। এই ব্যবস্থাটা গগৈ-এর কার্যকালে সুপ্রিম কোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতায় ছেটানো কালিকে মুছতে না পারলেও তার থেকে অন্তত বিশ্বাসযোগ্যতা কালিমালিপ্ত যে হয়েছিল সেই স্বীকৃতিটুকু মিলবে, এবং কিছু প্রতিকারও হতে পারে। এটুকুও করতে না পারলে ভারতের উচ্চ স্তরের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা প্রহসনে পরিণত হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ কর্পোরেট কোম্পানি ‘জেনেরাল ইলেকট্রিক(জি ই)’ মূলত জেট ইঞ্জিন বানানোর কাজ করে। আর ভেন্টিলেটর বানানোর বিভাগও রয়েছে তাদের। বস্তুত জিই-র স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগ আমেরিকার বৃহৎ ভেন্টিলেটর নির্মাণ সংস্থাগুলির অন্যতম। গত সপ্তাহে জি ই কারখানার শ্রমিকেরা মৌন বিক্ষোভে সামিল হন। তাঁদের বক্তব্য, করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে দেশে ভেন্টিলেটরের তুমুল সংকট চলছে অথচ তাঁদের কারখানা ফাঁকা বসে রয়েছে। ম্যাসাচুসেটসের জেট ইঞ্জিন বানানোর কারখানাকে ভেন্টিলেটর বানানোর কারখানায় রূপান্তরিত করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। ছয় ফুটের পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখেই তাঁরা মৌন বিদ্রোহ করেন। একই দাবী সামনে রেখে বস্টনের মুখ্য কার্যালয়ের ইউনিয়ন সদস্যরাও মৌন মিছিল করেন, ছয় ফুটের দূরত্ব বজায় রেখেছেন তাঁরাও।
জেনেরাল ইলেক্ট্রিক তাদের আন্তর্দেশীয় বিমানচালনা বিভাগের ২৬০০ জনকে (মোট কর্মীর ১০%) পাকাপাকি ছাঁটাই এবং রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের ৫০ শতাংশ কর্মীকে সাময়িক ছাঁটাই করার ঘোষণা দেয়। অথচ মার্কিন কংগ্রেস (ইউ এস পার্লামেন্ট) কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে বহু হাজার-কোটি টাকার ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
একটি প্রেস কনফারেন্সে আমেরিকার যোগাযোগ কর্মীদের শিল্পবিভাগের সদস্যরা জানান জেনেরাল মোটরসের এই ছাঁটাই আর কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে দক্ষ কর্মীর অভাবে ভেন্টিলেটর বানানোর প্রক্রিয়ায় খামতি দেখা যাবে। এই সংগঠনের আঞ্চলিক সভাপতি জেক আগুয়ানাগা ক্যানসাসের আরকানসাস শহরে নিজের কারখানার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ছাঁটাইয়ের কারণে ৫২ শতাংশ জায়গা খালি পড়ে রয়েছে যাতে বেশ কয়েকটি ফুটবল মাঠের সমান জায়গা রয়েছে। তিনি বলেন, “জি ই আমাদের বিভিন্ন বিমানের কলকব্জা বানাতে দিতে ভরসা করতে পারে, তাহলে ভেন্টিলেটর বানাতে দিতে ভরসা করবেনা কেন?” জেনেরাল ইলেকট্রিকের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগ এই মূহুর্তে দেশের সবচেয়ে বড় ভেন্টিলেটর প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। তাই ইউনিয়ন সদস্যরা মনে করেন এই সংস্থার অন্যান্য কারখানাগুলিকেও দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভেন্টিলেটর তৈরির কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বহু বিশেষজ্ঞ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন প্রয়োগ করে বিভিন্ন সংস্থাকে ভেন্টিলেটর তৈরির কাজে লাগাতে এবং গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের নির্দেশে জেনেরাল মোটরস ভেন্টিলেটর উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য চুক্তিবদ্ধও হয়েছে।
সিডব্লুএ প্রেসিডেন্ট ক্রিস শেল্টন জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডা সহ পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত সব জায়গায় ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন বাড়ছে। পুয়ের্তো রিকো থেকে হাওয়াই, আলাস্কা ও ইলিনয় থেকে টেক্সাস পর্যন্ত সব জায়গাতে অচিরেই ভেন্টিলেটরের আকাল পড়তে চলেছে। এই অবস্থায় তাঁদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আরও বেশি সংখ্যক ভেন্টিলেটর তৈরির পরিবর্তে তাঁদের ছাঁটাই করার ঘটনায় কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
