শিক্ষা ক্ষেত্রের মাফিয়াদের নীতীশ-মোদী সরকারের মদত দান এবং বিএড পাঠরত ছাত্রদের আর্থিক শোষণের বিরুদ্ধে এআইএসএ, আরওয়াইএ এবং ছাত্র আরজেডি ভোজপুরের জেলা শাসকের অফিসের সামনে ‘সড়ক পর বিএড কলেজ’ প্রতিবাদ সংগঠিত করে। বিহারে বিএড পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের বিএড শিক্ষা দেওয়ার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতার ব্যাপারে সরকার তার হাত ধুয়ে ফেলেছে। এই দায় এখন হস্তগত করেছে শিক্ষা ক্ষেত্রের মাফিয়ারা। এরা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিলেও তাদের পরিচালিত কলেজগুলিতে বুনিয়াদি সুযোগ-সুবিধাগুলোও দেয় না। কলেজগুলোতে কম করে ১৫ জন শিক্ষক থাকার কথা হলেও থাকে মাত্র ৪-৫ জন। ক্লাসঘর, লাইব্রেরি, পরীক্ষাগার, বাথরুম এবং পানীয় জলের চরম অভাব রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ওরা এনসিটিই-র অনুমোদন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়ে যায়। কলেজগুলো করা হয়েছে ভুয়ো ট্রাস্টের নামে যাতে সরকারকে কর দিতে না হয়। আদালতের কাছে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে ওরা বলেছে যে, কলেজগুলোতে প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত ওরা করেছে। আদালত বিশ্ববিদ্যালয়কে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়ে বলেছে যে, সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ওদের দাবি যদি সঠিক হয় এবং এনসিটিই নির্ধারিত মান যদি ওরা পূরণ করে থাকে তবে ওরা প্রতি ছাত্রর কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১,৫০,০০০ টাকা নিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পর্যন্ত কোনো কমিটি তৈরি না করলেও বিএড কলেজগুলোর মাফিয়ারা ঘোষণা করেছে যে, ছাত্র-ছাত্রীরা ১,৫০,০০০ টাকা করে জমা না করলে তারা পরীক্ষার জন্য ফর্ম জমা দিতে পারবে না।
উল্লেখ্য যে, আদালত এই রায় দেয় ২০১৮-র ২০ জুন; দাবি করা হয় এই রায় ২০১৬-১৮ এবং ২০১৭-১৯ শিক্ষা বর্ষের ছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ, হাইকোর্টের ঐ রায় বেরোয় ঐ শিক্ষা বর্ষগুলির জন্য ছাত্রদের ভর্তি হওয়ার পর। এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলন এবং ছ’দিন অনশন চালানোর পর উপাচার্য লিখিতভাবে জানান যে, ৯৫,০০০ টাকা করে দিলে ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার ফর্ম জমা দিতে পারবে। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রের মাফিয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে।
বিষয়টি হাইকোর্টের অধীনে থাকার কথা বলে ভোজপুরের জেলা শাসকও তাঁর কিছু করার অক্ষমতার কথা জানান। জেলা শাসক এবং উপাচার্যর বিবৃতি থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে—সরকার, রাজনীতিবিদ, প্রশাসন এবং বিএড মাফিয়াদের মধ্যে গাঁটছড়া অত্যন্ত শক্তিশালী। দেখা যাচ্ছে যে, দরিদ্র, দলিত এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশগুলির ছাত্র-ছাত্রীরা আর শিক্ষক হতে পারবে না। এদের সম্ভাবনার অপচয় ঘটবে ও তা বিনষ্ট হয়ে যাবে, শিক্ষা হয়ে উঠবে সম্পূর্ণ বাজারের পণ্য আর এই পণ্যটা বিকিয়ে ধনী হয়ে উঠবে শিক্ষা ব্যবসায়ীরা।
সবার জন্য ভালো গুণমানের শিক্ষার দাবি জানিয়ে এআইএসএ, আরওয়াইএ, সিপিআই(এমএল)-এর কর্মীরা ‘সড়ক পর স্কুল’ কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে।