১৯৯৩ সালের ৩১ মে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে বর্ধমান জেলা তথা বর্তমানে পুর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান সদর-২নং ব্লকের নবস্থা-২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের করন্দা গ্রামে সিপিএম গুন্ডাদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় ৬ জন গরীব ক্ষেতমজুর। ৩০ মে ছিল পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন। সেই সময় সিপিএম-এর দুর্নীতি, দলবাজী, সন্ত্রাস ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে ব্যাপক গরিব মানুষ সিপিএম ছেড়ে দলে দলে সিপিআই(এমএল)-এর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। বর্ধমান জেলার বহু পঞ্চায়েতের কয়েক শত গ্রামে সিপিআই(এমএল)-এর গণ সংগঠন আইপিএফ-এর প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনের ভোট গোনার সময় অনেকগুলো কেন্দ্রে আইপিএফ প্রার্থীরা এগিয়ে যেতে থাকে। বিশেষ করে করন্দার আইপিএফ প্রার্থী জয়ী হয়। কিন্তুু সিপিএম নেতারা জোর করে আইপিএফ প্রার্থীদের শংসাপত্র না দিয়ে সিপিএম প্রার্থীদের দিতে বাধ্য করে। এমনকি এখানেই থেমে না থেকে বাম আন্দোলনের শক্তিশালী জেলা বর্ধমানে সিপিএম-এর বিকল্প হিসেবে সিপিআই(এমএল) উত্থানের সম্ভাবনাকে সিপিএম অঙ্কুরেই নির্মুল করতে চেয়েছিল। তাই ঐদিনই ভোরবেলা করন্দা গ্রামে গণহত্যা সংগঠিত করে। সিপিএমের সম্পত্তিবান শ্রেণীর সার্থরক্ষাকারী অবস্থানের বিরুদ্ধে গ্রামীণ গরিবদের সংগ্রাম সিপিআই(এমএল)-এর নেতৃত্বে এগোতে থাকে। তাই গ্রামীণ গরিবদের উপর হত্যালীলা চালিয়ে এবং বিভিন্ন গ্রামে পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস নামিয়ে ও করন্দার আতঙ্ক ছড়িয়ে সিপিআই(এমএল)-এর উত্থান ও গ্রামীণ মজুরদের সংগ্রাম দমিয়ে দিতে চেষ্টা করে। সে সময় আজকের ক্ষমতায় থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এর প্রতিবাদে করন্দা গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তুু সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষ থেকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ক্ষমতায় আসার পরে ও করন্দা হত্যার বিচারের কমিশন ঘোষণা করে গরিব মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। সিপিএমের নেতারা খুনীদের রক্ষা করার জন্য এবং তারা খুন করলেও কিছুই যায় আসে না এটা প্রমাণ করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করে জর্জকোর্টে সমস্ত খুনীদের বেকসুর খালাস করে নেয়। হাইকোর্টে ৫ বার ফাইল উধাও করে নিজেদের পছন্দ মত বেঞ্চে বিচার করিয়ে খুনীদের মুক্ত করে। সিপিআই(এমএল) খুনের রাজনীতির মোকাবিলা করার সাথে সাথে আইনী লড়াই সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যায়। সিপিএমের খুনের রাজনীতি যেমন আজ তাদের ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত করেছে। তেমনি আইনের দরবারে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টে পুনর্বিচারের রায় দিয়েছে।
তৃণমূলের কমিশনের ভাঁওতা ও বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সন্ত্রাস ও জোর করে পঞ্চায়েতগুলো দখল করার পর গ্রামীণ গরিবদের মধ্যে তাদের সম্পর্কে বিক্ষোভ চরম মাত্রায় পোঁছে যাচ্ছে। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিগত লোকসভা নির্বাচনে। রাজ্যের প্রায় অর্ধেক আসনে জনগণের রায় তাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে। মানে তৃণমূলের রাজনীতির অন্তর্জলী যাত্রা শুরু হয়েছে।
তাই এবারের শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। যারা তৃণমূলের ভাঁওতা ও সন্ত্রাসের ভয়ে সিপিআই(এমএল)-এর দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল তারাও এদিনের স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এবং আবার সিপিআই(এমএল)-এর প্রতি তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। স্মরণ সভার শুরুতে শহীদদের ফটো নিয়ে মৌন মিছিল বের করে গ্রাম পরিক্রমা করে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা শহিদ বেদীর সামনে উপস্থিত হন। পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্য কমিটির সদস্য সজল পাল ও মাল্যদান করেন রাজ্য কমিটির সদস্য আনসারুল আমান মন্ডল। জেলা কমিটির সদস্য শ্রীকান্ত রানা, তরুণ মাজি, সাধন কর্মকার, করুণা সাঁতরা, সমীর বসাক ও বর্ষীয়ান বিশ্বনাথ ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন সমস্ত লোকাল কমিটির সদস্য ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং অন্যান্য সমস্ত কমরেড ও সমর্থকরা। তারপর শহীদ স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন সজল পাল ও শ্রীকান্ত রানা এবং সম্পুর্ণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন সুকুমার সোম। শহীদদের পরিবারের লোকজন বিশেষ করে মহিলা কমরেডরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ২৬ বছর পরও কান্নার রোল থামেনি। শেষ হয়নি মানুষের শোক ও ঘৃণা। শত্রুর রং পাল্টায় আবার জনগণ লাল পতাকা হাতে ইনক্লাব জিন্দাবাদ এবং সিপিআই(এমএল) জিন্দাবাদ ধ্বনির মধ্যে দিয়ে সিপিআই(এমএল)-এর প্রতি আস্থা বাড়িয়ে চলেছে। শহীদদের স্বপ্ন সফল হবে।