জমি মাফিয়া এবং প্রশাসনের অশুভ আঁতাতের বিরোধিতায় সিপিআই(এমএল)

পশ্চিম চম্পারনের মইনিটাঁড ব্লকের সিংপুর, মইনিটাঁড ও বেলওয়া টোলা ব্লকের ‘ফজিল’ জমির জন্য (সিলিং বহির্ভূত জমির বিতরণ) আন্দোলন সিপিআই(এমএল) ৩০ বছর আগে শুরু করে। এই জমিটা ছিল যোগাপট্টির পারস প্রসাদের ছেলে অনুপস্থিত জমিদার বিনোদ প্রসাদের দখলে। দরিদ্র ও দলিতরা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে জমিটাকে মুক্ত করে তাতে চাষ করতে এবং সেখানে বসবাস করতে শুরু করে। জমি নিয়ে দীর্ঘবিবাদের পর ২০১৩-র ১৩ মে জেলা গেজেটে ৪৪.৮৪ একর জমি সিলিং আইনের অধীনে ‘ফজিল’ জমি হিসাবে নথিবদ্ধ হয়। কিন্তু ‘ফজিল’ জমি হিসাবে গেজেটে নথিবদ্ধ হওয়ার পরও জমি অধিগ্রহণ করে দরিদ্রদের পরচা দেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে ৪৪.৮৪ একর জমি জমিদার ও তার আত্মীয় সহ ২৪ জনের নামে রেজিস্ট্রি করে নেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশনের এই দলিলগুলো দেখিয়ে জওহর শাহ নামে এক জমি মাফিয়া জমির মালিকানার অধিকার পাওয়ার জন্য পাটনা হাইকোর্টে মামলা করে। হাইকোর্ট ২০১৫-র ২৬ মার্চ ঐ আবেদন বাতিল করে এবং যে ২৪ জনের নামে প্রতারণাপূর্ণ রেজিস্ট্রেশন করা হয় তাদের এবং প্রতারণায় জড়িত অফিসারদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা জারি করে। অবশ্য, যে ১৪ জন দরিদ্র মানুষ ঐ জমি চাষ করছিলেন এবং সেখানে বাস করছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও একটা মামলা রুজু করা হয়। অর্থ এবং ক্ষমতার জোরে মাফিয়া জমিদাররা এই ব্যাপারটাকে জেলা স্তরের প্রশাসনের কাছে পাঠাতে সক্ষম হয়। মন্ত্রী-মাফিয়া গাঁটছড়ার ফলশ্রুতিতে দরিদ্রদের উচ্ছেদ করার একটা সরকারি নির্দেশিকা বার হয়। সম্প্রতি মাফিয়াদের একজন রামাধর মাহাতো শস্য লুট করার মিথ্যা অভিযোগ এনে ২০১৯-এর ১০ নভেম্বর মইনিটাঁড থানায় সিংপুরের দরিদ্রদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। এর পরদিনই দরিদ্রদের গ্ৰেপ্তারের ওয়ারেন্ট জারি হয়, যদিও প্রকৃত তথ্যটা হল, গত ৩০ বছর ধরে তারা যে জমিতে ফসল বুনছিল তার ফসলই দরিদ্ররা কেটেছিল। গত ১৬ নভেম্বর মাফিয়া-অফিসার গাঁটছড়া ৮ একর জমির ফসল লুট করে এবং বাকি জমির ফসল ট্রাক্টর দিয়ে পিষে দেয়।

land w champran

 

আইন এবং ন্যায়বিচারের এই নির্লজ্জ লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সিপিআই(এম-এল) ১৯ নভেম্বর এক প্রতিবাদ সমাবেশ সংগঠিত করে। ঐ সভা থেকে ওঠা দাবিগুলো হল: আদালতের নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা করে দরিদ্রদের উচ্ছেদ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; সিলিং আইনের অধীনে ২০১৩-র ১৩ মে ‘ফজিল’ জমি বলে গেজেটে বিজ্ঞাপিত ৪৪.৮৪ একর জমি দরিদ্রদের দিতে হবে; মইনিটাঁড থানায় দরিদ্রদের বিরুদ্ধে করা কেস তুলে নিতে হবে এবং থানার দায়িত্বশীল ও ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্টকে সাসপেন্ড করতে হবে এবং জমি মাফিয়াদের সঙ্গে তাদের অশুভ আঁতাতের তদন্ত করতে হবে; যারা ২০১৯-এর ১৬ নভেম্বর দরিদ্রদের ফসল লুট করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে; জেলার সমস্ত ‘ফজিল’ জমি দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন করতে হবে।

land birar

 

খণ্ড-26
সংখ্যা-40