খবরা-খবর
ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলনের দিবসে শহীদ স্মরণ

৩১ আগস্ট ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবসে রাজ্যের বিভিন্ন অংশে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কলকাতায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে কর্মসূচী ছিল বাম ও গণতান্ত্রিক ১৭টি দলের। সেখানে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান ও বক্তব্য রাখেন উপস্থিত সমস্ত দলের নেতৃবৃন্দ। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে ছিলেন রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল সহ অন্যান্য নেতৃস্থানীয় সদস্যরা। বক্তব্য রাখেন পার্থঘোষ। অন্যান্য বাম দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন যথাক্রমে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র (সিপিআইএম), স্বপন ব্যানার্জী (সিপিআই), মনোজ ভট্টাচার্য (আরএসপি) প্রমুখ সকল সংগঠনের প্রতিনিধিবর্গ। বক্তারা সকলেই খাদ্য, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের দাবিতে গণসংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন।

কলকাতায় সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য অফিস চত্বরে শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ অপর্ণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

জেলায় জেলায় ৩১ আগস্ট শহীদ স্মরণ কর্মসূচী পালিত হয়। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন সহ বিভিন্ন গণসংগঠন এআইসিসিটিইউ, এআইএআরএলএ, এআইকেএম, এআইএসএ, আরওয়াইএ, এআইপিডব্লিউএ, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ ও অন্যান্য সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন রূপে শহীদ স্মরণে সংগ্রাম-সমাবেশ-সংগঠনকে শক্তিশালী করে তোলার রণধ্বনি তোলা হয়।

পত্রিকা প্রেসে যাওয়ার আগে সমস্ত রিপোর্ট বিস্তারিত এসে পৌঁছায়নি। রিপোর্ট যা এসেছে নীচে পড়ুন।

nadia

কৃষ্ণনগর

আজ ৩১ আগস্ট ২০১৯, খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবস উপলক্ষে কৃষ্ণনগর শহরে সিপ আই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে মাল্যদান, নীরবতা পালন ও বক্তব্য রাখা হয়।  মাল্যদান করেন সারা ভারত কিষান মহাসভার রাজ্য সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, কৃষ্ণপদ প্রামানিক, ইনসান বিশ্বাস, নদীয়া জেলার পার্টির সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত, কৃষ্ণনগর শহরের স্বপন দাস, নীহার ব্যানার্জি, কমল কান্তি দত্ত ও মুকুল ব্যানার্জি প্রমূখ।

১৯৫৯ সালে খাদ্যের দাবিতে কলকাতায় বিক্ষোভ আন্দোলনে তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় সরকার গুলি চালিয়ে ৮০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতে আর্থিক সংকটে জর্জরিত মানুষ পুনরায় ১৯৬৬ সালে খাদ্যের দাবিতে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন, তখনও তাদের কপালেও খাদ্যের বদলে পুলিশের গুলি জুটেছিল। কৃষ্ণনগর শহরে ৪ঠা মার্চ, পুলিশের গুলিতে ১৪ বছরের যুবক আনন্দ হাইত ও বাম আন্দোলনের কর্মী প্রণব বিশ্বাস, বসিরহাটে জ্বালানির জন্য কেরোসিনের দাবিতে নুরুল ইসলাম শহীদের মৃত্যু বরণ করেন।

