প্রয়াত কৃষ্ণনগরের বরিষ্ঠ নকশালপন্থী নেতা মহিমময় চন্দ
a-senior-pro-naxalite-leader

গত ১৫ আগস্ট ২০২৪ প্রয়াত হলেন কৃষ্ণনগরে নকশালবাড়ী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কমরেড মহিমময় চন্দ। বার্ধক্যজনিত কারণে এইদিন শেষ রাতে শহরের শক্তিনগর হাসপাতালে তিনি চিরবিদায় নিলেন। তিনি ছিলেন ১৯৬৯ সালে গঠিত সিপিআই(এমএল)-এর প্রথম নদীয়া জেলা কমিটির শেষ জীবিত সদস্য। তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন, বিনয়ী ব্যবহার, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিপ্লবী মানসিকতায় ভরপুর থাকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

কৃষ্ণনগরের বিপিসি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং’এর অন্যতন ছাত্রনেতা রূপে তিনি ১৯৬৬’র খাদ্য আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা নেন। ১৯৬৭ সালে নকশালবাড়ি কৃষক অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর কৃষ্ণনগরে নকশালবাড়ি সহায়ক সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। তিনি তার অন্যতম সদস্য ছিলেন। পরবর্তীকালে এআইসিসিসিআর’এ যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালের পার্টি গঠন হওয়ার পরে তিনি পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন, ক্যারিয়ার ত্যাগ করে সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরবর্তীকালে পার্টির জেলাকমিটি সদস্য হন। এরপর তিনি জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে কাজ শুরু করেন। গোপালপুরঘাট-আরংঘাটা অঞ্চলে কাজ করতেন। ১৯৭১ সালে তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রথমে বহরমপুর সেন্ট্রাল জেল তারপর কৃষ্ণনগর জেল, পরবর্তীতে তামিলনাড়ুর কুড্ডালুর জেলে বন্দী থাকেন। ১৯৭৬ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান। এরপর তিনি এক কমিউনিস্ট বিপ্লবী গ্রুপে যুক্ত হন। ১৯৮১ সালে সেই সংগঠনের সম্পর্ক ত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে কৃষ্ণনগরে মানবাধিকার ও নাগরিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। শিক্ষা বিস্তারের কর্মকান্ডে ১৯৯০’র শুরুতে তিনি কৃষ্ণনগর একাডেমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন।

জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সমাজ পাল্টে দেওয়ার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। অন্তিম পর্বের কয়েকবছর ধরে তাঁকে আমরা কিছুটা কাছ থেকে দেখেছি। কোনো নিরাশা নেই, সর্বদাই আশাবাদে ভরপুর, নতুন নতুন শক্তিকে, নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার জন্য পরামর্শ দিতেন। নিজের যতটুকু ছিল আন্দোলন ও সংগঠনের প্রয়োজনে উজাড় করে দিতেন। তিনি ২০২২ সালে আমাদের পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। নিয়মিত দেশব্রতী পড়তেন। অশক্ত শরীরেও কৃষ্ণনগরে বিভিন্ন কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকতেন।

খণ্ড-26