১৬ টি বাম দলের মধ্যে পার্টিও ছিল মিছিলের অন্যতম উদ্যোক্তা। বর্ষা মুখর বিকেলে ধর্মতলার লেনিন মূর্তির পাদদেশ থেকে মিছিল যায় শিয়ালদহ চত্বরে। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, মনোজ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য বামদলের নেতৃবৃন্দের সাথে পার্থঘোষ ও কার্তিক পাল মিছিলকে নেতৃত্ব দেন। মিছিল শেষে শিয়ালদহর সভায় কয়েকজন নেতা বক্তব্য রাখেন।
সিপিআই-এর কমরেড কল্যাণ ব্যানার্জী বলেন যে রাষ্ট্রশক্তি কাশ্মীরের জনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নামিয়ে এনেছে। শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরের পাকিস্তান-ভুক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিল। আজ ভারত রাষ্ট্র কাশ্মীরের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে অগণতান্ত্রিকভাবে।
আরএসপির মনোজ ভট্টাচার্য সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন যে আজ ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্র পদদলিত। ১৪ আগষ্ট পর্যন্ত তাঁর দল ধারাবাহিক প্রচার চালাবে বিজেপির তৈরি করা বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ এখানেই শেষ হবে না, জনসংযোগ অভিযান চালিয়ে সত্য তুলে ধরা হবে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মুখোশ খোলা হবে। কোনও মতামত ছাড়াই বন্দুকের ডগায় ফ্যাসিবাদী সরকার এরকম করেছে, আরও মানুষকে যুক্ত করে লড়তে হবে।
সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে পার্থ ঘোষ বলেন যে বিজেপির অমিত শাহ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে তিনি শহীদ হতে চান! আসলে বিজেপি তো স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ১৯০ বছরেও তো তাদের একজন শহীদও খুঁজে পাওয়া যাবে না, তাই এসব বলছে। রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্র, বেকার যুবদের চাকরি বা জল জঙ্গল বাঁচানোর জন্য নয় কাশ্মীরের মানুষের জীবন ধ্বংস করার লক্ষ্যে শহীদ হতে চায় অমিত শাহ! ৩৭০ ধারা বিলোপের মাধ্যমে যে সাংবিধানিক অন্তর্ঘাত চালানো হল তাকে হিটলার জমানার অনুরূপ অন্তর্ঘাতের ইতিহাসের সাথে তুলনা করেন কমরেড পার্থ ঘোষ। কাশ্মীরের সাথে ভারতের সাংবিধানিক সেতু ভেঙে দেওয়ার ফ্যাসিস্ট কৌশলের বিরুদ্ধে গোটা দেশের মানুষকে সোচ্চার হতে বলেন তিনি।
মার্কসবাদী ফরোয়ার্ড ব্লকের পক্ষ থেকে রাজীব চক্রবর্তী গোটা দেশে দুর্যোগের কথা বলেন। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো চুরমার করে সাংবিধানিক অভ্যুত্থান ঘটানো হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন যে একটি রাজ্য বিলোপ করে টুকরো করে দেওয়াটা আসলে বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিকেই শক্তিশালী করবে। দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেন। ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা বলেন খেটে খাওয়া মানষেু র ওপর আঘাত নেমে আসছে। ৩৭০ ধারা বাতিলকে বিজেপি প্রতিশ্রুতি রক্ষা বলছে? তাহলে ১৫ লাখ টাকা সবার একাউন্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল!
ভারতের সাম্যবাদী দলের নেত্রী বর্ণালী মুখার্জী বলেন, একমাত্র লাল ঝান্ডাই যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে পারে তা আজ প্রমাণ হল। দক্ষিণপন্থী বিরোধী পক্ষ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। আগামী দিনে ফ্যাসিস্টরা যুদ্ধ বাধিয়ে উন্মাদনা তৈরি করতে চাইলে তখনও বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সেই যুদ্ধ জিগিরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, দুর্বলতা দেখালে চলবে না।
শেষ বক্তা হিসেবে সিপিআই(এম)-এর মহম্মদ সেলিম বলেন যে মিডিয়াতে কাশ্মীরের মানষেু র কোনও খবর নাই কিন্তু কাশ্মীরকে নিয়ে সর্বদাই খবর চলছে। এতরফা প্রচার ফ্যাসিবাদী লক্ষণ। গুজব মাস্টাররা সাংবিধানিক অন্তর্ঘাত বা ক্যু করেছে। নানা ভাষা নানা ধর্মের মানুষ আমাদের দেশে। তিনি বলেন যে এমনকি পশ্চিমবঙ্গ নাম বদলে বাংলা নাম দেওয়া নিয়েও কত আলোচনা বিতর্ক চলছে। অথচ একটা রাজ্যকে লপ্তু করে দেওয়া হল, দুভাগ করে দেওয়া হল কোনও আলোচনা বিতর্ক ছাড়াই! আসলে আমেরিকা বলেছে ভাগ করতে। ধ্বংস করতে চাইছে। কাশ্মীর হামারা হ্যায় তো কাশ্মীরী হামারা কিউ নেহি! কুচবিহার, গোর্খাল্যান্ড, জঙ্গলমহল কেন আলাদা হতে চাইবে না? বিজেপি আজাদির লড়াই লড়েনি। বাংলা, পাঞ্জাব লড়েছে। কাশ্মীরে এখন কারফু আর কাঁটাতার। আতঙ্কবাদের জবাব রাষ্ট্রের তৈরি আতঙ্ক হতে পারে না। সংবিধানের ভিত্তিতে সমাধান দরকার। উগ্রবাদীরা তো সংবিধান অতিক্রম করে আন্দোলন করে। এখন সরকারও তাই করল! সংবিধান উল্লঙ্ঘন করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিল। তাহলে কী দাঁড়াবে? অনেক বিতর্ক হয়ে কাশ্মীর ভারতে থেকেছে। এই দেশ সংবিধান মেনে চলবে। কিন্তু বিজেপি সংবিধান অবমাননার পথে চলছে।