ডাক্তার পায়েল তদভির আত্মহত্যার ঘটনা আর একবার আমাদের সমাজের গভীরের জাতবিদ্বেষ দেখিয়ে দেয়। পায়েল ছিলেন তদ্ভি ভীল মুসলমান সম্প্রদায়ের ২৬ বছর বয়সের তরুণী যিনি ডাক্তারি পাস করে হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডাক্তার হিসেবে কাজ করছিলেন। মূলত মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে কয়েকটি ছোট ছোট এলাকায় ছড়িয়ে থাকা একটি ছোট্ট সম্প্রদায় এই তদ্ভি ভীল মুসলমানেরা। দরিদ্র এবং স্বাক্ষরতার হার কম। ধর্মীয় রীতিনীতি ও বিশ্বাসে উদার ও সমন্বিত ধারার সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত যারা নামাজও পড়েন আবার দেবমূর্তিকে প্রণামও করেন। সমস্ত ভীলদের মতো তাঁরাও শিডিউল্ড ট্রাইব। এরকম একটি প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা পায়েল হাসপাতালের হস্টেলে বাকি তিনজন রুমমেটের সংঘবদ্ধ বিদ্বেষের শিকার হন। মেঝেতে বিছানা পেতে শুতে বাধ্য করা হত তাঁকে, তিনজন বর্ণহিন্দু রুমমেট সেই বিছানাকে পাপোষ হিসেবে ব্যবহার করত। হাসপাতালে রাত কাটাতে বাধ্য হন। সেখানেও সিনিয়ার ডাক্তারদের টিটকিরি শুনতে হয় : এদের পড়ার দরকার কী, এইসব নীচুজাতদের সাথে এরকমই ব্যবহার করা দরকার। পায়েল এইসব হেনস্থার কথা নিজের পরিবারকে জানিয়েছিলেন এবং পরিবারের তরফ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে নিগ্রহ ও জাতবিদ্বেষমূলক হেনস্থার অভিযোগ জানানো হয়। কিন্তুু কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে, কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না।
চুনি কোটাল, রোহিত ভেমুলা, পায়েল তদ্ভি। এইসব প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা দেখিয়ে দেয় আধুনিক উচ্চস্তরের প্রতিষ্ঠানগুলিতে কত ভয়ঙ্কর চেহারায় কত ব্যবস্থিতভাবে জাত বিদ্বেষ বিরাজ করছে।
সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি গত ৪ জুন মৌলালি মোড়ে বিক্ষোভ সভা সংগঠিত করে। ডব্লিউএসএস-এর পক্ষ থেকে শাশ্বতী ঘোষ বলেন, আমাদের প্রতিদিনকার ব্যবহার ও হাসি-মজার মধ্যেও জাতবিদ্বেষ লুকিয়ে থাকে; নিশা বিশ্বাস বলেন যে, নির্বাচনের ফল ঘোণার আগের রাতে মারা গেছেন পায়েল তদ্ভি, কিন্তুু প্রধানমন্ত্রী বা ওই রাজ্যের অন্য কোনও মন্ত্রী এই প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা নিয়ে কোনও কথা বলছেনা; স্বপ্না ব্যানার্জী প্রাত্যহিক জীবনে জাতপাতের চিহ্নগুলির কথা বলেন। নিখিল বঙ্গ মহিলা সঙ্ঘের সর্বানি ভট্টাচার্য বিজেপি শাসনের ভয়ঙ্কর দিকগুলির কথা তুলে ধরে বামপন্থীদের কাছে আহ্বান করেন রুখে দাঁড়ানোর। আইপোয়ার পক্ষ থেকে ইন্দ্রানী দত্ত, অর্চনা ঘটক ও চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি বক্তব্য রাখেন। কল্যাণী গোস্বামী গান গেয়ে প্রতিবাদ জানান। পায়েল তদভির প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার দ্রুত তদন্ত করে প্রত্যক্ষ অপরাধিদের শাস্তি ও কর্তৃপক্ষের অপরাধমূলক গাফিলতির উপযুক্ত শাস্তি দাবি করা হয় এই বিক্ষোভ সভা থেকে। রোহিত অ্যাক্ট লাগু করা এবং শিক্ষা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিতে জাতবিদ্বেষের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারকে নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলা হয়।