বিষ্ণুপুরে সিপিআই(এমএল) ১৬ মার্চ এক গণ ডেপুটেশনের কর্মসুচি নিয়েছে। প্রচারপত্রে বলা হয়েছে : আমরা বিষ্ণুপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা সম্প্রীতির বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরের উন্নতিকল্পে ব্রতী হয়েছি। আমাদের মধ্যে যারা অসংগঠিত শ্রমিক হিসেবে পরিচিত, যা পৌরসভার শ্রমিকই বলুন বা নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, টোটো, ভ্যান চালক, দোকানদার কর্মচারি, পরিচারিকা মুটে মজদুরই বলুন, আমরাই একেবারে গরিব সাধারণ শ্রেণীর মানুষ। আমাদের নেই কোনো স্থায়ী কাজ, স্থায়ী মজুরি। নেই আমাদের ‘সামাজিক সুরক্ষা’।
আমাদের বাসস্থানের বা বস্তি অঞ্চলের আসপাশে আবর্জনা ফেলা হয়েছে বিগত বহু বছর, অথচ এই এলাকাতে নেই কোনো পৌরসভার পরিসেবা। বিশুদ্ধ পানীয় জল এখন কিনে খেতে হচ্ছে, অথচ ‘সজল ধারা’ প্রকল্প চালু হলো না এখনও। শহরের এক বড় অংশ এখনো সন্ধ্যে নামার সাথে সাথে অন্ধকারে বুঁদ হয়ে যায়। ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে মাতামাতি হলেও হদিস পাওয়া গেল না বিষ্ণুপুর পৌরসভা মৌজায় কোথায় কত খাস জমি আছে। সরকারী প্রকল্প ও আইন অনুসারে এই খাস জমিতে পাট্টা পাওয়ার অধিকার ভূমিহীন মানুষদের। ‘জমি সহ ঘর’ — ইত্যাদি প্রকল্প বিষ্ণুপুরবাসীর কাছে যেন ‘সোনার পাথরবাটি’ রূপে মনে হচ্ছে। স্থানীয় নেতা মন্ত্রীরা ব্যাপক ও বিপুল দুর্নীতি পরায়ণ হওয়ার জন্যই বিষ্ণুপুরবাসী ‘অধিকারহীন’ জীবনযাপন করে চলেছেন। বিপুল সংখ্যায় ৬০ বছরের উর্ধ্বে বয়স্ক বয়স্কারা কোনোরকম বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না এমনকি বিধবা ও প্রতিবন্ধীরাও অনেকে কোনোরকম সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন না।
এমতাবস্থায় কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকার একনাগাড়ে কর্পোরেট তোষণ, বেসরকারীকরণ করছে ও বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি করে দিচ্ছে। বিষ্ণুপুর লোকসভা ভোটে বিজেপি জয়ী হলেও, জনসাধারণের জন্য রাস্তা-ট্রেন বৃদ্ধি তো দূরে থাক, উল্টে কলকাতা-বাঁকুড়া-আসানসোল-মেদনীপুরগামী ট্রেন উঠিয়ে ব্যবসার জন্য মাল গাড়ি চালাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থা চরম সংকটে পড়ছে, এমনকি যখন আমরা সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছি নিজেদের সংসার চালাতে, ঠিক তখনই জনগণেরই কর বা ট্যাক্সের টাকায় হতে চলেছে কোটি কোটি টাকা ধ্বংস করে বিভাজন সৃষ্টিকারী ‘এনআরসি’। যার জন্য কখনো এনপিআর না হয় সিএএ নিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে বিজেপির দাঙ্গাবাজ নেতারা। আমাদের মতো আপামর জনতা হয়ে যাবে ‘বে-নাগরিক’..!!!
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ‘বিষ্ণুপুর নাগরিক মঞ্চ’ ও এআইসিসিটিইউ এবং সিপি আই(এমএল)লিবারেশন-এর পক্ষ থেকে একত্রিত হয়ে আমাদের উক্ত কথাগুলিকেই মহকুমা শাসকের কাছে তুলে ধরতে চাই। আসুন আমরা সকলে পায়ে পা মিলিয়ে ‘অধিকার আদায়ের’ লড়াকু মিছিলে শামিল হই।
দাবি : ১) জনবিরোধী, অসাংবিধানিক নীতি এনআরসি-সিএএ-এনপিআর হটাও, ভারতের সংবিধান বাঁচাও। ২) ১লা এপ্রিল থেকে এনপিআর নয়, ভূমিহীন ও বাস্তুহীনদের তালিকা বানাও। ভূমিহীনদের ‘পাট্টাসহ ঘর’ দাও। ৩) পৌরসভা শ্রমিকসহ সকল চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প শ্রমিক (প্যারাটিচার, মিড ডে মিল, সিভিক পুলিশ, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকর্মী ইত্যাদি)-দের মাসে ন্যূনতম ১৮০০০/- টাকা মজুরি দাও। ৪) কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের সুরক্ষা ও ‘নির্ভয় স্বাধীনতা’ সুনিশ্চিত করো। ৫) বাঁধ ও জলাশয়গুলিকে পরিষ্কার করে মাছ চাষের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় বেকারত্বের আংশিক সমাধান ও পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলো। ৬) তাঁত শিল্পী ও বিড়ি শ্রমিক সহ সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের দ্রুত ‘সামাজিক সুরক্ষা’ প্রদান করো। ৭) নিকাশি নালাগুলি সংস্কার কর, আবর্জনা ফেলার ও তাকে পুনরায় ব্যাবহারযোগ্য করতে দূষণমুক্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করো। ৮) ৬০ বছরের উর্দ্ধে সমস্ত মানুষের জন্য মাসে ৬০০০/- টাকা পেনশন চালু করো। এবং বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের দ্রুত সরকারী সাহায্য প্রদান করো। ৯) ‘বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি’ হসপিটাল এর পরিকাঠামো দ্রুত উন্নত করো, ডাক্তারবাবু ও সহকারী কর্মীর সংখ্যা বাড়াও এবং অবিলম্বে দালালচক্র দমন করো।
সর্বোপরি বিষ্ণুপুর পৌরসভার আবর্জনা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ – ৩০০ অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ীকরণ ও তাঁদের জীবন মূল্য অনুধাবন করে সতর্কতার জন্য প্রয়োজনীয় জুতো মুখোশ গ্লাভস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা এবং অবিলম্বে বকেয়া মজুরি মিটিয়ে সরকার নির্ধারিত মজুরি চালু করা। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে আমরা এগিয়ে যাব এটা আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখবো, সারা দেশে আজ সাফাই কর্মীদের মৃত্যু মিছিল চলছে, যা ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানের’ বাস্তব ছবি স্পষ্ট করেছে। তাই সাফাই কর্মীদের অগ্রগতি আমাদের মানসিকভাবে অন্তঃস্থ করতে হবে এবং মানবতার চরমতম শোষণকে রুখতে হবে একতার সাথে।