পঞ্চায়েত যখন গ্রাম সংসদ সভা ডাকতে অস্বীকার করেছে তখন গ্রামবাসীরাই সেই গ্রাম সংসদ সভা ডাকলেন। নদীয়ার মুড়াগাছা অঞ্চলের গাছা ও পার্শ্ববর্তী আদিবাসী পাড়া গ্রামে ১০০ দিনের কাজ, গ্রাম্য রাস্তা নির্মাণের দাবিতে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চলছে। দুটি গ্রামের ৫ শতাধিক মানুষ ৪ক ফর্ম জমা দিয়ে কাজের আবেদন করেছেন। পঞ্চায়েত ডেপুটেশন সংগঠিত হয়েছে। সরকারী খাস জমি উদ্ধার করে সেই জমিতে অবস্থিত রাস্তা নির্মাণ করেছেন গ্রামের ব্যাপক মানুষ। ব্লক ভূমি দপ্তরে বেশ কয়েকবার দাবি জানিয়ে যথেষ্ট চাপ সৃষ্টির পর সরকারীভাবে ঐ রাস্তা অনুমোদিত হয়েছে। গ্রামের মানুষের দাবি হলো ঐ রাস্তা নির্মাণে ১০০ দিনের কাজ চালু করতে হবে। কিন্তু তৃণমূলের পঞ্চায়েত নানারকম বাহানায় ঐ রাস্তা সংস্কারের কাজ করতে অস্বীকার করে চলেছে। পঞ্চায়েত জানিয়েছে গ্রাম সংসদ সভায় গ্রামের মানুষের দ্বারা প্রস্তাব গৃহীত না হলে ১০০ দিনের প্রকল্পে ঐ রাস্তার কাজ অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না। বিধি অনুযায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যর ঐ সভা ডাকার কথা। কিন্তু তিনি জানান,তাঁদের দলের নেতারা ঐ কাজ করতে রাজি নয়। বিরোধী দল ও সাধারণ জনগণের উদ্যোগে যেহেতু গোটা রাস্তার কাজটা হয়েছে। শাসক তৃণমূল সর্বদাই এ কাজের বিরোধিতা করে দূরে সরে থেকেছে। তাই ওরা জানান কোনো রকম কাজ করা যাবে না। রাস্তাটির সাথে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ ও চাষিদের স্বার্থ ভালো মাত্রায় জড়িত রয়েছে। তৃণমূলের গ্রামীণ মাতব্বরেরা প্রকাশ্যে হুমকির সাথে বলছে সংখ্যালঘুরা আর কোথায় যাবে! তৃণমূলকে সমর্থন করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। আর হিন্দু তপসিলি জাতি উপজাতিদের “ভাতা” দিয়ে আমরা আমাদের পক্ষে নিয়ে আসবো। তাই আমরা শাসক দল যা বলবো সেটাই হবে। এই ধরনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে ফেলে আসলে ওরা গ্রামের গরিব মানুষকে দলদাস করে রাখতে চাইছে।
আবাস যোজনা, কৃষক বন্ধু অনুদান, বার্ধক্য ভাতা, ১০০ দিনের কাজ সহ যাবতীয় সরকারী প্রকল্প নিয়ে অবাধে চলছে তৃণমূলের গ্রামীণ দাদাদের দুর্নীতি দলবাজি সন্ত্রাস। আজ দেশ জুড়ে ফ্যাসিষ্ট হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পাশাপাশি এ রাজ্যে তৃণমূলের এই অপশাসন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদের মানুষকে সমাবেশিত করতেই হবে। এই দিশায় গ্রামের মানুষকে আন্দোলনে সামিল করার প্রচেষ্টা চলছে। সরকারী প্রকল্পে হস্তক্ষেপ করা, বিভিন্ন সরকারী তথ্যগুলি জনসমক্ষে প্রকাশ করে মানুষকে অধিকার সচেতন করার প্রক্রিয়া নেওয়া হচ্ছে। অবশেষে রাস্তায় ১০০ দিনের কাজ চালু করতে গাছার গ্রামবাসীরা নিজেরাই “গ্রাম সংসদ জনসাধারণের সভা” আহ্বান করলেন। পঞ্চায়েতকে এই সভার আসার চিঠি দিলে তারা গ্রামবাসীদের নামে নামে নোটিশ পাঠায় এই সভা নাকি “পঞ্চায়েত আইন বহির্ভূত’’। ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক জানান, এ জাতীয় সভায় পঞ্চায়েতের যোগদানের বাধ্যতা নেই। থানার পুলিশ কর্তৃপক্ষ অবশ্য সভার বিষয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি।
আদিবাসী গ্রামের মহিলারা ২৮ ফেব্রুয়ারী পঞ্চায়েত দপ্তরে দলবদ্ধভাবে গিয়ে ১০০ দিনের কাজ চালু করার মৌখিক সন্মতি আদায় করেছেন। কিন্তু পঞ্চায়েত কর্ত্পক্ষ একটা ছাপানো ফর্ম দেয়, যা প্রতিটি জবকার্ডধারী তথা কাজের আবেদনকারীকে নাকি পূরণ করতে হবে! তাতে লেখা আছে সরকারী মাপ অনুযায়ী কাজের মজুরি নিতে হবে। কিন্তু অন্য যে বিষয়টি লেখা আছে সেটা ১০০ দিনের কাজের অধিকারের সম্পূর্ণ বিরোধী। বলা আছে ‘‘মজুরি পেতে দেরী হলে তা মেনে নেবো”। অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজ করতে মানুষ যাতে আগ্রহী না হয়, তৃণমূল পঞ্চায়েত তেমনই একটা বাতাবরণ গড়ে তুলতে চাইছে, আর অন্তরালে চালিয়ে যাচ্ছে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুঠের কারবার। সংগঠনের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্লক দপ্তরে অভিযোগ জানানো হয়েছে। নাগরিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি কাজের অধিকার রক্ষার দাবিতে গ্রামীণ গরিবদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
২৮ ফেব্রুয়ারী নদীয়ার গাছা বাজারে এআইকেএম ও পার্টির উদ্যোগে দিল্লীতে গণহত্যার প্রতিবাদে অমিত শাহর কুশপুতুল দাহ করা হয়। তার আগে জনবহুল হাটে এক বিক্ষোভ সভা সংগঠিত হয়।