প্রায় শতাধিক নাগরিক সংগঠন, মঞ্চ, বুদ্ধিজীবী এবং সচেতন নাগরিক ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০ মিলিত হয়ে দিল্লীতে বিজেপি-আরএসএসের হিংস্র সাম্প্রদায়িক হত্যা অভিযানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং সিদ্ধান্ত নেয় পার্লামেন্টের সামনে ধর্ণায় বসার। রাজধানী শহরে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারের জন্য নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাঁরা। আহ্বায়কদের মধ্যে আছেন বৃন্দা গ্রোভার, হর্ষ মান্দার, কবিতা কৃষ্ণান সহ বিশিষ্ট সংগ্রামী ব্যক্তিগণ ও আইপোয়া, আইডয়া, আইসা, এসএফআই, এআইসিসিটিইউ সহ বিভিন্ন সংগঠন।
দিল্লীতে ‘গুজরাট মডেল’ পুন:প্রয়োগ হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। পুলিশ বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় টানা চার দিন যেভাবে লুন্ঠন, হত্যা ও ধ্বংসলীলা সংগঠিত হল তার ধরনটা ২০০২ সালে গুজরাটে এই মোদি-শাহ জুটি পরিচালিত নৃশংস গণহত্যার কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সকলকে। কিন্তু দিল্লী শান্তি চায়। দেশের মানুষ শান্তি ও সংহতি চায়। বিজেপি-আরএসএসের এই অভিযানে অনেক প্রাণ গেছে (এই লেখার সময় ২৭ জন), অনেক বাড়িঘর দোকানপাট ভষ্মীভূত হয়েছে, ছয় বছরের শিশু থেকে শুরু করে চুরাশি বছরের বৃদ্ধাকে পর্যন্ত জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু আক্রান্ত সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে পাল্টা কোনও প্রতি-আক্রমণ সংগঠিত হয়নি কোত্থাও। এমনকি এই কদিনে আরএসএস বাহিনীর নৃশংস আক্রমণের অন্যতম পরিচিত মুখ হয়ে ওঠা এক যুবককে আক্রান্ত মানুষেরা ধরে ফেলেও কোনওরকম শারীরিক আঘাত না করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। আর্তের আশ্রয়ের জন্য গুরুদ্বারগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে, অনেক মহল্লায় শিখ ও দলিত নাগরিকবৃন্দ লাঠি হাতে পাড়া পাহারা দিচ্ছে যাতে আরএসএস গ্যাং ঢুকতে না পারে।
দিল্লী হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর একটি মামলার সূত্রে দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে দিল্লী পুলিশকে আদালতে ডেকে পাঠান, সুস্পষ্ট ও তীব্র ভাষায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেন এবং বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রকে সরাসরি দায়ি করেন। কিন্তু পরদিনই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রয়োগ করে উচ্চ আদালতের এই বিচারপতিকে দিল্লী থেকে অন্যত্র বদলী করে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আইন মন্ত্রকের এই হীন ভূমিকা দেখে আশঙ্কা হয় যে বিজেপি-আরএসএস তাদের এই গণহত্যা অভিযান থেকে এখনই হয়তো পিছিয়ে আসবেনা। তারা একে আরও ব্যাপক রূপ দিতে চাইবে। নাগরিক ঐক্যকে আরও প্রসারিত করেই আরএসএসের এই প্রকল্পকে রুখতে হবে, সিএএ-এনআরসি-এনপিআর সম্পর্কে গ্রামাঞ্চলের ব্যাপক মানুষের মাঝে সচতনতা গড়ে শান্তি, সংহতি ও নাগরিক অধিকারকে শক্তি দিতে হবে।