১৬ জানুয়ারী ছিল প্রতিবশী ঝাড়খন্ড রাজ্যে সিপিআই(এমএল) নেতা ও জননায়ক মহেন্দ্র সিং-এর পঞ্চদশ শহীদ দিবস। শহীদ স্মৃতিতে বগোদরে প্রত্যেক বছরের মতো এবারও আয়োজিত হয়েছিল জনসমাবেশ। তবে গতবারের চেয়েও এবারের জনসমাগম ঘটেছে আরও বিপুল সংখ্যায়। সমগ্র সমাবেশের যেদিকে চোখ যায় নজর কাড়ে লালে লাল। ঘোষণা ছিল সংকল্প সমাবেশ হিসেবে পালিত হবে। এই সভায় রাজনৈতিক-সামাজিক-নাগরিক ও মানবাধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। প্রারম্ভে শহীদ স্মৃতিতে নীরবে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সভা শুরু হয়।
হাজার হাজার জনতার সমাবেশে সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রে সবচেয়ে শক্তিমত্ত বিজেপি সরকার চলার ফলে দেশ সবথেকে দুর্বল হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রতিশ্রুতি শুনে মোদী সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। তারপর দীর্ঘ সময় যাবত অপেক্ষা করে দেখেছে এই সরকার সমস্ত ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। আগামী (২০১৯) লোকসভা নির্বাচনে এর বদলা নিতে হবে, দেশের স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে কেন্দ্রের শাসনক্ষমতায় পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দীপঙ্কর প্রসঙ্গত বলেন, শহীদ মহেন্দ্র সিং-এর আদর্শকে আমাদের চলার পথের সংকল্প পাথেয় করে নিয়ে এগোতে হবে। দীপঙ্কর বলেন, মোদী সরকার দেশের সংবিধান নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতার খেলা খেলছে। বিশেষ করে বাবাসাহেব আম্বেদকর যেখানে পশ্চাদবর্তী ও গরিবদের জন্য স্বল্পসংখ্যক সংরক্ষণের সংস্থানের কথা বলেছিলেন। এখন তা নিয়ে মোদী সরকার উল্টোপাল্টা সংরক্ষণের খেল কসরত দেখাচ্ছে। গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে শয়তানি করে গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ করছে। কথায় আছে, বিনাশকালে বুদ্ধিনাশ। মোদী জমানার তাইই হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে ২ কোটি নতুন করে চাকরি দেবেন। আর বাস্তবে বেকারি পৌঁছেছে চরমে। মোদী এই নানা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এই বিষয়টাকে ধামাচাপা দিতে চেয়েছেন, বিতর্ক এড়িয়ে গেছেন। এইসমস্ত কার্যকলাপের জবাব দিতে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-আরএসএস জোটের বিরুদ্ধে জনগণ পাল্টা জোট গড়ে তুলবেই।
সভায় বিভিন্ন বামপন্থী দল সহ গণতান্ত্রিক অংশের প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃবৃন্দ অারও অনেকেই ভাষণ দেন। তাদের বক্তব্যে ঝাড়খন্ডের বিজেপির রঘুবর সরকারের গরিব, আদিবাসী ও নারী বিরোধী তথা লুটেরা পুঁজির তল্পিবাহক নীতি-আচরণের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ ফেটে পড়ে। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) ঝাড়খন্ড রাজ্য সম্পাদক জনার্দন প্রসাদ, জেলা সম্পাদক মনোজ ভক্ত সহ পার্টির ও পার্টি প্রভাবিত বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মানবাধিকার আন্দোলনের প্রবীণ নেতা ফাদার স্টেন বলেন, কেন্দ্রে ও ঝাড়খন্ড রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সংবিধান ও গণতন্ত্রের ওপর যে মাত্রায় আক্রমণ হানছে, এই সময়ে মহেন্দ্র সিংকে খুব মনে পড়ছে। তিনি আজ বেঁচে থাকলে গণপ্রতিরোধ আরও নজরকাড়া হোত। একইভাবে মহেন্দ্র সিং-এর সংগ্রামী জীবনের নানা বৈশিষ্ট্যের স্মৃতিচারণা করে আজকের প্রাসঙ্গিকতায় শিক্ষা গ্রহণের তাৎপর্য বক্তারা উল্লেখ করেন। বক্তব্য রাখেন জন সাংস্কৃতিক মঞ্চের নেতা অনিল অংশুমান, মহেন্দ্র সিং-এর অন্তরঙ্গ সাথী ও প্রবীণ সাংবাদিক ফৈসল অনুরাগ, জন আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় সংগঠক দয়ামনী বারলা, প্রবীণ লেখক কুমার বিনোদ, যুব আন্দোলনের আদিবাসী নেতা জেরাম জেরাল্ড, এআইপিএফ ঝাড়খন্ড রাজ্য নেতা বসির আহমেদ, সিপিআই(এমএল) রাজ্য কমিটি সদস্য নাদিম খান, সিপিআই(এম) নেতা প্রফুল্ল লিংডা, সিপিআই রাজ্য নেতা কে ডি সিং সহ আরও অনেক বক্তা।
সমাবেশের পরিসমাপ্তি হয় ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাজিত করার উত্তাল ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, সেই লক্ষ্যে সমস্ত শক্তি উজাড় করে দেওয়ার অঙ্গীকার গ্রহণ করে, আর এভাবে শহীদ কমরেড মহেন্দ্র সিং-এর স্বপ্নপূরণের পথে অবিচল থাকার হাজারো কণ্ঠ তুলে।