গত ১৩ দিন ধরে অবস্থান ও ৯ দিন ধরে অনশন করে চলেছেন কয়েকশত পার্শ্ব-শিক্ষক। ইতিমধ্যে একজন শিক্ষিকা মারাও গিয়েছেন। ৬ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। রাজ্যের ৪৮ হাজার পার্শ্ব-শিক্ষকের ন্যায়সঙ্গত এই আন্দোলনে সংহতি জানাতে গত ২৩ নভেম্বর রাজ্য সম্পাদকের নেতৃত্বে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে ১১ জনের একটি প্রতিনিধিদল অনশন মঞ্চে উপস্থিত হন। মূলত ৪ দফা দাবিতে এই আন্দোলন। পার্শ্ব-শিক্ষকদের –(১) স্থায়ী শিক্ষকের স্বীকৃতি, (২) সমবেতন কাঠামো চালু, (৩) ২০১৮ সালের বর্ধিত ভাতা মেটানো, (৪) পরিবারের আর্থিক সহায়তা সহ পোষ্যের চাকরি।
পার্শ্ব-শিক্ষদের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ বলেন “রাজ্য সরকার কেন এই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার সময় পাচ্ছে না? সরকার অজুহাত দিচ্ছে দিল্লী টাকা দিচ্ছে না। তারা কত দিচ্ছে? ঘাটতি কত? এই বিষয়গুলি তারা জানাক। সরকার যদি আলোচনা করার সময় না পান তাহলে শিক্ষকেরা শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে যান। আলোচনা করবেন না, প্রতিবাদ করতে দেবেন না - এটা চলতে পারে না। সিপিআই(এমএল) গোটা রাজ্য জুড়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে।’’
এছাড়াও আইসিসিটিইউ নেতা নবেন্দু দাশগুপ্ত বলেন “সুপ্রিম কোর্ট সমকাজে সমবেতন ঘোষণা করেছে। কেন্দ্র-রাজ্য তাকে লঙ্ঘন করছে। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’’
পার্টির শিক্ষক নেতা অজয় বসাক সংহতি জানিয়ে বলেন “চক্রান্তটা শুরু হয়েছিল ২০০৪ সাল থেকেই। সর্বশিক্ষার নামে কম পয়সায় অথাৎ তিন ভাগের এক ভাগ বেতনে শিক্ষক নিয়োগ ছিল মূল পরিকল্পনা। চক্রান্তটা শুরু হয়েছে দিল্লী থেকেই। আন্দোলনকারীদের সজাগ থাকতে হবে। সমগ্র দেশেই মেধার অবমাননা চলছে। কোথাও রক্তাক্ত হচ্ছে ছাত্ররা, কোথাও হাজার হাজার শিক্ষককে ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি চলছে। এমনকি কোথাও কোথাও মাইনে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমরা সমগ্র শিক্ষক সমাজের কাছে এই আন্দোলন পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’’
সংহতি মঞ্চে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অধ্যাপক অমিত দাশগুপ্ত, অসংগঠিত শ্রমিক নেত্রী জয়শ্রী দাস, শিক্ষক তপতি নন্দী, সৌভিক ঘোষাল, সুবীর দাশগুপ্ত এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতা তন্ময় নন্দী উপস্থিত ছিলেন। গণসংগীত শিল্পী অনুপ মজুমদার সংগীতের মাধ্যমে আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেন।
২২ নভেম্বর রাতে সিপিআই(এমএল) রাজ্য সম্পাদকের নেতৃত্বে চার পার্টি সদস্যের এক প্রতিনিধিদল অনশনস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেন। আলোচনা করেন অনশন মঞ্চের আহ্বায়কের সাথে। সংগ্রহ করেন দাবিপত্র। প্রতিনিধিদলে অন্য তিনজন ছিলেন অমলেন্দু ভূষণ চৌধুরী, দিবাকর ভট্টাচার্য ও অনিমেষ চক্রবর্তী।
সমগ্র শিক্ষা মিশন (পূর্বতন সর্বশিক্ষা মিশন)- এর অধীনে রাজ্যের সরকারী সাহায্য প্রাপ্ত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৪৮০০০ পার্শ্ব-শিক্ষক পঠন পাঠনের কাজে যুক্ত আছেন। প্রায় ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে নিযুক্ত থাকার পরও, এনসিটিইউ রুল অনুযায়ী উপযুক্ত যোগ্যতা অর্জন (ডিএলএড) করলেও, পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়নি তাঁদের। নিছক পারিশ্রমিক বা ভাতা প্রদান করা হয়। প্রজেক্ট এ্যাপ্রুভাল বোর্ড (প্যাব)-তে বেতন কাঠামোর উল্লেখ থাকলেও তা প্রদান করা হয়না। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে গত ৩-৪ বছরে শতাধিক পার্শ্ব-শিক্ষক শিক্ষিকা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বা লড়াইয়ে হেরে গিয়ে আত্মহত্যা করেছেন (পার্শ্ব-শিক্ষক ঐক্যমঞ্চের প্রচারপত্র অনুযায়ী)। এই অবস্থায় হাইকোর্টের রায় হাতে নিয়ে অনশনে বসেছেন (“আমৃত্যু”) ৫০ জনের বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা। অবস্থানে বসেছেন কয়েকশো। লড়াই জারী আছে। শক্ত চোয়াল আর হাসিমুখে ওরা সব বাধা অতিক্রম করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
১) পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা প্রদান করতে হবে। ২) সম কাজে সমবেতন সাপেক্ষে বেতন কাঠামো চালু করতে হবে। ৩) যেসব শিক্ষক ২০১৮ সালের বর্ধিত ভাতা পাচ্ছেন না, অবিলম্বে তাদের বর্ধিত ভাতা চালু করতে হবে। ৪) মৃত পার্শ্ব-শিক্ষকদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা সহ পোষ্যকে চাকরি দিতে হবে।