(মূল প্রতিবেদন ভাইস, ইউ এস পত্রিকায় সর্বপ্রথম ছাপা হয়েছে)
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৬ দফা প্রস্তাবনা অবিলম্বে জেলা-উপজেলায় ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করুন, সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা কাজে লাগান। আগামী ৭ দিনের মধ্যে দেড় কোটি পরিবারের কাছে খাদ্য ও নগদ অর্থ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করুন। চুরি ও দুর্নীতি রোধে গণতদারকি কমিটি গড়ে তুলুন ত্রাণ তহবিল সংগ্রহে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন ২৫% কর্তন করুন। ব্যবসায়ীদের উপর লেভী ধার্য করুন।
আজ সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সভায় দেশের করোনা ভাইরাস সংক্রমনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় এবং এই সংকট মোকাবেলায় জরুরী ভিত্তিতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় –
১) অনতিবিলম্বে করোনা শনাক্তকরণ ও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ‘ফিল্ড হাসপাতাল’ স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষা ও চিকিৎসার খরচ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বহন করতে হবে। এই ব্যাপারে সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা ও ক্ষীপ্রতা কাজে লাগাতে হবে।
২) সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সকল বে-সরকারি হাসপাতাল বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করতে হবে। ডাক্তার, নার্সসহ সকল চিকিৎসা সেবীদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদেরকে জীবনবীমার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৩) আগামী ৭ দিনের মধ্যে দেশের শ্রমজীবী, দিনমজুর, বস্তিবাসী দেড় কোটি পরিবারের কাছে কমপক্ষে ১ মাসের খাবার ও নগদ টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এই ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদেরকে কাজে লাগাতে হবে। আগামী ৬ মাস এই কার্যক্রম চালু রাখতে হবে।
৪) ত্রাণ তৎপরতায় চুরি, দুর্নীতি ও দলীয়করণ রোধে রাজনৈতিক দল, শ্রেণী পেশার নেতৃবৃন্দ ও এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গণতদারকি কমিটি গঠন করতে হবে।
৫) আগামী ৬ মাসের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, উচ্চ পদস্থ সরকারি-আধা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা ২৫% কর্তন করে তা সরকারের করোনা তহবিলে জমা করতে হবে। বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ ও বিত্তবানদের উপর এই তহবিলের জন্য লেভী ধার্য ও তার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। কালো টাকা সরকারী কোষাগারে জমা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কৃষি ও গ্রামীণ খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই খাতে কার্যকরী বহুমুখী প্রণোদনাও ভর্তুকী প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক যাতে এবার বোরো ধানের লাভজনক দাম পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে দলের নেতা, কর্মী ও দরদীদেরকে করোনার জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় গণতান্ত্রিক ধারার সকল রাজনৈতিক দলের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বেচ্ছাসেবীর মনোভাব নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু ও আনছার আলী দুলাল।
