সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক পার্থঘোষ এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, ১০ জুন ট্যাংরা অঞ্চলের মধ্য বয়সের এক রোগী শ্বাসকষ্ট ও হৃদযন্ত্রের কিছু সমস্যা নিয়ে সরকারি চিকিৎসালয় নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তিহন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তার চিকিৎসাও শুরু করে দেন। চিকিৎসা চলাকালীন সোমবার সন্ধ্যায় ঐ রোগীর দু:খজনক মৃত্যু হয়। কিন্তু গতকাল রাত ৯টা থেকে পুলিশের উপস্থিতিতেই হাসপাতালে চড়াও হয় একদল দুস্কৃতি। মৃত্যুর জন্য ঐ চিকিৎসককেই দায়ী করে হামলা শুরু হয়। আহত হন চারজন জুনিয়র চিকিৎসক। হাসপাতালের পরিষেবা ব্যবস্থার উন্নতি না ঘটিয়ে, পরিষেবাকে চালিয়ে যাওয়ায় কিছুদিন পরপরই বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী এবং তার পরিজনদের সঙ্গে চিকিৎসকদের বিরোধ বাধে, হামলা চলে। দায়সারা তদন্ত এবং সাময়িকভাবে দু’একজনকে গ্রেপ্তার করে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। রোগী এবং চিকিৎসকদের সম্পর্কদিনের পর দিন তলানিতে এসে ঠেকেছে।
এনআরএস হাসপাতালের ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আক্রান্ত একজন চিকিৎসক মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন। তাঁকে দ্রুত সুস্থ করে তোলার জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা চালানো উচিত। রাজ্যের শাসকদলের চিকিৎসক সংগঠন ছাড়া চিকিৎসকদের সাতটি সংগঠন পুলিশ-প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিবাদে আগামীকাল থেকে রাজ্যের সমস্ত সরকারী হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দু:খজনক হলেও নিরুপায় চিকিৎসকরা এপথেই প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বেসরকারী হাসপাতালের আউটডোরও আন্দোলনের সমর্থনে বন্ধ রাখার কথা শোনা যাচ্ছে। এই অচলাবস্থা কাটাতে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। বিনা বাক্যব্যয়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে এবং পুলিশ-প্রশাসনের যে সমস্ত দায়িত্বশীলরা এই হাসপাতালের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত তাদেরও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই দু:খজনক মৃত্যু এবং চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িকভাবে হাজির করার অপচেষ্টা চলছে, যা চিকিৎসা পরিষেবাকে আরও সঙ্কটগ্রস্ত করবে এবং রোগী-চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পর্ককে আরও বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে দেবে। আমরা এই অপচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছি। অপরাধীদের শাস্তি হোক, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হোক এ দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে।
এনআরএস হাসপাতালে ডাক্তার পড়ুয়াদের অবস্থান বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখছেন প্রাক্তনী ডাঃ বর্ণালী রায়। তিনি বললেন, আজ হাওড়া হাসপাতালে একজন ডাক্তার যখন রোগীর পরিবারকে হাতজোড় করে বলেন, দুঃখিত, আজ অপারেশন করতে পারবো না, আমাদের আন্দোলন চলছে, একজন ডাক্তার মৃত্যু মুখে ...। জবাবে রোগীর পরিবার বললেন, ডাক্তারবাবু, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যান, অপারেশন দু‘দিন বাদে নিশ্চয়ই হবে।
এনআরএস মেডিকেল কলেজে এক রোগীর দু:খজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের উপর দুষ্কৃতিদের হামলা এবং দু’জন জুনিয়র চিকিৎসকের প্রাণ সংশয়কে কেন্দ্র করে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল আজ তা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগী এবং তাদের পরিজনরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে চরম সঙ্কটে। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জরুরী ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছেন। আন্দোলনরত চিকিৎসক সংগঠন এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে আমাদের আবেদন প্রশাসনের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে এবং দুষ্কৃতিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আন্দোলন চলুক, কিন্তু রোগীদের স্বার্থে “প্যারালাল” আউটডোর ও জরুরী বিভাগ চালু করা হোক। আন্দোলনের পাশে জনগণের পূর্ণ সমর্থন আছে। হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত করার জন্য জনগণেরও সমর্থন আছে। তাদের স্বার্থেই জরুরী বিভাগ চালু রাখা হোক। আমরা চিকিৎসকদের আন্দোলনের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।