গত ১৬ নভেম্বর এবং তার পরেও উন্নাওএর কৃষকদের উপর যে নির্মম লাঠিচার্জ করা হয়েছে, সিপিআই(এমএল) তাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে। দলের উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সম্পাদক সুধাকর যাদব বলেছেন, নিজেদের জমির জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণের যে দাবি কৃষকরা জানাচ্ছেন, যোগী সরকার রাষ্ট্র শক্তির জোরে তাকে চূর্ণ করতে চায়। একদিকে কৃষি সংকট এবং ঋণের বোঝা কৃষকদের আত্মহত্যার পথে নিয়ে যাচ্ছে; অন্যদিকে যে জমি তাদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম সেই জমি সরকার নামমাত্র মূল্যে অধিগ্ৰহণ করছে আর কৃষকরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ চাইলে তাদের লাঠিপেটা করা হচ্ছে। সরকার বড়বড় ব্যবসায়ীদের উদ্ধার করতে তাদের হাজার-হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে, আর যথাযথ ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কৃষকদের সমস্যাকে উপলব্ধি না করে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো আগ্ৰহ না দেখিয়ে তাদের লাঠি ও বুলেটের বলি করে তোলা হচ্ছে। এটা একেবারেই অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ এবং তাকে কখনই মেনে নেওয়া যাবে না। সিপিআই(এমএল) দাবি করছে — উন্নাওয়ের কৃষকদের উপর যে সমস্ত কেস দেওয়া হয়েছে তা তুলে নিতে হবে, কৃষকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, আর না হয় অধিগৃহীত জমি ফিরিয়ে দিতে হবে; এছাড়া, কৃষকদের উপর নিপীড়ন চালানোর জন্য দায়ী অফিসার এবং অন্যান্য কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সারা ভারত কিসান মহাসভা দলের উন্নাও পরিদর্শন : সারা ভারত কিসান মহাসভার একটা দল উন্নাও গিয়ে ক্ষুব্ধ কৃষকদের সঙ্গে দেখা করে এবং ২০ নভেম্বর লক্ষ্মৌতে প্রকৃত ঘটনার রিপোর্টে প্রকাশ করে। ঐ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ট্রান্স গঙ্গা প্রকল্পের জন্য যে জমি সরকার অধিগ্ৰহণ করেছে তা কোনো নিয়ম-কানুন মেনে করা হয়নি, জমি অধিগ্রহণের জন্য যে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তার পরিমাণ অত্যন্ত কম এবং কৃষকদের সম্মতি ছাড়াই জোরজবরদস্তি জমি নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে দলের সদস্যরা জানতে পেরেছেন, কৃষকরা নামমাত্র ক্ষতিপূরণে জমি ও জীবিকা বিসর্জন দিতে রাজি ছিলেন না। কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ক্ষতিগ্ৰস্ত পরিবারগুলিকে চাকরি এবং উন্নয়ন হওয়া জায়গায় অধিগৃহীত জমির ১৬ শতাংশের একখণ্ড জমি দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরকার এখন সরে আসছে। যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার বাজার মূল্য বিঘা প্রতি ৫০ লক্ষ টাকা, আর উত্তরপ্রদেশ সরকার কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বিঘা প্রতি ৫.৫১ লক্ষ টাকা হারে (অনেক কৃষকই বলেন, সরকার বিঘা প্রতি ১২.৫১ লক্ষ টাকা দেওয়ার মিথ্যা দাবি করেছে)। জমি অধিগ্রহণের আগে সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল যে অধিগৃহীত জমির ১৬ শতাংশ ফিরিয়ে এমন অঞ্চলে দেওয়া হবে যে অঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু পরে সে একতরফা ভাবে ঘোষণা করে যে প্রতিশ্রুত জমির ১০ শতাংশর বদলে ৭ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে এবং মাত্র ৬ শতাংশ জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ঐ ৬ শতাংশ জমিও কৃষকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি এবং সরকার ১০ শতাংশ জমির বদলে দেওয়া ৭ লক্ষ টাকাকেও মূল অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ অঙ্কের মধ্যে ধরে নিচ্ছে!
উন্নাও-এর কৃষকদের প্রতিবাদ কেবলমাত্র তখনই সংবাদ মাধ্যমে খবর হয় যখন তারা তাদের জমিতে নামানো ভারী মাটিকাটা যন্ত্রকে প্রতিরোধ করে। কিন্তু গত আড়াই বছর ধরে তারা শঙ্কর সরাইতে লাগাতার ধর্ণায় বসলেও শাসক দলের কোন রাজনীতিবিদ বা প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তি তাদের সমস্যায় গুরুত্ব দেওয়ার কোনো গরজই দেখায়নি। যোগী সরকার তাদের পুরোপুরি অবজ্ঞা করেছে আর গোটা ব্যাপারটায় উন্নাও-এর জেলা শাসকের ভূমিকা ছিল চূড়ান্ত পক্ষপাতপূর্ণ এবং কৃষক-বিরোধী। উন্নাও পরিদর্শনের পর এ ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহ নেই যে, কৃষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করতে যোগী সরকার জেলা শাসককে অবাধ ক্ষমতা দিয়েছে। রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্য ছিল কৃষকদের এবং তাদের পরিবারগুলোকে এমন একটা সাংঘাতিক শিক্ষা দেওয়া যাতে রাজ্যে জোর জবরদস্তি যে জমি অধিগ্রহণ চলছে তার বিরুদ্ধে কেউ আঙ্গুল তুলতে না পারে।
গত ১৬ নভেম্বর পুলিশি পৈশাচিকতা সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যায় যখন তারা অধ্যাপক ডঃ ভি এম পালকে নির্মমভাবে প্রহার করে তাঁকে পুলিশি পৈশাচিকতার সমর্থনে শ্লোগান দিতে বাধ্য করে, প্রতিবন্ধী কৃষক ৬০ বছরের সুশীল ত্রিবেদীকে নির্দয়ভাবে মারধর করে এবং দাঁড় করিয়ে রাখা মোটরসাইকেলের উপর একটা জেসিবি মাটিকাটা যন্ত্র চালিয়ে ১০০টারও বেশি মোটরসাইকেল ভেঙ্গেচুরে দেয়। ৪০ জনেরও বেশি কৃষক ও তাদের আত্মীয়-স্বজন গুরুতর রূপে আহত হয় এবং ১৫ জনের মতো কৃষককে জেলে পোরা হয়।
কৃষকরা কিন্তু চাপের কৌশল এবং দমন-পীড়নের কাছে নত হবেন না। একজন কৃষক, দলের সদস্যদের অত্যন্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে জানালেন — আমরা আমাদের ভোট দিয়ে এই সরকারটাকে এনেছিলাম আর এবার আমরা ওদের একটা মোক্ষম শিক্ষা দিতে যাচ্ছি।
কিসান মহাসভা দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন রাজীব কুশাওয়া, আফরোজ আলম, অজয় কুমার এবং রাণা প্রতাপ সিং। কিসান মহাসভা গ্ৰেপ্তার হওয়া সমস্ত কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আরো দাবি করেছে, উন্নাও-এর জেলা শাসককে অবিলম্বে বদলি করতে হবে, কৃষকদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং অধিগৃহীত জমির আইনসম্মত ক্ষতিপূরণের নিষ্পত্তি করতে ক্ষতিগ্ৰস্ত কৃষকদের আলোচনায় ডাকতে হবে।