এডওয়ার্ডো গালিয়ানো একবার বলেছিলেন দেওয়াল গুলো হল গরিবদের প্রকাশনা। আজকে দেওয়াল গুলোকে মুছে দেওয়ার মাধ্যমে ছাত্রদের যোগাযোগের ভাষা আর ব্যাকরণকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই দেওয়ালগুলো হলো রাস্তার গ্রন্থাগার। তারা প্রতিরোধের প্রতীক। তারা শিল্পীর ক্যানভাস, যে ক্যানভাসে বিশ্বের মুখ উঠে আসে। এক অসম বিশ্বের মুখ, লাঞ্ছনা আর অন্যায়ে ভরা বিশ্বের মুখ এই দেওয়ালে আঁকা ছবিতে, লেখা শব্দে আর কবিতায় অবিরত ভাষা পায়।
এই দেওয়ালগুলো হলো গণতন্ত্রের উন্মুক্ত পরিসর, জানা বোঝার উন্মুক্ত পরিসর, শিল্পের উন্মুক্ত পরিসর। কত কিই না এই পরিসরে স্থান পেয়েছে। ছাত্রদের বিষয়, শিক্ষকদের বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় থেকে শুরু করে সরকার, প্রকৃতি, অর্থনীতি, বিদেশনীতি, আমাদের দেশ এবং বিশ্বের বহু বহু বিষয় চর্চিত হয়েছে এই দেওয়ালে লেখা শব্দগুলিতে, এই দেওয়ালে আঁকা ছবি গুলিতে।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দশকের পর দশক ধরে যে সমস্ত কর্তা ব্যক্তিরা এসেছেন, কূটনীতিকরা এসেছেন, রাষ্ট্রদূতেরা এসেছেন, আমলারা এসেছেন, অধ্যাপকেরা এসেছেন, রাজনীতিবিদেরা এসেছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে এই জগতের তাবড় তাবড় নামিদামি ব্যক্তিরা এসেছেন — তাদের সবার সঙ্গেই এই দেওয়ালগুলি কথোপকথন চালিয়েছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দেওয়াল গুলি শুধু দেওয়াল তো নয়, সেগুলো জ্ঞানার্জনের এক ক্ষেত্রও বটে। এই দেওয়াল গুলিতে অবিরত প্রতিফলিত হয় মতাদর্শগত বিতর্কর তীক্ষ্ণ চেহারাগুলি। সংবিধান আমাদের যে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা দিয়েছে তার এক উত্তুঙ্গ প্রকাশ এই দেওয়াল গুলিতে লক্ষ্য করা যায়। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঐতিহ্য দেশের ফ্যাসিবাদী সরকারের হামলায় আজ ভুলুণ্ঠিত হতে চলেছে। এই হামলা শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই চলছে তা নয়, তা চলছে দেশের সর্বত্র। শিল্পীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। কার্টুন আঁকাকে অপরাধ বলে চিহ্নিত করে আনা হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা। কবিতা লেখার জন্য দায়ের করা হচ্ছে এফ আই আর। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে হিংসাকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। সংবিধান আমাদের যে নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার দিয়েছে সেই অধিকার গুলি প্রতি মুহূর্তে ভষ্মিভূত হচ্ছে একেবারে রাজধানীর বুকে সংসদের সামনেই।