হুগলি জেলায় সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি একদিকে ব্যানার ছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত মেয়েদের নিরাপত্তা ও অধিকার আন্দোলনে সামিল হচ্ছে, আবার নিজস্ব ব্যানারে কর্মসূচি নিয়ে চলেছে। এভাবে দুটো দিক সমন্বয় করে আমরা এগোচ্ছি।
২১ আগস্ট চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে সমিতির পক্ষ থেকে সুপারকে ও একই দিনে সিএমওএইচ’কে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।
দাবি ছিল,
• হাসপাতালে কর্মরত মহিলা ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
• হাসপাতালে দালাল ও অপরাধীচক্র বন্ধ করতে হবে।
• অবিলম্বে মহিলা ইনচার্জের নেতৃত্বে কার্যকরী আইসিসি গঠন করতে হবে।
• মহিলা ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আলাদা বিশ্রাম ঘর ও শৌচালয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
সুপার বলেন, নারী-পুরুষদের আলাদা শৌচাগার নেই। আমাদের চাপে জরুরি ভিত্তিতে স্টিকার লাগিয়ে আলাদা ব্যবস্থা করা হবে কথা দিলেন। সক্রিয় আইসিসি আছে। নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানো হবে। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশের জন্য কড়াকড়ি ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মহিলাদের নাইট শিফট কাজের প্রশ্নে, ওনার বক্তব্য মেয়েরা রাতে ডিউটি না করলে সব কোলাপ্স করে যাবে। দালাল চক্রের বিষয়টা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন, আমরা চাপ দিতে উনি বলেন, কোনো রোগী যদি ঠিকমতো পরিষেবা না পায় তাহলে কমপ্লেন্ট জানাতে হবে। আমরা দাবি রাখি, তাহলে দ্রুত কমপ্লেন্ট জানানোর জন্য সমস্ত ডিপার্টমেন্টে কমপ্লেন্ট বক্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত সেগুলি দেখতে হবে। ওনার ফোন নাম্বার দিলেন কোনো সমস্যা হলে জানাতে বলেন। ডেপুটেশন চলাকালীন হাসপাতাল চত্বরে পোস্টার ব্যানার সমেত নীরব বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়।
এরপর মিছিল করে সিএমওএইচ অফিস যাওয়া হয়। মিছিলে লিফলেট বিতরণ করা হয় এবং স্লোগান ওঠে — আরজিকরের অভয়া ও প্রিয়াঙ্কার ধর্ষক ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, দ্রুত সিবিআই তদন্ত শেষ করে ন্যায়বিচার, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ, ঘরে বাইরে কর্মস্থলে নারীর নিরাপত্তা, সমস্ত থানায় মহিলাদের গ্রিভ্যান্স সেল গঠন ইত্যাদি দাবি।
সিএমওএইচ’র কাছে দাবি রাখা হয় — অবিলম্বে বড় হাসপাতালগুলোর সঙ্গে ব্লক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সমস্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উনি প্রতিনিধিদের বলেন, এই মুহূর্তে বড় হাসপাতালগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য কিছু পরিকাঠামগত উন্নতির উদ্যোগ চলছে। দালালচক্র প্রসঙ্গে বলেন, ডাক্তাররাই তো দালাল। বড় হাসপাতালগুলোতে আইসিসি আছে। তবুও কখনো আপনাদের পরামর্শ ও সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে, তাই ওনার ফোন নাম্বার দিলেন এবং আমাদের নম্বর চেয়ে নিলেন।
ডেপুটেশন চলাকালীন দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সভা চলে, সেখানে সংগঠনের সদস্য ছাড়া একজন আয়াদিদি ও আরেকজন পথচারী মহিলা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসে বক্তব্য রাখেন।
এরপর আবার মিছিল করে চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত সভা হয়। নারীর অধিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে অঞ্জনা ভৌমিক কবিতা পাঠ করেন। আরজিকরের অভয়া ও প্রিয়াঙ্কার স্মরণে মোমবাতি জ্বালিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।
সমিতির সদস্য ছাড়াও ব্যান্ডেল ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশ কিছু নতুন মহিলা এতে অংশ নিয়েছিলেন। আদিবাসী মহিলা কমরেডরাও সামিল হয়েছিলেন। গোটা কর্মসূচি পরিচালনা করেন জেলা সভানেত্রী শোভা ব্যানার্জি, সম্পাদিকা শিপ্রা চ্যাটার্জি, জেলা নেত্রী রুমা গুপ্তা ও রাজ্য সভানেত্রী চৈতালি।
সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন স্থানীয় পার্টি কমিটির সেক্রেটারি ভিয়েত ব্যানার্জি ও পার্টির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।