খবরা-খবর
আন্দোলনের ডাক দিল মিড ডে মিল ইউনিয়নের ২য় রাজ্য সম্মেলন

দরিদ্র আদিবাসী-দলিত-সংখ্যালঘু পরিবারের মিড-ডে-মিল কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে গত ২৯ ডিসেম্বরে মিলিত হলেন সংগঠনের ২য় রাজ্য সম্মেলনে। হাওড়া জেলার যোগেশচন্দ্র গার্লস হাই স্কুলে। দীর্ঘ ১৬ বছর সরকারী প্রকল্পে নামমাত্র পারিশ্রমিকে ‘সেবা’ করা এই মহিলারা চাইছেন তাদের বঞ্চনার প্রতিকার। এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী ইউনিয়ন, যা রাজ্যের আড়াই লক্ষ রন্ধনকর্মীর একমাত্র সরকার স্বীকৃত ইউনিয়ন, যে দিয়েছে কর্মীদের শ্রমিকের স্বীকৃতি, দাবি আদায়ের ভাষা। এক দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে প্রশাসনের সর্বস্তরে ইউনিয়ন যেমন অস্তিত্ব রাখতে পেরেছে, তেমনি কর্মীরাও তাদের মর্যাদা আদায় করে নিতে পেরেছেন।

২য় রাজ্য সম্মেলনের পেশ করা খসড়া প্রতিবেদন বিগত বছরগুলোতে বেশ কিছু আশু দাবি আদায়ের সাফল্য ঘোষণা করেছে। একই সাথে রাজ্যের অনেক জেলা, বিশেষত উত্তরবঙ্গের বঞ্চিত কর্মীদের কাছে পৌঁছতে না পারার ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরেছে। আগামীদিনে রাজ্যব্যাপী আন্দোলনে এই ঘাটতি পূরণের অঙ্গীকার করা হয়েছে।

সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পর্যবেক্ষক তথা বিহারের সংগ্রামী নেত্রী সরোজ চৌবে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে মিড ডে মিলের বরাদ্দ কমাচ্ছে। এনজিও-র হাতে তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেছে। আমরা সারা দেশে প্রতিবাদ , প্রতিরোধ করেছি। আর যেখানেই প্রতিরোধ সেখানেই ওরা পিছু হটেছে। তাই আরও শক্তি বাড়াতে হবে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও জড়ো করতে হবে। প্রতিবাদ-প্রতিরোধই একমাত্র রাস্তা।” এআইসিসিটিইউ রাজ্য সম্পাদক বাসুদেব বসু স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘‘আগামী ৮ জানুয়ারী দেশব্যাপী সংগঠিত-অসংগঠিত শ্রমিকদের সাধারণ ধর্মঘটকে সর্বত্র প্রচারে নিয়ে যেতে হবে। দিল্লির সরকার কোর্ট মানে না। প্রকল্প শ্রমিকদের শ্রমিকের স্বীকৃতি ও ন্যূনতম ২১ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে এই ধর্মঘট সফল করতে হবে।”

মোট ১৩ জন প্রতিনিধি তাদের বক্তব্যে তাদের সমস্যার কথা যেমন বলেন, তেমনি কর্মক্ষেত্রে ইউনিয়ন যে তাদের শক্ত হাতিয়ারের ভূমিকা নিয়েছে তার অভিজ্ঞতা বলেন। আরও জোরদার আন্দোলনের দাবি তারা রাখেন।

সারা ভারত প্রকল্প কর্মী ফেডারেশনের (এআইএসডব্লিউএফ) রাজ্য ভারপ্রাপ্ত নবেন্দু দাশগুপ্ত সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন — “রাজ্য সরকারের ওপর আমরা একাধিকবার চাপ সৃষ্টি করেছি। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে কর্মী হিসেবে নথিভুক্ত করার দাবি জানিয়েছি। আমাদের আন্দোলন এই কর্মীদের শ্রমিকের মর্যাদায় তুলে এনেছে। সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা ইন্দ্রানী দত্ত স্বাগত ভাষণে বলেন, ‘‘এই লড়াই শুধু মজুরি, সুরক্ষার নয়। মহিলাদের প্রতি সার্বিক অমর্যাদার বিরুদ্ধে অঙ্গ। তাই সার্বিক মহিলা আন্দোলনেও আমাদের জোট বাঁধতে হবে।

সম্মেলন থেকে ৪৭ সদস্যের রাজ্য পরিষদ ও ১৫ জনের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন হয়। যার সভানেত্রী কমরেড মীনা পাল ও সম্পাদিকা জয়শ্রী দাস নির্বাচিত হন। হাওড়া জেলা এআইসিসিটিইউ এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন কর্মীদের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় প্রাণবন্ত এই সম্মেলনের আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের মাধ্যমে সফল সমাপ্তি ঘটে।

randhan

 

খণ্ড-27
সংখ্যা-1