সিএএ-এনপিআর-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন, রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট হিংসার পরিণামে দিল্লীর পরিস্থিতি এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য করণীয় কাজ — এই বিষয়কে সামনে রেখে সিপিআই(এমএল) এবং ইনসাফ মঞ্চ পাটনায় একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত করে। ঐ কনভেনশনে বাম দলগুলির প্রতিনিধিবৃন্দ ছাড়াও যোগদান করেন আরজেডি, এইচএম সেকুলার ও অন্যান্য দলের প্রতিনিধি এবং বুদ্ধিজীবী ও সমাজ আন্দোলনের কর্মীরা। সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদক কুনাল কনভেনশনে তাঁর বক্তব্য পাঠ করার পর সারা রাজ্যে গড়ে ওঠা বিভিন্ন শাহিনবাগের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত পেশ করেন।
কনভেনশনে তাঁর বক্তব্যে সিপিআই(এমএল) সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, সিএএ-এনআরসি-এনপিআর হল সংঘের একটা অখণ্ড প্রকল্প এবং এর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে যতদিন না এই অখণ্ড প্রকল্প সম্পূর্ণ রূপে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় এবং বিহার সরকার সমস্ত রূপের এনপিআর-কে বাতিল করে। তিনি আরো বলেন, নীতীশ কুমার কিছুদিন আগে বিজেপির হয়ে প্রচার করতে দিল্লী গিয়েছিলেন, কিন্তু দিল্লীর হিংসা নিয়ে তিনি একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি। এখন আবার বিহারের দরিদ্র ও দলিতদের উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একের পর এক দুর্নীতিও প্রকাশ্যে আসছে। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেল না। বেকারি তার শিখর ছুঁয়েছে এবং বিহারকে ১৫ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নীতীশজি দরিদ্রদের ইস্যুগুলোকে ফালতু ব্যাপার বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা ওনাকে এই বাস্তবটা জানাতে চাই যে, উনিই বিহারকে প্রতারিত করেছেন এবং রাজ্যকে অকিঞ্চিৎকর করে তুলেছেন।
এই কনভেনশনে আরো বক্তব্য রাখেন আরজেডি নেতা উদয় নারায়ন চৌধুরী, সিপিআই-এর রবীন্দ্রনাথ নাথ রাই, সিপিএম-এর অরুণ কুমার মিশ্র, ডি এম দিবাকর, মহম্মদ গালিব, আইপোয়া নেত্রী মীনা তিওয়ারি, শাহিদ কামাল, প্রেম কুমার মানি, এসইউসিআই(সি) প্রতিনিধি এবং অন্যান্যরা। কনভেনশন নীচে উল্লিখিত প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করে :
১) বিজেপি ন্যায় ও অধিকারের আন্দোলনগুলোকে কলঙ্কিত করে সেগুলোকে দমন করা এবং সারা দেশে একটা ফ্যাসিস্ট মডেলকে চাপিয়ে দেওয়ার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দিল্লীতে রাষ্ট্রের মদতে হিংসার বিভীষিকা সংঘটিত হতে দেখলাম যেখানে পুলিশের পুরোদস্তুর যোগসাজশ ছিল এবং তারা সাম্প্রদায়িক মনোভাবও দেখিয়ে ছিল। ৩ মার্চ ইয়ং ইণ্ডিয়ার মিছিলের ওপরও পুলিশি দমন নামানো হয়। দিল্লীর দাঙ্গায় বিহারের মানুষও মারা গেছে, এই বিষয়ে নীতীশ কুমারের নীরবতাকে আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি।
২) একদিকে, দিল্লীতে যারা ঘৃণা ও হিংসাকে উসকিয়ে তুলেছে সেই দুর্বৃত্তদের আড়াল করা হচ্ছে, অন্যদিকে যারা সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য লড়াই করছে তাদের, জেএনইউ নেতৃবৃন্দ থেকে কর্ণাটকের স্কুল পড়ুয়াদের দেশদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, সমস্ত প্রতিবাদকারীদের ওপর থেকে দেশদ্রোহের অভিযোগ তুলে নিতে হবে এবং বৃটিশ জমানার দেশদ্রোহ আইনকে বাতিল করতে হবে।
৩) বিহারে যে কোন রূপের এনপিআর-কেই বাতিল করার লক্ষ্যে আন্দোলনকে তীব্রতর করে তোলার আহ্বান এই কনভেনশন জানাচ্ছে । এই দানবীয় আইনগুলোর বিরুদ্ধে প্রস্তাব নেওয়ার আবেদন আমরা পঞ্চায়েতি রাজ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং গ্ৰামসভাগুলোর কাছেও জানাচ্ছি।
৪) জল-জীবন হরিয়ালি প্রকল্পের নামে বিহারের লক্ষ-লক্ষ দরিদ্র ও দলিতদের কাছে উচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বিহার সরকারকে অবিলম্বে এই দরিদ্র-বিরোধী প্রকল্প বাতিল করতে হবে, ভূমিহীন সমস্ত মানুষদের বাসস্থান সুনিশ্চিত করতে হবে এবং বিকল্প ব্যবস্থা না করে দরিদ্রদের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।
৫) পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের অবসান ঘটিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি যে রায় দিয়েছে তা দলিত, পশ্চাদপদ অংশ এবং আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষণের সমাপ্তি ঘটানোর বিজেপি-আরএসএস-এর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। সংরক্ষণের গ্যারান্টি সম্বলিত একটি প্রস্তাব বিহার বিধানসভায় পাশ করতে হবে।
৬) বিহারে ধর্মঘটী শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিহার সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তাদের ন্যায্য দাবি পূরণের দিশায় কাজ করতে হবে। প্রতিবাদ চলার সময় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত মামলা দায়ের হয়েছে তা প্রত্যাহার করে নিতে হবে।