প্রকৃত তথ্য জানতে গত ১৯ জুন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের বিহার রাজ্য সম্পাদক কুণালজীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল মুজফ্ফরপুরের এসকেএম কলেজ হাসপাতলে যান। তারা প্রথমে পরিদর্শন করেন শিশুদের যেখানে জরুরী চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে সেই পিআইসিইউ (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)-তে, সেখানে উপস্থিত শিশুদের পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতাল কতৃর্পক্ষ ও শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গেও দেখা করেন এবং এনকেফেলাইটিসের আক্রমণে শিশু মৃত্যু যেরকম মহামারী আকার ধারণ করেছে তা কিভাবে রোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন। হাসপাতালে গিয়ে যা কিছু প্রত্যক্ষ করা গেছে তা থেকে প্রধানত তিনটি বিষয়ে জরুরী উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে প্রতিনিধিদল মনে করে।
পিআইসিইউ বেডের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২টি। এনকেফেলাইটিসে ভর্তির ভীড় লাগার পর সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০টি। কিন্তু এটাও কিছুতেই যথেষ্ট নয়। অনুসন্ধানকারী দল থাকার সময়ে শিশুভর্তির সংখ্যা ছিল ৯৬, অর্থাৎ বেড প্রতি ২টি শিশুকে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার বললেন, ভালোভাবে চিকিৎসা করতে হলে এবং শিশুরা যাতে স্বস্তি পায় তার জন্য বেডের ব্যবস্থা করা উচিত অন্তত ২০০টি।
অনুসন্ধানকারী দল দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শহিসাবে বলে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি যথাযথভাবেচালানো দরকার। এই কেন্দ্রগুলিতে বড় সংখ্যায় ডাক্তার থাকা উচিত। একইভাবে পর্যাপ্ত ওষুধপত্র ও এ্যাম্বুলেন্স থাকতে হবে। তাহলে আক্রান্ত শিশুরা যদি ৩ ঘন্টার মধ্যে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চলে আসতে পারে তখন তাদের বাঁচানোর অনেক সুযোগ থাকে।
তৃতীয় পরামর্শদেওয়া হয় রোগটিকে মূলেই নির্মূল করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারকে পরিস্কার নিয়মিত জল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি শিশুদের গ্লুকোজের স্তর ঠিকঠাক বজায় রাখা যায়, আর খাবার ও অন্যান্য পরিচর্যার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে মহামারী ঠেকানো সম্ভব। অনুসন্ধানকারী দলের নজরে এসেছে এস কে এম সি হাসপাতালে ৩৭২টি শিশু ভর্তি হয়েছিল, তার মধ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছে যায় ৯৩-এ, তার মানে মৃত্যু হার দাঁড়ায় ২৫ শতাংশ, রীতিমত উদ্বেগজনক। শিশুদের চিকিৎসারত ডাক্তার রয়েছেন মোট ২১ জন, তার মধ্যে মুজফ্ফরপুর হাসপাতালের ডাক্তার ১১ জন, বিশেষ জরুরী অবস্থায় বাইরে থেকে ডেকে নিয়ে আসা হয়েছে ১০ জন ডাক্তারকে। অথচ যেখানে থাকা উচিত ২-৩টি শিশু প্রতি ১ জন ডাক্তার এবং গড়ে ৮ ঘন্টা অন্তর ডিউটি ধরলে মোট ৯০ জন ডাক্তার প্রয়োজন। হাসপাতালে সহায়ক স্টাফ ও নার্সের সংখ্যাও যথেষ্ট অপ্রতুল। তাদের অনেককেই নিয়ে আসা হয়েছে জরুরী ভিত্তিতে অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে, যদি সেইসমস্ত ওয়ার্ডেও স্টাফ ও নার্সের সংখ্যাগত সংকট রয়েছে। ৩ নং আইসিইউ-তে এসি বিকল হয়ে রয়েছে, ৫টি জেনারেটারের মধ্যে ৩টি অচল, তারপরে শিশুদের আইসিইউ থেকে যে ওয়ার্ডে দেওয়া হয় সেখানে পাখাও নেই। সব দেখে-শুনে প্রতিনিধিদলের মনে হয়েছে, শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে চিকিৎসাজনিত অবহেলা বা গাফিলতির কারণে। রোগের প্রকোপটা জানা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবস্থা মেলার নয়। আর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলির দুরবস্থা আরও শোচনীয়, না আছে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, না রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা।
অনুসন্ধানকারী দলে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের বিহার রাজ্য সম্পাদক সহ ছিলেন এআইকেএম-এর সাধারণ সম্পাদক রাজারাম সিং, সিপিআই(এমএল) মুজফ্ফরপুর জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ মোহন, ইনসাফ মঞ্চ নেতা ফাহাদ জামা, আর ওয়াই এ জেলা সম্পাদক রাহুল কুমার সিং, এ আই এস এ জেলা সম্পাদক বিকেশ কুমার প্রমুখ আরও অনেকে। সিপিআই(এমএল) দৃঢ়ভাবে মনে করে বিহারের জেলা হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে ডাক্তার সংখ্যা, অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী, এ্যাম্বুলেন্স পর্যাপ্ত বাড়াতে হবে, বিশেষ করে জেলা হাসপাতালগুলিতে আইসিইউ সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং ব্লক হাসপাতালগুলিতে এমার্জেন্সি বিভাগ থাকতে হবে।