অসংখ্য লাল পতাকা, দৃপ্ত শ্লোগানের এক উদ্দীপ্ত মিছিল দিয়ে শুরু হল এআইসিসিটিইউ-র দশম সর্বভারতীয় সম্মেলন। ২ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলন স্থল নৈহাটি শহরকে ভারতের প্রথম মহিলা ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নেতৃ সন্তোষ কুমারী দেবীর নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে।
গরুর ফাঁড়ি থেকে মিছিল শুরু হওয়ার আগে সন্তোষ কুমারী দেবীর বাসস্থানে এক সংক্ষিপ্ত কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ গণ সংস্কৃতি পরিষদের তরফ থেকে সঙ্গীত পরিবেশন ও তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয় এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবন আলেখ্য পাঠ করেন সীতাংশ চক্রবর্তী। সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, এআইসিসিটিইউ-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাজীব ডিমরী, বাংলাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধি সহ, পার্টি ও ট্রেড ইউনিয়নের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ মাল্যদান করেন। মিছিল শেষ হয় সম্মেলন স্থলে। সেখানে পতাকা উত্তোলন করেন এআইসিসিটিইউ-র সর্বভারতীয় সভাপতি এনএন ব্যানার্জি। একে একে শহীদ বেদিতে মাল্যদান করেন রাজীব ডিমরী, দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, এআইটিইউসি-র সর্বভারতীয় সভানেত্রী অমরজিৎ কৌর, ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ও নীরবতা পালনের পর শুরু হয় প্রকাশ্য অধিবেশন।
প্রকাশ্য অধিবেশনের শুরুতেই সন্তোষ কুমারী দেবীর বর্ণময় সংগ্রামী জীবন বর্ণনা করেন অতনু চক্রবর্তী। অভ্যর্থনা কমিটির প্রধান ডাঃ জয়ন্ত ঘোষাল সম্মেলনের আগত সমস্ত প্রতিনিধি, অতিথি, কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে স্বাগত জানান এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। নৈহাটি শহরের শ্রমিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্য তিনি তুলে ধরেন। তারপর আগত সমস্ত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বিদেশ থেকে আগত ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতিনিধিদের একে একে সম্বর্দ্ধিত করা হয়। তাঁরা প্রত্যেকেই দশম সর্বভারতীয় সম্মেলনের আগত প্রতিনিধিদের অভিনন্দিত করে বর্তমান মোদী সরকারের চরম দমনমূলক নীতিকে উদঘাটিত করে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর বলেন, সিএএ-কে কেন্দ্র করে যে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে তাকে কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারছে না মোদী সরকার। দিল্লী আজ শুধু দেশের রাজনৈতিক প্রশাসনিক রাজধানী নয়, দিল্লী আজ হয়ে উঠেছে সিএএ-র বিরুদ্ধে জাগ্রত গণ জাগরণের রাজধানী। শাহিনবাগ-জেএনইউ-জামিয়া মিলিয়াতে শুরু হওয়া আন্দোলন আজ সারা ভারতের প্রেরণা। আর তাই, এই আন্দোলনকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়েছে মোদী সরকার। আজ আজাদির শ্লোগান শুনে মোদী আতঙ্কিত। মজুরি দাসত্ব, পিতৃতন্ত্র, সমস্ত দমন-ঘৃণা-বিদ্বেষ থেকে মুক্তির শ্লোগান আজ মোদীর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। যারাই এই শ্লোগান তুলছে, তাদের উপর নেমে আসছে নির্মম দমনপীড়ন। শুতাই দীপঙ্কর শুধু আর্থিক দাবির মধ্যে আজ আর আটকে না থেকে বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিসরের দাবি, নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলনের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন রাখেন।
প্রকাশ্য অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ অফ ট্রেড ইউনিয়ন নেতা মহাদেবন, এআইটিইউসি নেত্রী অমরজীৎ কৌর, সিআইটিইউ নেতা অনাদি সাহু, ইউটিইউসি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ, আইএনটিইউসি নেতা মাস্টার নিজাম, এআইইউটিইউসি নেতা সমর সিনহা, টিইউসিসি নেতা হরিপদ বিশ্বাস, এনটিইউআই নেতা গৌতম মুদি।
নেপাল, বাংলাদেশ থেকেও ভ্রাতৃপ্রতিম অতিথিরা এসেছেন। কন্সেপ, নেপাল থেকে লাল বাহাদুর পাখরীন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার থেকে মেহবুব বিন সৈফ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক সংঘের নেতা উসমান আলি। এআইসিসিটিইউ-র তরফ থেকে বিদেশী অতিথিদের সম্বর্দ্ধনা জানানো হয়। তারা তাদের বক্তব্য রাখেন এবং বৃহত্তম শ্রমিক ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
(প্রতিবেদন অধিবেশন সহ সম্মেলনের বাকি অংশের রিপোর্ট এই পত্রিকা প্রেসে যাওয়া পর্যন্ত এস পৌঁছায়নি, তাই পরবর্তী সংখ্যায় থাকবে।)