ভাটপাড়ায গত ১০ জুন সিপিআই(এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি মিছিল অঞ্চলে শান্তি ফেরানোর দাবিতে পরিক্রমা করেছিল। জগদ্দল থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জানিয়েছিলেন, যে তিনি কোনো অশান্তি হতে দেবেন না। তারপরেও অবস্থার উন্নতি তো হয়নি বরং ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ও গুলিতে ৫ জন আহত হয়েছে। এই অবস্থায় সিপিআই(এমএল)-এর তরফ থেকে ২৭ তারিখ কলকাতায় রাজ্য জুড়ে চলমান হিংসা-বিদ্বেষ-বিভাজনের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতি মিছিলের আয়োজন করা হয়। ওই মিছিলে পার্টির রাজ্য সম্পাদক পার্থঘোষ, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ নেতৃত্ব দেন। মিছিলটি মৌলালী থেকে শুরু করে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, পার্থ ঘোষ, কার্তিক পাল, সুব্রত সেনগুপ্ত, জয়তু দেশমুখ ও অমিত দাশগুপ্ত। মিছিল থেকে রাজ্য জুড়ে ও ভাটপাড়ায শান্তি ফেরাতে ব্যর্থনিষ্ক্রিয়, অপদার্থ রাজ্য সরকার ও প্রশাসনকে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি ভাটপাড়ায নির্বাচনোত্তর হিংসা ছড়ানোর প্রধান খলনায়ক অর্জুন সিংকে গ্রেফতারের দাবিও ওঠে। হিংসায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তিকে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায় ও পরবর্তীতে ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয়। দাবি করা হয় যে, শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে অবিলম্বে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে হবে, বেআইনী অস্ত্র উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে, গুলি চালানোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যগুলির মূল সুর ছিল বিজেপি-আরএসএস এর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। বক্তারা বলেন একদিকে সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাসের ভাওতা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি, অন্য দিকে ক্রমাগত মুসলমাদের উপরে দেশ জুড়ে হামলা চলছে। ঝাড়খন্ডে তবরেজ আনসারিকে পিটিয়ে খুন করা হল, এদিকে এরাজ্যে বালিগঞ্জ স্টেশনে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হল শাহরুক হালদারকে, হাঙ্গামা করা হল সংখ্যালঘু যাত্রীদের উপর। করল হিন্দুত্ববাদিরা, জয় শ্রীরামের ধ্বনি দিয়ে। ওই শ্লোগান মূলত গুন্ডামির শ্লোগান হয়ে উঠেছে। জয় শ্রীরাম বলে মসজিদ ভাঙা হয়, গণপিটুনিতে খুন করা হয়, ট্রেন থেকে ফেলে দেওযা হয়, শ্রমজীবী মানুষের সম্পদ লুঠ করা হয়, বাড়িতে আগুন লাগানো হয়, ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়। জয় শ্রীরাম বিজেপি-আরএসএস-এর কাছে একটি লুঠতরাজ, খুন-জখম, দাঙ্গাহাঙ্গামার ছাড়পত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। এরাজ্যে বিজেপি ও তাদের নেতারা ওই শ্লোগান দিতে দিতে অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে। তবে শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের রুটি রুজির সংগ্রামের কথা অবিলম্বেই ভাবতে শুরু করবে। বিজেপির বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে সমস্ত গণতান্ত্রিক শ্রমজীবী মানুষকে এক হওয়ার আবেদন জানা তাঁরা।
এছাড়াও ২৭ জুন ভাটপাড়া কাঁকিনাড়া অঞ্চলে শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে এক অনুসন্ধানমূলক পদযাত্রা সংগঠিত হয়। ওই পদযাত্রায় নাটককার চন্দন সেন, অপর্ণা সেন, শুভেন্দু মাইতি, এপিডিআর-এর সাথীরা ও আরো অনেকের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের সম্পাদক নীতীশ রায়, নৈহাটি অগ্নিবীণার সাথীরা অংশগ্রহণ করেন।