খবরা-খবর
আদিবাসীদের নৃত্য-গীত পরিবেশন ও লড়াইয়ের শপথ নিয়ে হূল দিবসের মহোৎসব

৩০ জুন আদিবাসীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। পশ্চিমবঙ্গের জাগরিত আদিবাসী জনসমাজ দিনটি পালন করেন সাঁওতাল বিদ্রোহের স্মরণে। এরাজ্যে দেখা যায় ভোটের আগে আর হুল দিবসে শাসক দলগুলো সাঁওতাল গ্রামে পা রাখে। হুল দিবসে মমতা প্রতিবছর বড় বড় কর্মসূচী রাখেন।এবছর তার ব্যতিক্রম ঘটল। এরাজ্যের তফসিলি জাতি ও উপজাতি ভুক্ত জনসমাজ, দেখা গেল; এই লোকসভা নির্বাচনে মমতা-সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। শাসক দল থেকে আদিবাসীদের এই বিচ্ছিন্নতা বোঝা যাচ্ছিল ২৬ জুন আদিবাসী মঞ্চের ডেপুটেশনের সময়,যখন হুগলি জেলা আদিবাসী দফতরের অধিকর্তা ধনেখালি ও আরামবাগের হুল দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বারবার আদিবাসী মঞ্চকে অনুরোধ জানাচ্ছেন। বলাগড়ের মহীপালপুরে যে সরকারী অনুষ্ঠান হল, দেখা গেল সেখানেও মঞ্চের দখল নিলেন হুগলির সাংসদ বিজেপির লকেট চ্যাটার্জিরা ! বিকেন্দ্রীভূতভাবে অসংখ্য হুল স্মরণ হলেও, উদ্যোগ ও জনসমাবেশে জেলার গুরুত্বপূর্ণ আদিবাসী সংগঠন ‘আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ’ স্থির করেছিল কেন্দ্রীয়ভাবে পোলবাতে হুল স্মরণে অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানে শহীদ স্মরণ ছাড়াও গুরুত্ব থাকবে সাংস্কৃতিক দলগুলির বিকাশকে উৎসাহিত করা। পোলবা দাদপুর ব্লক ছাড়াও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন হরিপাল, ধনেখালি ও পাণ্ডুয়ার সাথীদের একাংশ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মঞ্চ নেতা বিশ্বনাথ সরেন, পাগান মুর্মু, সিদ্ধেশ্বর মান্ডি, সজল অধিকারী প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরু হয় সিধু, কানু, তিলকা মাজি, বীরসা মুণ্ডা সহ আদিবাসী বিদ্রোহগুলির বীর শহীদদের এবং বি আর আম্বেদকরকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে। বর্ষীয়ান আদিবাসী নেতা ভূতনাথ টুডু সিধু-কানুর ফটোতে মাল্যদান করে সূচনা করেন। নীরবতা পালনের পর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়, এই পর্বেবিচারকের আসনে বসেন আরতি হাঁসদা, সরস্বতী বেসরা, সিদ্ধেশ্বর মান্ডি, গণ সংস্কৃতি পরিষদের নীতীশ রায়, আয়ারলা জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন বাগ। চোদ্দোটি দল অংশ নেয়। খুবই বর্ণময় হয়ে ওঠে এই পর্যায়।

এই পর্বে সবচেয়ে আকর্ষক কর্মসূচি ছিল বিদ্রোহের গানের সাথে নাচের ছন্দে সমবেত মানুষের হুল স্মরণ। এই সমবেত অনুষ্ঠানে বিচারকের আসন থেকে নেমে অংশ নেন আরতি হাঁসদা সহ অন্যরা। প্রতিযোগী প্রতিটি সাংস্কৃতিক দলকে এরপর তুলে দেওয়া হল হুল স্মরণে মেমেন্টো। সবশেষে আয়ারলা নেতা গোপাল রায়, মঞ্চের পক্ষে পাগান মুর্মু ও সরস্বতী বেসরা হুল দিবসের আজকের তাৎপর্য ও আজকের চলমান আন্দোলনের কথা স্মরণ করান। আদিবাসী গানের প্রতি ছত্রে জড়িয়ে তাদের জীবনচর্চা, জীবনবোধ; গান ও নাচের ছন্দে হুল সহ আদিবাসী সংগ্রামী নেতাদের স্মরণে তাদের অপার গর্ববোধ। বিদ্রোহ আর কঠিন জীবন সংগ্রামের যৌথবোধ যার মূল সুর। সংস্কৃতির এই বহতা ধারাকে আরো আরো আয়ত্ত করতে হবে আমাদের, গণ আন্দোলনের বিকাশের স্বার্থেই। হূল বিদ্রোহের স্মরণ অনুষ্ঠান একারণেই তাৎপর্যময়।

hul

 

খণ্ড-26
সংখ্যা-19