প্রতিদিন শয়ে শয়ে আশা কর্মী সমবেতভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো ঘেরাও করতে থাকেন যার ফলে বিহারের স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হয়। মোতিহারি এবং অন্যান্য স্থানে ধর্মঘটী আশা কর্মীরা ধর্ণায় বসেন এবং রাতদিন ধর্ণাস্থলে থাকেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবক তাদের খাদ্য-পানীয়র যোগান দেন। ৫ ডিসেম্বর সিওয়ানে তাঁরা জেলা হাসপাতালের মাঠে বিশাল ধর্ণা সংগঠিত করেন।
ধর্মঘটী আশা কর্মীরা জেলা স্তরের হাসপাতাল এবং সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে অবরোধ সংগঠিত করেন। ১০ ডিসেম্বর সারাদিন ধরে সি এস অফিসগুলোতে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এর পরদিন সমস্ত জেলার জেলা শাসকদের অফিসগুলোতে বড় আকারে বিক্ষোভ প্রদর্শন সংগঠিত হয়। যৌথ সংগ্রাম মঞ্চ ঘোষণা করেছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী যদি আশা কর্মীদের দাবিগুলোকে উপেক্ষা করতে থাকেন এবং নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেন, তবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের সামনে প্রতিবাদ সংগঠিত করা হবে। বিহার প্রশাসনের কাছে নিয়ম মেনে ১৫ দিন আগে নোটিশ দেওয়া হলেও প্রশাসন আশা কর্মীদের সংগঠনগুলোকে আলোচনায় ডাকার ব্যাপারে কোন তোয়াক্কাই করেনি। বিহার কর্মী ইউনিয়নের সভাপতি শশী যাদব, আশা সংঘর্ষ সমিতির সভাপতি মীরা সিং, বিশ্বনাথ সিং এবং কৌশলেন্দ্র ভার্মা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে অংশ নেওয়া স্থানীয় স্তরে আশা কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বা প্রচ্ছন্ন কোন ধরনের দমনমূলক ব্যবস্থা না নেয়।
বিহারে আশা কর্মীদের ধর্মঘটে সাফল্য এবং দৃঢ়তা অন্যান্য রাজ্যেও একই দাবিতে আশা কর্মীদের আন্দোলনের পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে। (দাবিগুলো ১৩ ডিসেম্বর সংখ্যার রিপোর্টে উল্লিখিত হয়েছে।) যে আশা কর্মীরা বেতনহীন এবং সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা বর্জিত অবস্থায় নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য হন, এই ধর্মঘট তাঁদের কাছে এক আলোর রেখা হয়ে উঠেছে। এই ধর্মঘট প্রশাসনের কপটতাকে এবং তাদের হাতে চরম মাত্রায় শ্রমিক শ্রেণীর শোষণের নতুন হাতিয়ারকে উন্মোচিত করেছে। শ্রমিকদের নিষ্পেষণ করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্ষেত্রের রাঘববোয়ালদের মুনাফা অর্জনের সুবিধা করে দিয়ে নয়া-উদারবাদী জমানায় এই হাতিয়ারের উদ্ভাবন ঘটে। একটি একক মঞ্চে দেশব্যাপী আশা কর্মীদের সমবেত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা সামনে এসেছে। বিহারের আশা কর্মীরা সেই পথকে সূচীত করেছেন।