চলে গেলেন কমরেড কিষানলাল চট্টোপাধ্যায়, আমাদের কিষানদা। হ্নদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি সিউড়ি হাসপাতালে প্রয়াত হন। নকশালবাড়ি কৃষক অভ্যুত্থানের সময় কমরেড কিষানদা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে গবেষণারত ছিলেন। কিন্তু কৃষক যুদ্ধের আহ্বানে তিনি নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানি উপেক্ষা করে যুক্ত হন কৃষক সংগঠনের কাজে। নকশালবাড়ি অভ্যুত্থানের পর কৃষক জনতার মধ্যে কাজ করার জন্য ছাত্রদের যে রেডগার্ড টিম গড়ে উঠেছিল, সেই টিমের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন কমরেড কিষানদা। ১৯৬৯ সালের ২২ এপ্রিল সিপিআই(এম-এল) তৈরি হলে তিনি তাঁর জেলা বীরভূমে ফিরে আসেন এবং কুন্ডহি নামক বীরভূম-সাঁওতাল পরগনা সীমান্ত অঞ্চলে কাজ করতে থাকেন। ১৯৭০ সালে তিনি বাংলা-বিহার রিজিওনাল কমিটিতে নির্বাচিত হন, এবং মিলিটারি আক্রমণের মুখে কৃষকদের প্রতিরোধ সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ১৯৭২ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কারান্তরালে থাকেন। আজ তাঁর মৃত্যুতে বীরভূম সহ সমস্ত পার্শ্ববর্তী জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি তাঁর বিপ্লবী স্মৃতির প্রতি গভীর শোক জ্ঞাপন করছে এবং রক্তপতাকা অর্ধনমিত রাখছে। কমরেড কিষানলাল চট্টোপাধ্যায় লাল সেলাম, কমরেড কিষানলাল চট্টোপাধ্যায় অমর রহে।
সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন পঃ বঃ রাজ্য কমিটি
গ্রুপ ইওরাম (Grup Yorum)। তুরস্কের একটি লোকগানের ব্যান্ড। যার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৮৫ সালে। এই পর্যন্ত সবটা স্বাভাবিকই শুনতে লাগছে, যেমন আর পাঁচটা গানের দল হয়। কিন্তু ইওরামের গল্পটা খানিক আলাদা। ১৯৮০ সালে তুরস্কে মিলিটারি ক্যু-এর প্রেক্ষাপটে ১৯৮৫ তে ইস্তানবুলের বেশ কিছু টার্কিশ আর কুরদিশ ছাত্ররা মিলে গড়ে তোলে এই গানের ব্যান্ড। নিয়ম করে বেরোতে থাকে গানের এ্যালবাম আর চলতে থাকে গানের কনসার্ট। মূলত আঞ্চলিক বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গতে লোকগানের প্রভাবে কুর্দ ভাষায় গান বাঁধে তারা। সেই গানে থাকে সাধারণ মানুষের কথা; সবার জন্য স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়, মানুষের স্বপ্ন, বেঁচে থাকার লড়াই আর অধিকারের কথা। তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলকারখানার বিক্ষোভ প্রতিবাদসভা গুলিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে ইওরাম। অচিরেই তারা ব্যাপক খ্যাতি লাভ করে, বিশেষত যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে। তুরস্কের লক্ষ লক্ষ হৃদয় স্পন্দিত হয় ইওরামের সুরে। মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়ে পুলিশি দমন পীড়নের বিরুদ্ধে, সরকারের সমালোচনায় মুখরিত হয়ে ওঠে ইওরাম ব্যান্ড। এই দলেরই অন্যতম সদস্য ছিলেন হেলেন বোলেক আর ইব্রাহিম গোকেক। তুরস্কের এরদোগান সরকারের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, দেশ জুড়ে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী, গণ আন্দোলনের নেতা, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিকদের জেলে বন্দী করে রাখার বিরুদ্ধে বারবার তাদের কলম আর সুর সোচ্চার হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মুখ খোলার মুল্যও তাঁদের চোকাতে হয়েছে বারবার। জন্মলগ্ন থেকে কয়েকশো বার দফায় দফায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইওরামের সদস্যদের। বহুবার তাদের কনসার্ট বন্ধ করে দিয়ে, অফিসে হামলা করে, ব্যান্ড মেম্বারদের আটক করে অত্যাচার করা হয়েছে তাদের কণ্ঠস্বর রোধ করানোর উদ্দ্যেশ্যে। তাদের গান গাওয়ার উপরে বিভিন্ন বিধি নিষেধ চাপানো হয়েছে বারবার আর অবশেষে ২০১৬ সালে তাদের পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়া অবস্থাতেই হেলেন বোলেক আর ইব্রাহিম গোকেক অনশন আন্দোলন শুরু করেন। ২০১৯ এর নভেম্বর মাসে সাময়িক মুক্তির পরেও সেই অনশন চলতে থাকে পাঁচ দফা দাবিতে। ইওরামের কালচারাল সেন্টারে পুলিশি অভিযান বন্ধ করা, সমস্ত ব্যান্ড মেম্বারদের নাম অপরাধী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া, ইওরাম এর কন্সার্টের উপর নিষেধাজ্ঞা খারিজ করা, ব্যান্ড মেম্বারদের উপর থেকে সমস্ত আইনি মামলা বাতিল ও গ্রেপ্তার থাকা সাত জন সদস্যের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে অনশন চালাচ্ছিলেন তারা। দাবি তো মানেইনি তুরস্কের সরকার, উলটে এক মাস আগে মার্চ মাসে যে বাড়িতে থেকে তাঁরা অনশন চালাচ্ছিলেন সেখানে রেড করে তুরস্কের পুলিশ। