মুখ্যমন্ত্রীর তাঁর লোক-লসকরেরা ইসটিশনে- ফেরিঘাটে ‘দিদিকে বলো’ কার্ড নিয়ে ঘুরছে। জনগণের অভিযোগ নাকি এবার সহজেই মুখ্যমন্ত্রীর কর্ণগোচর হবে। অথচ গরিব খেতমজুর, আদিবাসী জনতা যখন আগে হতে জানিয়ে সরকারি দপ্তরে তাঁদের সমস্যার কথা বলতে যাচ্ছেন তখন দেখছেন, দপ্তরের কর্তা ‘অন্য কাজে’ বেরিয়ে গেছেন। গত ১৬ আগস্ট পান্ডুয়া বিডিও অফিসে ‘সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি’ ও সারা বাংলা আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের উদ্যোগে গণডেপুটেশন কর্মসূচিতে এই ঘটনাই ঘটেছে। শত শত আদিবাসী নারী-পুরুষ রেল স্টেশন থেকে মিছিল করে নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টেয় বিডিও অফিসে এসে দেখেন, বিডিও নেই। তিনি নাকি অন্য কাজে বাইরে গেছেন। ডেপুটেশন নেবেন অন্য কোনো আমলা। সংগ্রামী জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। বিডিও’র অন্য কাজ থাকতে পারে। কিন্ত দরিদ্র গ্রামবাসীদের বিশেষত শত শত শ্রমজীবী আদিবাসীদের অভিযোগ শোনাটাও তাঁর কাজ। সিদ্ধান্ত হল, অন্য কোনো অফিসার নয়, বিডিওকেই তাঁরা ডেপুটেশন দেবেন। খবর পৌঁছাল বিডিও’র কাছে। তিনি টেলিফোনে জানালেন, ডেপুটেশন নেবেন কিন্ত তাঁর আসতে দেরী হবে। হোক দেরী তবুও বিডিও’র কাছেই তুলে ধরা হবে সমস্ত দাবি। ব্লক আফিসের সমস্ত চৌহদ্দি জুড়ে আদিবাসী লোকশিল্পীরা শুরু করলেন উৎসব – মাদল বাজিয়ে নৃত্য-গীত। সময় বাড়ছে, জমায়েতে লোকও বাড়ছে। আদিবাসী ছাড়াও আরো বহু গ্রামীণ দরিদ্র সমাবেশে হাজির । কিন্ত বিডিও কোথায়? সন্ধ্যা নেমে আসছে। ক্রোধে ফেটে পড়লেন বিক্ষোভকারীরা। অফিসের প্রধান ফটক তাঁরা বন্ধ করে দিলেন। চলল নেতা-কর্মীদের বক্তৃতা-শ্লোগান।
অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর বিডিও এলেন। পাঁচ জনের এক প্রতিনিধিদল তাঁর কাছে স্মারকলিপি জমা দিলেন। দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হল। আলোচনায় কয়েকটি আশু ও স্থানীয় দাবির অনেকটাই মীমাংসা হল। এসসি-এসটি শংসাপত্রের জন্য যারা আবেদন করেছেন কিন্ত শংসাপত্র পাননি তাদের জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি ক্যাম্প করে বিষয়টির ফয়সালার গ্যারান্টি আদায় করা গেল। প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যারা ‘৫০%-এর বেশি অক্ষম’ তাদের সকলের জন্যই ভাতা পাওয়ার আশ্বাস মিলল। এছাড়া অবিলম্বে কয়েকটি নিকাশি খাল ও রাস্তা সংস্কারের দাবিরও মীমাংসা হল। আদিবাসীদের লোকশিল্পী ভাতার জন্য সমস্ত আবেদন পত্র এবং আবাস যোজনায় যারা ঘর পাননি তাদের তালিকা বিডিও গ্রহণ করলেন। কিন্ত গোলমাল বাধল ‘রেগা প্রকল্পে’ (১০০ দিনের কাজ) কাজ শুরু করার প্রশ্নে। মোদি সরকারের নতুন ফরমান তুলে ধরে বিডিও বলেন, ‘নালা বা পুকুর সংস্কার, রাস্তার দুপাশে মাটি ফেলা ইত্যাদি ধরনের কাজ আর করানো যাবে না। শুধু নতুন প্রোজেক্টের কাজ হবে। আর নতুন প্রোজেক্টের সংখ্যা কম হওয়ায় তেমন ভাবে কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। মোদির এই ফতোয়াকে ডিঙ্গিয়ে নিজের থেকে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ করানোর সাধ্য যে রাজ্য সরকারের নেই তা স্পষ্ট হয়ে গেল। আমাদের প্রতিনিধিরা বিডিও-কে সাফ জানিয়ে দেন : নতুন-পুরনো প্রকল্পের জট-জটিলতা শোনার দায় শ্রমিকদের নেই। ‘রেগা’ আইন অনুযায়ী গ্রামীণ মজুররা কাজ করতে চাইলে তাদের কাজ দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সুতরাং গ্রামে গ্রামে গরিবরা নির্ধারিত ‘৪-ক’ ফর্মে কাজের দাবি করলে, প্রশাসনকে তা গ্রহণ করতে হবে। গ্রামে গ্রামে গ্রামসভা ডেকে ‘৪ক’ ফর্ম ভরো, পঞ্চায়েত ঘেরো — এই জোরদার আওয়াজ তুলে বিডিও অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশন শেষ হয়। উল্লেখ্য বিডিও’র নিকট প্রতিনিধি দলে ছিলেন নিরঞ্জন বাগ, পাগান মুর্মু, ইউসুফ মন্ডল, সরস্বতী বেসরা ও শিবানী সরেন।