জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে দেশের সমস্ত ছাত্র এবং শিক্ষিত সম্প্রদায়ের প্রতি গত ২৭ নভেম্বর সবার কাছে শিক্ষার অধিকারকে সুলভ এবং গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতীয় প্রতিবাদ দিবস হিসাবে পালন করার জন্য আবেদন ২৩/১১/২০১৯ আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সম্প্রদায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে লাগাতার বিক্ষোভ প্রদর্শন করে চলেছে হোস্টেল ম্যানুয়াল এবং মাত্রাতিরিক্ত বেতন বৃদ্ধির জন্যে। এই হোস্টেল ম্যানুয়াল এবং ফী বর্ধন বেআইনিভাবে করা হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা ব্যতিরেকে গত ২৮ অক্টোবর। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সম্প্রদায় গত ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল করে যাচ্ছে এবং সমস্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বয়কট করছে। প্রস্তাবিত ফী বিবর্ধন এবং হোস্টেল ম্যানুয়াল বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দেশের অন্যতম ব্যয়বহুল বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করবে। সংরক্ষণ পদ্ধতি সমস্ত তফশিলি জাতি/উপজাতি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় এবং প্রতিবন্ধী সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়বে এবং দেশের অত্যন্ত প্রান্তিক জায়গা থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এর ফলে।
মিডিয়ার একটি অংশ বর্তমান সরকারের এই প্রতিবাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো সত্ত্বেও আমরা দেশের বিদগ্ধ নাগরিকগণ এবং অন্যান্য ছাত্র সম্প্রদায় যারা নিজেরাও প্রতিদিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়ছে তাদের সমর্থনে আমরা অভিভূত। আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে এই প্রতিবাদ শুধুমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ভারতের প্রতিটি ছাত্রছাত্রী এবং জনগণের শিক্ষার অধিকার বজায় রাখার জন্য এই সর্বাত্মক লড়াই। আমাদের কাছে দুটো রাস্তা আছে — এক বেসরকারীকরণ এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের বাদ দেওয়া, নতুবা এটি নিশ্চিত করা শিক্ষার অধিকার সবাইকে সমানভাবে দেওয়া হোক। বর্তমান সরকার সগর্বে ঘোষণা করেছেন নব্য ভারতের পরিকল্পনা, আর আমরা, এই ছাত্র সম্প্রদায়ই নতুন ভারত গড়ে তুলব। আমরা অবশ্যই নতুন ভারত গড়বো যেখানে সমস্ত কর্মচারী ও শ্রমজীবী সম্প্রদায় যারা দেশের অত্যন্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছে তাদের সবার জন্যই থাকবে শিক্ষার অধিকার।
শিক্ষার বেসরকারিকরণ হচ্ছে একটা নিদারুণ বাস্তব, আজ আমাদের ভারতবর্ষে বিভিন্ন নীতি যেমন জাতীয় শিক্ষানীতি হেফা ঋণ, আর্থিক তহবিলের সহায়তা কমিয়ে দিয়ে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধির নীতি লাগু করেছে। দেশজুড়ে যেসব বেসরকারি বিদ্যালয় আছে তারা মাত্রাতিরিক্ত ফি নিচ্ছে এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক কার্যকলাপকে বন্ধ করে দিচ্ছে। উচ্চশিক্ষা প্রাঙ্গণের এই ভয়ানক বিপদের দিনে আমরা তাই দেশের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং শিক্ষার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আবেদন করছি ২৭ নভেম্বর দিনটিকে সবার কাছে সুলভ্য এবং গ্রহণযোগ্য শিক্ষার অধিকার রক্ষার জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করার জন্যে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমস্ত প্রতিবাদকে উৎসাহিত করা হোক এবং আমরা আশা করবো এ লড়াইয়ে আমরা সবাই সামিল হব।
আমরা আশা রাখি দেশের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী এই একদিন এমনভাবে প্রতিবাদ করবে যা সংসদে প্রতিধ্বনি হবে। সারা দেশজুড়ে শিক্ষার অধিকার রক্ষা নিয়ে বিতর্কহোক এবং সকলে একসাথে শিক্ষার অধিকারকে সকলের কাছে সুলভ এবং গ্রহণযোগ্য করার জন্য দাবি করা হোক এবং তারপর দেখা যাক বর্তমান সরকার কি করতে চান।
ঐশী ঘোষ - সভাপতি, সাকেত মুন – সহ-সভাপতি,
সতীশ চন্দ্র যাদব - সাধারণ সম্পাদক, মহম্মদ দানিশ - যুগ্ম সম্পাদক