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জোর করে খাইয়ে অনশন ভাঙ্গানোর জন্য ৬ দিন ধরে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার চালানো হয় তাঁদের উপর। অসহ্য চাপের মুখেও হার মানেননি হেলেন আর ইব্রাহিম। মুক্ত পৃথিবীতে মুক্ত কণ্ঠে গান গাইতে চেয়েছিলেন হেলেন বোলেক। ভালবাসার গান, মানুষের জন্য-মানুষের পাশে থাকার গান। টানা ২৮৮ দিন অনশনের পরে ২০২০ -র ৩রা এপ্রিল মাত্র ২৮ বছর বয়সে মারা যান হেলেন। বলা উচিত, মেরে ফেলা হয় তাঁকে। শহীদ হন হেলেন বোলেক। এখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ইব্রাহিম। অত্যাচারী স্বৈরাচারী শাসকদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয় যে সুর, সেই হেলেন বোলেকদের সুর আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে ছুঁয়ে যাক আরও শত কোটি মানুষকে। অনুপ্রানিত করুক অধিকার আর ন্যায়ের লড়াইকে, অনুরণিত হোক অগনিত শোষিত-নিপীড়িত-হার না মানা মানুষের মনে। একদিন এই পৃথিবী মুক্ত হবেই। সেই মুক্ত পৃথিবীতে হেলেন বোলেকদের গান গাইব আমরা।
১) সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উত্তরপাড়া-রিষড়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে লকডাউন শুরুর পরে পরেই কোন্নগর ও উত্তরপাড়া পৌরসভার পৌরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চ্যাটার্জী ও দিলীপ যাদবের সাথে যোগাযোগ করে দরিদ্র পরিবারগুলির জন্য অবশ্যম্ভাবী আর্থিক সংকট ও খাদ্যাভাবের বিষয়ে সংগঠনের উদ্বেগ জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয় এবং এই কাজে পার্টির পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জনগণের সাহায্যার্থে কয়েকটি হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হয়েছে সংগঠনের তরফ থেকে। ইতিমধ্যেই পার্টি সদস্য-সমর্থক ও সহানুভূতিশীল বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতায় উত্তরপাড়া-কোতরং পৌরসভার ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড ও কোন্নগর পৌরসভার ৬, ৭, ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ড সহ পার্টির কাজের গোটা অঞ্চলে যেখানেই নির্মাণ শ্রমিক, অসংগঠিত শ্রমিক, অসহায় বয়ঃবৃদ্ধ মানুষ খাদ্যপ সংকটে পড়েছেন দ্রুত তাঁদের কাছে বিশেষত যাঁদের রেশন কার্ড নেই তাঁদেরকে অগ্রাধিকারে রেখে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ হয়েছে। কাউকেই এই সামগ্রী নিতে ডাকা হয়নি। পার্টি কর্মীরাই মাস্ক, গ্লাভস পরে এক বা দুইজন গিয়ে সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০টি পরিবারকে চাল, ডাল, আলু, বিস্কুট ইত্যাদি খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। সংকট ক্রমশ বাড়ছে। যাঁদের সামর্থ্যপ আছে তেমন সদস্যল-সমর্থক ও পার্টির বাইরের বিভিন্ন মানুষের কাছে আরো সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে। সরকার ঘোষিত রেশন সকলে ঠিকঠাক পাচ্ছেন কিনা সেই বিষয়েও সংগঠন খোঁজখবর রাখছে।
২) সারা বাংলা আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ এবং সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির উদ্যোগে সাইরা, ইলামপুর, ইছাপুর, ড্যামরগাছা, করিন্যা, বাতনা, কামালপুর, হরিসালপুর, বরাল, বাকসাগড়, মহিপালপুরের এলাকা গুলিতে করোনা ভাইরাস জনিত লক ডাউনে সরকার ঘোষিত ত্রাণ পাওয়ার জন্য বলাগড় বিডিওকে আবেদন জানাবার আবেদন পত্র বিলি করা হয়। ৬ এপ্রিল লক ডাউনে বিপর্যস্ত দরিদ্র কৃষিজুর ও আদিবাসী ৩১২টি পরিবারের পক্ষ থেকে ত্রাণ পাওয়ার জন্য আবেদন পত্র জমা করা হয় বলাগড় বিডিওর কাছে। বিডিও জানান সরকার পক্ষ থেকে এখনও এধরনের ত্রাণ দেওয়ার অর্ডার পাননি।তবে যাদের একদম রেশন কার্ড নেই তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। তিনি সরকারকে এ বিষয়ে জানাবেন বলেছেন এবং ৭ দিন পর খবর নিতে বলেছেন। এছাড়াও উনি জয় বাংলা প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতে ফর্ম জমা করতে বলেছেন।
