সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি গত ১ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশ প্রেস ক্লাবে উপরিউল্লিখিত বিষয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত করে। ঐ সেমিনারে প্রধান বক্তা আইপোয়ার জাতীয় সম্পাদিকা কবিতা কৃষ্ণাণ তাঁর বক্তব্যে বলেন—''বিজেপি এবং সংঘ পরিবারের বুনিয়াদি মনুবাদী মতাদর্শ স্বাধীন নারীদের ভয় পায়। তাঁর এক রচনায় উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মনুস্মৃতিকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, নারী সর্বদাই বাবা, স্বামী বা ছেলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি বলেছেন, অনিয়ন্ত্রিত নারী হল দৈত্য সদৃশ। এই ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তাধারার যোগী হলেন বিজেপির তারকা প্রচারক এবং মোদীর উত্তরসূরী। নারীদের স্বাধীনতা এবং আমাদের গণতন্ত্রের সুরক্ষায় মোদী-যোগী সরকারের উচ্ছেদ একন্তই জরুরী।''
কবিতা কৃষ্ণাণ আরো বলেন, আম্বেদকর বলেছিলেন, 'হিন্দু রাষ্ট্র' ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হয়ে দেখা দেবে, আর এটা সবচেয়ে বেশি সত্যি ভারতের নারীদের পক্ষে। শবরীমালা ইস্যুতে বিজেপি দেখিয়েছে যে, নারী বিরোধী বৈষম্যকেই তারা সমর্থন করবে এবং এমনকি সুপ্রীম কোর্টেরও পরোয়া করবে না। ২০১২-১৩ সালে ধর্ষণ-বিরোধী নির্ভয়া আন্দোলন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস-ইউ পি এ সরকারকেই দায়বদ্ধ করেছিল। আর এখন যারাই কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করছে, সরকার তাদেরই রাষ্ট্র-বিরোধী বলে ছাপ মেরে দিচ্ছে। তিনি জানান, সম্প্রতি ৭৫ জন মহিলা জীবিকার দাবিতে বেনারসে এক মিছিল করেন আর সরকার তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
আইপোয়া রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণা অধিকারি বলেন, ধর্ষণে অভিযুক্ত উন্নাওয়ের বিধায়ককে রক্ষা করতে বিজেপি চেষ্টার কোন কসুর করছে না এবং আজ পর্যন্ত তারা ঐ বিধায়কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। দেওরিয়া আশ্রয় শিবিরের ঘটনাতেও তারা সত্যকে ধামাচাপা দিতে এবং ন্যায়বিচার থেকে নারীদের বঞ্চিত করতে চাইছে। সরকার দাবি করছে, আশ্রিতা মেয়েদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং এই দাবির সত্যতা নিরূপনে সুপ্রীম কোর্ট নির্দেশিত নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।
জাতীয় নারী সংঘের রাজ্য সভাপতি আশা মিশ্র বলেন, যারাই নারী, শ্রমিক এবং দরিদ্রদের ইস্যুগুলি নিয়ে কথা বলছেন, তাদের হয় 'শহুরে নকশাল' বলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আর নয় সংঘের সন্ত্রাসবাদীরা গোবিন্দ পানসারে, গৌরী লঙ্কেশ এবং অন্যান্যদের মত তাদের হত্যা করছে।
সমাজ আন্দোলনের কর্মী নায়িশ হাসান জানান, তিনি গত ১৫ বছর ধরে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সুপ্রীম কোর্টে এই ইস্যুতে বিজয় এসেছে মুসলিম নারী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের ফলে। কিন্তু মোদী সরকার যে অর্ডিন্যান্স এনেছে, তা কোনভাবেই মুসলিম নারীদের সুবিধা দেবে না। ঐ অর্ডিন্যান্সের বলে বেআইনিভাবে মুসলিম নারীদের বিবাহ বিচ্ছেদ দেওয়া স্বামীদের জেল হবে—কিন্তু হিন্দু স্বামীরা একই ধরনের অপরাধ করলে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য কোন আইন নেই। বিজেপি কেন একদিকে শবরীমালা নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের সহিংস বিরোধিতা করছে, আর অন্যদিকে তিন তালাক নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছে? বিজেপি কি জানেনা যে, যার নাম নিয়ে তারা শবরীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশের বিরোধিতা করছে, সেই ঋতু চক্রই রয়েছে গোটা মানব সমাজ সৃষ্টির মূলে?
সেমিনারে পৌরহিত্য করেন সাংবাদিক কুলসুম মুস্তাফা। তিনি বলেন, এই সেমিনারে দেখা যাচ্ছে, পুরুষরা নারী আন্দোলনের পাশে থেকে তাকে সমর্থন করছেন এবং সেটা যথেষ্ট উৎসাহজনক।তিনি এই আশা ব্যক্ত করেন যে, নারী এবং নারী আন্দোলনের সমর্থক পুরুষরা সমবেতভাবে পিতৃতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করবেন।