অন্ধ্রপ্রদেশে মারাত্মক এক শিল্প দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ১৭ শ্রমিকের প্রাণ, গুরুতর আহত হলেন আরও অনেকে। দুর্ঘটনাটি ঘটে অন্ধ্রপ্রদেশের আনাকাপালী জেলায় অচ্যুতাপুরাম এসইজেডে অবস্থিত ফার্মা কোম্পানি এসেনটিয়াতে। সাম্প্রতিককালে এটা হল সবচেয়ে মারাত্মক শিল্প দুর্ঘটনা। ওই একই দিনে ওই এসইজেডে অবস্থিত আরেকটি রাসায়নিক কারখানায় অগ্নি সংযোগের ফলে দুর্ঘটনায় দশজন শ্রমিক আহত হন। গতবছর, ৩০ জুন, এই এসইজেডে অন্য আরেকটি ফার্মা কারখানায় বিরাট বড় মাপের এক বিস্ফোরণ হয়, যাতে অনেক শ্রমিক মারা যান, আহত হন অনেকে। অচ্যুতাপুরাম এসইজেড হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশের বৃহত্তম অঞ্চল, যেখানে একশ’র উপর কারখানা রয়েছে। এই শিল্প দুর্ঘটনা স্মরণ করায় ৭ মে ২০২০ সালে আরেকটি মর্মান্তিক শিল্প দুর্ঘটনার কথা। বিশাখাপত্তনমের অদূরে ভেনকাটাপুরম গ্রামে পলিমার ইউনিট কারখানায় স্টাইরিন মনোমের ভেপার লিক করার ফলে ১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
পর পর ঘটে যাওয়া এই সমস্ত শিল্প দুর্ঘটনা অন্ধ্রপ্রদেশে, বিশেষ করে এসইজেডে অবস্থিত কারখানাগুলোর সুরক্ষা ও শ্রমিকদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে বিরাট বড় প্রশ্ন তুলে দিল।
রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভি অনিথা বলেছেন, কারখানার শ্রমিকরা একটি দ্রাবক এমটিবিই (মিথাইল টারশিয়ারি বুটাইল ইথার) ফুটো দিয়ে বেরিয়ে আসা রোধ করার চেষ্টা করছিলেন, যখন একটা বিদ্যুতের প্যানেলের সংস্পর্শে আসে আর বিস্ফোরণ হয়। ওই মারাত্মক দাহ্য পদার্থ ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকায় বলাই হয়েছে, যারা এ নিয়ে কাজ করবেন, তাঁদের ধারণা থাকা উচিত যে এই দাহ্য পদার্থের বাষ্প চোখে ও চামড়ায় প্রচন্ড জ্বালা সৃষ্টি করে। এর ব্যবহারেও রয়েছে একাধিক সুরক্ষা বিধি, যার কোনোটাই সেই ফার্মা কোম্পানিতে অনুসরণ করা হয়নি।
সমস্ত ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে। ট্রেড ইউনিয়নগুলো দাবি তুলেছে, এসইজেডের সমস্ত ইউনিট ও গোটা অন্ধ্রপ্রদেশ জুড়ে সমস্ত শিল্প সংস্থার এক পুঙ্খানুপুঙ্খ নিরাপত্তা সংক্রান্ত অডিট করা হোক। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, ২০১৬-তে এক সরকারি আদেশ বলে সরকারি ইন্সপেকশন থেকে এসইজেড ও রপ্তানীভিত্তিক প্রসেসিং জোনের ইউনিটগুলোকে অব্যহতি দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের সহজে ব্যবসা করার শর্তগুলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত একের পর এক বিধিনিষেধকে শিথিল করেছে, সরাসরি পরিদর্শনের বদলে নিজেরাই সুরক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র দিয়ে সংস্থাগুলো সমস্ত দায় থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে। কর্পোরেট পুঁজিকে প্রশ্রয় দিতে গিয়ে শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠছে।
আর কত প্রাণ গেলে পরে শিল্প সুরক্ষা বিধি কঠোর হবে, তা ভবিষ্যতই বলবে।