৩) ৩১ মার্চ আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ, আয়ারলা ও আরওয়াইএ-র পক্ষ থেকে তালবোনা, কনুইবাঁকা ও ভান্ডারহাটির অতি সংকটাপন্ন ৬ টি পরিবারের হাতে চাল, ডাল, আলু, চিঁড়ে, সাবান সহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। উদ্যোগ। গ্রামবাসীদের মধ্যে সংগঠনের তরফ থেকে হাত ধোয়ার সাবান বিতরণ করা হয়। রুটি-রুজির গভীর সংকটে পড়া ১৬টি পরিবারের জন্য বিডিও-র কাছে খাদ্য সরবরাহের দাবিপত্র জমা দেওয়ায় বিডিওর চটজলদি সাড়া মেলে। ধনিয়াখালি থানায় পরিবারগুলির হাতে চাল, ডাল, সর্ষের তেল, মুড়ি ও সাবান দেওয়া হয়।
৪) বৈঁচিতে একটি রাইসমিলে অন্যায় ভাবে বেশি দামে চাল বিক্রির বিষয়টি সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বিডিওর নজরে নিয়ে আসে। ওই সময় পঞ্চায়েত সমিতির একটি টিম বৈঁচির সব্জি ও মাংসের দোকানগুলিতে মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাচ্ছিল। বিডিওর নির্দেশে তারা তৎক্ষণাৎ রাইসমিলটিতে যায়। মিলের মালিক নানা টালবাহানার শেষে পূর্বের দামই (২৪০০ টাকা/কুইন্টাল) বহাল রাখতে সম্মত হয়। বৈঁচী বাজারের টোটোচালকদের ও হালদারদিঘীর আদিবাসী গ্রাম ও হালদারদীঘি সংলগ্ন ২২ নং রেলগেট এলাকায় বাড়ি বাড়িতে সাবান বিতরণ করা হয়।
৫) চন্দননগরের গোঁদলপাড়ায় বন্ধ জুটমিলের শ্রমিক মহল্লায় সিপিআই(এমএল) ও এআইসিসিটিইউ-র তরফ থেকে খাদ্য সামগ্রী বিলি করা হয় মূলত এআইএসএ পরিচালিত ফ্রি কোচিং সেন্টারে পাঠরত ছাত্র ছাত্রীদের পরিবার এবং ওরা আরও কিছু পরিবারের মধ্যে। চন্দননগর এবং বৈদ্যবাটির কমরেডরা উদ্যোগে প্রায় ৫০টি পরিবারে খাদ্য সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। সামিল হন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
৬) ব্যান্ডেল নেতাজি পার্কে এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ গৃহ ও অন্যান্য নির্মাণ শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্মাণ শ্রমিক, টোটো চালক দের মধ্যে হাত ধোয়ার সাবান বিলি হয় ও সংকল্প অভিযানের দাবিগুলো তুলে ধরা হয় ও করোনা সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি পালিত হয় । জেলা শাসকের কাছে এই দাবি সহ আরও বিভিন্ন দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
৭) ধনেখালিতে ত্রাণের দাবিতে অবস্থানে বসেন চার মহিলা। প্রাথমিক ভাবে তাঁদের দাবি বিডিও-কে জানালে কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। আদিবাসী মঞ্চ, আয়ারলা ও আরওয়াইএ তাৎক্ষনিক ত্রাণ তুলে দেয়। অবস্থান শুরু হওয়ার পড়ে চাপের মুখে আমাদের দাবি মেনে ৮ এপ্রিল ধনেখালির জয়হরিপুর গ্রামে সুমিত্রা মাহেলী, আরতি শবর, মৃত্যুন শবর, চাঁপা মুদির রিলিফের দাবি গ্রামে এসে মেনে নেন ধনেখালির বিডিও, ফুড ইন্সপেক্টর ও বেলমুড়ি র প্রধান। বিকেলে আমাদের দাবি মেনে আরো ১০ জনের হাতে রিলিফ তুলে দিল ধনেখালি থানার পুলিশ।
১) রাজরাজাতলা - ধারসা পাল পাড়া- সার্ফ কারখানার মজদুর অঞ্চল সহ কাজিপাড়া এলাকায় দুস্থ মানুষদের পাশে পৌচ্ছে যাচ্ছে সিপিআই(এম-এল) ও এআইসিসিটিইউ-এর সাথীরা। পার্টির আহ্বানে স্থানীয় মানুষেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। সবজি বিক্রেতাদের মধ্যে কেউ দিলেন সবজি, ছোটো দোকানিরা দিলেন কিছু চাল-ডাল- বিস্কুট সাবান ইত্যাদি। এলাকার বাসিন্দারা এগিয়ে এলেন অর্থ সাহায্য নিয়ে। স্থামীয় বাসিন্দারা এই বিপদের সময়ে অনাবিল ভাবে মিশে গেলেন আমাদের সাথে। জনগণের দ্বারা-জনগণের জন্য — এই আপ্তবাক্যই গেঁথে রইল সকলের মনে।
২) রামরাজতলার স্থানীয় মানুষ এবং জগাছা অঞ্চলের নির্মাণ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (AICCTU) এর যৌথ উদ্যোগে জরুরী ভিত্তিতে কিছু মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। চললো সচেতনতামূলক প্রচার।