বক্তারা বলেন ৬০-এর দশকে ৮ আনা ১ সের চালের দাম রাতারাতি ৫ টাকা হয়ে গেল, ঘরে বাতি জ্বালানোর একমাত্র কেরোসিন হয়ে গেল অমিল। কালোবাজারিদের রমরমা হয়ে উঠেছিল। আর আজকে ভারত সরকার ও রাজ্য সরকার খাদ্য সুরক্ষা রেশন কার্ডদিয়েছে। তাতেও দুর্নীতি ভরপুর। বহু রেশন গ্রাহক ডিজিটাল রেশন কার্ড এখনো পাননি। নেটে ১ বছর আগে কার্ডদেওয়া স্বীকৃতি থাকলেও গ্রাহকের একটা অংশ তা পাননি। বিডিও দপ্তরের মাধ্যমে পঞ্চায়েতগুলি সেই সমস্ত কার্ড সততার সাথে বণ্টন করার পরিবর্তে দলবাজি করছে এবং সেই কার্ডের মালগুলো ডিলারদের সাথে সংযোগ করে দুর্নীতি করছে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল — যারা সরকারি চাকরিজীবী, বড় ব্যবসায়ী, গ্রামে ধনীচাষি, জোতদার তাদের অনেকেই খাদ্য সুরক্ষার কম দামে চাল, গম পাওয়ার কার্ড পেয়েছে, বিপরীতে গ্রামের অনেক দরিদ্র পরিবার তারা বেশি দামে চাল, গম পাওয়ার কার্ড পেয়েছে। এছাড়া কেরোসিন তেল নিয়ে ডিলার ও খাদ্য দপ্তরের একাংশ বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহকদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। মোটা চাল, গম সস্তা হওয়ায় গরিবদের কিছুটা উপকার হলেও তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার। দুর্নীতি ধরার নাম করে কেন্দ্রীয় সরকার পুরো রেশন ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়ার দিকে এগুচ্ছে। সামান্য কিছু অর্থদিয়ে বাজার থেকে খাদ্য কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। প্রকৃতপক্ষে যে কৃষকরা খাদ্য তৈরি করছে সেই কৃষকরা ফসল এর প্রকৃত লাভজনক দাম না পেয়ে কৃষি উৎপাদন থেকে সরে যাচ্ছে, কৃষি মজুরদের মজুরি তলানিতে ঠেকেছে। আগামী দিনে খাদ্য সংকট পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাই এখন থেকে খাদ্যের অধিকার বজায় রাখতে কৃষকের দাবি, কৃষি মজুরির দাবিতে “জোট বাঁধো তৈরি হও”।

hooghly

হুগলী

খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে ৩১ আগস্ট হুগলীর পাণ্ডুয়া ব্লকের সাঁচিতাড়াব্রাঞ্চে পতাকা উত্তোলন করেন বর্ষীয়ান ক্ষেতমজুর গৌর বাউলদাস, উপস্থিত ছিলেন নিরঞ্জন বাগ, প্রভাত বাউলদাস, দিবস মালিক, সুধান্য বাউলদাস, শেফালী বাউলদাস, অসিত বাউলদাস, সুকুমার সাঁতরা, অর্জুন মালিক, কমল বাউলদাস, অভি কোলে। কোন্নগরে বামপন্থী দলগুলির যৌথ উদ্যোগে চলচ্চিত্রম মোড়ে খাদ্য আন্দোলনের শহীদ স্মরণ। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন কোন্নগর লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সরকার, ছাত্র অসীম, রণজয়, যুব দীপক ও সৌরভ। এছাড়াও উপস্থিত আছেন পার্টি সদস্য তরুণ সিংহ রায়, তারক রায় ও তাপস মুখার্জী। সভায় বক্তব্য রাখেন উত্তরপাড়া-রিষড়া এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে সৌরভ।

১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় খাদ্য আন্দোলনের ছাত্র শহীদদের স্মরণে কোতরং ২নং বাজারে আইসার হিন্দমোটর-কোন্নগর ইউনিটের পক্ষ থেকে শহীদবেদীতে মাল্যদান ও নীরবতা পালন করা হয় ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই। ছিলেন ছাত্রী ও ছাত্র ঝুমা, রণজয়, দীপ, অসীম, গুড্ডু, সৌরভ ও আইসার রাজ্য সভাপতি নিলাশিষ।

budgebudge

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

৩১ আগষ্ট খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবসে সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা অফিসে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার।রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন এআইএআরএলএ-র জেলা নেত্রী দেবযানী গোস্বামী, নির্মাণ ইউনিয়নের জেলা নেত্রী অঞ্জনা মাল, মাল্যদান করেন বজবজ শহর লোকাল কমিটির সদস্য সেখ আবুল মুজতবা, অঞ্জন ঘোষ, দেবাশিস মিত্র, রঞ্জন ঘোষ, মদন সরদার, গ্রাম লোকাল কমিটির সদস্য শ্যাম গোস্বামী, মিহির ধাড়া, ছাত্র কমরেড দ্বীপ মালিক, চলার পথে সাংস্কৃতিক সংস্থার অভিজিৎ মন্ডল, পার্টির জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার। চলার পথে সাংস্কৃতিক সংস্থার কমরেডদের গণসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচী সমাপ্তি হয়।

বাখরাহাটে সিপিআই(এম)-এর সাথে যৌথ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সদস্য শুভদীপ পাল, প্রাক্তন লোকাল কমিটির সদস্য দিলীপ পাল ও গণসংগঠনের সদস্যরা।

খণ্ড-26
সংখ্যা-27