আইসা এবং আইপয়ার ডাকে ‘ছাত্রীদের কথোপকথন’ পাটনায় গত ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪০০ জন মেয়ে তাতে উপস্থিত ছিল। তার মধ্যে ইউনিভার্সিটির মেয়েরা স্কুলের প্রচুর ছাত্রীরা ছিল। এই বৈঠকে মেয়েরা সব রকম স্বাধীনতা, তার মধ্যে পড়াশুনা করার দাবি করে। এই কথোপকথনে বক্তব্য রাখেন আইপোয়ার সাধারণ সম্পাদিকা মীনা তেওয়ারি, পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপিকা ভারতী এস কুমার, জেএনইউএসইউ-র প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গীতা কুমারী, আইপোয়ার বিহার রাজ্য সভানেত্রী শশী যাদব আর অন্যান্য ছাত্র নেত্রীরা। শ্রেয়া সিং, প্রীতি, নিকিতা, রুচিপ্রিয়া, পুনাম কুমারী, প্রাচিরাজ আর সুনিতা যাদব সহ অনেকে নিজেদের অভিজ্ঞতা আর মতামত প্রকাশ করে। তারা বলে যে মেয়েরা বাপের বাড়ি বা বরের বাড়ি কোথাও স্বাধীনভাবে থাকতে পারে না। তাই ঘরে ঘরে গিয়ে মেয়েদের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে হবে। এসব কথা পরিবারে গিয়ে বলতে হবে। মীনা তেওয়ারী বলেন যে মহিলাদের নিজেদের লড়াই নিজেদেরই লড়তে হবে। আজকে যে শ্লোগান দেওয়া হয়েছে তা হল মেয়েরা শিক্ষিত হলে নিজেদের লড়াই তারা নিজেরাই লড়তে পারবে। বিহারের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই মেয়েরা এসেছিল আর তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল যে তারা আওয়াজ তুলবে তাদের স্বাধীনতা অধিকার আর মর্যাদার জন্য। বিহারে খুব কম স্কুল বা কলেজ আছে তাই তাদের শিক্ষার মানও কম। তাই তাদের অপমানে জীবন যাপন করতে হয়। সময় এসে গেছে দৃঢ় আওয়াজ তোলার যে আরো স্কুল ও কলেজ খুলতে হবে। গীতা কুমারী বলেন যে, জিএসসিএএসএইচ-এর মতো প্রয়োজনীয় ইনস্টিটিউশনকে সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপ আসলে খুবই মহিলা বিরোধী। তা ছাড়াও এই সরকার খোলাখুলিভাবে ধর্ষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ডিকা কুমারীর ধর্ষণ আর মুজফ্ফরপুরের হোমগুলির ঘটনা তারই উদাহরণ। ক্যাম্পাসেও মহিলারা আজ আর নিরাপদ নয়। মহিলারা জনসংখ্যার অর্ধেক, তাই তাদের এই সাম্প্রদায়িক পিতৃতান্ত্রিক সরকারকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া আর নিজেদের অধিকারের জন্য দাঁড়ানো উচিৎ পুরুষ সাথীরা রাত ১২টার সময় ঘুরে বেড়ায় ঠিকই, কিন্তু তারা রাতে মহিলাদের দেখতে অভ্যস্ত নয়। এই অভ্যাসটা তাদের মধ্যে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। অধ্যাপিকা ভারতী এস কুমার বলেন যে পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করতে হবে। বিহার রাজ্যে ছাত্রীদের সংগঠিত করে কথোপকথন খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই কথোপকথন থেকে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হল --
- সাম্প্রতিকালে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যেমন জেএনইউ, ডিইউ, এইচএনএলইউ (ছত্তিশগড়ে), বিএইচইউ, যাদবপুর আর বিহারের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, আর ক্যাম্পাসে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে লড়াই চলেছে। ক্যাম্পাসগুলিতে মেয়েদের জন্য এক রকম নিয়ম আর ছেলেদের জন্য আরেক রকম নিয়ম—এই যে বৈষম্য তারই বিরোধিতা করা হয়েছে এবং দাবি করা হয়েছে স্কুল-কলেজে লিঙ্গ বৈষম্য দুর করতে হবে।
- পঞ্চায়েত স্তরেও কলেজ খুলতে হবে, স্কুল ও কলেজের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, ভালো পরিকাঠামো (লাইব্রেরি, ল্যাব, ক্লাসরুম, কম্পিউটার ইত্যাদি) চাই।
- বিহারে পণ প্রথা আর বাল্য বিবাহের মতো কুসংস্কার আর সামাজিক কুপ্রথা এখনও আছে। তাই দাবি করা হয় যে প্রচুর টাকা বিজ্ঞাপনে খরচ না করে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করা উচিৎ।
- পরিবারের ও সংস্কৃতির নাম করে মহিলাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করা চলবে না।
- সমাজে দলিত, সংখালঘু আর দুর্বল মানুষদের ওপর হিংসার বিরুদ্ধে আর মহিলাদের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মহিলাদের ঐক্যবব্ধ করতে হবে।
- লাভ জেহাদের নাম করে ফ্যাসিস্ট সাম্প্রদায়িক বাহিনী যারা মহিলাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে তাদের প্রতিহত করা আর প্রতিজ্ঞা করা হয় যে সব মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের পাশে দাঁড়াবে।
- মন্দিরে ঢুকে পুজো করার সাংবিধানিক অধিকার সবার আছে, এমনকি মেয়েদেরও আছে শবরিমালাতেও মহিলাদের ঢোকার অধিকার আছে। এই সাংবিধানিক অধিকারকে উর্ধে তুলে ধরতে হবে। আর মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির বক্তব্যের বিরোধিতা করা হয় এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে জনগণকে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অমান্য করতে বলার মতো উস্কানিমুলক বক্তব্যের জন্য তাকে গ্রেফতার করতে হবে দাবি জানানো হয়।
- ‘মি টু’ আন্দোলনকে সংহতি জানিয়ে বলা হয়, সব শ্রেণীর মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
- বিহারের মধ্যে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা সাংস্কৃতিক সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তার জন্য নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা চালাতে হবে। শরীর নিয়ে টিটকিরি দেওয়ার বিরুদ্ধে আর ভিক্টিম ব্লেমিং-এর বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে হবে, তাই আত্মরক্ষার জন্য শারীরিক শিক্ষা করতে হবে যা মহিলাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আর নির্ভয়ে বাঁচতে শেখাবে।
- ডিকা কুমারীর ধর্ষণ, ত্রিবেনিগঞ্জের ঘটনা, আর কস্তুরবা স্কুলের করুণ অবস্থা দেখিয়ে দেয় বিহার সরকার পিছিয়ে পড়া দলিত আর গরিব ছাত্রীদের সুবিচারকে অবহেলা করে। তাই দলিত হস্টেল আর কস্তুরবা স্কুলগুলির সমীক্ষা করে বিহার সরকারকে স্মারকলিপি দিতে হবে।
- হাই স্কুল গুলিতে আর কলেজ গুলিতে জিএসসিএএসএইচ-এর দাবি আর শক্তিশালি ও জোরদার করে তুলতে হবে।