৩) সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এবং অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (AISA)-এর পক্ষ থেকে বালি-বেলুড়ের গরিব মানুষের সাহায্যার্থে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবক দল। প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছে বালির নগর এবং ১২নং পোলের বেশ কিছু পরিবারকে।
৪) ২৫ মার্চ বিকেল হাওড়া স্টেশনে আটকে পড়েছিলেন প্রায় ৩০০ জন পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্র থেকে হাওড়া হয়ে তারা আসাম যাবেন, অথচ ফিরতে পারছেন না। এঁদের মধ্যে আমাদের কয়েকজন কমরেডও ছিলেন যাঁরা পার্টির সাথে যোগাযোগ করেন। প্রথমে প্রশাসনের তরফ থেকে তাঁদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলেও চাপের মুখে শেষে আবার তাঁদের স্টেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের খাবারের ব্যবস্থাও করে প্রশাসন। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানাই যে যতদিন না এই শ্রমিকরা আসাম ফিরতে পারছেন ততদিন তাঁদের থাকা ও খাদ্যের ব্যবস্থা প্রশাসনকে করে দিতে হবে। বিভিন্ন স্তরে কথাবার্তার মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়। বাসে করে তাঁদের গুয়াহাটি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়।
১) রেশন বন্টন ব্যবস্থাকে নিয়ম মাফিক, সুশৃঙ্খল ভাবে করানোর লক্ষ্যে পার্টির পক্ষ থেকে অশোকনগর থানার ভারপ্রাপ্ত অধিকারিকের সাথে সাক্ষাৎ করা হয়। আদিবাসী, ক্ষেতমজুর, নির্মাণ শ্রমিক,মিড-ডে-মিল কর্মী ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মোট ২০০ পরিবারকে চাল,ডাল, তেল,সয়াবিন, বিস্কুট তুলে দেওয়া হয় অশোকনগর পার্টি কমিটির পক্ষ থেকে।
২) বেলঘরিয়াতে স্থানীয় কমরেডরা নিজেরা অর্থ দিয়ে লকডাউনে আর্থিক সমস্যায় পড়া মানুষের পাশে দাঁড়াতে খাদ্য ও অন্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনেছেন। ৮ এপ্রিল বেলঘরিয়া ও কামারহাটির ৩৭ টি শ্রমজীবী পরিবারের প্রত্যেককে চাল, ডাল, তেল, আলু, সাবান এবং ছাত্র কমরেডদের তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাজার দেওয়া হয়। করোনা ভাইরাস ও ভুখমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পার্টির আঞ্চলিক কমরেডরা মানুষের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন।
৩) গোরীপুরের বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মধ্যেও পার্টি কর্মীরা খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়েছেন।
নদীয়া জেলার ধুবুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় লাগাতার কয়েকদিন ধরে গরিব মানুষদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী তথা খাদ্য দ্রব্য বিলি বণ্টন করা হয়। অনুরূপ ভাবে নবদ্বীপ শহরে রিক্সাচালক, রেলহকার সহ মেহনতি মানুষদের মধ্যে দুই দিন ধরে খাদ্যদ্রব্য বিলি করা হয়। কৃষ্ণনগর শহরে দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষদের খাদ্য সরবরাহের জন্য থানায় ডেপুটেশন দেওয়া হয় ও ২৭ জনের তালিকা জমা করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এলাকায় এসে সেই মানুষদের বাড়ি বাড়ি খাদ্যদ্রব্য পৌছে দেয়। চাকদায় পার্টিকর্মীরা এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের নিয়ে আদিবাসী এলাকায় খাদ্যদ্রব্য বিলি করেন। কালীগঞ্জে পার্টিকাজের একটি গ্রামে দরিদ্র ক্ষেতমজুরদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হয়। আমাদের একজন পার্টিকর্মী যিনি একজন প্রতিবন্ধী-তিনি তাঁর ভাতা থেকে পাওয়া অর্থ এই কাজে দিয়ে দেন। নাকাশীপাড়ায় শিবপুর গ্রামে রেশনে গম নির্ধারিত পরিমানের কম দেওয়ার বিরুদ্ধে বিডিওর কাছে অভিযোগ জানানো হয়। তাহেরপুরে পুরসভার উদ্যোগে খাদ্যদ্রব্য বিলির দাবীতে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। একটি ওয়ার্ডে বামপন্থীদের খাদ্যদ্রব্য বিলিবন্টনের কর্মসূচীতে আমাদের কর্মীরাও অংশগ্রহণ করেন।
