দিল্লীতে সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির বৈঠক

সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি (এআইকেএসসিসি)-র ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিম্নগামিতাকে আড়াল করে তাকে জোর করে ‘ঠেলে তোলার জন্য’ গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে পর্যালোচনা করা হয়। অর্থমন্ত্রী যখন অতি ধনীদের ওপর থেকে ট্যাক্স কমানো, ব্যাঙ্কগুলিকে অর্থ জোগান, আবাসন ও মোটরগাড়ি শিল্পে নগদ অর্থের (লিকুইডিটি) ব্যবস্থা করা ও জিএসটি-তে ছাড় দেওয়ার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তখন তিনি কৃষিক্ষেত্রে সংকটকে লাঘব করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।

এআইকেএসসিসি-র ওয়ার্কিং গ্রুপ মনে করে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপই কর্পোরেট ও বহুজাতিক সংস্থাগুলির স্বার্থ হাসিলের জন্যই নিবেদিত। অতিরিক্ত উৎপাদন অথচ ক্রেতা না থাকা-সংকটের এই প্রধান কারণটির সমাধানে কেন্দ্র আদৌ কিছু করছে না। বিকাশের জন্য সরকারের অভিমুখ হল, বিদেশী ও কর্পোরেট বিনিয়োগকে উৎসাহ দান, সম্পদ ও বাজারের নিয়ন্ত্রণের বেশি বেশি করে তাদের হাতে সঁপে দেওয়া এবং উৎপাদনের অধিকতর বৃদ্ধি ঘটানো আর (পক্ষান্তরে) কৃষক ও অন্যান্য শ্রমজীবী জনগণের সঞ্চয় ও আয় নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভারতীয় বাজারের ক্রয় ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর জন্য জরুরী প্রয়োজনকে অবজ্ঞা করা।

বিনিয়োগ নির্ভর বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকটের নিরসন করা সম্ভব নয়। ক্রেতার পরিমাণ নিদারুণভাবে হ্রাস পাওয়ায় বাজারের নাভিশ্বাস উঠছে-জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ, কৃষক ও কৃষিমজুরদের আয় নেই বা অত্যন্ত অল্প আয় এবং তাঁরা মারাত্মক ঋণগ্রস্ততার শিকার। এই সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হল, কৃষকদের ভাল পরিমাণ উপার্জন বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করা-যাতে তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ বাজার ও ভারতীয় শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটে। বিনিয়োগ চালিত ‘পুনরুজ্জীবনের’ নিদান কেবল ব্যর্থতাকেই ডেকে আনতে পারে যার ফলে সরকারী অর্থ আরো বেশি করে বন্দি হয়ে পড়বে।

সম্পূর্ণ ঋণ মকুব (ওয়েভার) এবং সমস্ত ফসলের সি-২ উৎপাদন খরচের ১.৫ গুণ বেশি এমএসপি নির্ধারণ ও সেই মর্মে আইন প্রণয়নের দাবি দুটির পুনরুল্লেখের সাথে সাথে এআইকেএসসিসি ওয়ার্কিং গ্রুপ গ্রামীণ বিদ্যুত মাশুল বৃদ্ধি, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি, জনকল্যাণ খাতে ব্যয় সংকোচনের মতো সরকারী পদক্ষেপ সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। এইসব পদক্ষেপ কৃষক, কৃষিক্ষেত্র ও ক্ষুদ্র উৎপাদকদের ধ্বংসকেই আরো ত্বরান্বিত করবে। দেশের কৃষকদের দাবি অনুসারে উপরে বর্ণিত আইনগুলি পাশ করার জন্য AIKSCC ওয়ার্কিং গ্রুপ আন্দোলনকে তীব্রতর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আরএসএস-বিজেপি দাবি করে যে ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে কিন্ত আসলে তাদের এটি করার কোন সদিচ্ছা নেই বরং বাস্তবে তারা কৃষি অর্থনীতির সর্বনাশ ঘটাচ্ছে এবং কৃষকদের চাষ ছেড়ে দিতে বাধ্য করছে।

বনাঞ্চল থেকে আদিবাসীদের উৎখাত ও কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের যাবতীয় অপপ্রয়াসের বিরোধিতা করার জন্যও এআইকেএসসিসি ওয়ার্কিং গ্রুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অরণ্য অধিকার আইন ২০০৬-কে বাস্তবায়নের দাবিতে আদিবাসী জনগণের সংগ্রামকেও এআইকেএসসিসি সমর্থন জানায়।

এআইকেএসসিসি এই সমস্ত দাবিতে রাজ্যে রাজ্যে প্রচারের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী এক প্রচারাভিযান সংগঠিত করা এবং সমস্যাগুলির সমাধান না হলে আন্দোলনকে তীব্রতর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

-- ভি এম সিং, আহ্বায়ক

খণ্ড-26
সংখ্যা-27