এআইসিসিটিইউ-র ১০ম সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রচার উপলক্ষ্যে ২৩ ফেব্রুয়ারী ‘সিনেমা অফ রেজিট্যান্স’-এর উদ্যোগে হালিশহরের সরকার বাজার সংলগ্ন দাস পাড়ায় চলছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। প্রথমে ছোটদের জন্য সত্যজিত রায়ের ‘টু’ এবং নির্দেশক ক্যাও হ্যামবার্গারের ‘দ্য বয়, দ্য স্লাম, অ্যান্ড দ্য প্যান’স লিডস’, দেখানোর পর, দেখানো হয় এনআরসি বিরোধী নানা আন্দোলন, গান ও সাক্ষাৎকারের কিছু ভিডিও। এবং সাথে সাথে উপস্থিত দর্শকদের সাথে এনপিআর-এনআরসি নিয়ে কিছুক্ষন আলাপ আলোচনা চলে। প্রদর্শিত হয় বিক্রমজিৎ গুপ্তর ‘অচল’ ছবিটি যা এক হিউম্যান স্ট্যাচু সেজে ঘুড়ে বেরানো মানুষ এবং তাঁর হকার বন্ধুর গল্প, কিছু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের গল্প যারা এই গতিময়, ঝাঁ চকচকে বাজারি কলকাতায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সিনেমা চলাকালীন ওই অঞ্চলের দুস্কৃতিরা বাইকে করে এসে সিনেমা বন্ধ করে দেয়, প্রজেক্টরের সুইচ বন্ধ করে, প্রজেক্টর ভেঙে দেবে বলে হুমকি দেয়। পরিচয় জানতে চাইলে উত্তর দেয় ‘আমরা মানুষ’। তাদের নাকি উপর মহল থেকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে এইসব সিনেমা বন্ধ করে দেবার জন্য। কিন্তু কে এই ‘উপর মহল’ তা কিছুতেই তারা পরিষ্কার করে বলে না। পশ্চিমবাংলায় যখন তৃণমূল সরকার একদিকে এনআরসির বিরোধিতা করছে বলে প্রচার করছে অপরদিকে এই রাজ্যেরই বিভিন্ন জেলায় কখনো দুস্কৃতি কখনো পুলিশ দ্বারা নানা সময়ে এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে।
গণতন্ত্র এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনের উপর এই আক্রমণের বিরুদ্ধে পরদিনই স্থানীয় সাংস্কৃতিক প্রগতিশীল এবং যুক্তিবাদী সংগঠনগুলি মিলিতভাবে হালিশহর স্টেশন থেকে সরকার বাজার পর্যন্ত এক প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করে। প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করছিল সিনেমা অফ রেজিস্ট্যান্স, বীজপুর এপিডিআর, নৈহাটি সায়েন্স ক্লাব, হালিশহর বিজ্ঞান পরিষদ, হালিশহর বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি, কাঁচড়াপাড়া বিজ্ঞান দরবার, নৈহাটি অগ্নিবীনা, আইসা, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ প্রভৃতি সংগঠন। প্রতিবাদ মিছিলের উদ্যক্তা ছিলেন হালিশহর সাংস্কৃতিক সংস্থা এবং দাস পাড়া নির্মান শ্রমিক সংগঠন। মিছিলের শেষে সরকার বাজারে কিছুক্ষণের সভায় সমস্ত বক্তারা এই হামলার তীব্র নিন্দা করেন। গণ সংস্কৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে নীতীশ রায় এবং শান্তনু ভট্টাচার্য-র গলায় “যত হামলা করো সব সামলে নেবো” সঙ্গীত এই প্রতিবাদে উদ্দীপনার সঞ্চার করে।