১) যাদবপুর ঢাকুরিয়ায় বেশ কিছু এলাকার রেশন ডিলার-রা, মানুষকে রেশন দিতে অস্বীকার করায়, লালবাজার ও স্থানীয় কাউন্সিলারের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। অঞ্চলে আমাদের পরিচিত রিক্সা চালকদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য স্হানীয় গড়ফা থানা ও ১০৫ ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ও ঢাকুরিয়া দাসপাড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদবপুর-ঢাকুরিয়া এলাকার সমস্ত ওয়ার্ড অফিস থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার জন্য খাদ্য-সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। সেই সুবিধা যাতে সকলে পান, সেই জন্য লোকাল পার্টির পক্ষ থেকে অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হচ্ছে ও তদারকি করা হচ্ছে।
২) শহিদনগর পার্টি অফিস থেকে প্রথম ধাপে প্রায় ৬০টি পরিবারকে খাদ্য-সামগ্রী দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় ৩০টি, তৃতীয় দফায় ৫১ ও পরবর্ত্তীতে ১০০টি পরিবারের হাতে জরুরি খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়।যাদবপুর অঞ্চলে রেল লাইন সংলগ্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে স্যানিটাইজার বিতরণ ও সচেতনতা প্রচার করা হয়।
৩) বেহালার কালিতলা অঞ্চলে হ্যান্ডস্যানিটাইজার বিলি এবং সচেতনতা মূলক অভিযান চলে। ১২১ নম্বর ওয়ার্ড এ কিছু পরিবারের হাতে চাল, আলু, তুলে দেওয়া হয় পার্টির পক্ষ থেকে।
৪) ২৮ মার্চ বাঁশদ্রোণী সিপিআই(এমএল) এর তরফ থেকে রেনিয়াতে বিহার থেকে আসা যে সমস্ত নির্মাণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিক, যারা লকডাউন-এর জন্য সমস্যার মধ্যে আছেন, তাদের সাথে দেখা করা হয়। জানা যায়, সেখানে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে পাঁচটি পরিবার আছে যারা বিহারের মুজাফফরপুর, সুপৌল, সিতামারি বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। মোট ১৩ জন বর্তমানে আছেন। খাওয়া-দাওয়া একটা বড় সমস্যা তাঁদের এই মুহূর্তে। যেহেতু রেশন কার্ড নেই, তাই রেশন পাওয়ার সম্ভাবনা তাদের এই মুহূর্তে নেই এবং বাড়িও যেতে পারছেন না। এছাড়া ওই এলাকাতেই থাকেন আমাদের নির্মাণ শ্রমিক সংগঠনের এক সদস্য। নাম কেনারাম জানা। এই লকডাউন এর ফলে তারও কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কাজের অভাবে এক তীব্র খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন তারা এই মুহূর্তে। নরেন্দ্রপুর থানা ও কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি। কাউন্সিলর জানিয়ে দেন, এমন কোনো পরিকাঠামো তৈরি হয়নি যার সাহায্যে তারা এই ধরনের শ্রমিক, গরিব মানুষের খাবারের বন্দোবস্ত করতে পারে, সুতরাং এই মুহূর্তে তিনি কোন সাহায্য করতে পারবেন না। এরপর শ্রমমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই শ্রমিকদের সমস্ত তথ্য বিস্তারিত ভাবে ওনাকে জানাতে বলেন যা ইতিমধ্যেই আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই আটকে পড়া অসহায় শ্রমিকদের জন্য সরকারি সাহায্য পাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা বা আশ্বাস পাওয়া যায়নি। আমাদের পার্টির স্বেচ্ছাসেবকরা কিছু খাবার কিনে ওনাদের পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্ত করছে। আগামী ৯ এপ্রিল বাঁশদ্রোণী এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলে লকডাউনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এবং দুর্দশাপীড়িত মানুষদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বন্টন করা হবে।
৫) মেটিয়াব্রুজ অঞ্চলে খাদ্য সংকটের সম্মুখীন মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে ফুড কিট। উদ্যোগে AISA মেটিয়াব্রুজ এর কর্মীরা। ৩ ও ৪ এপ্রিল তারা মেটিয়াব্রুজ ও তারাতলা (ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোড)-এর কয়েকটি অঞ্চলে লকডাউনে কাজ হারানো মানুষদের মাঝে ৫০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী বিলি করে।
