খবরা-খবর
বহরমপুরে গণকনভেনশন

গত ১৫ ফেব্রুয়ারী মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের গ্রাণ্ট হলে সিপিআই(এমএল) জেলা কমিটির উদ্যোগে গণকনভেনশন সংগঠিত হয়। আলোচ্য বিষয় ছিল বর্তমান চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বামপন্থীদের কর্তব্য। প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য। বেলা ১২টার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জমায়েত হতে থাকে। ১১টা ব্লক থেকে ৩ শতাধিক মানুষ জমায়েত হয়। হল ভর্তি হয়ে অনেক লোক বাহিরে দাঁড়িয়েও বক্তব্য শোনেন। প্রথমে পশ্চিমবঙ্গ গণ সংস্কৃতি পরিষদের বিশ্বরুপ সাহা গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। তারপর জেলা কমিটি সদস্য অপুর্ব লাহিড়ী কনভেনশনের পরিপ্রেক্ষিত ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা করে সঞ্চালক হিসাবে জেলা সম্পাদক রাজীব রায়ের নাম ঘোষণা করেন। সঞ্চালক হিসাবে উপস্থিত সমস্ত মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে নেতৃবৃন্দকে মঞ্চে আসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করেন। তারপর সিপিআই-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তপন গাঙ্গুলী, সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার দে, সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্য সঞ্চালকের আহবানে পর পর বক্তব্য রাখেন। বক্তারা কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ফ্যাসিবাদী হামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। সরকারের শ্রমিক বিরোধী, গরিব বিরোধী, কৃষক বিরোধী নীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় বাজেটে গরিবদের স্বার্থের প্রকল্পগুলির বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া বিশেষ করে কর্মনিশ্চয়তা প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা কমানো, খাদ্য খাতে কমানো, কৃষিতে কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর প্রশ্নে সরব হন। তার উপর এনআরসি-এনপিআর-সিএএ-এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা, মানুষের নাগরিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এর বিরুদ্ধে সমস্ত বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। দীপঙ্কর ভট্টাচার্য্য এই সমস্ত কিছুর সাথে সাথে জোর দেন এনআরসি-এনপিআর-সিএএ বিরোধী আন্দোলনের উপর। এই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। আসামে এনআরসি হওয়ার পর সারা দেশের মানুষ জানতে পারল এনআরসি কত বিপদজনক। তাই দেশ জুড়ে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। বিজেপি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিভাজন তৈরি করার জন্যে সিএএ নিয়ে এসেছে।

msd

 

প্রথমে বলল দেশ জুড়ে এনআরসি করা হবে পরে বলল আগে সিএএ কার্যকরী হবে, পরে এনআরসি হবে। আবার নরেন্দ্র মোদি বলছে এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। সিএএ নিয়ে হিন্দু জনগণ বিশেষ করে বাঙালি হিন্দুদের মধ্যে বিজেপি আরএসএস মিথ্যা প্রচার করছে। দেশজুড়ে ছাত্র যুব মহিলা বিশেষ করে মুসলিম জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। বড় শহরগুলোতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। জেএনইউ, জামিয়া সহ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যাপক মাত্রায় এই আন্দোলনে সামিল হয়েছে। শাাহিন বাগের আন্দোলন দেশের শতাধিক শহরে চলছে। গ্রামাঞ্চলে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে দুর্বলতা আছে। বিশেষ করে হিন্দুদের মধ্যে এই দুর্বলতা বেশি দেখা যাচ্ছে। তাই বর্তমানে বামপন্থী সংগঠন, নেতা ও কর্মীদের জোর দেওয়া উচিত বিজেপি-আরএসএস-এর মিথ্যা প্রচারের মোকাবিলা করে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর-এর প্রকৃত তথ্য ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনের মাধ্যমে মানুষকে সামিল করা। মুর্শিদাবাদ-মালদহ জেলার মতো সীমান্তবর্তী জেলা যেখানে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ অধিক সংখ্যায় বসবাস করেন। সেখানে হিন্দুদের এই ব্যাপারে সচেতন করা এবং ঐক্যবদ্ধ করা বিশেষ প্রয়োজন। এখানেই বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি বেশি ছড়ানোর চেষ্টা করবে। তাই গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে এই কর্তব্যকে সফল করে তুলতে হবে।

খণ্ড-27
সংখ্যা-5