১৫ আগস্ট ২০১৯ বেলঘরিয়া : ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) লিবারেশন বেলঘরিয়া আঞ্চলিক কমিটি ৭৩তম স্বাধীনতা দিবস পালন করল। এই দিন ‘সংবিধান বাঁচাও গণতন্ত্র বাঁচাও’ শিরোনামে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরুতে স্বাধীনতা যুদ্ধের সেনানী মাস্টারদা সূর্যসেন, বিনয় বাদল দীনেশ, ভগৎ সিং রাজগুরু সুখদেব, কায়ুরের বীর শহীদেরা, প্রীতিলতা ওয়াদেদ্দার, গণেশ ঘোষ, মাতঙ্গিনী হাজরা সহ অসংখ্য সংগ্রামীদের কথা স্মরণ করা হয়। ধিক্কার জানানো হয় সেই সময়ে বৃটিশের দালালী করে যারা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সেই সাভারকার ভ্রাতৃদ্বয়, ডা: শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীদের বশংবদদের। সভায় বক্তারা বলেন লোকসভা চলাকালীন গোপনে যেভাবে কোনো পক্ষের সাথে আলোচনা না করে কেন্দ্রীয় সরকার এক তরফাভাবে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দিল তা অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান বিরোধী। কাশ্মীরের ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বাতিল করে কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের সংযোগের সেতুটিকেই ধ্বংস করে দিল। ধ্বংস করল ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ মর্মবস্তুকে। বক্তারা আরও বলেন ৩৭০ ও ৩৫এ ধারাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে, সব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, কার্ফু, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, খবর প্রকাশ ও নেট চালু করতে হবে। ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে জমায়েতে গুলি চালিয়ে তিন শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছিল। এই বছর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ চলছে। আর এই বছরই সংসদের দুই কক্ষে ইউএপিএ আইনকে আরও দানবীয় করে পাস করানো হল। জানার অধিকার আইন আরটিআই-কে সীমিত করে দেওয়া হল। দেশের অভ্যন্তরে ফ্যাসিবাদী শাসন ক্রমশ জাঁকিয়ে বসছে।
উন্নাও, কাশ্মীর সহ বিভিন্ন প্রান্তে শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা একের পর এক নারী হত্যা, বলাৎকার এবং নির্যাতনের ঘটনায় যুক্ত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। রেল, অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি, বিএসএনএল সহ ৪৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেসরকারিকরণের জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তৃণমূলের অবস্থানেরও সমালোচনা করা হয়। প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জিগিরের মাধ্যমে আরএসএস/বিজেপি উগ্রজাতীয়তাবাদ প্রচার করে জনসাধারণকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত সংবিধান আক্রান্ত গণতন্ত্র। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সমস্ত দেশপ্রেমিক, বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন করা হয়। বক্তব্য রাখেন শাম্ব মজুমদার (আরওয়াইএ), শিবশঙ্কর গুহরায় ও অশোক সাহা সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, জয়ন্তী দাশগুপ্ত ও অর্চনা ঘটক (সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি), মাজাহার খান, সাগ্নিক চক্রবর্তী এবং নবেন্দু দাশগুপ্ত (এআইসিসিটিইউ)। উপস্থিত ছিলেন আঞ্চলিক কমিটির অন্য সদস্যরা ও পার্টি কর্মীরা।
এবারের ৭৩তম স্বাধীনতা দিবস জনগণের সামনে এক নতুন তাৎপর্যনিয়ে হাজির হয়েছিল। অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক ভাবে কাশ্মীরে ৩৭০ ও ৩৫এ ধারা বিলোপ করে এবং কাশ্মীরী জনগণকে অবরুদ্ধ করে মোদি সরকার তার ফ্যাসিবাদী চরিত্রকে স্পষ্ট করে তুলেছে । জনগণকে সাথে নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী আগ্রাসনকে মোকাবিলা করতে ১৫ আগস্ট সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, আইসা, আরওয়াইএ, এআইসিসিটিইউ এবং এআইপিএফ-এর পক্ষ থেকে হুগলী জেলার সদর শহর চুঁচুড়ায় সংহতি কর্মসূচী পালিত হয়। অনুষ্ঠান শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের শহিদ স্মরণে নিরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে। সাংস্কৃতিক কর্মী নারায়ণ দাসের গাওয়া ‘‘হাতে হাত রেখে পার হবো এই বিষের বিষাদ সিন্ধু’’ গানের সাথে সাথে উপস্থিত সাথীরা তৈরি করেন মানব বন্ধন যেখানে অনুষ্ঠানস্থল সংলগ্ন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলের মানুষরাও সামিল হন। গান, কবিতা, বক্তব্যের সাথে সাথেই চলতে থাকে জনগণের ঐক্য ও সম্প্রীতির রাখিবন্ধন। পথ চলতি মানুষ, টোটো চালক, গাড়ির যাত্রী, সাইকেল আরোহী কোনো ছাত্রী সকলেই রাখি পরতে চেয়ে খুশি মনে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মহিলা কর্মীদের দিকে, তাদের রাখি পরাতে পরাতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই উপলক্ষ্যে প্রকাশিত প্রচার পত্র, কাশ্মীর নিয়ে প্রকাশিত প্রচার পত্র, বণ্টিত হয়েছে দেশব্রতী। সারাক্ষণ উপস্থিত থাকা এক বয়স্ক মানুষ মাঝখানে নমাজ সেরে এসে আমাদের মহিলা কর্মীদের পরিয়ে দিলেন ঐক্যের রাখি। এঙ্গাস জুট মিলের শ্রমিক কমরেড এবং ছাত্র যুব কমরেডরা অনুষ্ঠানস্থলকে লাল পতাকায় সজ্জিত করে তোলেন, হাতে হাতে ধরা ছিলো, ‘কাশ্মীর থেকে কারফিউ ও সামরিক শাসন তুলে নাও’, ‘৩৭০ ও ৩৫এ ধারা পুনর্বহাল করো’, ‘কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে হবে’ লেখা পোস্টার। সভায় গান গেয়ে শোনান ঋতা ব্যানার্জি, প্রশান্ত নাথ এবং কবিতা পাঠ করেন ভিয়েত। বক্তব্য রাখেন সনৎ রায়চৌধুরি ও উদ্যোক্তা সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে সৌরভ রায়, সুদর্শন বসু, বটকৃষ্ণ দাস ও চৈতালী সেন।
এইদিন পোলবা ব্লকে সকালে সংহতি কর্মসূচী পালিত হয়। আলীনগর মোড় থেকে কাঁকসারা মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করা হয় এবং রাখি পরাতে পরাতে যাওয়া হয়। বহু কিশোর-কিশোরী এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। এই অঞ্চলে সংখ্যালঘু মানুষ ও ক্ষেত মজুর ও গ্রামীণ গরিব মানুষদের বসতি। আরওয়াইএ এবং আইসা সংগঠক সজল দে, অর্পিতা রায়, আয়ারলা সংগঠক গোপাল রায়, শৈলেন দে সমগ্র কর্মসূচীটি পরিচালনা করেন।