৬) রক্তের অভাবে ভুগছে গোটা রাজ্য। এই অবস্থায় ৬ এপ্রিল ব্লাডমেডসের সহযোগিতায় এবং পিতলপাড়া অধিবাসীদের উদ্যোগে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। মোট ২৮ জন রক্তদাতা রক্ত দান করেছেন। এই অসহায় অবস্থায় রক্তদাতাদের আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি।
১) শিলিগুড়ির ৩১ নং ওয়ার্ডের শক্তিগড়েও বয়স্ক, অশক্ত, অসুস্থ মানুষের পাশে আছে পার্টির সেচ্ছাসেবক দল। প্রয়োজনীয় ওষুধ হোক বা খাদ্য সামগ্রী বাড়িতে পোঁছে দিচ্ছেন সিপিআই(এমএল)-এর ভলিন্টিয়াররা।
২) লকডাউন চলাকালীন উত্তরবঙ্গের ৩০০-রও বেশি চা বাগান খোলা রয়েছে। অবিলম্বে সমস্ত চা বাগান বন্ধ করে স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক, কর্মচারীদের সবেতন ছুটি, বন্ধ ও চালু উভয় চা বাগানের কর্মীদের জন্য বিনামূল্যে রেশন সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী সরবরাহের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেয় এআইসিসিটিিউ।
১) AIARLA পুর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য ইব্রাহিম সেখ এর উদ্যোগে পার্টির সহযোগিতায় কেরল প্রদেশের ১৪টি জায়গায় প্রায় ৫০০ নির্মাণ শ্রমিকের সাহায্য পাওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এই সমস্ত শ্রমিক বেশির ভাগ পূর্ব বর্ধমান জেলার। কমরেড ইব্রাহিম নিজেও কেরলে কাজ করতে গিয়ে ওখানেই আটকে আছেন।
২) ২১ দিন ব্যাপী দীর্ঘ লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বেআইনি মজুত ও কালোবাজারি। বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর এর কুসুম গ্ৰাম বাজারে মুদিখানার বড়ো হোলসেলাররা চড়া দামে বিক্রি করছিল চাল, ডাল, তেল। রুখে দাঁড়ায় মানুষ। আমাদের প্রতিবাদ আন্দোলনের ফলে পুলিশ এসে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ২০০ বস্তা চাল সিজ করে।
১) সিপিআই(এমএল) ও ফোরাম ফর পিপলস হেলথ-এর উদ্যোগে ডাক্তার, নার্স এবং সস্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে একটি আপদকালিন মেডিক্যাল টিম তৈরি হয়েছে, লকডাউন পরিস্থিতে যেকোনো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ, প্রশ্ন বা সাহায্যের জন্য।
২) রাজস্থানের চিতোরগড়ের বড়িসাদরিতে রেলওয়ের নির্মাণ প্রকল্পের কাজে যাওয়া পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক আটকে পড়ে আছেন। লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় সেখানেই থেকে যেতে বাধ্য হন। হাতের পয়সা দ্রুত শেষ হয়ে আসতেই শুরু হয় খাদ্য সংকট। এই অবস্থায় পাশে এসে দাঁড়ায় এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত রাজস্থান নির্মাণ মজদুর সংগঠন। তাদের উদ্যোগে আটকে পড়া বাংলার শ্রমিকদের খাওয়ার ব্যবস্থা হয়।
৩) সিপিআই(এম-এল), উদয়পুর, ত্রিপুরা শাখা পার্টির উদ্যোগে লক ডাউনের ফলে কর্মহীন অসহায় গৃহ পরিচারিকা, রিকশা চালক, গাড়ি চালক, মিড ডে মিল কর্মীদের ও দুস্থ ৫৮টি পরিবারে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি আলু ও ৫০০ গ্রাম করে মুশুর ডাল বিলি করা হয়।
৪) লকডাউন পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়া অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকদের খাদ্য ও বাসস্থান সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সিপিআই(এমএল), এআইসিসিটিইউ, এআইএসএ-র উদ্যোগে চালু হয়েছে একটি কেন্দ্রীয় গ্রুপ “হেল্প লকডাউন অ্যাফেক্টেড”। অন্য রাজ্যে আটকে পড়া পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক বা পশ্চিমবঙ্গে আটকে পড়া অন্য রাজ্যের শ্রমিকদের যেকোনো সমস্যায় যোগাযোগ করে প্রাশাসনিক বা সাংগঠনিক সাহায্য পৌঁছে দিতে নিরন্তর সমন্বয় রক্ষা করে চলেছেন “হেল্প লকডাউন অ্যাফেক্টেড” গ্রুপের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সদস্যরা।